চতুর্থ অধ্যায়ঃ হযরতের মূল পূর্বপুরুষগণ মু’মিনঃ
প্রসঙ্গঃ হযরত আদম (عليه السلام) থেকে হযরত আবদুল্লাহ ও বিবি আমেনা পর্যন্ত হুযুর [ﷺ]-এঁর মূলধারার পূর্বপুরুষ ও নারীগণ সকলেই মু’মিন ছিলেন।
===========
হুযুর আকরাম [ﷺ]-এঁর উর্দ্ধতন মূলধারার পূর্বপুরুষ নর-নারী সকলেই মু’মিন ছিলেন, এ বিষয়ে সংক্ষেপে কয়েকটি প্রমাণ পেশ করা হচ্ছে।
প্রথম প্রমাণঃ কোরআন মজিদের সূরা শুয়ারা, আয়াত নং ২১৯-এ আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেনঃ وَتَقَلُّبَكَ فِى السَّاجِدِيْنَ
অর্থঃ- “হে রাসূল! সিজদাকারী মু’মিনগণের মধ্যে আপনার আবর্তন আমি লক্ষ্য করেছি।” হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে “আপনার পূর্ববর্তী সকল নর-নারী যাদের মাধ্যমে আপনি আবর্তিত হয়ে এসেছেন- তাঁরা সকলেই ছিলেন সিজদাকারী মু’মিন।” (তাফসীরে ইবনে আব্বাস)।
দ্বিতীয় প্রমাণঃ নবী করীম [ﷺ]-এরশাদ করেছেনঃ
لَمْ يَزَل اللهُ يَنْقُلُنِي مِنَ الاَصْلاَبِ الطَّيِّبَةِ اِلَى الاَرْحَامِ الظَّاهِرَةِ مُصَفَّى مُّهَذَّبًا (عن أبن عباس-مواهب)
অর্থঃ- “আল্লাহ তায়ালা পর্যায়ক্রমে আমাকে পবিত্র ঔরসে (মু’মিন পুরুষ) হতে পবিত্র গর্ভের (মু’মিন নারী) মাধ্যমে পাক-সাফ অবস্থায় স্থানান্তরিত করে পৃথিবীতে এনেছেন।”
হাদীসখানা এত পরিষ্কার এবং এত শালীন ভাষায় উদ্ধৃত হয়েছে যে, যুগ-যুগান্তরের শিরক ও কুফরীর অপবিত্রতা এবং চরিত্রগত ত্রুটি-বিচ্যুতি থেকে হুযুর [ﷺ]-এঁর পূর্ব পুরুষগণের মুক্ত থাকার পরিষ্কার ইঙ্গিত তাতে পরিষ্ফুট হয়ে উঠেছে। কোরআনের পরিভাষায় পবিত্র নর-নারী বলতে ঈমানদারকেই বুঝানো হয়েছে। (সুরা মু’মিনুন ১৮ পারা)
তৃতীয় প্রমাণঃ ইবনে মোহাম্মদ কলবীর বর্ণনা সূত্রে তাঁর পিতা মুহাম্মদ কলবী (رحمة الله عليه) বলেনঃ-
كَتَبْتُ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَمْسَ مِائَةِ اُمَّهَاتِه فَلَمْ اَجِدْ فِيْهِنَّ سِفَاحًا وَلاَ شَيْئًا مِّنْ اَمْرِ الجَاهِلِيَّة
অর্থঃ- “আমি নবী করীম [ﷺ]-এঁর বংশধারার পূর্ববর্তী পাঁচশত মায়ের তালিকা প্রস্তুত করেছি। তাঁদের মধ্যে আমি চরিত্রহীনতা এবং জাহেলিয়াতের কিছুই পাইনি।” (বেদায়া-নেহায়া)
জাহেলিয়াত অর্থ কুফরী ও শেরকী। চরিত্রহীনতা অর্থ যিনা। সুতরাং হুযুরের উর্দ্ধতন মহিলারা ছিলেন শিরক, কুফর ও চরিত্রহীনতা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত- অর্থাৎ মু’মিনা ও সতী-সাধ্বী নারী ছিলেন। সুতরাং উপরোক্ত তিনটি অকাট্য দলীলের দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, নবী করীম [ﷺ]-এঁর পিতা-মাতা মু’মিন ছিলেন এবং মিল্লাতে ইব্রাহীমীর উপর তাঁদের মৃত্যু হয়েছিল।
ইসলামের আবির্ভাবের পর দশম হিজরীতে যখন নবী করীম [ﷺ] হজ্ব করতে মক্কা শরীফে আগমন করেন, তখন হাজুন নামক কবরস্থানে (বর্তমানে জান্নাতুল মুয়াল্লা) আল্লাহ পাক তাঁর পিতা-মাতাকে এনে পুনর্জীবিত করে দ্বীনে মুহাম্মদী [ﷺ] গ্রহণ করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। ইমাম সোহায়লী ও খতীবে বাগদাদী সূত্রে হযরত আয়েশা (رضي الله عنها) কর্তৃক বর্ণিত এ সম্পর্কীয় হাদীসখানা বেদায়া-নেহায়া গ্রন্থে ইবনে কাসির এবং মাওয়াহেব গ্রন্থে ইমাম কাস্তুলানী, ফতোয়া শামীতে আল্লামা ইবনে আবেদীন প্রমুখ বর্ণনা করেছেন।
কিন্তু বিদ’আতি আলেমগন বলে থাকেন যে, এসব হাদীস নাকি জাল বা মওযু। একারণেই উপরে তিনটি নির্ভরযোগ্য সূত্র উল্লেখ করা হলো। ওহাবীদের মতে, হযরত আবদুল্লাহ ও বিবি আমেনা (رضي الله عنهما) নাকি কুফরী হালতে ইন্তিকাল করেছেন (নাউযুবিল্লাহ!)। তারা যুক্তি হিসেবে বলে থাকে যে, হযরত আবদুল্লাহ (رضي الله عنه) রাসূল [ﷺ]-এঁর জন্মের পূর্বে এবং বিবি আমেনা (رضي الله عنها) হুযুরের ছয় বছর বয়সে ইনতিকাল করেছেন। তাই তাঁরা ইসলাম গ্রহণের যুগ পাননি। তাদের এই কুটযুক্তি উপরের তিনটি দলীলের দ্বারা অসার প্রমাণিত হয়েছে। তারা আর একটি যুক্তি দেখায় যে, বিবি আমেনার (رضي الله عنه) কবর যিয়ারত করতে চাইলে আল্লাহ তায়ালা নবী করীম [ﷺ]-কে অনুমতি দেন। কিন্তু মাগফিরাতের দোয়ার অনুমতি চাইলে প্রত্যাখ্যান করেন। সুতরাং তাদের মতে তিনি মু’মিনা ছিলেন না।
আল্লামা মানাভী এর জবাব এভাবে দিয়েছেন - কবর যিয়ারতের অনুমতি প্রদানই প্রমাণ করে যে, বিবি আমেনা (رضي الله عنها) মু’মিনা ছিলেন। আর তিনি নেককার ছিলেন বলেই ঐ সময় মাগফিরাতের প্রাথনা নামঞ্জুর করা হয়।” তবে নবী করীম [ﷺ] উম্মতের শিক্ষার জন্য সবসময় মাতাপিতার জন্য মাগফিরাতের দোয়া করতেন - যার বর্ণনা নিম্নে করা ।
উস্তাজুল উলামা আল্লামা আবদুল জলীল রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর 'শিয়া পরিচিতি' থেকে প্রকাশিত হচ্ছে।
প্রসঙ্গঃ হযরত আদম (عليه السلام) থেকে হযরত আবদুল্লাহ ও বিবি আমেনা পর্যন্ত হুযুর [ﷺ]-এঁর মূলধারার পূর্বপুরুষ ও নারীগণ সকলেই মু’মিন ছিলেন।
===========
হুযুর আকরাম [ﷺ]-এঁর উর্দ্ধতন মূলধারার পূর্বপুরুষ নর-নারী সকলেই মু’মিন ছিলেন, এ বিষয়ে সংক্ষেপে কয়েকটি প্রমাণ পেশ করা হচ্ছে।
প্রথম প্রমাণঃ কোরআন মজিদের সূরা শুয়ারা, আয়াত নং ২১৯-এ আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেনঃ وَتَقَلُّبَكَ فِى السَّاجِدِيْنَ
অর্থঃ- “হে রাসূল! সিজদাকারী মু’মিনগণের মধ্যে আপনার আবর্তন আমি লক্ষ্য করেছি।” হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে “আপনার পূর্ববর্তী সকল নর-নারী যাদের মাধ্যমে আপনি আবর্তিত হয়ে এসেছেন- তাঁরা সকলেই ছিলেন সিজদাকারী মু’মিন।” (তাফসীরে ইবনে আব্বাস)।
দ্বিতীয় প্রমাণঃ নবী করীম [ﷺ]-এরশাদ করেছেনঃ
لَمْ يَزَل اللهُ يَنْقُلُنِي مِنَ الاَصْلاَبِ الطَّيِّبَةِ اِلَى الاَرْحَامِ الظَّاهِرَةِ مُصَفَّى مُّهَذَّبًا (عن أبن عباس-مواهب)
অর্থঃ- “আল্লাহ তায়ালা পর্যায়ক্রমে আমাকে পবিত্র ঔরসে (মু’মিন পুরুষ) হতে পবিত্র গর্ভের (মু’মিন নারী) মাধ্যমে পাক-সাফ অবস্থায় স্থানান্তরিত করে পৃথিবীতে এনেছেন।”
হাদীসখানা এত পরিষ্কার এবং এত শালীন ভাষায় উদ্ধৃত হয়েছে যে, যুগ-যুগান্তরের শিরক ও কুফরীর অপবিত্রতা এবং চরিত্রগত ত্রুটি-বিচ্যুতি থেকে হুযুর [ﷺ]-এঁর পূর্ব পুরুষগণের মুক্ত থাকার পরিষ্কার ইঙ্গিত তাতে পরিষ্ফুট হয়ে উঠেছে। কোরআনের পরিভাষায় পবিত্র নর-নারী বলতে ঈমানদারকেই বুঝানো হয়েছে। (সুরা মু’মিনুন ১৮ পারা)
তৃতীয় প্রমাণঃ ইবনে মোহাম্মদ কলবীর বর্ণনা সূত্রে তাঁর পিতা মুহাম্মদ কলবী (رحمة الله عليه) বলেনঃ-
كَتَبْتُ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَمْسَ مِائَةِ اُمَّهَاتِه فَلَمْ اَجِدْ فِيْهِنَّ سِفَاحًا وَلاَ شَيْئًا مِّنْ اَمْرِ الجَاهِلِيَّة
অর্থঃ- “আমি নবী করীম [ﷺ]-এঁর বংশধারার পূর্ববর্তী পাঁচশত মায়ের তালিকা প্রস্তুত করেছি। তাঁদের মধ্যে আমি চরিত্রহীনতা এবং জাহেলিয়াতের কিছুই পাইনি।” (বেদায়া-নেহায়া)
জাহেলিয়াত অর্থ কুফরী ও শেরকী। চরিত্রহীনতা অর্থ যিনা। সুতরাং হুযুরের উর্দ্ধতন মহিলারা ছিলেন শিরক, কুফর ও চরিত্রহীনতা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত- অর্থাৎ মু’মিনা ও সতী-সাধ্বী নারী ছিলেন। সুতরাং উপরোক্ত তিনটি অকাট্য দলীলের দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, নবী করীম [ﷺ]-এঁর পিতা-মাতা মু’মিন ছিলেন এবং মিল্লাতে ইব্রাহীমীর উপর তাঁদের মৃত্যু হয়েছিল।
ইসলামের আবির্ভাবের পর দশম হিজরীতে যখন নবী করীম [ﷺ] হজ্ব করতে মক্কা শরীফে আগমন করেন, তখন হাজুন নামক কবরস্থানে (বর্তমানে জান্নাতুল মুয়াল্লা) আল্লাহ পাক তাঁর পিতা-মাতাকে এনে পুনর্জীবিত করে দ্বীনে মুহাম্মদী [ﷺ] গ্রহণ করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। ইমাম সোহায়লী ও খতীবে বাগদাদী সূত্রে হযরত আয়েশা (رضي الله عنها) কর্তৃক বর্ণিত এ সম্পর্কীয় হাদীসখানা বেদায়া-নেহায়া গ্রন্থে ইবনে কাসির এবং মাওয়াহেব গ্রন্থে ইমাম কাস্তুলানী, ফতোয়া শামীতে আল্লামা ইবনে আবেদীন প্রমুখ বর্ণনা করেছেন।
কিন্তু বিদ’আতি আলেমগন বলে থাকেন যে, এসব হাদীস নাকি জাল বা মওযু। একারণেই উপরে তিনটি নির্ভরযোগ্য সূত্র উল্লেখ করা হলো। ওহাবীদের মতে, হযরত আবদুল্লাহ ও বিবি আমেনা (رضي الله عنهما) নাকি কুফরী হালতে ইন্তিকাল করেছেন (নাউযুবিল্লাহ!)। তারা যুক্তি হিসেবে বলে থাকে যে, হযরত আবদুল্লাহ (رضي الله عنه) রাসূল [ﷺ]-এঁর জন্মের পূর্বে এবং বিবি আমেনা (رضي الله عنها) হুযুরের ছয় বছর বয়সে ইনতিকাল করেছেন। তাই তাঁরা ইসলাম গ্রহণের যুগ পাননি। তাদের এই কুটযুক্তি উপরের তিনটি দলীলের দ্বারা অসার প্রমাণিত হয়েছে। তারা আর একটি যুক্তি দেখায় যে, বিবি আমেনার (رضي الله عنه) কবর যিয়ারত করতে চাইলে আল্লাহ তায়ালা নবী করীম [ﷺ]-কে অনুমতি দেন। কিন্তু মাগফিরাতের দোয়ার অনুমতি চাইলে প্রত্যাখ্যান করেন। সুতরাং তাদের মতে তিনি মু’মিনা ছিলেন না।
আল্লামা মানাভী এর জবাব এভাবে দিয়েছেন - কবর যিয়ারতের অনুমতি প্রদানই প্রমাণ করে যে, বিবি আমেনা (رضي الله عنها) মু’মিনা ছিলেন। আর তিনি নেককার ছিলেন বলেই ঐ সময় মাগফিরাতের প্রাথনা নামঞ্জুর করা হয়।” তবে নবী করীম [ﷺ] উম্মতের শিক্ষার জন্য সবসময় মাতাপিতার জন্য মাগফিরাতের দোয়া করতেন - যার বর্ণনা নিম্নে করা ।
উস্তাজুল উলামা আল্লামা আবদুল জলীল রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর 'শিয়া পরিচিতি' থেকে প্রকাশিত হচ্ছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন