হালিমা ( رضي الله عنها ) এর গৃহে রাসূল পাক (ﷺ) এর যে সমস্ত মোজেযা প্রকাশ পেয়েছিল


হালিমা ( رضي الله عنها ) এর গৃহে রাসূল পাক (ﷺ) এর যে সমস্ত মোজেযা প্রকাশ পেয়েছিল


انه لما ولد صلى الله عليه وسلم قيل من يكفله هذه الدرة اليتيمة التى لايوجد لمثلها قيمة- فقالت الطيور نحن نكفله ونغتتم خدمته العظيمة- وقال الوحوش نحن اولى بذلك ننال شرفه وتعظيمه- فنادى لسان القدرة ان ياجميع المخلوقات ان الله تعالى قدكتب فى سايق حكمته القدسية ان نبيه الكريم يكون رضيعالحليمة الحليمة- قالت حليمة فيما رواه ابن اسحاق وابن راهويه وابويعلى والطبرانى والبيهقى وابونعيم-



রাসূলে পাক (ﷺ) ভূমিষ্ট হওয়ার পর বলা হলো কে আছ যেমন রত্ম মোহাম্মাদের প্রতিপালন করবে? যে শিশুর মত মহা মুল্যবান মহারত্ম দৃষ্টান্তহীন। কথা শ্রবনে সমস্ত পশু পাখিরা বলে উঠল, আমরাই এ এতীম শিশুর প্রতি পালনের দায়ীত্বভার গ্রহন করবো এবং তাঁর বিশাল সেবায় আমরা নিজেদেরকে গণীমত মনে করবো।



এতদশ্রবনে সমস্ত হিংস্র প্রাণীরা বলে উঠলো আমরাই তাঁর প্রতিপালন ও সেবাযত্ম করার অত্যধিক হকদার। তাঁর একচ্ছ সম্মান ও মর্যাদার যথার্ত মুল্যায়ন করত: নিজেদেরকে সৌভাগ্যবান মনে করবো। পরিশেষে কুদরতী ঘোষনা পত্র আসলো এভাবে যে হে সৃষ্টিকুল: জেনে রাখ যে, মহান আল্লাহ পাক স্বীয় সিদ্ধান্তে শিশু মোহাম্মদের লালন পালন ও দুগ্ধপান করানোর গুরুদায়ীত্ব কেবল হালীমার ভাগ্যেই নির্ধারন করে রেখেছেন।



এবারে ইবনে ইসহাক, ইবনে রাহভীয়া, আবু ইয়ালা, বায়হাকী, তাবারানী ও আবু নাঈমের বর্ণনা মতে হালীমার ভাষ্যে বণর্না দেয়া হলো।



قدمت مكة فى نسوة من بنى سعد بن بكر يلتمس الرضعاء فى سنة شهباء- فقدمت على اتان لى ومعى صبى لنا وشارف لنا- أى ناقة مسنة مهرمه -والله ما تبضى بقطرة وما ننام ليلناذالك اجمع مع صبينا ذلك- لايحيد فى ثديى ما يغنيه ولا فى شارف ما يفذيه- فقد منامكة فالله ما علمت منا امرأة الا وقد عرض عليها رسول الله صلى الله عليه وسلم- فتاباه اذا قيل يتيم- فو الله ما بتى من صواحى امرأة الا اخذت رضيعا غيرى- فلما لم اجد غيره قلت لزوجى والله انى لآكره ان ارجع من بين صواحى ليس معى رضيع لانطلقن الى ذالك اليتيم فلآ خذنه فذهبت فاذا هومدرج فى ثوب صوف ابيض من اللبن يفوح منه المسك وتحته حرية خضراء رافد على قفاه يغط- فاشفقت ان اوقظه من نومه لحسنه وجمالة قدلوت منه رويدآ فوضعت يدى على صدره فتبسم صاحكا- وفتح عيليه ينظر الى- فخرج من عينيه نود حتى دخل خلال السماء وانا انظر فقبلته بين عينيه واعطيته ثدى الآيمن فاقبل عليه بما شاء من لبن- فحو لته الى الآيسر فأنى وكانت تلك حاله بعد-



আমি দুর্ভিক্ষের বছর সাদ বিন বকর গোত্রের কয়েকজন মহিলার সঙ্গে মক্কায় পৌছলাম। আমার গাধায় সওয়ার হয়ে আসলাম। এসময় আমার সঙ্গে আমার স্বামী ও একটি শিশু ছিল। আর ছিল একটি বৃদ্ধা উষ্ট্রী। সেটি এক কাতরা দুধ দিতনা। শিশুকে সাথে নিয়ে সে রাতে আমার মোটেই ঘুম হলনা। যেহেতু আমার বুকে সন্তান পান করার মতো একফোটা দুধ ও ছিলনা, উষ্ট্রীও দুধ দিচ্ছিলনা যে, সে তা থেকে দুধ পান করবে।



আল্লাহর কসম মক্কায় পৌছার পর আমার সঙ্গীয় সকল মহিলাকেই সে মহান শিশুটি দুধ পান করানোর জন্য প্রস্তাব পেশ করা হয় কিন্তু তিনি যে, এক এতীম সন্তান, তা শ্রবনে আর কেউই তাঁকে বরন করে নিতে রাজী হলনা। আমি ব্যতিত আর সঙ্গীয় সকল মহিলাই দুধপান করানোর জন্য কোন না কোন শিশু পেয়ে গেল। কিন্তু আমার বেলায় কেবল শিশু মোহাম্মদ ব্যতীত আর কেউই বাকী রইলনা। সে ব্যতীত অন্য কোন শিশু না পাওয়াতে আমি আমার স্বামীকে বললাম, আল্লাহর কসম, আমি কোন শিশু ছাড়া শুন্যহাতে বাড়ীতে ফিরে যেতে পছন্দ করিনা বিধায় এ শিশুকেই আমি নিয়ে নিব।



আল্লাহর শুকরিয়া যে, শিশুকে বাড়ীতে নেয়ার পর দেখি বাচ্ছা মোহাম্মদ (ﷺ) দুধের চেয়ে ও শুভ্র সচ্ছ একটি কাপড়ের ভেতর আচ্ছাদিত তাঁর থেকে যে মেশকের সুঘ্রান নির্গত হচ্ছে এবং তাঁর নীচে সবুজ রেশমী কাপড়, যা কোমর বেষ্টনী দিয়ে আছে। চঁাদের ন্যায় সুন্দর ও চাকচিক্যতার দ্বরুন আমার মনে তাঁকে জাগিয়ে তুলার প্রবল আগ্রহ জন্মিল। ফলে আমি তাঁর নিকটে যেয়ে স্বীয় হস্ত তাঁর বুকে ধারন করার সঙ্গে সঙ্গেই বাচ্ছা মোহাম্মদ মুচকি হাসতে শুরু করেন এবং তাঁর উভয় চোখ খুলে আমার দিকে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকেন। দৃষ্টির প্রাক্ষালে দেখতে পাই যে তাঁর দুচোখের মধ্যখান থেকে একটি সুউজ্জল নূর বেরিয়ে মধ্যাকাশ পর্যন্ত যেয়ে স্থীর হয়। এবং যারপর নেই নির্বাক দৃষ্টিতে বিষয়টি অবলোকন করি এবং মহববতের আতিশয্যে তাঁর দু'চোখের মধ্যখানে চুম্বন দেই, আমি দুধ পানের জন্য আমার ডান স্তনটি তাঁকে দান করি ফলে বাচ্ছার দুধপানের জন্য যত ইচ্ছা দুধ বেরিয়ে আসে। এরপর বাম স্থনটি তাঁর দিকে বাড়িয়ে দিলে তিনি তা ভক্ষন থেকে বিরত থাকেন।



قال اهل العلم اعلمه الله تعالى ان له شريك- فالهمه العدل- فقالت فر وى وروى اخوه- ثم اخذته فيما هو الى ان جبئت به رحلى وقام صاحبى الى ستارفنا تلك- فاذا انها لحافل فحلب ماشرب وشربت حتى روينا وبتنا جنحير ليلة- فقال صاحبى يا حليمة والله إنى الآر اك قه اخذت نمة مباركة الم تر المترى ما بتنابه الليلة من الخير والبركة حين اخذناه فلم يزل الله يزيد نا خيرا-



সমস্ত আহলে ইলমগনের মতে মহান আল্লাহ পাক এ সময় শিশু মোহাম্মদ (ﷺ)কে একথাই জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, দুধপানের ক্ষেত্রে তাঁর আরেক শরীক ভাই আছে বিধায় ইলহামের মাধ্যমে তাঁকে ঐ ন্যায় নিষ্টতা শিক্ষাদেন। হালিমা বলেন: এরপর থেকে শিশু ও তাঁর ভাই উভয়ে তৃপ্ত সহকারে দুধপান করে। এরপর আমার স্বামী বৃদ্ধা উষ্ট্রীর পাশের্ব যেয়ে দুধে উলান পরিপূর্ণ দেখতে পান। ফলে নিজে ও দুধ পান করেন এবং আমি ও তৃপ্ত সহ কারে দুধপান করি। আমরা সকলেই তৃপ্ত হয়ে সুনিদ্রায় মধ্যে রাত্রি কাটালাম। আমার প্রিয় স্বামী আনন্দে গদগদ চিত্বে আমাকে বলতে লাগলেন, হালিমা গো, তোমার ভাগ্য অতি সুপ্রসন্ন যে, আজ তুমি এক বরকতময় শিশু গ্রহন করেছ।



তুমি দেখ, আজিকার রাত্রি কতইনা বরকত ও কল্যানে অতিবাহিত হয়েছে। হালিমা বলেন, বাচ্ছাকে বাড়ীতে নিয়ে আসারপর থেকে মহান আল্লাহ পাক আমাদের ঘরে অব্যাহত ধারায় বরকত বৃদ্ধি করতে থাকেন।



قالت حليمة فودعت الناس بعضهم بعضا- وودعت انا ام النبيى صلى الله عليه وسلم- ثم ركبت أتا نى واخذت محمد اصلى الله عليه وسمل بين يدى- قالت فنظرت الى الاتان وقد سبحدت نحو الكعبة تلات مجدات ورفعت رأسهى الى الماء- ثم متت حتى سبقت دواب الناس الذين كانوا معى وصار الناس يتعجبون منى ويقلى لى الناء- وهى ودائى يابنت ابى ذويب اهذه اتانك التى كنت عليها- ونت جائية معنا تخفضك طورا- وترفعك اخرى- فاقول تاالله انها هى فيتعجبن منها ويقلت ان لها عظيما- قالت فكنت اممع اتانى تنطق وتقول ان لى سأنا ثم مأنا - بعتنى الله بعد موتى ورد سمنى بعد هزلى-



হযরত হালিমা (رضي الله عنه ) বলেন: সকল লোক তাদের বাহন নিয়ে চলে গেল এবং আমিও মহানবী (ﷺ) এর মায়ের কাছে স্বীয় উষ্টির উপর সওয়ার হয়ে যাই। এবং মোহাম্মাদকে কোলে টেনে নেই। হালিমা বলেন: যাওয়ার পথে আমার উষ্ট্রির দিকে থাকিয়ে দেখি সে কাবামুখী হয়ে তিনটি সেজদা করল, এরপর স্বীয় মস্তক আকাশ পানে উত্তলন করে অত:পর হাটতে শুরু করল। এক পর্যায়ে সে আমার সঙ্গীয় লোকদের সকল বাহনের অগ্রে চলে গেল। ফলে সকলে আমার এ অবস্থা দৃষ্টে যার পর নেই হতবাক হয়ে গেল। সকল মহিলার বলতে লাগল, হে বিনতে যুআইব! এটি কি ঐ গাধী, যেটিতে তুমি সওয়ার হয়ে এসেছিলে? অথচ তুমি তো তোমার ক্ষীণকার উষ্ট্রি নিয়ে আমাদের সঙ্গে এসেছিলে। সে একবার নুয়ে পড়ে, অন্যবার তোমাকে নিয়ে চলতো। আমি (হালিমা) বলাম, আল্লাহর, কসম হে মহিলারা! এটাতো ঐ বাহন, যার উপর সওয়ার হয়ে তোমাদের সঙ্গে গিয়েছিলাম। এতদশ্রবনে তারা অত্যার্শ্চয হয়ে বলতে লাগল, নিশ্চয়ই এ গর্ধভীর বিশাল শান রয়েছে। হালিমা বলেন, এরপর আমি অকস্মাত আমার গাধীর জবান থেকে বলতে শুনেছিলাম, সে বলতে লাগল, হে হালিমা! নিশ্চয়ই আমার একের পর এক শান রয়েছে যে, মহান আল্লাহ পাক আমাকে আমার মৃত্যুরপর পুন:রায় জীবিত করবেন এবং পুন:রায় মোটা তাজা করে ক্ষীনকার থেকে ফিরিয়ে দিবেন। সে আরও উদ্দেশ্য করে যা বলেছিল, তা নিম্নরূপ:



ويحكن يا نساء بنى سعد انكن لفى غفلة وهل تدرين من على ظهرى- خير النبيين وسيد المرسلين وافضل الاولين والاخرين وحبيب رب العالمين-



হে বনু সা’দ সম্প্রদায়! তোমাদের জন্য আফসোস করি এজন্য যে, তোমরা তো বিশাল অমনোযোগীতায় নিমগ্ন আছ। তোমরা কি জান যে, কে আমার পৃষ্টে অবস্থান করছেন? তিনি হলেন নবীকুল শ্রেষ্ট, সৃষ্টির প্রথম হতে শেষ অবধি তথা সকলের মধ্যকার শ্রেষ্ট মহান ব্যক্তিত্ব, যিনি সমগ্র বিশ্বপ্রতিপালকের প্রিয়ারা হাবীব।



ঐতিহাসিক ইবনে ইসহাক ও অন্যান্যদের মতে হযরত হালিমা (رضي الله عنه ) বলেন: অবশেষে আমরা বনু সা’দ গোত্রের জনপদে এসে পৌছলাম। আল্লাহর জমীনে বনু সা’দ গোত্রের জনপদ থেকে অধিক খড়া পীড়িত কোন স্থান আছে বলে আমার জানা ছিলনা। আমার ছাগলটি ভরাপেটে বাড়ীতে ফিরতো, আমরা আমাদের প্রয়োজন মত দুধ দোহন করতাম। অথচ নিজেদের আশে-পাশে এমন কেউ ছিলনা যে, যার ছাগল এক কাতরা দুধ দিত, বরং সেক্ষেত্রে তাদের ছাগলগুলো খালি পেটে বাড়ীতে ফিরতো। এমনকি তারা তাদের রাখাল বালকদেরকে বলতো, তোমাদের সর্বনাশ হউক, দেখতো বিনতে আবী যুআইবের ছাগলগুলো কেমন মোটা তাজা হচ্ছে, তাই ওদের সঙ্গে তোমরা ও মাঠে ছাগল চড়াবে।



ওরা আমার ছাগলের সাথে সাথে তাদের ছাগলগুলো চরাত কিন্তু তাদের ছাগলগুলো খালি পেটে বাড়ীতে ফিরে আসতো, তাতে এক ক্বাতরা দুধ ও পাওয়া যেতনা, অথচ আমার ছাগলগুলি ভরা পেটে বাড়ীতে ফিরতো, আমরা প্রয়োজন মতো দুধ দোহন করতাম। বাচ্ছা মোহাম্মদ ﷺকে ঘরে নেয়ার পর হতে অধ্যাবদি হালিমার সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি পেতে লাগল এমনকি বাচ্ছার খাতিরে নিজ স্তনের দুধ ও বৃদ্ধি পেতে লাগল। যেমন: এ প্রসঙ্গে হালিমার কবিতাটি উল্লেখ যোগ্য।



قد بلغت بالهاشهى حليمة * مقاما علا فى ذروة العز والمجد وزادت مواقيها واخصب ربعها وقد عم هذا السعد كل بنى سعد-



অর্থাৎ: বনী হাশিমের (নবজাতকের) উসিলায় তিনি (হাশিম) সম্মান ও মর্যাদার উচ্ছাসনে পৌছে যান। এর উসিলায় স্বীয় বাহনের দুধ বৃদ্ধি এমনকি নিজ বাসস্থান ও উর্বরাযুক্ত হয়। আর এ মর্যাদা প্রত্যেক বনী সা’দ পর্যন্ত ব্যাপকতা লাভ করে।



ইমাম আবু আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ বিন মুআল্লা আল আযাদী প্রনীত কিতাবুত তারকীছ গ্রন্থে এসেছে যে, মা হালিমার নিন্মোক্ত কবিতাংশটি রাসূল ﷺকে বারং বার পুলকিয়ে তুলতো।



يارب اذا أعطيته فا بقه * واعله الى اعلا وأرقة وادحقى اباطيل العدى بحقه* وزدت انا بحقه بحقه بحقه



অর্থাৎ: হে প্রতিপালক! যখন তুমি তাঁকে দান করেছ, তখন তাঁর স্থায়ীত্ব দান কর। তাঁকে সর্বোচ্ছ আসনে আসীন কর, তাঁর উন্নতী দান কর। তাঁর উসিলায় সকল ভ্রান্ত ও চরম শক্রুদেরকে পরাস্থ কর। মাওলা হে! তুমি তাঁর উছিলায়, আমার সকল সম্মান মর্যাদা বৃদ্ধি করে দাও। ইমাম বায়হাক্বী, খতীব বাগদাদী ও ইবনে আসাকীর হযরত আব্বাস رضي الله عنه এর একখানা হাদীস বর্ণনা করেন যে, হযরত আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিব رضي الله عنه বলেন: আমি আল্লাহর রাসূল ﷺকে সম্বোধন করে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার নবুওয়তের প্রতীক (নিদর্শন) দেখে আমাকে আপনার ধর্মে দীক্ষিত হবার প্রবল আকাংক্ষা জাগালো। আমি আপনাকে মায়ের কোলে দুলনাবস্থায় এমনভাবে দেখতে পেলাম যে, আপনার আঙ্গুলীর ইশারার সাথে পুণির্মার চন্দ্র ও হেলা ধুলা করছে। এতদশ্রবনে রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেনঃ



انى كنت احدثه ويحد ثنى ويلهينى عن البكاء



অর্থাৎ: চাচাজান, আমি তার (চন্দ্রের) সঙ্গে কথা বলতাম এবং সেও আমার সঙ্গে কথা বলতো। এবং আমাকে ক্রন্দনে শান্তনা দিত। তিনি আরও বলেন واسمع وجبته يسجد تحت অর্থাৎ: এমনকি সে যখন আরশের নীচে মহান খোদার কুদরতী কদমে সেজদারত অবস্থায় ক্রন্দন করত, সে আওয়াজও আমি শুনন্তে পেতাম। ফাতহুল বারী গ্রন্থে সীরাতে ওয়াকেদী সুত্রে একখানা হাদীস বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ জন্মের প্রথম থেকে কথা বলতে আরম্ব করেন।



ইবনে সাবা এর খাছায়েছ গ্রন্থে বর্ণিত: ফেরেস্তাকুলের সঞ্চালনের সাথে হুযূর পাকের ধুলনাবস্থায় স্বীয় হাত পা আন্দোলিত হতো। ইমাম বায়হাক্বী ও ইবনে আসাকীর হযরত ইবনে আব্বাস رضي الله عنه সুত্রে বর্ণনা করেন ইবনে আব্বাস رضي الله عنه বলেন: হযরত হালিমাতুস-সাদীয়া رضي الله عنها বলেন: নবীজী ﷺকে দুধ ছাড়াবার পর সর্বপ্রথম তাঁর মুখে এ পবিত্র বাণী ফুটে উঠেছিল-



الله اكبر كيرا والحمد الله كثيرا وسبحان الله بكرة واصيلا



অর্থাৎ- আল্লাহ মহান সর্বমহান। আল্লাহ পাকের সীমাহীন প্রশংসা। সকাল বিকাল সর্বদা আমরা আল্লাহ পাকের পবিত্রতা বর্ণনা করে থাকি। বালক মোহাম্মদ ﷺ যখন ধীরে ধীরে বড় হতে লাগলেন তখন ছেলেদের সঙ্গে খেলার মাঠে যেতেন, লোকেরা খেলতো কিন্তু তিনি তা হতে সম্পুর্ণ বিরত থাকতেন। ঐতিহাসিক ইবনে সা’দ আবু নাঈম ও ইবনে আসাকীর হযরত ইবনে আব্বাস رضي الله عنه এর সুত্রে বর্ণনা করেন যে, হযরত হালিমা সাদীয়া رضي الله عنها বালক মোহাম্মদ ﷺকে কোথায় ও দুরে যেতে দিতেন না। একদিন বিবি হালিমার অজ্ঞাতে হযরত তাঁর দুধ ভগ্নী শায়মার সঙ্গে দ্বিপ্রহরের সময় পশু পালের চারন ক্ষেত্রে চলে গেলেন। বিবি হালিমা তাঁর সন্ধানে বের হলেন এবং শায়মার সাথে তাঁকে দেখতে পেয়ে বিবি হালিমা সায়মার উপর খুবই রাগান্বিত হলেন এবং বললেন, তুমি এ প্রখর রৌদ্রে এবং উত্তাপের সময়ে কেন তাঁকে বাহিরে নিয়ে এসেছ? শায়মা বলল, আমার দুধ ভাই উত্তাপ ভোগ করেনি, বরং আমি দেখেছি একটি মেঘখন্ড সর্বদাই তাঁকে ছায়া দিয়ে চলছে। ভাই যখন চলতো, তখন মেঘখন্ড ও তাঁর সঙ্গে চলতো, সে যখন থেমে পড়তো, তখন ঐ মেঘখন্ড ও থেমে যেতো।



হযরত হালিম رضي الله عنها বলেন: অতঃপর আমরা তাঁকে তাঁর মা জননীর কাছে নিয়ে আসলাম। তাঁর মধ্যে সীমাহীন কল্যান ও বরকত দৃষ্টে আমরা তাকেঁ আমাদের মধ্যে রাখতে প্রবল আগ্রহী ছিলাম। তাই আমরা তারঁ মা জননীকে নিবেদন করলাম যে, আপনি আপনার কোলের এ শিশুকে আরও এক বছরের জন্য আমাদের প্রতি পালনে ফিরিয়ে দিন। আমরা মক্কায় বর্তমানে তাঁর অসুখ বিসুখের প্রবল আশংকা করছি। অতঃপর খুবই পীড়া পীড়ি করলাম। অবশেষে তিনি হ্যাঁ বলে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দিলেন।



মা হালিমার ভাষ্য: বাচ্ছা মোহাম্মাদ এর প্রতি পালনের ২/৩ মাস অবস্থানের পর একবার তিনি আমাদের বাড়ীর পীছনে গবাদিপশু বাঁধার জায়গায় তাঁর দুধ ভাইদের সঙ্গে খেলা ধুলা করতে চলে গেলেন। অতক্ষণে দুধ ভাইয়ের ভাষায় বর্ণনা করা হলেঃ-



فقال خاك اخى القرشى قد جاءه رجلان عليهما ثياب بيضى فاضجعاه وسقا بطنه فخرجت انا وابوه نثتد نحوه فجده قائما منتقعا لونه فاعتنقه اجوه- وقال يا بنى ما ئأنك؟



কিছুক্ষণ পর তাঁর দুধ ভাই ফিরে এসে বলল, আমার এ কোরেশী ভাইয়ের কাছে সাদা পোষাক পরিহিত দুজন লোক এসে তাঁকে মাটিতে শুইয়ে তাঁর পেট চিরে ফেলল। একথা শ্রবনে আমি ও তাঁর পিতা (হালিমার স্বামী) দৌড়ে আসলাম। দেখলাম যে, তিনি দঁাড়িয়ে আছেন, কিন্ত তাঁর মোবারক চন্দ্রদ্বীপ্ত চেহারা বিবর্ণ। এ অবস্থাদৃষ্টে স্বীয় দুধ পিতা তাঁকে জড়িয়ে ধরলেন এবং বললেন: বাছা! তোমার কি হয়েছে? জাবাবে তিনি যা বললেন, তা নিন্মোক্তি হলো।



قال جاءنى رجلان عليهما ثياب بيض فأضجعانى فشقابطنى ثم التخرج منه شيأفطرحاه- ثم رداه كما كان-



অর্থ:- তিনি বললেন- আমার নিকট দুজন সাদা পোষাক পরিহিত ব্যক্তি এসে আমাকে মাটিতে শুইয়ে পর আমার পেট চিরে সেখান থেকে কিছু বের করে ফেলে দেয়। অতঃপর পেট পূর্বের ন্যায় যেভাবে ছিল হুবহু করে দেয়।



তাঁর দুধ মাতা হালিমা বলেন অতঃপর আমরা সেখান থেকে মোহাম্মাদকে নিয়ে আসলাম।



অতঃপর তাঁর দুধ পিতা আমাকে সম্বোধন করে বললেন: হালিমা আমার প্রবল আশংকা হয় যে, না জানি আমার এ ছেলের উপর কোন কিছুর আছর পড়ে যায়। কাজেই এ মুহুর্তে আমাদের জন্য উচিত হবে কোন অপ্রতিকর ঘটনা ঘটার পূর্বেই তাঁকে তাঁর মায়ের কোলে সমঝিয়ে দেই।



হালিমা বলেন: সে মতে আমরা তাঁকে নিয়ে স্বীয় মাতার কাছে গেলাম। আমাদেরকে দেখে তাঁর মাতা আমেনা যা বললেন: তা নিন্মরূপ:



فقالت ما ردكمابه فقد كنتما حريصين عليه؟



অর্থাৎ- মা আমেনা বললেন: ব্যাপারটি কি, তোমরা কি তাঁর জন্যে প্রবল আকাংখি ছিলেনা? তখন আমরা বললাম, আমরাতো তাঁর প্রাণ নাশের অথবা বড় কোন দুর্ঘটনার আশংকা করছি। তিনি (আমেনা) বললেন:



ماذاك بكما فأصدقانى جشأ نكما فلم تدعا حتى اخبرنا خبره قالت أخشيتما عليه الشيطان- فلا والله ماللشيطان عليه حبيل وانه لكائن لابنى هذا اشأن فدعاه عنكما هذا-



অর্থ:- মা আমেনা رضي الله عنها বললেন: না, এটা কখনো হতে পারেনা। সত্যকথা বল প্রকৃত ঘটনা কি? তাঁর পীড়া পীড়িতে আমরা সমস্ত ঘটনা জানিয়ে দিলাম। আমেনা বললেন: তোমরা তাঁর উপর শয়তানী আক্রমনের আশংকা করছো? তবে জেনে রাখ যে, আল্লহর কসম খেয়ে বলছি, শয়তান তাঁর বিরোদ্ধে কোন পথ পেতে পারেনা। যেহেতু আমার স্নেহাস্পদ দুলালী মোহাম্মদের শানই হবে ভিন্ন। অতএব, তোমরা তাঁকে রেখে যাও।

_______________

আল মাওরিদুর রাভী ফি মাওলিদিন নাবাবী (ﷺ)

মূলঃ ইমাম নূরুদ্দীন মুল্লা আলী কারী আল হারুবী (رحمة الله)

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন