ইয়াযিদকে ভালােবাসা যাবে না, লানত দেয়াও জায়েয নয়

 

 ইয়াযিদকে ভালােবাসা যাবে না, লানত দেয়াও জায়েয নয়।


এটা ইমাম গাযালি, ইবনুস সালাহ, ইবন তায়মিয়া, ইবন হাজার হায়তামিসহ জমহুরে আলেমের অভিমত। তবে ইয়াযিদকে লানত দিতে নিষেধ করার পেছনে তাঁদের কারণগুলাে ভিন্ন ভিন্ন :

১. হুসাইন (رضي الله عنهকে ইয়াযিদ হত্যার হুকুম দেয়নি। এটা ইমাম গাযালি, ইবনুস সালাহ, ইবন হাজার হায়তামি (رحمة الله) প্রমুখের মত।


২. যতক্ষণ একথা প্রমাণিত না হবে যে, ইয়াযিদ সেইসব জালিম ও ফাসিকদের অন্তর্ভুক্ত, যাদের লানত দেয়া বৈধ এবং এই অবস্থায়ই সে মারা গিয়েছে, ততক্ষণ তাকে লানত দেয়া যাবে না। তাই সে যদি তেমন হয়, তবেই তাকে লানত দেয়া বৈধ হবে। এটা ইবন তায়মিয়ার


অভিমত। দেখা যাচ্ছে ইয়াযিদকে লানত দেয়া সম্পর্কে মতপার্থক্য সুনির্দিষ্টভাবে কোনাে ফাসিককে লানত করা বৈধ কি না, তার উপর নির্ভরশীল। জমহুরের মত হলাে কোনাে ফাসিককে নাম ধরে লানত দেয়া যাবে না। মােটকথা যারা মনে করেন, ফাসিককে নাম ধরে লানত দেয়া জায়েয, তারাই ইয়াযিদকে লানত দেয়া বৈধ বলেছেন। আবার যাদের কাছে সেটা বৈধ নয়, তারাই ইয়াযিদকে নাম ধরে লানত দিতে নিষেধ করেছেন। লানত না দেয়ার পক্ষে ইমাম গাযালি, ইবন হাজার হায়তামি প্রমুখের যুক্তিটি ধােপে টেকে না। আমরা যদি এটা মেনেও নেই যে, ইয়াযিদের প্রত্যক্ষ আদেশে ইমাম হুসাইন (رضي الله عنه)কে হত্যা করা হয়নি, তবুও তাে এটা অগ্রাহ্য করার কোনাে উপায় নেই যে, এতে সে আনন্দিত হয়েছিল, তার পবিত্র শির মােবারক তার সামনে আনা হলে লাঠি দিয়ে আঘাত করেছিল, ইবনুয যাবারির কুফরি কবিতা আবৃত্তি করেছিল (ইবনুল জাওযি এ বিষয়টি সামনে উল্লেখ করবেন)। এছাড়া হুসাইন (رضي الله عنه)র খুনিদের সে বিন্দুমাত্র শাস্তি দিয়েছে


অথবা তাদের তত্ত্বাবধায়ক ইবন যিয়াদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে বলে কোথাও দুর্বল সনদেও কোনাে বর্ণনা নেই। হুসাইন (رضي الله عنه)র হত্যাকাণ্ড তার সবচেয়ে বড় অপকর্ম হলেও অন্যান্য অপরাধগুলােও ছােট করে দেখার সুযােগ নেই। সে মদিনাকে লুটপাট-ধর্ষণ-হত্যার জন্য বৈধ করে দিয়েছিল, যা রসুলুল্লাহ (ﷺ)এর মদিনা তাে দূরের কথা, মুশরিকদের কোনাে শহরের জন্যও বৈধ হতে পারে না। সর্বশেষ বছর মক্কা মুকাররামাতেও সে একই কাণ্ড ঘটিয়েছে। তখন কাবাঘরে গােলা বর্ষণ করা হয়েছে। অতএব সে ইমাম হুসাইন (رضي الله عنه)কে হত্যার আদেশ দেয়নি' নিছক এ কারণে তাকে লানত দেয়া না জায়েয হওয়ার মতামত আঁকড়ে থাকা নিতান্তই অবান্তর। কারবালার ঘটনা যদি কোনদিন নাও ঘটত, তবুও হাররার ঘটনাই হাদিসের আলােকে তার লানতযােগ্য হবার জন্য যথেষ্ট ছিল। একইভাবে ইবন তায়মিয়ার যুক্তিটিও টেকে না। কারণ ইয়াযিদ নিঃসন্দেহে একজন ফাসেক ছিল। এ ব্যাপারে আলিমদের ইজমাও রয়েছে।


❏ ইয়াযিদের ফাসিক হবার বিষয়টি ইবন তায়মিয়া নিজেও মিনহাজুস সুন্নাহ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। এখন একটা বিষয় বাকি থাকে যে- ইয়াযিদ ঐ অবস্থার উপরেই মারা গিয়েছে কি না? ইতিহাস গ্রন্থাদিতে আমরা যেমন দেখতে পাই, ইয়াযিদ যখন মারা যাচ্ছিল, তখনও তার বাহিনী মক্কায় কাবা ঘরে গােলাবর্ষণ করছে। ইয়াযিদ তাওবা করলে সেকথা বিশেষভাবে অবশ্যই ইতিহাস গ্রন্থাদিতে থাকত। অবশ্য হুসাইন (رضي الله عنه)র হত্যাকাণ্ডের পর তার অনুতপ্ত হবার বর্ণনা আছে। আবার এর বিপরীতমুখী বর্ণনাও আছে।


❏ একটি বর্ণনায় আছে, সে বলেছিল, আমি হলে হুসাইনের সাথে এমন করতাম না।' আরেক বর্ণনামতে, সে প্রথমে খুশি হলেও পরে অনুতপ্ত হয়েছিল। আরেকটি বর্ণনামতে সে হুসাইন (رضي الله عنه)কে হত্যার জন্য এবং এর মাধ্যমে মুসলিমদের সামনে নিজেকে ঘৃণিত করার জন্য ইবন যিয়াদকে লানত দিয়েছিল।


(ইবনু কাছির, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, খ. ৮, পৃ. ২৩২)।


কিন্তু তার অনুতপ্ত হবার হাকিকত বােঝা দুষ্কর। একজন অনুতপ্ত মানুষ কীভাবে আবার হাররার মতাে ঘটনা ঘটায়।


❏ ইবন তায়মিয়া বলেছেন, 'কিছু মানুষ ভাবে ইয়াযিদ একজন ভালাে লােক ছিল, ন্যায়পরায়ণ শাসক ছিল, মহানবি (ﷺ)এর যুগে জন্ম নেয়া সাহাবি ছিল। এগুলাে পথভ্রষ্টতা।'


(ইবন তায়মিয়া আল হাররানি, মাজমু আল ফাতাওয়া, খ.৪, পৃ. ৪৮২)


 


❏ আস সাওয়াইকুল মুহরিকা গ্রন্থে ইবন হাজার হাইতামি (মৃ. হি.) ইয়াযিদের ফাসিক হবার ব্যাপারে আলিমদের একমত হওয়ার কথা বলেছেন। তিনি লিখেছেন,  


ইয়াযিদ ইবন মুয়াবিয়া কাফির কি না, তা নিয়ে আহলুস সুন্নাহর আলিমগণের মাঝে মতপার্থক্য আছে।


একদল তাকে কাফের মনে করে। অপরদিকে অন্যদল বলেন, সে মুসলিম হলেও ফাসিক, ফাজির ও মদ্যপ ছিল। তার ফাসিক হওয়া নিয়ে সবার ইজমা রয়েছে। একদল আলিমের মতে তাকে নাম ধরে লানত দেয়া। যাবে। ইমাম আহমদ, ইবনুল জাওযি প্রমুখ এ মত পােষণ করেন...। উক্ত গ্রন্থে তিনি আরও লিখেছেন, উমর ইবন আব্দুল আযিয (رحمة الله) এর ব্যাপারে বর্ণিত আছে, ইয়াযিদকে যে আমিরুল মুমিনিন বলত, তিনি তাকে বিশটি দোররা মারার হুকুম জারি করতেন।


(আস সাওয়াইকুল মুহরিকা, পৃ. ২২১)


❏ ইমাম যাহাবি মুহাম্মদ ইবন আবুস সারি আল আসকালানির সূত্রে বর্ণনা করেছেন,→ ইয়াহইয়া ইবন আব্দুল মালিক ইবন আবু গানিয়্যাহ বলেন,→নওফল ইবন আবুল ফুরাত বলেন,→আমি একদিন উমর ইবন আব্দুল আযিযের কাছে ছিলাম। হঠাৎ এক লােক বলল, আমিরুল মুমিনিন ইয়াযিদ বলেন...'। তখন উমর তাকে শাস্তি দেয়ার হুকুম দিলেন। তাকে বিশ ঘা চাবুক মারা হলাে।' এছাড়াও আরও বলা উচিত, ইয়াযিদ তাে ফাসিক হলেও অন্যান্য ফাসিকের মতাে নয়। সে ইমাম হুসাইন (رضي الله عنه)কে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, তাঁর শির মােবারককে কুফা থেকে দামেস্কে নিয়ে যাওয়ার পর সামনের দাঁতে ছড়ি দিয়ে খোঁচা দিয়েছে, আহলুল বায়তের সদস্যদের হত্যা করার পর জীবিতদের বন্দী করেছে। মদিনায় বাইয়াত অস্বীকারকারীদের হত্যা করেও ক্ষান্ত হয়নি, মদিনাকে তার সৈন্যদের জন্য বৈধ করে দিয়েছিল; তারা সেখানে যা ইচ্ছা করেছে। মক্কায় ইবন যুবায়র (رضي الله عنه)মা ও তার সঙ্গীদের অবরুদ্ধ করেও ক্ষান্ত হয়নি, কাবা শরিফের উপর গােলাবর্ষণ করেছে। তাছাড়া শাসনক্ষমতা পাওয়ার আগে থেকেই সে খেলতামাশা, মদ্যপান ইত্যাদিতে কুখ্যাত ছিল। তাই সে কীভাবে অন্যান্য ফাসিকদের মতাে হতে পারে? কেউ কেউ নিম্নোক্ত হাদিসকে প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করেন,


لعن المؤمن كقتله .


‘কোনাে মুমিনকে লানত দেয়া তাকে হত্যা করার ন্যায়।' (সহিহ বুখারি, কিতাব : আল আদব, বাব : মা ইউনহা মিনাস সিবাবি ওয়াল লান)


❏ এ হাদিস তাে ঐ মুমিনের ক্ষেত্রে প্রযােজ্য, যে লানতের যােগ্য নয়। নির্দিষ্ট কোনাে মুমিনকে লানত দেয়া প্রসঙ্গে ইমাম নববি বলেছেন, ‘নির্দিষ্ট কোনাে ব্যক্তিকে লানত দেয়া, যে ইহুদি, খ্রিষ্টান, জালিম, ব্যভিচারী, চিত্রাঙ্কণকারী, চোর অথবা সুদখােরের মতাে কোনাে পাপে লিপ্ত, স্পষ্ট হাদিস অনুসারে তাকে লানত দেয়া হারাম নয়।'


(ইমাম নববি, আল আযকার মিন কালামি সাইয়্যিদিল আবরার, রিয়াদ : মাকতাবাতু নাযার মুসতফা আল বায, ১৯৯৭ খ্রি. খ, ২, পৃ. ৪২৮)

__________

পাপিষ্ঠ ইয়াজিদ

কৃতঃ (ড. মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ, আব্দুল্লাহ যােবায়ের)

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন