ইমাম আ‘যম সাহাবীদের সাথে সাক্ষাত ও দশজন সাহাবী থেকে হাদিস বর্ণনা সম্পর্কে


সাহাবী থেকে হাদীস বর্ণনা


ইমাম আ‘যম সাহাবীদের সাথে সাক্ষাত ও দশজন সাহাবী থেকে হাদিস বর্ণনা সম্পর্কে ইমাম ইবনে বাযযার কুরদরী (رحمة الله) বলেন-

فَالْحَاصِلُ اِنَّ جَمَاعَةً مِنَ المُحَدِّثِيْنَ اَنْكَرُوا مَلَاقَاتِه الصَّحَابَةِ وَاَصْحَابُه اَثِبْتُوه بالْاَسَانِيْدِ الصِّحَاح الحِسَانِ وُهُمْ اَعْرَفُ بِاحْوالِه مِنْهُمْ وَالمُثِبْتُ العَدْلُ العَالِمُ اَوْلي النَافِي وَقَدْ اَجْمَعُوا مُسْنَدَاتِه فَبَلَغَتْ خَمْسِيْنَ حَدِيْثًا يَرْوِيه الاِمَامِ عَنِ الصَّحَابَةِ-

“মোদ্দাকথা হলো মুহাদ্দিসগণের মধ্যে একদল সাহাবীর সাথে ইমাম আ‘যমের সাক্ষাতকে অস্বীকার করেন, কিন্তু তাঁর শাগরিদরা সহীহ ও হাসান সনদ দ্বারা প্রমাণ করে দিয়েছেন যে, তিনি সাহাবীদের সাক্ষাত পেয়েছেন। তাঁর শাগরিদরা অন্যান্যদের চেয়ে তাঁর সম্পর্কে অধিক অবহিত ছিলেন। কোন ন্যায়পরায়ন আলিম ব্যক্তি কোন কিছু সাব্যস্ত করলে তা অস্বীকার বা না বাচকের উপর প্রাধান্য পায়। তারা (শাগরিদরা) তাদের মুসনাদ সমূহে ইমাম আ‘যম কর্তৃক সাহাবীদের থেকে বর্ণনাকৃত পঞ্চাশটি হাদিস বর্ণনা করেছেন।”

➥         ইমাম কুরদরী (رحمة الله) (৮২৭হিঃ), মানাকিবুল ইমাম আ‘যম আবি হানিফা খন্ড ১, পৃষ্ঠাঃ  ২০-২১ ও মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) (১০১৪হিঃ), শরহে মুসনাদে ইমাম আ‘যম পৃষ্ঠাঃ   ২৫৮


আল্লামা আইনী (رحمة الله) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আবি আউফা (رضي الله عنه)’র জীবনীতে বলেন:

هُوَ اَحَدٌ مَنْ رَأه اَبُوْ حَنِيْفَةَ مِنَ الصَّحَابَةِ وَرَوَي عَنْه وَلَا يَلْتَفِتُ اِلي قَوْلِ الْمُنْكَرِ الْمَتَعَصَبِّ وَكَانَ عُمَرُ اَبِي حَنِيْفَةَ حِيْنَئِذٍ سَبَعَ سِنِيْنَ وَهُوَ سَنُّ التَّمِيْزِ هذَا عَلى الصَّحِيْحِ اِنَّ مَوْلَدَ اَبي حَنِيْفَةَ سَنَةَ ثَمَانِيْنَ وَعَلي قَوْلِ مَنْ كَانَ سِنَةَ سَبْعِيْنَ يَكُونُ عُمُره حِيْنَئِذٍ سَبَعَةَ عَشَرَ سِنَةً وَيَسْتَبَعَدُ جِدًّا اَنْ يَكُوْنَ صَحَابِي مُقِيْمًا بِبَلَدِه وَفِي اَهْلِهَا مَنْ لَا رَأَه وَاصْحَابُه اَخْبَرَ بِحَالِهِ وُهُمْ ثِقَاتٌ فِي اَنْفُسِهِمْ -

“আব্দুল্লাহ ইবনে আবি আউফা ঐ সকল সাহাবীদের একজন যাদেরকে ইমাম আ‘যম আবু হানিফা (رحمة الله) দেখেছেন এবং তিনি তাঁর থেকে হাদিসও বর্ণনা করেছেন। এ ব্যাপারে পক্ষপাত অবলম্বনকারী ও অস্বীকারকারীদের মতের দিকে তাকানোর প্রয়োজন নেই। এ সময় ইমাম আ‘যমের বয়স হয়েছিল সাত বছর। কেননা বিশুদ্ধ মতানুযায়ী তিনি ৮০ হিজরীতে জন্ম লাভ করেন। অপর মতানুযায়ী তাঁর জন্ম সাল ৭০ হিজরী হলে, তখন তাঁর বয়স হবে সতের বছর। তবে সাত বছরেও বোধশক্তি ও অনুভুতি শক্তির বয়স হয়। আর এটা কিভাবে হতে পারে যে, একজন সাহাবী কোন শহরে থাকবেন আর ঐ শহরের অধিবাসীদের মধ্যে এমন কে থাকবে যে তাঁকে দেখবে না? এ বিষয়ে ইমাম আ‘যমের শিষ্যগণের কথাই গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। কেননা, তারাই তাঁর সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত এবং গ্রহণযোগ্য। 

➥         আল্লামা আইনী (رحمة الله) (৮৫৫ হিঃ), উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী, খন্ড ১, পৃষ্ঠাঃ  ৭৯৮)


ইমাম আবু ইউসুফ (رحمة الله) বলেন-আমি হযরত আবু হানিফা (رحمة الله) কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি ৯৩ হিজরীতে আমার পিতার সাথে হজ্জে গিয়েছি। তখন আমার বয়স ছিল ষোল বছর। আমি এক বৃদ্ধকে দেখেছি যে, তাঁর নিকট মানুষের ভীড় ছিল। আমি পিতাকে জিজ্ঞাসা করলাম এই ব্যক্তি কে? তিনি বললেন ইনি রাসূল (ﷺ) ’র সাহাবী এবং তাঁর নাম হলো আব্দুল্লাহ ইবনে হারিস ইবনে জুয। পুনরায় আমি জিজ্ঞাসা করলাম তাঁর কাছে কি আছে? পিতা বললেন, তাঁর কাছে রাসূলুল্লাহ  ’র হাদীস আছে। আমি বললাম তাহলে আমাকে তাঁর কাছে নিয়ে যান আমিও হাদিস শ্রবণ করবো। অতঃপর আমি মানুষের ভীড়ের মধ্যেও তাঁর কাছে পৌঁছে গেলাম এবং তাঁর থেকে হাদিস শুনলাম-তিনি বলতেছেন:

 قَالَ رَسُوْلُ اللهِ  مَنْ تَفْقَّهَ فِيْ دِيْنِ اللهِ كَفَاهُ اللهُ وَهْمَه وَرِزْقَه مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبْه -

“রাসূল (ﷺ)  এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর দ্বীনের জ্ঞানার্জন করল, আল্লাহ তাঁর জন্য যথেষ্ট এবং তিনি তাকে অগণিত রিযিক দান করবেন।” 

➥         কিতাবু বয়ানুল ইলম খন্ড ১, পৃষ্ঠাঃ   ৪৫, সূত্রঃ হানিফ রেজভী জামেউল আহাদীস, মুকাদ্দমা, পৃষ্ঠাঃ   ২৩৬



ইমাম আবু মা’শার আব্দুল করিম ইবনে আব্দুস সামাদ তাবারী শাফেঈ (رحمة الله) ইমাম আ‘যম (رحمة الله)’র সাহাবায়ে কিরাম থেকে বর্ণিত হাদিস সমূহের উপর একটি পৃথক গ্রন্থ রচনা করেন। এতে সাহাবী থেকে তাঁর বর্ণিত হাদিস সমূহ সনদসহ উল্লেখ করেছেন। আর ইমাম জালাল উদ্দিন সুয়ূতী শাফেঈ (رحمة الله) ঐ সব রেওয়ায়েত সমূহ তাঁর রচিত কিতাব “তাবঈদুস সহীফা” গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন।

নিন্মে এর কিছু হাদিস বর্ণিত হলো-


 عَنْ اَبِي يُوْسُفُ عَنْ اَبِي حَنِيْفَةَ سَمِعْتُ اَنَسْ بْنِ مَالِكِ يَقُوْلُ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ  يَقُوْلُ طَلَبُ العِلْمِ فَرِيْضَةٌ عَليَ كُلِّ مُسْلِمٍ-


১.“ইমাম আবু ইউসুফ আবু হানিফা থেকে, তিনি হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে, তিনি রাসূল (ﷺ)  থেকে  শুনেছেন, তিনি বলেন, প্রত্যেক মুসলমানের উপর জ্ঞানার্জন করা ফরয।”


عَنْ اَبِي يُوْسُفُ عَنْ اَبِي حَنِيْفَةَ سَمِعْتُ اَنَسْ بْنِ مَالِكِ يَقُوْلُ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ  يَقُوْلُ الدَّالُّ عَلي الخَيْرِ كَفَا عِلِه -


২. “আবু ইউসুফ আবু হানিফা থেকে, তিনি আনাস (رضي الله عنه) থেকে, তিনি রাসূল (ﷺ)  কে বলতে শুনেছেন-ভাল কাজের প্রতি পথ প্রদর্শনকারী ভাল কাজ কারীর সমান সওয়াব পাবে।”


عَنْ اَبِي يُوْسُفُ عَنْ اَبِي حَنِيْفَةَ سَمِعْتُ اَنَسْ بْنِ مَالِكِ يَقُوْلُ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ   اَنْ يُحِبَّ اللهَ اَغَاثَه اللَّهْفَانِ-


৩. “আবু ইউসুফ ইমাম আবু হানিফা থেকে, তিনি আনাস (رضي الله عنه) থেকে, তিনি নবী করিম (ﷺ)  কে বলতে শুনেছেন-আল্লাহ তায়ালা দুঃস্থ মানুষকে সাহায্য করা পছন্দ করেন।”

عَنْ يَحْي بْنِ قَاسِمِ عَنْ اَبِي حَنِيْفَةَ سَمِعْتُ عَبْدَ اللهِ بْنِ اَبِى اَوْفي يَقُوْلُ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ  مَنْ بَنَي مَسْجِدًا وَلَوْ كَمُفْحَصِ قَطَّاةٍ بَنيَ اللهُ بَيْتًا فِي الجَنَّة ِ -

৪. “ইয়াহিয়া ইবনে কাসেম ইমাম আবু হানিফা থেকে, তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে আবি আউফা (رضي الله عنه) থেকে, তিনি রাসূল (ﷺ) কে বলতে শুনেছেন- যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য মসজিদ নির্মাণ করেন যদিও সেটি কাত্তাত পাখির বাসার ন্যায় ছোটও হয়, তবুও আল্লাহ তায়ালা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন।”

➥         জালাল উদ্দিন সুয়ুতী (رحمة الله) (৯১১হিঃ), তাবঈদুস সহীফা, পৃষ্ঠাঃ  ৬-৯


عَنْ اِسْمَاعِيْل بْنِ عَيَّاشِ عَنْ اَبِي حَنِيْفَةَ عَنْ وَاثِلَةَ بْنِ اَسْقع اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ  قَالَ دَعْ مَا يُرْبِيْكَ اِلي مَا لَا يُرْبِيْكَ- 

৫. “ইসমাঈল ইবনে আইয়্যাশ ইমাম আবু হানিফা থেকে, তিনি ওয়াসিলা ইবনে আসকা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল (ﷺ)  এরশাদ করেন-সন্দেহভাজন বস্তু পরিত্যাগ কর আর ঐ বস্তু গ্রহণ কর যাতে সন্দেহের অবকাশ নেই।”

➥         সাওয়াঁনেহে বে বাহারে ইমাম আ‘যম, পৃষ্ঠাঃ ৬৫,সূত্র: হানিফ রেজভী, জামেউল আহাদীস, মুকাদ্দমা, পৃষ্ঠাঃ ২৩৯



আল্লামা শামশুদ্দিন মুহাম্মদ আবু নসর “জাওয়াহেরুল আকাইদ ওয়া দুরারুল কালায়েদ” নামক গ্রন্থে বলেন-ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله) আটজন সাহাবী থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন। যেমন-

১. আনাস, ২. জাবির, ৩. ইবনে আবি আউফা, ৪. আমের, ৫. ইবনে উনাইস, ৬. ওয়াসিলা, ৭. ইবনে জুয, ও ৮. আয়েশা বিনতে আজরাদ (رضي الله عنه)।

➥         আল্লামা শামী (رحمة الله)(১৩০৬হিঃ) রদ্দুল মোহতার, খন্ড ১, পৃষ্ঠাঃ ১৫৭)।

++++++++++
কিতাবঃ শরহে মুসনাদে ইমাম আ‘যম আবু হানিফা 
[ইমাম আবু হানিফা (রহ.) এর সংকলিত কিতাব মুসনাদে ইমামে আজমের ব্যাখ্যাগ্রন্থ]

ব্যাখ্যাকারঃ হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ ওসমান গণি
আরবি প্রভাষকঃ
জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া
ষোলশহর, চট্টগ্রাম।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন