খিলাফত লাভ ও কতিপয় করামাত
১৯২৩ ইংরেজী কিংবা তৎপরবর্তী কোন এক সময়ে শাহানশাহে সিরিকোট তাঁর পীর হযরত চৌহরভী আলায়হির রাহমাহর খিলাফত ও ইজাযত প্রাপ্ত হন। ফলে তাঁর মধ্যে রূহানী ক্ষমতা বা বেলায়তী শক্তি এমনভাবে স্থান লাভ করলো যে, (রেঙ্গুন) থাকাকালেও তাঁর বহু কারামত প্রকাশ পেয়ে যায়। তন্মধ্যে কয়েকটা নিম্নে আলোচিত হলো-
এক. অন্তর্দৃষ্টি সম্পন্ন একজন ওলী হযরত আবদুল হামিদ, প্রকাশ সুলতানুল আউলিয়া একদিন দেখতে পান যে, মসজিদে শাহানশাহে সিরিকোট একদিন রুকূ'-সাজদাহ্ করেছিলেন, অন্যদিকে মসজিদের মিনার ও পার্শ্ববর্তী গাছ-গাছালি তাঁর সাথে রুকূ'-সাজদাহ্ করছে। এমন কারামত দেখে ওই সুলতানুল আউলিয়া হুযূর কেবলা শাহানশাহে সিরিকোটের হাতে বায়'আত গ্রহণের ইচ্ছা ব্যক্ত করেছিলেন।
দুই. তাঁর হাতের বরকতে এক পোয়া (২৫০গ্রাম) পরিমাণ খাদ্যে ১০ থেকে ৫০ জন মানুষ তৃপ্ত হয়ে যেতো। বাঙ্গালী মসজিদে তিনি প্রত্যহ আসরের নামাযের পর তাকরীর করতেন। তখন তাঁর মজলিসে ৪০ থেকে ৫০ জন শ্রোতার সমাগম হতো। মাহফিল শেষে তাঁর তৈরীকৃত ওই পরিমাণ খাদ্য পরিবেশন করা হতো। আর সবাই পরিতৃপ্ত হয়ে যেতো।
তিন. এক সময়ে একাধিক জায়গায় উপস্থিত। উক্ত মসজিদের মুআযযিন বলেন, একদা আমি মাগরিবের সময় মসজিদ পরিষ্কার করে মসজিদ সংলগ্ন হাউজে গেলাম। তখন দেখলাম হুযূর শাহানশাহে সিরিকোট হাম্মানে ওযূ করছেন। ওই সময় আমি মসজিদের দোতলায় গিয়ে দেখি তিনি সেখানে মুসল্লিদের উদ্দেশে তাকরীর করছেন।
চার. ১৯২৮ ইংরেজী সালে, ৩রা শা'বান, বুধবার শাহানশাহে সিরিকোটের প্রথম পুত্র পাকিস্তানের সিরিকোট শরীফে ইন্তেকাল করেন। তখন হুযূর কেবলা বার্মার রেঙ্গুনে বাঙ্গালী মসজিদে ছিলেন। ওই দিন আসরের নামাযের পর হুযূর ক্বেবলা মসজিদ সংশ্লিষ্ট হুজরা শরীফে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলেন। দীর্ঘক্ষণ যাবৎ হুজরা শরীফের দরজা বন্ধ ছিলো। কিন্তু পরবর্তীতে জানা গেছে যে, তাঁকে পাকিস্তানের নিজ বাড়ির সন্নিকটস্থ মাঠে ওই সন্তানের জানাযার নামায পড়াতে দেখা গেছে ।
কতিপয় বিরল অবদান
এক. আপন মুর্শিদের নির্দেশে শাহানশাহে সিরিকোট হযরত চৌহরভী আলায়হি রাহমাহর লিখিত বিস্ময়কর বিশাল ‘দরূদ শরীফ গ্রন্থ মজমু'আহ্-ই সালাওয়াতে রসূল সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম'-এর মুদ্রণ ও প্রকাশনার কাজ সমাধা করেন। ৩ খণ্ড: ১৪৪০ পৃষ্ঠার এ দুরূদ শরীফ গ্রন্থটি বিগত ১৯৩৩ সালে তাঁরই পূর্ণ তত্ত্বাবধানে প্রথম বারের মতো প্রকাশিত হয় এবং মুসলিম বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করে।
দুই. আপন মুর্শিদের একান্ত ইচ্ছায় ১৯০২ ইংরেজী সালে তাঁরই প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসা দারুল উলূম ইসলামিয়া রহমানিয়া'র উন্নয়নে প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান দেন। মুর্শিদের ইতিকালের পর ৪০ বছর যাবৎ তিনি নিজেই উক্ত মাদ্রাসা পরিচালনা করেন । তখন মাদ্রাসাটির প্রভূত উন্নতি সাধিত হয় । এভাবে তিনি আপন মুর্শিদের অর্পিত যাবতীয় দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন ।
সাংগঠনিক প্রজ্ঞা
বৃহৎ ও সুদূর প্রসারী উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য এবং একই মিশনের ও সমমনা জনগণকে সংগঠিত রাখার ক্ষেত্রে সংগঠন-সংস্থার আবশ্যকীয়তা অনস্বীকার্য। সুতরাং শাহান শাহে সিরিকোট বিগত ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে বার্মায় প্রতিষ্ঠা করেন- 'আনজুমানে শূরা-ই রহমানিয়া'। ১৯৩৭ ইংরেজী সনে এদেশের সাংবাদিকতার পথিকৃত চট্টগ্রামের দৈনিক আজাদী'র প্রতিষ্ঠাতা ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেকসহ নিবেদিত প্রাণ পীর-ভাইদের একান্ত অনুরোধে এ মহান ওলীর চট্টগ্রামে শুভাগমন ঘটে। বার্মায় তাঁর গড়া ওই 'আনজুমান' পরবর্তীতে এদেশে নবতর সংস্করণে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত হয়ে আসছে। বর্তমানে এর নাম 'আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট' । এটা এখন উপমহাদেশের অন্যতম বৃহৎ আধ্যাত্মিক সংস্থা। এর অধীনে পরিচালিত হচ্ছে শতাধিক দ্বীনি মাদ্রাসা ও ত্বরীক্বতের অগনিত খানক্বাহ। প্রতি বছর আয়োজিত হচ্ছে বৃহত্তর সুন্নী ঐক্যের প্রতীক 'জশনে জুলুসে ঈদে মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম, পরিচালিত হচ্ছে ‘গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ', 'আনজুমান রিসার্চ সেন্টার' এবং নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে 'মাসিক তরজুমানে আহলে সুন্নাত' ইত্যাদি । (মাসিক তরজুমান,জ্বিলক্বদ ১৪৪১হি)
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন