নবীজির মু'জিযা
(৯৮)
--------------
খেজুর কাণ্ডের কান্না
হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, নবী করিম (ﷺ) একটি বৃক্ষের উপর কিংবা খেজুর বৃক্ষের কান্ডের উপর হেলান দিয়ে মসজিদে নববীতে শুক্রবারে জুমার খুতবা প্রদানের জন্য দাঁড়াতেন। তখন একজন আনসারী মহিলা অথবা একজন পুরুষ বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার জন্য একটি মিম্বর তৈরী করে দেবাে কি? রাসূল পাক (ﷺ) বললেন, তােমাদের ইচ্ছে হলে দিতে পার। অতঃপর তারা একটি কাঠের মিম্বর তৈরী করে দিলেন।
যখন শুক্রবার এল রাসূল (ﷺ) মিম্বরে আসন গ্রহণ করলেন খুতবা দেওয়ার জন্য। তখন শিশুর ন্যায় চিৎকার করে কাঁদতে লাগল। রাসূল (ﷺ) মিম্বর থেকে নেমে এসে উহাকে জড়িয়ে ধরলেন। কিন্তু কান্ডটি আবেগ আপ্লুত কন্ঠে শিশুর মত আরাে ফুফিয়ে ফুফিয়ে কাঁদতে লাগল। রাবী বলেন, কান্ডটি এজন্য কাঁদছিল যেহেতু সে খুতবা কালে অনেক যিকর শুনতে পেত।১৭২
ইমাম দারেমী (رحمة الله) হযরত বারিদাহ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, রাসুল (ﷺ) মিম্বর থেকে নেমে এসে ঐ কান্ডের উপর হাত রেখে শান্তনা স্বরূপ বললেন, হে কান্ড! যদি তুমি চাও তবে তােমাকে ঐ স্থানে বপন করে দেবাে যেখানে তুমি ছিলে। আর যদি ভাল মনে কর তবে তােমাকে জান্নাতে বপন করে দেবাে যাতে তুমি জান্নাতের নদী-নালা থেকে তাজা হবে এবং উন্নত মানের ফল দেবে যা জান্নাতবাসী আল্লাহর প্রিয়জনরা খাবে। তখন রাসূল (ﷺ) শুনেছেন যে, সে বলল, আমি পছন্দ করেছি। নবী (ﷺ) জিজ্ঞেস করেন, কি পছন্দ করেছ? উত্তরে বলল, আমি জান্নাতী বৃক্ষ হতে চাই। এ জাতীয় রেওয়ায়েত তাবরানী এবং ইবনে আবি শাইবা, দারেমী ও আবু নঈম হযরত আবু সাঈদ খুদুরী (رضي الله عنه) থেকে রেওয়ায়েত করেন।১৭৩
ইমাম তাজ উদ্দিন সুবকী (رحمة الله) বলেন, খেজুর বৃক্ষের কান্ড রাসূল (ﷺ)’র বিরহে ক্রন্দন করার হাদিস মুতাওয়াতির পর্যায়ে পৌঁছেছে। প্রায় বিশজন সাহাবী ঐ ঘটনা বর্ণনা করেন। আর এ ঘটনার অধিকাংশ সনদ বিশুদ্ধ। সুতরাং তা অকাট্য ও সন্দেহাতীত।১৭৪
আল্লামা জামী (رحمة الله) শাওয়াহেদুন নবুয়ত গ্রন্থে এই ঘটনা বর্ণনা করার পর একটি কবিতা উল্লেখ করেন
أستن حنانہ درھجر رسول * نالہ می زد ہمچوار باب عقول
রাসূল (ﷺ) এর বিরহে উস্তুুনে হান্নানাহ (জড়পদার্থ হয়েও) জ্ঞানীদের ন্যায় কান্না করেছিল।১৭৫
ইবনে আবি শায়বা, আবু ইয়ালা, দারেমী ও বায়হাকী হযরত আ’মশ, আবু সুফিয়ান ও আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন যে, হযরত জিব্রাঈল (عليه السلام) নবী করিম (ﷺ)'র নিকট আসলেন তখন তিনি মক্কার বাইরে ছিলেন। মক্কা বাসীরা তাঁকে রক্তাক্ত করে দেয়। জিব্রাঈল (عليه السلام) জিজ্ঞেস করলেন কি হয়েছে আপনার? তিনি বললেন, তারা আমাকে রক্তাক্ত করে দিল আর আমার বিরুদ্ধে এরূপ-সেরূপ বলতেছেন।
জিব্রাঈল (عليه السلام) বললেন, আপনি যে, সত্য নবী এ ব্যাপারে কোন নিদর্শন দেখতে চান? তিনি উত্তর দিলেন, হ্যাঁ, জিব্রাঈল (عليه السلام) বললেন, ঐ বৃক্ষকে আহ্বান করুন। তিনি ওটাকে আহ্বান করা মাত্র তা মাটি ছিড়ে এসে তাঁর সামনে দন্ডায়মান। জিব্রাঈল (عليه السلام) বললেন ওটাকে পুনরায় চলে যেতে বলেন। তিনি বৃক্ষকে বললেন, তুমি আপন স্থানে চলে যাও। সাথে সাথে বৃক্ষ আপন জায়গায় চলে গেল। তখন রাসূল (ﷺ) বললেন, এতটুকুই আমার জন্য যথেষ্ট।১৭৬
১৭২. ইমাম বুখারী, মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল (رحمة الله) (২৫৬ হি.), সহীহ বুখারী শরীফ, আরবী, ইউপি, ইন্ডিয়া, পৃ: ৫০৬, হাদিস নং ৩৩৩১
১৭৩. ইউসুফ নাবহানী (رحمة الله) (১৩৫০ হি.) হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীন, উর্দু, গুজরাট, পৃ:৭১৫
১৭৪. প্রাগুক্ত, পৃ:৭১৪
১৭৫. আল্লামা জামী (رحمة الله) (৮৯৮হি.) শাওয়াহেদুন নবুয়ত, উর্দু, বেরেলী, পৃ:১৬১
১৭৬. সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) (৯১১ হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খন্ড:১ পৃ:২০২)।
+++++++
বিষয় ভিত্তিক মুজিযাতুর রাসূল (ﷺ)
হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ ওসমান গণি
আরবি প্রভাষক,জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া,ষােলশহর, চট্টগ্রাম।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন