মীলাদ মাহফিলের প্রতি বাদশা মুজাফফারের আমল

 

মীলাদ মাহফিলের প্রতি বাদশা মুজাফফারের আমল

☛ইরবলের স্বনামধন্য বাদশা মুজাফফর (رحمة الله) সর্বপ্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে মীলাদের সুচনা করেন। তিনি মীলাদ মাইফিলের প্রতি ছিলেন গভীর মনোযোগী সীমাহীন যত্মবান ও গুরুত্বশীল। মীলাদ শরীফ বৈধতার ব্যাপারে চুড়ান্ত ফায়সালা দেন। মীলাদ শরীফ পালনের কারণে বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা ইমাম আবু শামা (رحمة الله) তাঁর ভুয়সী প্রশংসা করেন। তিনি স্বীয় ‘কিতাবুল বাইছ আলা ইনকারিল বিদয়ে ওয়াল হাওয়াদীস নামক বিখ্যাত গ্রন্থে তাঁর আলোচনা করত: বলেন যে, তাঁর এ আমল একটি উত্তম ও বৈধ কাজ। তিনি মীলাদ শরীফ পাঠকারীর কৃতজ্ঞাত ও ভূয়সী প্রশংসা করতেন।


ইমাম ইবনে জাযরী (رحمة الله) উক্ত মন্তব্যের উপর আরও কিছু বৃদ্ধি করে বলেন যে, মীলাদ শরীফের মতো একটি বৈধ ও উত্তম আমলকে কেবল লাঞ্চিত ও অপমানীত শয়তান ও তার অনুসারীরাই প্রত্যাখ্যান করতে পারে।



তিনি বলেন, আহলে ছালীব তথা খ্রীষ্ঠানের যদি তাদের নবী ঈসা (عليه السلام) এর জন্ম দিনকে ঈদুল আকবার হিসেবে আখ্যায়িত করতে পারে, তবে সেখানে আবুল ইসলাম তথা উম্মতে মুহাম্মদী তাদের রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর জন্ম দিনকে ঈদুল আকবার হিসেবে তাঁর সর্বোচ্ছ তাযীম ও তাকরীম প্রদর্শন করা অত্যধিক উপযোগী তাতে কোন সন্দেই নেই। যেহেতেু আমরাতো তার প্রতি আদিষ্ট।



☛খাতেমাতুল আইম্মা বিশ্ববিখ্যাত হাদীস শরীফের ইমাম, শায়খুল ইসলাম জনাব আবুল ফদ্বল ইবনে হাজার (رحمة الله) বলেন: মীলাদ শরীফের অনুষ্ঠান পালন মূলত; একটি সুবৃহৎ ও মজবুত স্তম্বের উপর গঠিত, তিনি মীলাদ মাহফিলের উপর এমন একটি সুদৃঢ় মূলনীতি বের করেছেন, যার প্রতি সকল জ্ঞানী, পন্ডিতগন ভিত্তি করে আসছেন। যেমন:



☛পবিত্র বোখারী ও মুসলিম শরীফে এসেছে:



أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدِمَ الْمَدِينَةَ فَوَجَدَ الْيَهُودَ صِيَامًا، يَوْمَ عَاشُورَاءَ، فَقَالَ لَهُمْ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَا هَذَا الْيَوْمُ الَّذِي تَصُومُونَهُ؟: فَقَالُوا: هَذَا يَوْمٌ عَظِيمٌ، أَنْجَى اللهُ فِيهِ مُوسَى وَقَوْمَهُ، وَغَرَّقَ فِرْعَوْنَ وَقَوْمَهُ، فَصَامَهُ مُوسَى شُكْرًا، فَنَحْنُ نَصُومُهُ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ্রفَنَحْنُ أَحَقُّ وَأَوْلَى بِمُوسَى مِنْكُمْ فَصَامَهُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ:



অর্থ:- হুযূর মদীনায় আগমন সেখানকার ইয়াহুদীকে দেখতে পেলেন যে, তারা আশুরার দিনে রোযা রাখছে। তিনি তাদেরকে ঐ দিনের রোযা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে জাবাবে তারা বলল, এ দিনে মহান আল্লাহ পাক ফেরাউনকে নীল দরিয়াতে ডুবিয়ে মারেন এবং মুসা (عليه السلام) কে রক্ষা করেছিলেন বিধায় আমরা শুকরিয়া স্বরূপ এদিনে রোযা পালন করে থাকি।



রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাদের একথা শ্রবনে বললেন: তাহলে তো আমরা তোমাদের চেয়ে হযরত মুসা (عليه السلام) এর প্রতি অধিক হক্বদার। এরপর থেকেই রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নিজেও রোযা রেখেছিলেন এবং তাঁর সাহাবায়ে কেরামকে রোযা পালনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন: আমি যতদিন বেচে থাকবো ততদিন তাদের ন্যায় একটি এবং তাদের সাথে মিশ্রন না হওয়ার আশংকায় আরেকটি মোট দুটি রোযা পালন করবো।



☛শায়েখ ইবনে হাজার আসক্বালানী (رحمة الله) বলেন, বালা মুছিবত বিদূরীত হওয়া ও নেয়ামত প্রাপ্তির আশায় নিদির্ষ্ট দিনেও ঈদ উৎসব পালনের মাধ্যম আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপন করা হয়, তাতে বহুবিধ ফায়দা নিহীত আছে। আর তার মত নেয়ামত পুর্ণ দিন বছরে বার বার আসে। প্রকাশ থাকে যে, আল্লাহর শুকরিয়া বহুবিধ ইবাদত দ্বারা হাসিল হয় যেমন: নামাজ, রোযা, তেলাওয়াত ইত্যাদি।



যদি তাই হয়, তবে এবার বলুন! রহমতে আলম হুযূরে পাক (ﷺ) এর চেয়ে বিশাল নেয়ামত আর কি হতে পারে? তাঁর নেয়ামতের বিশালত্ব সম্পর্কে لَقَدْ جَاءكُمْ আয়াত দ্বারা উপলদ্ধি করা যায় এবং আয়াতে বর্ণিত رَسُولٌ ْ مِّن أَنفُسِكُمْ দ্বারা তাঁর আগমনের সময়কার তা’যীম তথা ক্বিয়াম প্রদর্শনের ও ইঙ্গিত পাওয়া যায়।



☛শায়খুল ইসলাম ইবনে হাজার (رحمة الله) আরও বলেন: মিথ্যা ও অহেতুক বিষয় ব্যতিরেকে শরীয়ত কর্তৃক সমর্থিত মীলাদ মাহফিলের মাধ্যমে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশের নিমিত্তে নিদির্ষ্ট সময়ে খুশী যাহের করতে কোন বাধা নেই। আর যেথায় হারাম বা মাকরূহ জনিত কার্যাবলী মিশ্রিত হয়, তা হতে বিরত থাকা অবশ্যক। তা ব্যতীত উত্তম পন্থায় মাসের প্রত্যেক দিনও পালন করা যায় তাতে কোন বাধা নেই।যেমন:



☛এ প্রসঙ্গে ইমাম ইবনে জামাআত তামান্নী (رحمة الله) বলেন: মীলাদ সংক্রান্ত বিষয়ে আমাদের কাছে অবিচ্ছিন্ন সনদে বর্ণিত আছে যে, বিখ্যাত আদর্শবান ও যাহেদ অমর ব্যক্তি জনাব আবু ইসহাক ইব্রাহীম বিন আব্দুর রহমান বিন ইব্রাহীম বিন জামাআ (رحمة الله) মদীনা মুনাওয়ারায় ছাহেবে সালাত ও সালাম, পরিপর্ূণ অভিবাদন প্রাপ্তির মালিক জনাবে রাসূলে খোদা (ﷺ) এর রাওদ্বা মোবারকের সম্মুখে এসে মীলাদ মাহফিলের আয়োজন করতেন এবং উক্ত মাহফিলে খাদ্যের ব্যবস্থা করত: মানুষকে খাওয়াতেন এবং মীলাদ শেষে বলতেন যে, মহান আল্লাহ পাক যদি আমাকে তাওফিক দিতেন, প্রতিদিন আমি মীলাদ মাহফিল পালন করতাম।



☛আল্লামা ইমাম মুল্লা আলী কারী (رحمة الله) বলেন, আমি হতভাগার জন্য মানুষদেরকে যিয়াফতের ব্যবস্থা করতে অক্ষম অভ্যন্তরীনভাবে এক নূরানী যিয়াফত হিসেবে আল্লাহর করুনার বোর্ডে মঞ্জুর হয় এবং কোন বছর, মাস নির্ধারিত ব্যতীত তা আজীবন গ্রন্থাকারে স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ হয়ে থাকে। এ মানষে আমি উক্ত গ্রন্থকে المورد الروى فى المولد النبوى নামে নামকরন করি।



তবে মীলাদ শরীফকে যাতে খাঁটো করে দেখা না হয়, সেদিকে খেয়াল করা উচিত। যেমন: এ প্রসঙ্গে হাদীস বিশারদগন স্বীয় নির্দিষ্ট গ্রন্থ সমুহে এ ব্যাপারে আলোচনা করেছেন। তন্মধ্যে আল মাওরিদুল হানী গ্রন্থ অন্যতম। তাছাড়া ও দালায়েলুন নবুওয়ত গ্রন্থের বিকলপ নেই। বিখ্যাত মুহাদ্দিস ইমাম ইবনে রজব প্রাণীত লাত্বায়েফুল মা.আরেফ গ্রন্থে ও মীলাদ শরীফের আলোচনা করা হয়েছে। এ গ্রন্থ গুলো মীলাদ শরীফ বৈধ হওয়ার এক বিশাল প্রমাণ।



কেননা আজকাল কিছুকিছু উলামায়ে ছুদের আবির্ভাব ঘটছে, যাদের কথা বার্তা ওয়াজ নছীহত গুলো মিথ্যা ও নতুন নতুন আবিস্কৃত উদ্ভাবনায় জর্জরীত। তারা যে সমস্ত গ্রন্থ রচনা করেছে, তাতে মীলাদ বৈধ হওয়ার আলোচনা তো দূরের কথা বরং তাতে মীলাদ মাহফিল বৈধ হওয়ার নামে নিকৃষ্টতা, কদর্যতায় ভরপুর। যে গ্রন্থগুলোর বর্ণনা ও প্রচলিত ব্যবহার আদৌ বৈধ নয় বিধায় তাদের বর্ণিত মীলাদ মাহফিল অবৈধ বক্তব্যের প্রতিবাদ করা সকলের জন্য ওয়াজিব।



মীলাদ মাহফিলে আলোচিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো হচ্ছে, তেলাওয়াতে কুরআন, মানুষকে খাদ্য খাওয়ানো, সাদক্বা খায়রাত করা, মাহফিলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর প্রশংসা, প্রশংসীত কবিতামালা আবৃত্তি, পরকালের পাথেয় ও কল্যানমুলক কার্য্যের প্রতি হৃদয়ের অগ্রসরতা, ছাহেবে মাওলিদ তথা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর প্রতি সালাত ও সালাম পেরণ করা ইত্যাদি।



☛জেনে রাখ মহান আল্লাহর নিন্মোক্ত বাণী-



لَقَدْ جَاءكُمْ رَسُولٌ مِّنْ أَنفُسِكُمْ



 “তোমাদের কাছে তোমাদের নিজেদের মধ্য হতে অবশ্যই একজন রাসূল এসেছেন” বাক্য দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে অর্থাৎ : তোমাদের নিজেদের মধ্য হতে এসেছেন যিনি, তিনি হচ্ছেন, নুবুওয়ত রেসালাত, আযমত ও জালালতের গুনে গুনান্বিত ও বৈশিষ্টপুর্ণ এক মহান ব্যক্তিত্ব।



বর্ণিত বক্তব্য দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, তিনি পরিপুর্ণ সৌন্দর্য্যের মালিক অথবা তা দ্বারা নবী করীম (ﷺ) এর বক্তব্য كنت نبيا وادم بين الماء الطين অর্থাৎ: আমি তখনও নবী ছিলাম যখন আদম (عليه السلام) মাটি ও পানির সংমিশ্রনে ছিলেন, একথা বুঝানো হয়েছে।



☛বর্ণিত ব্যাখ্যা সম্পর্কে যদিও কোন কোন হাফিজে হাদীসবেত্তাগন নিরবতা অবলম্বন করেছেন তবুও এর মমার্থ বিশুদ্ধ পন্থায় বর্ণিত হয়েছে। তন্মধ্যে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল, ইমাম বায়হাকী ও হাকীম নিশাপুরী (رحمة الله) তাকে বিশুদ্ধ বলে মত দিয়েছেন। তাঁরা বলেন,



বিশুদ্ধ সনদে হযরত ইরবাদ্ব বিন সারিয়্যা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরশাদ ফরমান:



إِنِّي عِنْدَ اللَّهِ مَكْتُوبٌ خَاتِمُ النَّبِيِّينَ ، وَإِنَّ آدَمَ لَمُنْجَدِلٌ فِي طِينَتِهِ



অর্থাৎ: আমি মহান আল্লাহ পাকের দরবারে তখন ও সর্বশেষ নবী হিসেবে লিখিত ছিলাম, যখন পিতা আদম (عليه السلام) কদর্মায় মিশ্রিত ছিলেন। অর্থাৎ আদম (عليه السلام) এর ভেতরে রূহ প্রবেশের পূর্বে মাটির মধ্যে বিক্ষিপ্তভাবে থাকাবস্থায়ও আমি নবী ছিলাম।



☛ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল ও বুখারী (رحمة الله) স্বীয় তারীখ গ্রন্থে আবু নাঈম স্বীয় হুলিয়া গ্রন্থে, হাকীম স্বীয় মুস্তাদরেকে হযরত মাইসারা দ্বাবাঈ (رضي الله عنه) হতে একখানা হাদীস বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে আমি নিবেদন করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি বলে দিন যে, কখন থেকে আপনি নবী ছিলেন? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, হে মাইসারা! হযরত আদম (عليه السلام) রূহ ও জিসিম মোবারকের মধ্যে বিদ্যমান থাকাবস্থায়ও আমি নবী ছিলাম।



☛ইমাম বায়হাক্বী (رحمة الله) বলেন, আমি একটি গ্রন্থ প্রনয়ন করেছি, যাতে ইমাম তিরমীজি (رحمة الله) এর বর্ণিত হাদীস ও বিদ্যমান আছে। তিনি স্বীয় গ্রন্থে সাইয়্যিদিনা হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে হাসান সূত্রে একখানা হাদীস বর্ণনা করে বলেন: সাহাবায়ে কেরামগন (رضي الله عنه) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর দরবারে জানতে চাইলেন হে আল্লাহর রাসূল! আপনি বলে দিন কবে থেকে আপনার নবুওয়ত প্রতিষ্টিত হয়? তিনি বললেন: আদম (عليه السلام) রূহ ও জিসিম মোবারকের মধ্যে থাকাবস্থায়।



☛অন্য হাদীসে এসেছে انا اول الانبياء خلقا واخرهم بعثا অর্থাৎ: সৃষ্টিগত দিক থেকে আমি প্রথম নবী এবং প্রেরীত হওয়ার দিক থেকে সর্বশেষ নবী।



☛সহীহ মুসলিম শরীফে হযরত আমর ইবনুল আস (رضي الله عنه) হতে একখানা হাদীস এসেছে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরশাদ করেছেন:



كَتَبَ اللَّهُ مَقَادِيرَ الْخَلائِقِ كُلِّهَا قَبْلَ أَنْ يَخْلُقَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ بِخَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ-، قَالَ: وَعَرْشُهُ عَلَى الْمَاءِ-. ومن جملة ما كتب فى الذكر- وهو ام اكتاب ان محمدا خاتم النبيين-



অর্থাৎ: মহান আল্লাহ পাক অবশ্যই আসমান ও জমিনসমুহ সৃষ্টির ৫০ হাজার বছর পূর্বে সৃষ্টি কুলের তাক্বদীর লিপিবদ্ধ করেন এমতাবস্থায় তাঁর আরশ ছিল পানির উপর স্থিরকৃত। তখন কুরআন মজীদে যা লিখিত ছিল, তার সারগর্ব ছিল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম হচ্ছেন সর্বশেষ নবী। এর দ্বারা উদ্দেশ্য ছিল মুক্বাররাবীন ফেরেস্তাদের জন্য তাঁর নবুওয়ত প্রকাশ পাওয়া এবং মাক্কামে ইল্লিয়্যীনের সর্বোচ্ছ স্থানে তাঁর রূহ মোবারক উচ্ছাসীত এ জন্য যে তাঁর সুমহান মর্যাদা সবার নিকট পরিজ্ঞাত ও প্রস্পুটিত হয়ে উঠে এবং সমস্ত আম্বিয়া ও রাসূলগনের উপরে তাঁর মর্যাদা ও ব্যবধান প্রকাশ পায় এ প্রয়াসে তাঁকে প্রথম সৃষ্টি করা হয়েছে।



সৃষ্টির ৫০ হাজার বছর র্পূবেকার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম এর রূহ প্রকাশের মতলব হচ্ছে মুকাররাবীন ফেরেস্তাদের সামনে তাঁর নবুওয়ত যাহের করা, মাকামে ইল্লীয়্যিনের উচ্ছ স্থানে তাঁর পবিত্রাত্মা বিদ্যমান থাকার অর্থ হচ্ছে তাঁর অপর মযার্দা ও মহিমা তাঁদেরকে জানিয়ে দেয়া। তাছাড়া সমস্ত আম্বিয়াকুল (عليه السلام ) এর উপর তাঁর সুমহান মর্যাদার পরিধি কতটুকু তা জানিয়ে দেয়াই নবুওয়ত প্রকাশ করার মূল উদ্দেশ্য।


এরপর হযরত আদম (عليه السلام ) দেহ ও আত্মার সংমিশ্রনে থাকাবস্থায় হুযূরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম এর নুবুওয়াত প্রকাশের কারন হচ্ছে যেহেতু এ সময় হযরত আদম (عليه السلام ) দেহ ও আত্মার সংমিশ্রনে থাকাবস্থায় হুযূরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম এর নবুওয়াত প্রকাশের কারণ হচ্ছে যেহেতু এসময় হযরত আদম (عليه السلام ) রূহ মোবারক দেহ জগতে প্রবেশের সময় ছিল।



হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম ইবনে হাজার (رضي الله عنه ) স্বীয় “কিতাবুল নাফখে ওয়াত তাসভীয়্যা গ্রন্থে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম এর অস্তিত্বের পুর্বেকার মিছালী ছুরতে তাঁর নবুওয়তী বৈশিষ্টসমুহ আলোচনা করতে যেয়ে বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম এর সকল বৈশিষ্টতার পুর্ণতার বাস্তবায়ন এভাবে হয়েছে যে, হাদীসে বর্ণিত مقادير الخلق দ্বারা হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সৃষ্টিকেই প্রথমে বুঝানো হয়েছে। তাঁর আগমনের র্পূবে তিনি বিরাজমান জীব হিসেবে না থাকলেও তাঁর লক্ষ্য, গন্তব্য ও কামালতসমুহ তাকদীরে বিদ্যমান ছিল। হুজ্জাতুল ইসলাম (رضي الله عنه ) আরও বলেন:



اول القكرة اخر العمل واخر العمل اول الفكرة



অতএব রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম এর বাণী كنت نبيا দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে তাঁর কথা আমি আদম (عليه السلام ) এর সমস্ত দেহাবয়ব সৃষ্টির পূর্বে ও নবী ছিলাম। আর বাস্তবে ও ঐ সময় মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম ব্যতীত আর কারও অস্থিত্ব বিদ্যমান ছিলনা। যেমন: ধরে নিন একজন ইঞ্জিনিয়ার সাহেব একটি বাড়ী নিমার্ণের পূর্বে কি কি সরঞ্জামাদীর প্রয়োজন তা ভাল করে জানেন এবং তা নির্মাণে তার পূর্বে পরিকল্পনা থাকে। তদ্রæপ মহান আল্লাহ তাক্বদীর সৃষ্টি করে তার অনুকুলে কিভাবে সৃষ্টি করবেন তা জ্ঞাত আছেন।



ইমাম সুবুকী رضي الله عنه  আর চমৎকার কথা বলেছেন যে, দেহ সৃষ্টির পূর্বে রূহ সৃষ্টি করা হয়েছে। তাই হুযূরে পাকের বাণী كنت نبيا বাক্য দ্বারা তিনি স্বীয় রূহ পাকের দিকে অথবা হাক্বীক্বতে মুহাম্মাদীর দিকে ইঙ্গিত করেছেন। আর প্রকৃত পক্ষে হাক্বীক্বতে মুহাম্মাদী সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম সর্ম্পকে কেবল আল্লাহ পাক ছাড়া দ্বিতীয় কেউই জানেনা।



এর পরে মহান আল্লাহ পাক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম এর হাক্বীক্বত থেকে প্রত্যেকের হাক্বীক্বতকে যে সময়ে বা যে হালতে ইচ্ছা প্রদান করেছেন। অতএব হাক্বীকতে মুহাম্মদী আদম (عليه السلام ) কে সৃষ্টি করার প্রাক্ষালেও বিদ্যমান ছিল। ফলে মহান আল্লাহ পাক হাক্বীক্বতে মুহাম্মাদীকে ঐ গুনে গুনাম্বিত করে সর্ব প্রকার ফয়েজে রাব্বানী দান করে নবী হিসেবে রূপদান করেন। এরপর আরশে আজীমে তাঁর মোবারক নাম লিপিদ্ধ করেন, যাতে তাঁর দরবারে তাঁর হাবীবে পাকের সম্মান মর্যাদা ও বড়ত্ব যে কতটুকু তা সকল ফেরেস্তা ও অন্যান্যরা জানতে সক্ষম হয়।



অতএব, সন্দেহাতীতভাবে বলা যায় যে, ঐ সময় হতেও হাক্বীক্বতে মুহাম্মাদী সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম বিদ্যমান ছিল।


স্বীয় জননী মা আমেনা (رضي الله عنه) এর গর্ভে তার দেহাবয়বকে পূর্ণাকৃতি ধারণ করে ধরণীর বুকে আগমন যদিও বিলম্বে হয়েছে, তথাপি তার নবুওয়াতীর গুরূ দায়ীত্বভার প্রজ্ঞার্পূণ নির্দেশনা, হাকিকতে মুহাম্মদীর গুঢ় রহস্যাবলীর সকল ব্যশিষ্টসমুহ এবং তাঁর পূর্ণতার বিকাশ সাধন যুগে যুগে দ্রুত কার্য়কর বা বলবত ছিল। এবং এতে বিলম্বের কোন অবকাশ নেই।


ইমাম কাস্তালানী (رضي الله عنه ) বলেন, মহান আল্লাহ পাক যখন তাঁর সৃষ্টি কুল ও তাদেঁর রিযিকের তাক্বদীর সৃষ্টি ঝুলন্ত রাখলেন ঠিক তখনই তিনি হাক্বীক্বতে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লামকে প্রকাশ করে নিজের সম্মুখে রাখলেন, তখন থেকেই আহমদী নূরের আলোকে ৮০ হাজার আলমের  ঊর্ধ্ব ও নিম্নস্থান আলোকিত হয়ে যায়, এরপর মহান আল্লাহ পাক তাঁর হাবীবে কিবরিয়া সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লামকে নবুওয়তের বিষয় অবগত করত রেসালতের শুভ সংবাদ দেন। অথচ ঐ সময় হযরত আদম (عليه السلام ) ছিলেন রূহ ও দেহের মধ্যখানে অবস্থিত। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম এর দৃষ্টি সকল আত্মার প্রতি প্রবাহিত হলো।

_______________

আল মাওরিদুর রাভী ফি মাওলিদিন নাবাবী (ﷺ)

মূলঃ ইমাম নূরুদ্দীন মুল্লা আলী কারী আল হারুবী (رحمة الله)

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন