নূরনবী ﷺ

দ্বাদশ অধ্যায়ঃ

শিশুকালে মদীনায় গমন
প্রসঙ্গঃ    মায়ের    সাথে  মদীনায়  গমন  ও  পিতার    কবর  যিয়ারত এবং ফিরতি  পথে  মায়ের ইন্তেকাল,  হুজুরের পিতামাতার পুনর্জীবন ও সাহাবীর মর্যাদা লাভ
=========
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে  আব্বাস (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন-    যখন  নবী  করীম  [ﷺ]-এঁর  বয়স  ছয়   বৎসর, তখন বিবি আমেনা (رضي  الله  عنها) আপন দাসী উম্মে আয়মন   (رضي   الله   عنها)   ও   নিজ   পুত্র   মুহাম্মদ   [ﷺ]  নিয়ে     মদীনায়       গমন      করেন।     উদ্দেশ্য     ছিল        কবর যিয়ারত    করা   ও    নিজ   পুত্রকে    মাতুলালয়ে   পরিচিত করা।    মদীনার    বনী  আদী   ইবনে   নাজজার  ছিল  নবী করীম       [ﷺ]-এঁর       মাতুলালয়       এবং       আবু       আইউব  আনসারী   (رضي    الله  عنه)  ছিলেন  সে    বংশের  লোক। 'দারুন      নাবেগা'      নামক      স্থানে      (বর্তমানে      মসজিদে  নববীর পশ্চিমাংশে) হযরত আব্দুল্লাহর (رضي الله عنه) কবর।  সেখানে   তাঁরা  একমাস  অবস্থান   করেন।  উম্মে আইমন (বারাকাহ্) বলেন আমরা যখন মদীনায়, তখন মদীনার প্রতিবেশী একদল  ইহুদী পালাক্রমে এসে নবী  করীম    [ﷺ]-এর    দিকে    বার    বার    দৃষ্টি    দিতে    থাকে।  ইহুদিদের          মধ্যে           একদল         বলে           উঠলো         ”ইনিই বর্তমানকালের    নবী    এবং   মদীনাতেই     তিনি   হিজরত করে   চলে   আসবেন।   এখানে   বহু   হতাহত    হবে    এবং যুদ্ধবন্দীর ঘটনা ঘটবে।”

তাদের   কথা   শুনে   বিবি   আমেনা   নিজ   পুত্র   ও   উম্মে  আয়মনকে   নিয়ে   মক্কায়     রওনা   হয়ে   যান।   পথিমধ্যে  'আবওয়া'   নামক  গ্রামে  পৌঁছলে   হঠাত  বিবি  আমেনা (رضي    الله    عنها)    অসুস্থ     হয়ে    পড়েন     এবং    এখানেই  ইন্তেকাল      করেন।      ইন্নালিল্লাহে      ওয়া       ইন্না        ইলাইহে রাজিউন (বেদায়া-নেহায়া)।

আল্লামা  জালালুদ্দীন  সুয়ুতি  (রহ.)  তারিখুল  খেলাফা  নামক     প্রসিদ্ধ    গ্রন্থে   লিখেছেন   অসুস্থ    অবস্থায়   বিবি আমেনা   (رضي   الله عنها)  উম্মে  আয়মনকে  লক্ষ্য করে যে    কয়টি    হৃদয়বিদারক    উপদেশ   দিয়েছেলেন,    তার মর্মার্থ   এই,    ”হে   উম্মে   আয়মন,   আমি   বিদায়    নিচ্ছি। আমার পর তুমিই তাঁর মা। তাঁকে তুমি আদর-যত্ন করে রাখবে। আর শুনো, তাঁর জন্মকাল থেকে যেসব ঘটনা  আমি      প্রত্যক্ষ      করেছি,      তাতে      আমার      দৃঢ়     বিশ্বাস জন্মেছে   যে,   তিনি   হবেন   শেষ   যামানার   নবী।   এটাই  আমার    চূড়ান্ত   সাক্ষ্য!”     একথা    বলেই   বিবি   আমেনা (رضي الله عنها) জান্নাতবাসিনী হয়ে যান।

পূর্বেই   উল্লেখ    করা  হয়েছে,   বিবি   আমেনা  (رضي    الله عنها)     ও    হযরত    আব্দুল্লাহ    (رضي    الله    عنه)     মিল্লাতে ইবরাহিমীর  উপর      ইন্তেকাল  করেছেন।   সুতরাং  তাঁরা মুমিন      ও      জান্নাতবাসি।     বিবি      আমেনা      (رضي       الله عنها)-এঁর   মন্তব্যে বুঝা  গেল  তিনি- নবীজীর  নবুয়তের  বিশ্বাসী  ছিলেন।  পরবর্তীতে     দশম হিজরী সনে বিদায় হজ্বের   সময়    তাঁদেরকে    পুনারায়    জীবিত     করে   নবী  করীম   [ﷺ]-এঁর   সামনে    পেশ    করা   হয়   এবং   উভয়ে  হানিফ    হওয়া   সত্ত্বেও    পুনারায়   ইসলাম   ধর্মে   দিক্ষীত হয়ে      সাহাবী      হন।      আল্লামা       সোহায়লী       ও      হাফেয নাসিরউদ্দিন খতিব বগদাদী হযরত আয়েশা (رضي الله عنها)       থেকে        এই        হাদীসখান       রেওয়ায়াত       করেন। ফতোয়া          শামী          সহ         বেদায়-নেহায়া,         মাওয়াহেব, আনওয়ারে মুহাম্মদীয়া – প্রভৃতি  নির্ভরযোগ্য কিতাবে এই    রিওয়ায়াতখানা    বর্ণিত    হয়েছে।    সনদের    ক্ষেত্রে  সামন্য  দুর্বল  হলেও     অনেক  বিখ্যাত  মুহাদ্দিস    কর্তৃক গৃহীত  হওয়ার   কারণে    এটা  সবল  হয়ে  হাসান  পর্যায়ে উন্নীত    হয়েছে।    হাদীস     শিক্ষক     ও     মুহাদ্দিসগণ    এই নীতিমালা     সম্পর্কে    ওয়াকিফহাল   রয়েছেন।   সুতরাং  যঈফ   বলে  হাদীসখানাকে   উড়িয়ে দেয়ার মানসিকতা ওহাবীপন্থী আলেমগণের পরিত্যাগ করা উচিত।

এখানে    অগ্রিম   ঈমান  আনায়ন    প্রসঙ্গে   একটি  বিষয় উল্লেখযোগ্য    যে,    নবী    করীম    [ﷺ]-এঁর    আবির্ভাবের  চৌদ্দশত     বৎসর    পূর্বে   ইয়েমেন-এর    বাদশাহ   তিববা আবি  কুরাব  মদীনা ধ্বংস  করার উদ্দেশ্যে   এসে ইহুদী পণ্ডিতদের  নিকট  আখেরি  নবীর     গুণাগুণ  শুনে    নবী  করীম     [ﷺ]-এঁর      রিসালতের      উপর      বিশ্বাস       স্থাপন করেছিলেন।     নবী     করীম      [ﷺ]     এরশাদ        করেছেন, ”তোমরা   তিব্বাকে   গালি   দিওনা,   কেননা   সে   আমার  উপর  পূর্বেই  অগ্রিম  ঈমান  এনেছে   এবং  আমি  তাকে  মি’রাজ রাতে বেহেস্তে বিচরণ করতে দেখেছি।” (ইবনে কাছির-বেদায়া ও নেহায়া)

 উস্তাজুল উলামা আল্লামা আবদুল জলীল রহমাতুল্লাহি তা'আলা আলাইহি এর "  নূরনবী ﷺ" থেকে প্রকাশিত হচ্ছে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন