মি’রাজ ঈমানের কষ্টি পাথর

 

মি’রাজ ঈমানের কষ্টি পাথর


ঈমানদারের জন্য মি’রাজের ঘটনা ঈমানের একটি কষ্টিপাথর। যে ব্যক্তি আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লার যাত বা সত্ত্বা, সিফাত বা আল্লাহর গুণাবলী, অসীম জ্ঞান ও কুদরত মহাত্ম্য ও প্রজ্ঞার প্রতি পরিপূর্ণ ঈমান রাখে এবং হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুয়ত ও রিসালাত, সততা এবং সৃষ্টির মধ্যে অতুলনীয় মর্যাদাকে আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করে। সে ব্যক্তি মি’রাজুন নবীর মতো সত্য ঘটনা বা এ জাতীয় অলৌকিক বিষয়াবলী কখনই অস্বীকার করতে পারে না। যখন কুরআন ও সুন্নায় তার সুষ্পষ্ট ও দ্বার্থহীন বর্ণনা রয়েছে। নবুয়তের কাল থেকে আরম্ভ করে প্রত্যেক যুগের সকল মুসলমান মি’রাজ এর মত একটি অতুলনীয় মু’জিযাকে কুটিল ব্যাখ্যা ছাড়াই স্বীকার করে আসছেন



বায়তুল মুকাদ্দাস

_________


হাবিবে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে হারাম থেকে বোরাক যোগে বায়তুল মুকাদ্দাস পৌঁছেন এবং বোরাককে মসজিদের দরওয়াজার থাম্বার সাথে বেঁধে রাখেন, বর্তমানে যাকে বাবে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলা হয়ে থাকে। এরপর মসজিদে প্রবেশ করে দুই রাকাত নামায আদায় করেন। খুব সম্ভব এ দু’রাকাত নামায তাহিয়্যাতুল মসজিদ এর নামায ছিল। এ স্থানে ফেরেশতাগণ উপস্থিত হন এবং হযরত আদম আলাইহিস সালাম হতে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম পর্যন্ত সকল নবীগণ উপস্থিত হন। তাঁরা আল্লাহতা’য়ালার হাম্দ ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সালাত ও সালাম পেশ করেন। এমতাবস্থায় সকলেই হাবিবে খোদার শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি দান করেন। তারপর আযান ও একামতের মাধ্যমে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইমামতিতে সকল আম্বিয়া ও ফেরেশতাগণ জামাত সহকারে নামায আদায় করেন। উলামায়ে কেরামদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে, এ নামায নফল ছিল নাকি ফরয। যদি ফরয হয়ে থাকে ইশার নামায অথবা ফজরের নামায। হাদিসশরীফের পূর্বাপর ধারা হতে স্পষ্টত বুঝা যায় যে, বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত শুভাগমন করা ঊর্ধ্বগগনে গমনের পূর্বে ছিল, তা হলে এ নামায হবে ইশার নামায। আর যদি এ ঘটনা ঊর্ধ্বজগত হতে অবতরণের পর হয়, তাহলে হবে ফজরের নামায। কেউ কেউ এ মতের উপরই বেশি জোর দিয়েছেন। কেননা রাসূলে আনওয়ার সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আল্লাহর পক্ষ থেকে সকল শ্রেষ্ঠত্ব ও বরকতসমূহ নিয়ে অবতরণ করলেন, তখন সকল আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম এর উপর হাবিবে খোদার শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদাকে প্রকাশ করার জন্য এ নামায আদায় করেছিলেন। শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী আলাইহির রহমত শায়খ ইমাদুদ্দীন ইবনে কাছির যিনি হাদিস ও তাফসিরের শ্রেষ্ঠ পন্ডিতগণের একজন খ্যাতনামা পন্ডিত ছিলেন, তার রেফারেন্স দিয়ে এ মাসআলার এভাবে সমাধান দিয়েছেন যে, রাসূলে আনওয়ার সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঊর্ধ্বাকাশে গমনের পূর্বে এবং পরে উভয় অবস্থায় নবীগণের সাথে নামায আদায় করেছেন। (মাদারিজুন নবুয়ত) রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মসজিদ হতে বাইরে তাশরিফ আনয়ন করলেন, তখন জিব্রাইল আলাইহিস সালাম এক পেয়ালা শরাব ও এক পেয়ালা দুধের হাদিয়া পেশ করে আরজ করলেন- যে পিয়ালা ইচ্ছা মাহবুবে খোদা পান করতে পারেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুধের পিয়ালাকে পছন্দ করলে, জিব্রাইল আলাইহিস সালাম বললেন- আপনি ফিতরাতকে গ্রহণ করেছেন। এ স্থানে ইসলাম ও উহার উপর প্রতিষ্টিত থাকাকে ফিতরাতের মর্ম গ্রহণ করা হয়েছে। অর্থাৎ ছরকারে কায়েনাত আলাইহিস সালাম ইসলামের নিদর্শন ও দৃঢ় প্রত্যয়কেই গ্রহণ করেছেন। দুগ্ধপান ইসলামের নিদর্শন। হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে হাদিস বর্ণিত আছে যে, দু’পিয়ালা আনয়ন করা হয়, একটি দুধের এবং অপরটি মধুর পেয়ালা। এক রেওয়ায়েতে রয়েছে, তিন পিয়ালা আনয়ন করা হয়, দুধ-পানি ও শরাবের পিয়ালা। এ রেওয়ায়েতে মধুর উল্লেখ নেই। যা হোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুধ গ্রহণ করা পছন্দ করেছেন। সিদরাতুল মুন্তাহায় পৌঁছার পরই এ সকল পেয়ালা আনয়ন করা হয়। হাফিজ ইমাদুদ্দীন ইবনে কাছির আলাইহির রহমত এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।


(মাদারিজুন নবুয়ত)


শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী আলাইহির রহমত ‘মাদারিজুন নবুয়ত’ কিতাবে উল্লেখ করেন- বর্ণিত আছে, আল্লাহতায়ালা হযরত ইব্রাহিম, হযরত মুসা, হযরত দাউদ, হযরত সুলায়মান এবং হযরত ঈসা আলাইহিমুস সালাম প্রমূখ নবীগণকে যে সকল শ্রেষ্ঠ কারামত ও অলৌকিকত্বসমূহ দান করেছিলেন তাঁরা সকলে এর শোকরিয়া আদায় করার জন্য আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লাহর দরবারে তাঁরই প্রশংসায় বিমূঢ় হয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছিলেন, এ ক্ষমতা আল্লাহপাকই তাদেরকে দান করেছিলেন। আল্লাহর হাবিব তখন আল্লাহর নি’য়ামতের শোকরিয়া আদায় করতে গিয়ে বলেছেন-


الحمد لله الذى ارسلنى رحمة للعلمين بشيرا ونذيرا للناس اجمعين وانزل على الفرقان فيه تبيان كل شئ وجعل امتى وسطا وجعل امتى هم الاولون وهم الاخرون وشرح لى صدرى ووضع عنى وزرى ورفع لى ذكرى وجعلنى فاتحا وخاتما- 


অনুবাদ: সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহতা’য়ালার জন্যে যিনি আমাকে সমগ্র সৃষ্টির জন্য রহমত এবং সকল মানুষের জন্য সুসংবাদ দানকারী ও ভয় প্রদর্শনকারী করে প্রেরণ করেছেন। আর আমার উপর এমন মহা-বিজ্ঞানময় কুরআন অবতরণ করেছেন যার মধ্যে সকল বস্তুর বর্ণনা উজ্জ্বলতম রূপে করা হয়েছে। আমার উম্মতগণকে মধ্যমপন্থী উম্মত বানানো হয়েছে। আর আমার উম্মতগণকে পরিগণিত করিয়েছেন যে, উহারাই প্রথম এবং উহারাই শেষ হবে এবং আমার জন্য আমার বক্ষ মোবারককে উম্মুক্ত করে দিয়েছেন এবং আমার বোঝাকে বিদূরিত করে দিয়েছেন এবং আমার জন্য আমার জিকিরকে সমুন্নত করে দিয়েছেন এবং আমাকে বিজয়ী বানিয়েছেন এবং আমাকে সর্বশেষ নবী উপাধীতে ভূষিত করেছেন অর্থাৎ নবুওয়তের ধারায় আমিই সর্বশেষ নবী। (আমার পরে কিয়ামত পর্যন্ত আর কোন নবী নেই)। এ বর্ণনাদানের পর হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম বললেন-

بهذا افضلكم محمد 


হে নবী! এ কারণে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন।

__________

কিতাব : মি’রাজুন নাবী ﷺ

লেখকঃ  হযরতুল আল্লামা অধ্যক্ষ শেখ মোহাম্মদ আব্দুল করিম সিরাজনগরী (মা.জি.আ.)

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন