গ্রন্থকারের পেশ কালাম
=============
আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন যখন ছিলেন একা, ছিলো না তাঁর সখা, ছিল না তাঁর পরিচয়। তিনি ছিলেন গুপ্ত ধন-ভান্ডারের ন্যায়। নিজের আত্মপরিচয় ও আত্মপ্রকাশের উদ্দেশ্যে তিনি আপন যাতি নূরের ফয়েজ, ঝলক ও জ্যোতিঃ হতে সৃষ্টি করলেন আপন হাবীবের নূর মোবারক। ঐ নূরে মুহাম্মদী [ﷺ] হতেই পয়দা করলেন আরশ-কুরসি, লাওহ-কলম, আসমান-জমিন তথা সবকিছু। তখন আগুন-পানি, মাটি-বায়ু অর্থাৎ সৃষ্টির মৌলিক কোন পদার্থেরই অস্তিত্ব ছিলো না। সুতরাং নূরে মুহাম্মদী [ﷺ] হলো প্রথম ও মৌলিক সৃষ্টি। এই সৃষ্টি রহস্যের তো তখন কোন স্বাক্ষীই ছিলো না খোদা ভিন্ন। সন্তান যেমন জানেনা পিতা মাতার সৃষ্টি রহস্য সম্পর্কে, তদ্রূপ খোদার সৃষ্টি জগত ও জানেনা তাদের সৃষ্টির মূল রহস্যের সন্ধান। এমনকি ফেরেশতাকুল শিরোমনি হযরত জিবরাইল عليه السلام ও হাকিকতে মুহাম্মদী [ﷺ] সম্পর্কে পূর্ণ অবগত ছিলেন না। তিনি শুধু একটি তারকাকে বাহাত্তর হাজার বার উদিত হতে দেখেছেন, সত্তর হাজার বছর পর পর। আর সত্তর হাজার বছর পর পর ডুবন্ত অবস্থায় বাহাত্তর হাজার বার দেখতেই পাননি। অংকের হিসেবে পাঁচশত চার কোটি বছর উদিত অবস্থায় ঐ তারকার যাহেরী সুরত মাত্র দেখেছিলেন হযরত জিবরাইল عليه السلام। বাতেনীরূপে ঐ তারকা অনুরূপ পাঁচশত চার কোটি বছর অবস্থান করেছিলেন। যাহেরী ও বাতেনী অবস্থায় মোট এক হাজার আট কোটি বৎসর নবী করীম [ﷺ] নূরানী চতুর্থ হিজাবে বিদ্যমান ছিলেন।
কিন্তু জিবরাইল عليه السلام ঐ বাতেনী সুরতের বিষয়ে সম্যক অবগত ছিলেন না। হযরত আবু হোরায়রা (رضي الله عنه) বর্ণিত হাদীস মোতাবেক নবী করীম রাউফুর রাহীম [ﷺ] জিবরাইল عليه السلام কে ঐ তারকার তথ্য জানিয়ে বলেছিলেন, “আমি ছিলাম ঐ তারকা” (সীরাতে হলবিয়া ১ম খন্ড ৩০ পৃষ্ঠা ও রুহুল বয়ান সূরা তাওবা ১২৮ আয়াত)। সুতরাং এই হাকিকতে মুহাম্মদীর অর্ধেক বাতেনী অংশ বা বাতেনী রূপ সম্পর্কে জিবরাইলের ও জানা ছিলো না প্রকৃত অবস্থা।
মি’রাজ রজনীতে খোদার দীদার লাভ করে যখন নবী করীম [ﷺ] ফিরতি পথে একা একা ষষ্ঠ আকাশে নেমে আসলেন, তখন মূসা عليه السلام এঁর সাথে তাঁর সাক্ষাৎ হয়েছিল। হযরত মূসা عليه السلام এঁর অনুরোধে তিনি পুনরায় নয় বার আল্লাহর দরবারে একা একা আসা যাওয়া করেছিলেন উম্মতের নামাযের সংখ্যা কমানোর জন্য। বাহ্যিক দৃষ্টিতে উম্মতে মুহাম্মদীর [ﷺ] প্রতি মূসা عليه السلام এঁর মায়া ও দরদ দেখা গেলেও প্রকৃতপক্ষে মূসা عليه السلام এঁর আর একটি উদ্দেশ্য এখানে গোপনে ও প্রচ্ছন্নভাবে কাজ করেছিলো। সেটা ছিল আল্লাহর নূরের তাজাল্লী দর্শনের প্রবল আকাঙ্খা (তাফসীরে সাভী)। আড়াই হাজার বছর পূর্বে তূর পর্বতে আল্লাহর নূরের জালালী তাজাল্লী সহ্য করতে না পেরে তিনি বেহুঁশ হয়ে পড়েছিলেন। আজ মি’রাজ রাতে সেই নূরের তাজাল্লী নবীজীর চেহারা মোবারকে প্রতিফলিত দেখে মূসা عليه السلام এঁর সুপ্ত বাসনা পুনরায় জেগে উঠে। তাই তিনি উম্মতে মুহাম্মদীর [ﷺ] নামাজের বাহানায় পুনঃ নয় বার আল্লাহর নূরের দীদার নবীজীর মাধ্যমে লাভ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। আল্লাহর প্রিয় হাবীব [ﷺ] হলেন আল্লাহ দর্শনের আয়না স্বরূপ (মসনবী শরীফ)। এই আয়নাতেই আল্লাহর নূর প্রতিবিম্বিত হয় এবং তখন দেখাও সম্ভব, যেমন পূর্ণ সূর্যগ্রহণের সময় এক্সরে ফিল্মের মাধ্যমে সূর্যগ্রহণের রূপ দেখা যায়, খালি চোখে সম্ভব নয়।
মসনবী শরীফে সূফী সম্রাট আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমী (رحمة الله عليه) বলেছেনঃ
“মোস্তফা আয়নায়ে জিল্লে খোদাস্ত,
মুনআকাছ দর ওয়ায় হামা খোয়ে খোদাস্ত।”
অর্থঃ “ নবী মোস্তফা [ﷺ] হচ্ছেন আল্লাহর নূরানী তাজাল্লী দর্শনের আয়না স্বরূপ। ঐ আয়নাতেই আল্লাহর পবিত্র যাতের সবকিছু প্রতিবিম্বিত ও প্রতিফলিত হয়।” মাওলানা রুমীর উচ্চমার্গের এই আধ্যাত্মিক তত্ত্ব মূলতঃ মূসা عليه السلام এঁর নবী দর্শনের তথ্য হতেই উৎসারিত।
উপরের দু’টি ঘটনা থেকে এই শিক্ষাই পাওয়া গেল যে, হাকিকতে মুহাম্মদীর [ﷺ] স্বরূপ উদঘাটন করতে হলে জিবরাইল ও হযরত মুসা عليه السلام থেকেই তথ্য সংগ্রহ করতে হবে এবং তাঁদের দৃষ্টিতেই দেখতে হবে। মানুষের দৃষ্টিতে দেখতে গেলে তিনি আমাদের মত বলেই মনে হবে। আবু জাহেল ও আবু বকর (رضي الله عنه) উভয়েই নবীজীকে দেখেছে। প্রথমজন দেখেছে কুফুরী নজরে। তাই বলেছে- “তিনি তো আমাদের মতই একজন সাধারণ মানুষ”। দ্বিতীয়জন দেখেছেন ঈমানী নজরে। তাই তিনি বলেছেন- “মোহাম্মাদুন বাশারুন লাকাল বাশারী” অর্থাৎ ”মুহাম্মদ মোস্তফা [ﷺ] সুরতে মানবজাতি হয়েও কোন মানুষের মতই নন”(আল্লামা বুছেরীর কাসিদায়ে বোরদা)। সুবহানাল্লাহ!
হুযুর [ﷺ]-এঁর ক্ষেত্রে এসেই ঈমান ও কুফুরীর পার্থক্য ধরা পড়ে যায়। আল্লাহ সম্পর্কে তেমন আশংকা কম। একদল লোক নিজেদের দাঁড়িপাল্লা দিয়ে নবীজীকে ওজন করতে চায়। আর একদল লোক নবীজীর দাঁড়িপাল্লায় নিজেকে ওজন করে নেয়। ঝিনুক দিয়ে সাগরের পানি মাপা যায় না। মাপতে গেলে সাগরের পানি কমবে না। কিন্তু ঝিনুকের জীবন সর্বনাশ হয়ে যাবে। তাই বলছিলাম - যেখানে হযরত জিবরাইল عليه السلام এবং হযরত মুসা عليه السلام নবীজীর নূরের পূর্ণ হাকিক্বত অনুধাবনে অক্ষম - সেখানে আমরা কে?
কিন্তু হাল জামানার একশ্রেণির জ্ঞানপাপী নামধারী আলেম ও জাহেল পীর নবী করীম [ﷺ]-এঁর নূর মোবারক কে অস্বীকার করে তাকে মাটির সৃষ্টি বলে অজস্র টাকা খরচ করে বই লিখে ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছে। তাদের বই পুস্তকে নবীজীর আল্লাহ প্রদত্ত ইলমে গায়েব ও হাযির-নাযির সিফাতকে তারা অস্বীকার করেছে। তাদের এই কুফুরী প্রচারণায় মানুষ ধোকায় পড়ে বিভ্রান্ত হচ্ছে। তাই এই অধম লেখক নিজের এলেমের দীনতা ও সীমাবদ্ধতা সত্বেও তাদের বিরুদ্ধে মসি তলোয়ার উত্তোলন করতে চেষ্টা করেছি। বক্ষমান গ্রন্থের নামকরণ করেছি “নূরনবী [ﷺ]” বা “ঈদে মীলাদুন্নবী [ﷺ] সংকলন।” নবী করীম [ﷺ]-এঁর আদি সৃষ্টি হতে ইন্তিকাল পর্যন্ত আক্বিদা ভিত্তিক জীবনী ও চরিতাংশ আলোচনা করেছি এই গ্রন্থে। দলীল প্রমাণ যথাসাধ্য কোটেশন ভিত্তিক উল্লেখ করার চেষ্টা করেছি। সাধারণতঃ রেফারেন্স ভিত্তিক অনুবাদ পেশ করেছি। মূল গ্রন্থ সংরক্ষিত রেখেছি, প্রয়োজনে পেশ করার জন্যে। প্রতিটি অধ্যায়ে সংশ্লিষ্ট আক্বিদা ও শিক্ষণীয় বিষয় উল্লেখ করেছি, যাতে ঘটনার মাধ্যমে ঈমান-আক্বিদা সংশোধন করা যায়।
পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ রচনায় এটি আমার প্রথম প্রয়াস হলেও অন্যান্য জীবনী লেখকদের থেকে এটি স্বতন্ত্র প্রয়াস। উদ্দেশ্য মাত্র একটি। নূর, ইলমে গায়েব, হাযির-নাযির ও নবীজীর আল্লাহ প্রদত্ত শক্তি ও এখতেয়ার সম্পর্কে বিরুদ্ধবাদী সম্প্রদায়ের মুখোশ উন্মোচন করা এবং সরল মুসলমানদের ঈমান ও আক্বিদা অক্ষত রাখা। মানবীয় দুর্বলতা থেকে আমি মুক্ত নই, নবীগণই কেবল মুক্ত। তাই অজ্ঞাতে বা অসাবধানতা বশতঃ ভাষায় বা ভাবে ত্রুটি থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তদুপরি মুদ্রণজনিত ত্রুটির তো সম্ভাবনা আছেই। যদি কোন নবীপ্রেমিক মোহাক্কিক আলেম আমার ভুল-ত্রুটি সংশোধন করে দলীল ভিত্তিক সঠিক ও উন্নত তথ্য দিতে পারেন, তবে পরবর্তী সংস্করণে তা সংযোজন করা হবে ইনশাআল্লাহ!!
বিনীত
গ্রন্থাকার
****************
=============
আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন যখন ছিলেন একা, ছিলো না তাঁর সখা, ছিল না তাঁর পরিচয়। তিনি ছিলেন গুপ্ত ধন-ভান্ডারের ন্যায়। নিজের আত্মপরিচয় ও আত্মপ্রকাশের উদ্দেশ্যে তিনি আপন যাতি নূরের ফয়েজ, ঝলক ও জ্যোতিঃ হতে সৃষ্টি করলেন আপন হাবীবের নূর মোবারক। ঐ নূরে মুহাম্মদী [ﷺ] হতেই পয়দা করলেন আরশ-কুরসি, লাওহ-কলম, আসমান-জমিন তথা সবকিছু। তখন আগুন-পানি, মাটি-বায়ু অর্থাৎ সৃষ্টির মৌলিক কোন পদার্থেরই অস্তিত্ব ছিলো না। সুতরাং নূরে মুহাম্মদী [ﷺ] হলো প্রথম ও মৌলিক সৃষ্টি। এই সৃষ্টি রহস্যের তো তখন কোন স্বাক্ষীই ছিলো না খোদা ভিন্ন। সন্তান যেমন জানেনা পিতা মাতার সৃষ্টি রহস্য সম্পর্কে, তদ্রূপ খোদার সৃষ্টি জগত ও জানেনা তাদের সৃষ্টির মূল রহস্যের সন্ধান। এমনকি ফেরেশতাকুল শিরোমনি হযরত জিবরাইল عليه السلام ও হাকিকতে মুহাম্মদী [ﷺ] সম্পর্কে পূর্ণ অবগত ছিলেন না। তিনি শুধু একটি তারকাকে বাহাত্তর হাজার বার উদিত হতে দেখেছেন, সত্তর হাজার বছর পর পর। আর সত্তর হাজার বছর পর পর ডুবন্ত অবস্থায় বাহাত্তর হাজার বার দেখতেই পাননি। অংকের হিসেবে পাঁচশত চার কোটি বছর উদিত অবস্থায় ঐ তারকার যাহেরী সুরত মাত্র দেখেছিলেন হযরত জিবরাইল عليه السلام। বাতেনীরূপে ঐ তারকা অনুরূপ পাঁচশত চার কোটি বছর অবস্থান করেছিলেন। যাহেরী ও বাতেনী অবস্থায় মোট এক হাজার আট কোটি বৎসর নবী করীম [ﷺ] নূরানী চতুর্থ হিজাবে বিদ্যমান ছিলেন।
কিন্তু জিবরাইল عليه السلام ঐ বাতেনী সুরতের বিষয়ে সম্যক অবগত ছিলেন না। হযরত আবু হোরায়রা (رضي الله عنه) বর্ণিত হাদীস মোতাবেক নবী করীম রাউফুর রাহীম [ﷺ] জিবরাইল عليه السلام কে ঐ তারকার তথ্য জানিয়ে বলেছিলেন, “আমি ছিলাম ঐ তারকা” (সীরাতে হলবিয়া ১ম খন্ড ৩০ পৃষ্ঠা ও রুহুল বয়ান সূরা তাওবা ১২৮ আয়াত)। সুতরাং এই হাকিকতে মুহাম্মদীর অর্ধেক বাতেনী অংশ বা বাতেনী রূপ সম্পর্কে জিবরাইলের ও জানা ছিলো না প্রকৃত অবস্থা।
মি’রাজ রজনীতে খোদার দীদার লাভ করে যখন নবী করীম [ﷺ] ফিরতি পথে একা একা ষষ্ঠ আকাশে নেমে আসলেন, তখন মূসা عليه السلام এঁর সাথে তাঁর সাক্ষাৎ হয়েছিল। হযরত মূসা عليه السلام এঁর অনুরোধে তিনি পুনরায় নয় বার আল্লাহর দরবারে একা একা আসা যাওয়া করেছিলেন উম্মতের নামাযের সংখ্যা কমানোর জন্য। বাহ্যিক দৃষ্টিতে উম্মতে মুহাম্মদীর [ﷺ] প্রতি মূসা عليه السلام এঁর মায়া ও দরদ দেখা গেলেও প্রকৃতপক্ষে মূসা عليه السلام এঁর আর একটি উদ্দেশ্য এখানে গোপনে ও প্রচ্ছন্নভাবে কাজ করেছিলো। সেটা ছিল আল্লাহর নূরের তাজাল্লী দর্শনের প্রবল আকাঙ্খা (তাফসীরে সাভী)। আড়াই হাজার বছর পূর্বে তূর পর্বতে আল্লাহর নূরের জালালী তাজাল্লী সহ্য করতে না পেরে তিনি বেহুঁশ হয়ে পড়েছিলেন। আজ মি’রাজ রাতে সেই নূরের তাজাল্লী নবীজীর চেহারা মোবারকে প্রতিফলিত দেখে মূসা عليه السلام এঁর সুপ্ত বাসনা পুনরায় জেগে উঠে। তাই তিনি উম্মতে মুহাম্মদীর [ﷺ] নামাজের বাহানায় পুনঃ নয় বার আল্লাহর নূরের দীদার নবীজীর মাধ্যমে লাভ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। আল্লাহর প্রিয় হাবীব [ﷺ] হলেন আল্লাহ দর্শনের আয়না স্বরূপ (মসনবী শরীফ)। এই আয়নাতেই আল্লাহর নূর প্রতিবিম্বিত হয় এবং তখন দেখাও সম্ভব, যেমন পূর্ণ সূর্যগ্রহণের সময় এক্সরে ফিল্মের মাধ্যমে সূর্যগ্রহণের রূপ দেখা যায়, খালি চোখে সম্ভব নয়।
মসনবী শরীফে সূফী সম্রাট আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমী (رحمة الله عليه) বলেছেনঃ
“মোস্তফা আয়নায়ে জিল্লে খোদাস্ত,
মুনআকাছ দর ওয়ায় হামা খোয়ে খোদাস্ত।”
অর্থঃ “ নবী মোস্তফা [ﷺ] হচ্ছেন আল্লাহর নূরানী তাজাল্লী দর্শনের আয়না স্বরূপ। ঐ আয়নাতেই আল্লাহর পবিত্র যাতের সবকিছু প্রতিবিম্বিত ও প্রতিফলিত হয়।” মাওলানা রুমীর উচ্চমার্গের এই আধ্যাত্মিক তত্ত্ব মূলতঃ মূসা عليه السلام এঁর নবী দর্শনের তথ্য হতেই উৎসারিত।
উপরের দু’টি ঘটনা থেকে এই শিক্ষাই পাওয়া গেল যে, হাকিকতে মুহাম্মদীর [ﷺ] স্বরূপ উদঘাটন করতে হলে জিবরাইল ও হযরত মুসা عليه السلام থেকেই তথ্য সংগ্রহ করতে হবে এবং তাঁদের দৃষ্টিতেই দেখতে হবে। মানুষের দৃষ্টিতে দেখতে গেলে তিনি আমাদের মত বলেই মনে হবে। আবু জাহেল ও আবু বকর (رضي الله عنه) উভয়েই নবীজীকে দেখেছে। প্রথমজন দেখেছে কুফুরী নজরে। তাই বলেছে- “তিনি তো আমাদের মতই একজন সাধারণ মানুষ”। দ্বিতীয়জন দেখেছেন ঈমানী নজরে। তাই তিনি বলেছেন- “মোহাম্মাদুন বাশারুন লাকাল বাশারী” অর্থাৎ ”মুহাম্মদ মোস্তফা [ﷺ] সুরতে মানবজাতি হয়েও কোন মানুষের মতই নন”(আল্লামা বুছেরীর কাসিদায়ে বোরদা)। সুবহানাল্লাহ!
হুযুর [ﷺ]-এঁর ক্ষেত্রে এসেই ঈমান ও কুফুরীর পার্থক্য ধরা পড়ে যায়। আল্লাহ সম্পর্কে তেমন আশংকা কম। একদল লোক নিজেদের দাঁড়িপাল্লা দিয়ে নবীজীকে ওজন করতে চায়। আর একদল লোক নবীজীর দাঁড়িপাল্লায় নিজেকে ওজন করে নেয়। ঝিনুক দিয়ে সাগরের পানি মাপা যায় না। মাপতে গেলে সাগরের পানি কমবে না। কিন্তু ঝিনুকের জীবন সর্বনাশ হয়ে যাবে। তাই বলছিলাম - যেখানে হযরত জিবরাইল عليه السلام এবং হযরত মুসা عليه السلام নবীজীর নূরের পূর্ণ হাকিক্বত অনুধাবনে অক্ষম - সেখানে আমরা কে?
কিন্তু হাল জামানার একশ্রেণির জ্ঞানপাপী নামধারী আলেম ও জাহেল পীর নবী করীম [ﷺ]-এঁর নূর মোবারক কে অস্বীকার করে তাকে মাটির সৃষ্টি বলে অজস্র টাকা খরচ করে বই লিখে ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছে। তাদের বই পুস্তকে নবীজীর আল্লাহ প্রদত্ত ইলমে গায়েব ও হাযির-নাযির সিফাতকে তারা অস্বীকার করেছে। তাদের এই কুফুরী প্রচারণায় মানুষ ধোকায় পড়ে বিভ্রান্ত হচ্ছে। তাই এই অধম লেখক নিজের এলেমের দীনতা ও সীমাবদ্ধতা সত্বেও তাদের বিরুদ্ধে মসি তলোয়ার উত্তোলন করতে চেষ্টা করেছি। বক্ষমান গ্রন্থের নামকরণ করেছি “নূরনবী [ﷺ]” বা “ঈদে মীলাদুন্নবী [ﷺ] সংকলন।” নবী করীম [ﷺ]-এঁর আদি সৃষ্টি হতে ইন্তিকাল পর্যন্ত আক্বিদা ভিত্তিক জীবনী ও চরিতাংশ আলোচনা করেছি এই গ্রন্থে। দলীল প্রমাণ যথাসাধ্য কোটেশন ভিত্তিক উল্লেখ করার চেষ্টা করেছি। সাধারণতঃ রেফারেন্স ভিত্তিক অনুবাদ পেশ করেছি। মূল গ্রন্থ সংরক্ষিত রেখেছি, প্রয়োজনে পেশ করার জন্যে। প্রতিটি অধ্যায়ে সংশ্লিষ্ট আক্বিদা ও শিক্ষণীয় বিষয় উল্লেখ করেছি, যাতে ঘটনার মাধ্যমে ঈমান-আক্বিদা সংশোধন করা যায়।
পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ রচনায় এটি আমার প্রথম প্রয়াস হলেও অন্যান্য জীবনী লেখকদের থেকে এটি স্বতন্ত্র প্রয়াস। উদ্দেশ্য মাত্র একটি। নূর, ইলমে গায়েব, হাযির-নাযির ও নবীজীর আল্লাহ প্রদত্ত শক্তি ও এখতেয়ার সম্পর্কে বিরুদ্ধবাদী সম্প্রদায়ের মুখোশ উন্মোচন করা এবং সরল মুসলমানদের ঈমান ও আক্বিদা অক্ষত রাখা। মানবীয় দুর্বলতা থেকে আমি মুক্ত নই, নবীগণই কেবল মুক্ত। তাই অজ্ঞাতে বা অসাবধানতা বশতঃ ভাষায় বা ভাবে ত্রুটি থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তদুপরি মুদ্রণজনিত ত্রুটির তো সম্ভাবনা আছেই। যদি কোন নবীপ্রেমিক মোহাক্কিক আলেম আমার ভুল-ত্রুটি সংশোধন করে দলীল ভিত্তিক সঠিক ও উন্নত তথ্য দিতে পারেন, তবে পরবর্তী সংস্করণে তা সংযোজন করা হবে ইনশাআল্লাহ!!
বিনীত
গ্রন্থাকার
****************
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন