দ্বাদশ অধ্যায়
*******
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
হযরত আব্দুল্লাহ এবং বিবি আমেনার (رضي الله عنهما) ব্যাপারটিও অনুরূপ। পর্বতীকালে নবী করীম [ﷺ] সাহাবীগণসহ মায়ের কবর যিয়ারত করেন এবং ছোট শিশুর ন্যায় ফুঁফিয়ে ফুঁফিয়ে কাঁদেন। বেদায়া ও নেহায়া এবং মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়া গ্রন্থদ্বয়ে বর্ণিত হাদীসখানা প্রতিধাযোগ্য।
عن سليمان بن بريدة عن أبيه قال انتهى النبي صلى الله عليه وسلم إلى رسم قبر فجلس وجلس الناس حوله فجعل يحرك رأسه كالمخاطب ثم بكى فاستقبله عمر رضي الله عنه فقال: ما يبكيك يا رسول الله؟ قال: هذا قبر آمنة بنت وهب استأذنت ربي في أن أزور قبرها فأذن لي، واستأذنته في الاستغفار لها فأبى علي، وأدركتني رقتها فبكيت قال: فما رؤيت ساعة أكثر باكيا من تلك الساعة -
অর্থঃ- ”হযরত সোলায়মান ইবনে বোরায়দা (রহঃ) তার পিতা বোরায়দা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, একদিন নবী করীম [ﷺ] আবওয়ায় একটি পুরাতন কবরের পার্শ্বে গিয়ে বসলেন এবং তাঁর সঙ্গীগণও কবরের পার্শ্বে বসে পড়লেন। হুজুর পাক [ﷺ] যেন কাউকে সম্বোধন করার মত মাথা নেড়ে নেড়ে কাঁদতে লাগলেন। হযরত ওমর (رضي الله عنه) সামনে এসে আরয করলেন, হে আল্লাহর রাসূল, আপনি কেন কাঁদছেন? নবী করীম [ﷺ] জবাব দিলেন- এটা আমার আম্মা বিবি আমেনা বিনতে ওহাব-এঁর কবর! আমি আমার রবের নিকট মায়ের কবর যিয়ারত করার অনুমিতি চাইলে তিনি মাকে কবর যিয়ারতের অনুমতি দেন। পূনরায় মায়ের জন্য মাগফেরাত কামনার পার্থনা করতে গেলে আমাকে নিষেধ করেন। মায়ের অনাবিল স্নহের কথা স্মরণ করে আমি কেঁদেছি। বর্ণনাকারী সাহাবী বলেন, ঐ সময়ের চেয়ে এত দীর্ঘ সময় ধরে কাঁদতে রাসূল [ﷺ]-কে আর কোনদিন দেখা যায়নি।” (বেদায়া-নেহায়া-ইবনে কাছির)
উপরে বর্ণিত হাদীসখানায় তিনটি বিষয় লক্ষণীয়-
(১) দীর্ঘদিন পর মায়ের কবর সনাক্ত করা।
(২) সাহাবীগণসহ কবরের পার্শ্বে বসে যিয়ারত করা ও কান্নাকাটি করা এবং আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক যিয়ারত করার অনুমতি প্রদান।
(৩) মায়ের জন্য মাগফেরাত কামনার প্রার্থনা করতে বারণ করা।
সুদীর্ঘ সময় পর নবী করীম [ﷺ] কর্তৃক মরুভূমির মধ্যে মায়ের কবর অনুসন্ধান করে বের করা খুবই দুরূহ ব্যাপার ছিল। ইলমে গায়েব না হলে সম্ভব হতো না।
দ্বিতীয় বিষয়টি হলো - সকলে সমবেত হয়ে কবরের পাশে বসে যিয়ারত করার অনুমতি দান। এটা বৈধ এবং নবী করীম [ﷺ]-এঁর সুন্নাত। বিবি আমেনার (رضي الله عنهما) কবর যিয়ারত করার অনুমতি দানের ঘটনার দ্বারা পরিষ্কার ভাবে প্রমাণিত হলো যে, তিনি মু’মিনা ছিলেন। কেননা, কাফেরের কবর যিয়ারত করা জায়েজ নয়।
তৃতীয় বিষয়টি হলো মাগফেরাত প্রার্থনার অনুমতি না দেওয়ার কারণ কি? জবাব হলো - বিবি আমেনা (رضي الله عنها) গুনাহগার ছিলেন না- সুতরাং মাগফিরাত কামনা করা নিরর্থক। উল্লেখ্য যে, নবী করীম [ﷺ] নিজের জন্য এবং পিতা-মাতার মাগফিরাতের জন্য পরবর্তীতে যে দোয়া করতেন- তা ছিল উম্মতের শিক্ষার উদ্দেশ্যে। পরবর্তীতে মাগফেরাতের জন্য দোয়া করার দ্বারা আরো প্রমাণিত হয় যে, তাঁরা মু’মিন ছিলেন। মাগফিরাতের ৩টি অর্থ ৪র্থ অধ্যায়ে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। তদুপরি তিনি ছিলেন নবীজীর মা। তাঁর মর্যাদা অন্যান্য মায়ের মত নয়। আল্লামা মানাভী, শাইখ আব্দুল হক মোহাদ্দেস দেহলভী (رحمة الله عنهما) প্রমুখ মোহাদ্দেসগণ বর্ণিত হাদীসের এই অর্থ গ্রহণ করেছেন।
কিন্তু ওহাবীপন্থী আলেমগণ হাদীসে বর্ণিত ”যিয়ারতের অনুমতি প্রদানের” অংশটির গুরুত্ব না দিয়ে দ্বিতীয় বিষয়টির অপব্যখ্যা করে বলেছেন যে, ”যেহেতু আল্লাহ্ তায়ালা মাগফিরাত পার্থনা করতে নিষেধ করেছেন, সেহেতু বুঝা যায় যে, নবী করীম [ﷺ] মাতা-পিতা মু’মিন ছিলেন না।” নাউযু বিল্লাহ। হাদীসের প্রথম অংশটি পরিষ্কার বলে দিচ্ছে যে, যার কবর যিয়ারত করা হয়, তিনি কোনদিন কাফের হতে পারেন না। কেননা কাফেরর কবর যিয়ারত করা শরিয়তে নাজায়েয। এটাই আহলে সুন্নাতের আকিদা।
উপরে বর্ণিত বিশেষ কারণে ঐ দিন নবীজীর মায়ের জন্য ইসতিগফারের অনুমতি পাওয়ার প্রমাণ পাওয়া না গেলেও অন্য হাদীসে পরবর্তী সময়ে পিতা-মাতার জন্য এবং নিজের জন্য নবী করীম [ﷺ] নিম্নরূপ দোয়া করতেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়ঃ
اللهم اغفر لى ولوالدى وللمؤمنين يوم يقوم الحساب -
”হে আল্লাহ্! তুমি আমাকে, আমার পিতা মাতাকে এবং সকল মুমিনকে মাগফেরাত করে দিও।” (দোয়ায়ে মাছুরা)। এটা ছিল উম্মতের তালিমের উদ্দেশ্যে। মাগফিরাতের ব্যাখ্যা ৪র্থ অধ্যায়ে দেখুন।
উক্ত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হলো যে- নবীজী পরবর্তী সময়ে নিজের জন্য এবং পিতা-মাতার মাগফিরাতে জন্য দোয়া করতেন। সুতরাং বিরুদ্ধবাদীদের ব্যাখ্যাটি সম্পূর্ণ ভুল এবং মনগড়া। তবে মাগফেরাত কামনা করা শুধু গুনাহের জন্য নয় - বরং দীনতা প্রকাশের জন্য এবং উচ্চ মর্তবা লাভের জন্য হয়ে থাকে।
উস্তাজুল উলামা আল্লামা আবদুল জলীল রহমাতুল্লাহি তা'আলা আলাইহি এর " নূরনবী ﷺ" থেকে প্রকাশিত হচ্ছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন