মু'জিযাতুর রসূল ﷺ


নবীজির মু'জিযা
(১১৪)
-----------

বায়তুল্লাহর চাবি আমার হাতে আসবে অথবা বায়তুল্লাহর চাবি হস্তগত হওয়া


❏ হযরত ইবনে সা’দ হযরত ওসমান ইবনে তালহা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন রাসূল (ﷺ) হিজরতের পূর্বে মক্কা মুকাররমায় আমার সাথে সাক্ষাত হলে তিনি আমাকে ইসলামের দাওয়াত দেন। আমি বললাম, হে মুহাম্মদ! আপনি তাে আশ্চার্য লােক। কিভাবে আশা করলেন আমি ইসলাম গ্রহণ করবাে। অথচ আপনি নিজের সম্প্রদায়ের বিরােধীতা করতেছেন আর নতুন ধর্ম নিয়ে এসেছেন। আমরা জাহেলী যুগে সপ্তাহে দুদিন সােম ও বৃহস্পতিবার বায়তুল্লাহ খুলে দিতাম।

     

একদিন তিনি এসে লােকদের সাথে বায়তুল্লাহ-এ প্রবেশের চেষ্টা করলে আমি তার সাথে কঠোর ব্যবহার করলাম এবং প্রবেশ করতে বাঁধা দিলাম। কিন্তু তিনি ধৈর্যের সাথে মেনে নিলেন আর আমাকে বললেন, হে ওসমান! নিশ্চয় অচিরেই তুমি দেখবে যে, বায়তুল্লাহর এই চাবি একদিন আমার হাতে। আর আমি যাকে ইচ্ছে তাকে দেবাে। অতঃপর আমি বললাম, সে দিন কুরাইশ ধ্বংস ও লাঞ্ছিত হয়ে যাবে। তিনি বললে, না, বরং সেদিন কুরাইশ উপস্থিত থাকবে এবং সাম্মানিত হবে। একথা বলে তিনি বায়তুল্লাহ-এ প্রবেশ করেন। কিন্তু তাঁর কথা গুলাে আমার অন্তরে স্থান করে নিল আর আমি নিশ্চিত হয়ে গেলাম যে, তিনি যেরূপ বলেচেন সেরূপই হবে। আমি ইসলাম গ্রহণের ইচ্ছে পােষণ করলে আমার সম্প্রদায়ের লােকেরা আমাকে কঠোরভাবে হুমকি দিন।


অতঃপর মক্কা বিজয়ের দিন তিনি আমাকে বললেন, হে ওসমান! বায়তুল্লাহ’র চাবি নিয়ে এসাে। আমি চাবি নিয়ে আসলে তিনি চাবি নিয়ে নেন। তারপর পুনরায় আমাকে দিয়ে বললেন, স্থায়ীভাবে এই চাবি নাও। অত্যচারী ব্যক্তি ছাড়া কেউ এই চাবি তােমার কাছ থেকে চিনিয়ে নিবেনা।

     

যখন আমি চাবি নিয়ে ফিরে যাচ্ছি তখন তিনি আমাকে ডাক দেন, আমি কাছে গেলে বলেন, সে কথা কি সত্য হয়নি যা আমি তােমাকে বলেছিলাম? তখন তিনি আমাকে হিজরতের পূর্বে মক্কায় যে কথা বলেছিলেন তা আমার স্মরণ পড়েছে। আর তা হল,


لعلك سترى هذا المفتاح يؤها بيدي أضعه حيث شئت


অর্থাৎ নিশ্চয় অচিরেই দেখবাে যে, এই চাবি একদিন আমার হাতে আসবে। আমি যাকে ইচ্ছে তাকে তা দেবাে। আমি বসলাম, হ্যাঁ, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয় আপনি আল্লাহর রাসূল। ●142

_____________________________

🔺১৪২. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী  (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড:১ম পৃ:৪৪২

     

❏ ইবনে ইসহাক (رحمة الله), হাকেম (رحمة الله) ও বায়হাকী  (رحمة الله) ইবনে মসউদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) যখন তাবুক রওয়ানা হন তখন কয়েকজন পিছে রয়ে গেল। তারপর পিছনে পিছনে আবু যর (رضي الله عنه) আসতেছেন। মুসলমানগণের মধ্য থেকে জনৈক মুসলমান দেখল এবং আরজ করল যে, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এই ব্যক্তি রাস্তা দিয়ে একাকী আসতেছে। রাসূল (ﷺ) বললেন, সে আবু যর হবে। সাহাবায়ে কিরাম ভাল করে দেখে বলল, খােদার শপথ, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আবু যরই আসতেছে।

তখন রাসূল (ﷺ) এরশাদ করেন,


يرحم اللّٰه أبا ذر يمشي وحده ويموت وحده ويبعث وحده

     

আল্লাহ তায়ালা আবু যরের উপর রহম (দয়া) করুন, সে একাকী চলে, একাকী নির্জনে ইন্তেকাল করবে এবং একাকীই জীবন-যাপন করবে, কিয়ামত দিবসে ও একাকী উঠবে।

     

কালের আবর্তনে তাকে বাধ্য হয়ে 'যবদাহ’ নামক স্থানে হিজরত করতে হয়েছে এবং সেখানেই তিনি ইন্তেকাল করেন। তার কাছে তখন শুধু তার স্ত্রী ও গােলাম ছিল। জানাযা পড়ার মত লােক না থাকায় তার লাশ রাস্তার মাথায় রেখে দেওয়া হল। সামনের দিক থেকে একটি কাফেলা আসল যার মধ্যে হযরত ইবনে মসউদ (رضي الله عنه) ও ছিলেন। তিনি জিজ্ঞেস করেন, এটা কি? বলা হল, এটা হযরত আবু যর গিফারী (رضي الله عنه)'র লাশ। তখন ইবনে মসউদ (رضي الله عنه) কেঁদে ফেললেন এবং বললেন, রাসূল (ﷺ) সত্য বলেছিলেন। এরপর তিনি সওয়ারী থেকে নেমে তাকে দাফন করেন। ●143

_____________________________

🔺১৪৩. ইমাম সুয়ূতী, জালাল উদ্দিন সুয়ূতী  (رحمة الله) (৯১১হি.), আল খাসায়েসুল কুবরা, আরবী, বৈরুত, খণ্ড:১ম পৃ:৪৫৩)।

++++++++

বিষয় ভিত্তিক মুজিযাতুর রাসূল (ﷺ)

হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ ওসমান গণি

আরবি প্রভাষক,জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া,ষােলশহর, চট্টগ্রাম।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন