দুনিয়ার প্রতি ভালবাসার পরিনাম
দাওয়াতে ইসলামীর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মাকতাবাতুল মদীনার প্রকাশিত ৫১০ পৃষ্ঠা সম্বলিত কিতাব “আল্লাহ ওয়ালাে কি বাঁতে” ৪র্থ খন্ডের ৮৫ নম্বর পৃষ্ঠায় রয়েছে। হযরত সায়্যিদুনা ওয়াহাব বিন মুনাব্বা رَحۡمَةُ اللّٰهِ تَعَالٰی عَلَيۡهِ বলেন: হযরত সায়্যিদুনা ঈসা عَلٰی نَبِیِّنَا وَعَلَیۡهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَام এর গমন এমন এক লােকালয় (Colony) এর পাশ দিয়ে হলাে, যেখানকার সকল মানুষ ও জ্বিন, পশু পাখি, সকল চতুষ্পদ প্রাণী এবং পােকা মাকড় মরে গেছে, তিনি عَلَیۡهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَام কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে সেদিকে তাকিয়ে ছিলেন, অতঃপর নিজের হওয়ারীদের (অনুসারিদের) দিকে ফিরলেন এবং বললেন: এরা সবাই আল্লাহ তায়ালার আযাবের কারণেই ধ্বংস হয়ে গেছে, যদি এরূপ না হতাে, তবে একত্রে সবাই মরতাে না। অতঃপর তিনি عَلَیۡهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَام সেই মৃতদের আহ্বান করলেন: হে লােকালয়ের অধিবাসিরা! তাদের মধ্যে একজন উত্তর দিলাে: লাব্বাইক হে রুহুল্লাহ! অর্থাৎ হে রুহুল্লাহ! আমি উপস্থিত। তিনি عَلَیۡهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَام বললেন: তােমাদের গুনাহ কিরূপ ছিলাে? সে বললাে: আমরা শয়তানের উপাসনা এবং দুনিয়ার প্রতি ভালবাসা পােষন করতাম। তিনি عَلَیۡهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَام বললেন: তােমাদের শয়তানের উপাসনা কিরূপ ছিলাে? সে বললাে: আমরা আল্লাহ তায়ালার অবাধ্যতার অনুসরন করতাম। তিনি عَلَیۡهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَام বললেনঃ তােমাদের দুনিয়ার প্রতি ভালবাসা কেমন ছিলাে? সে বললাে: এরূপ, যেমন শিশু তার মাকে ভালবাসে, যখন দুনিয়া আমাদের নিকট আসে তখন আমরা খুশি হতাম এবং যখন চলে যেতাে তখন আমরা দুঃখিত হতাম। পাশাপাশি আমরা দীর্ঘ আশায় মেতে ছিলাম এবং আল্লাহ তায়ালা আনুগত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে তাঁর অসন্তুষ্টির প্রতি পরিচালিত ছিলাম। তিনি عَلَیۡهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَام বললেন: তােমাদের এই অবস্থা কিভাবে হলাে? সে বললাে: আমরা রাত ভালভাবেই অতিবাহিত করলাম এবং সকালে হাবিয়ায়। তিনি عَلَیۡهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَام বললেন: হাবিয়া কি? সে বললাে: সিজ্জিন। তিনি عَلَیۡهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَام বললেন: সিজ্জিন কি? সে বললাে: পুরাে দুনিয়ার ন্যায় আগুনের একটি কয়লা, এতেই আমাদের সকলের রূহ দাফন করে দেয়া হলাে। তিনি عَلَیۡهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَام বললেন: তােমার সাথীরা কেন কথা বলছে না? সে বললাে: তার কথা বলার শক্তি নেই। বললেন: এর কারণ কি? সে বললাে: তার মুখে আগুনের লাগাম পরিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি ; عَلَیۡهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَام বললেন: তবে তুমি আমার সাথে কিভাবে কথা বলছাে অথচ তুমিও তাে তাদের দলে? সে বললাে: নিশ্চয় আমি তাদের দলে, তবে তারা যে অবস্থায় ছিলাে, আমি সেই অবস্থায় ছিলাম না, যখন বিপদ আসলাে তখন তাদের সাথে আমাকেও ঘিরে নিলাে এবং এখন আমি হাবিয়ায় একটি চুলের সাথে ঝুলে আছি, আমি জানি না যে, আগুনে নিক্ষেপ করা হবে, নাকি আমি মুক্তি পাবাে। তিনি عَلَیۡهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَام তাঁর অনুসারীদের বললেন: আমি সত্য বলছি, যবের রুটি খাওয়া, পরিস্কার পরিছন্ন পানি পান করা এবং আবর্জনার স্তুপে কুকুরের সাথে ঘুমানাে, দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণের জন্য নিঃসন্দেহে যথেষ্ট। (হিলইয়াতুল আউলিয়া, ওয়াহাব বিন মুনাব্বাহ, ৪/৬৪, নম্বর-৪৭৬২)
মওত আ'কর হি রাহে গী ইয়াদ রাখ!
জান জা কর হি রাহেগি ইয়াদ রাখ!
গর জাহাঁ মে সাে বরস তু জি ভি লে!
কবর মে তনহা কিয়ামত তক রহে।
(ওয়াসায়িলে বখশীশ, ৭১১ পৃষ্ঠা)
صَلُّوۡا عَلَى الحَبِيۡب
صَلَّى اللّٰهُ تَعَالٰى عَلٰى مُحَمَّد
প্রিয় ইসলামী বােনেরা!
বর্ণনাকৃত বিভিষীকাময় ঘটনায় দুনিয়ার প্রতি ভালবাসা পােষণকারীদের জন্য নসিহত ও শিক্ষার অসংখ্য মাদানী ফুল বিদ্যমান। যাকেই দেখি সে-ই দুনিয়ার পেছনে চোখ বন্ধ করে দৌড়াচ্ছে, প্রচুর সম্পদ, অঢেল জমিজমা, ফ্যক্টরী, হােটেল, পেট্রোল পাম্প, শপিং মল, মার্কেট, ফ্লাট বাড়ি, বাংলাে এবং আলিশান গাড়ি থাকার পরও মানুষের লিপ্সা (Greed) শেষ হওয়ার নামও নেয় না। আমরা একটি ভাবি যে, আমরা দুনিয়ার প্রতি ভালবাসা পােষণকারীদের শিক্ষনীয় পরিনতি থেকে উদাসিন হয়ে যায়নি তাে? আমরা কি সর্বদা এই দুনিয়াতেই থাকবাে? আমরা কি মাগফিরাতের বার্তা পেয়ে গেছি? আমরা কি পূর্ববর্তী উম্মতদের উপর আগত আযাবকে ভূলে গেছি? আমাদের কি রােজ মৃত্যু বরণ করা মানুষ থেকে শিক্ষা অর্জিত হয় না? আমরা কি অসুস্থতার কারণে বিছানায় ছটফটকারীদের থেকে শিক্ষা গ্রহন করিনা? আমরা অন্তিম সময়ের কঠোরতা সহ্য করতে পারবাে? আমরা কি সংকীর্ণ ও অন্ধকার কবরকে ভূলে গেছি? আমরা কি কবরের সাপ, বিচ্ছূ এবং পােকা মাকড় থেকে মুক্তির উপলক্ষ্য করে নিয়েছি? আমরা কি মুনকার নকীরের প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহন করেছি? কিয়ামতের দিনের হিসাব নিকাশের প্রস্তুতি কি আমরা নিয়ে নিয়েছি? যাইহােক নিরাপত্তা এতেই নিহিত যে, আমরা যতদিন দুনিয়ায় থাকবাে, ততদিন দুনিয়ার জন্য এবং যতদিন কবর ও আখিরাতে থাকবাে ততদিন কবর ও আখিরাতের প্রস্তুতিতে যেনাে ব্যস্ত থাকি, হাসিখুশি মানুষ হঠাৎ মৃত্যুর শিকার হয়ে দেখতে দেখতেই অন্ধকার কবরে পৌঁছে যায়, এমনিভাবে আমাদেরও মরতে হবে, অন্ধকার কবরে নামতে হবে এবং নিজেদের কর্মফল ভােগ করতে হবে।
দৌলতে দুনিয়া কে পীছে তু না জা
আখিরাত মে মাল কা হে কাম কিয়া?
মালে দুনিয়া দোজাহাঁ মে হে ওবাল
কাম আয়ে গা না পেশে যুল জালাল
(ওয়াসায়িল বখশীশ, ৭০৯-৭১০ পৃষ্ঠা)
صَلُّوۡا عَلَى الۡحَبِيۡب
صَلَّى اللّٰهُ تَعَالٰى عَلٰى مُحَمَّد
_______________
কিতাব : দুনিয়া আমাদেরকে কি দিয়েছে
লেখক : আমীরে আহলে সুন্নাত মাওলানা মুহাম্মদ বিলাল মুহাম্মদ ইলইয়াস আত্তার কাদেরী রযবীয়া (দা.)
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন