অলী বা পীর নির্বাচন ও অলীর মর্যাদা

 

অলী বা পীর নির্বাচন ও অলীর মর্যাদা


১.        হাদীস শরীফ- যাকে দেখলে আল্লাহকে স্মরণ হয়, যার আমল দেখলে আখেরাত স্মরণ হয় এবং যার কথা শুনলে হেকমত লাভ হয়- তিনিই হলেন অলী।

২.        হাদীস শরীফ- দুনিয়াতে কিছু লোক আছেন যারা হলেন, আল্লাহ যিকিরের চাবী। (হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসূদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে ইমাম তাবরানী (رحمة الله) কর্তৃক বর্ণিত)।



৩.        হাদীসে কুদসীর বরাতে হুযুর (ﷺ) এরশাদ করেন-



مَنْ عَادَى لِي وَلِيًّا فَقَدْ آذَنْتُهُ بِالْحَرْبِ.



        অর্থ : আল্লাহ বলেন, যে আমার অলীদের সাথে শত্রুতা করে, তার সাথে আমি যুদ্ধ ঘোষণা করি। ৬২


➥৬২.


ক) বুখারী : আস্ সহীহ, বাবুত্ তাওয়াদ্বুয়ী, ২০:১৫৮, হাদিস নং : ৬০২১।


খ) তাবরিযী : মিশকাতুল মাসাবীহ, বাবু যিকরিল্লাহি ওয়াত্ তার্কারাবু ইলাইহি, পৃ. ১০, হাদিস : ২২৬৬।


গ) বায়হাকী : সুনানুল কুবরা, ৩:৩৪৬।


ঘ) ইবনে হিব্বান : আস্ সহীহ, বাবু মা জা’আ ফীত্ ত্বয়াত, ২:১৮৫, হাদিস নং : ৩৪৮।



৪.        পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন,



أَلَا إِنَّ أَوْلِيَاءَ اللهِ لَا خَوْفُ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُوْنَ-



        অর্থ : অলীদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিত-চিন্তিতও হবে না। ৬৩


➥৬৩. আল কুরআন : সূরা ইউনুস, ১০:৬২।



৫.        হাদীস শরীফে হুযুর (ﷺ) এরশাদ করেন-



إِنَّ الْعُلَمَاءَ وَرَثَةُ الْأَنْبِيَاءِ.



অর্থ : আলেমগণ নবীর ওয়ারিশ, প্রতিনিধি। ৬৪


➥৬৪.


ক) তিরমিযী : আস্ সুনান, বাবু মা জা’আ ফী ফদ্বলিল ফিকহি, ৯:২৯৬, হাদিস নং : ২৬০৬।


খ) আবু দাউদ : আস্ সুনান, বাবুল হাস্সি আলা তলাবিল ইলমি, ১০:৪৯, হাদিস নং : ৩১৫৭।


গ) তাবরিযী : মিশকাতুল মাসাবীহ, কিতাবুল ইলম, ১ম পরিচ্ছেদ, পৃ. ৪৬, হাদিস নং : ২১২।



৬.        হাদীস শরীফে হুযুর (ﷺ) এরশাদ করেন-



أَنَّ الْعُلَمَاءَ هُمْ وَرَثَةُ الْأَنْبِيَاءِ.



        অর্থ : শুধু হক্কানী আলেমগণই হলেন নবীর ওয়ারিশ।  ৬৫


➥৬৫.


ক) বুখারী : আস্ সহীহ, বাবুল ইলমি ক্ববলাল কাওলি ওয়াল আমল, ১:১১৯।


খ) ইবনে মাজাহ : আস্ সুনান, বাবু ফদ্বলিল উলামা ওয়াল হাস্সি আলা ত্বলাবিল ইলমি, ১:২৫৯, হাদিস নং : ২১৯।


গ) আহমদ ইবনে হাম্বল : আল মুসনাদ, বাবু বাকা হাদিসী আবিদ্ দরদা, ৪৪:১৯২, হাদিস নং : ২০৭২৩।



৭.        হাদীস শরীফে হুযুর (ﷺ) এরশাদ করেন-



نَظْرَةٌ إِلَي وَجْهِ الْعَالِمِ أَحَبُّ إِلَي اللهِ مِنْ عِبَادَةِ سِتِّيْنَ سَنَةً صِيَامًا وَقِيَامًا.



        অর্থ : একজন হক্কানী আলেমের চেহারার দিকে একনজর মহব্বতের সঙ্গে তাকিয়ে থাকলে এক বছরের নফল রোজা ও নফল নামাজের চেয়ে বেশী হিসেবে গণ্য হবে।



৮.        হাদীস শরীফে হুযুর (ﷺ) এরশাদ করেন-



مَنْ زَارَ عَالِماً فَكَأَنَّمَا زَارَنِيْ، وَمَنْ صَافَحَ عَالِماً فَكَأَنَّمَا صَافَحَنِيْ.



        অর্থ : যে একজন হক্কানী আলেমকে দেখল, সে যেন আমি স্বয়ং নবীকে দেখল এবং যে তার সঙ্গে মুসাফা করল, সে যেন আমার সঙ্গেই মুসাফা করল।



৯.        হাদীস শরীফে হুযুর (ﷺ) এরশাদ করেন- তোমরা কামেল মু’মিনের (অলীর) অন্তদৃষ্টিকে ভয় কর, কেননা তাঁরা আল্লাহর নূর দ্বারা দর্শন করেন। ৬৬


➥৬৬. তিরমিযী শরীফ।



১০.        হাদীসে কুদসী- আসমান জমীন আমাকে ধারন করতে পারে না, কিন্তু মু’মিনের হৃদয় আমার স্থান।



১১.        হাদীসে কুদসী- মানুষ আমার রহস্য এবং আমি মানুষের রহস্য।



১২.        হাদীসে কুদসী- আমি ফকিরের (সূফির) ভিতর এবং ফকীর আমার মধ্যে।



১৩.        হাদীস শরীফে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ঘোসণা করেন-



مَنْ عَرَفَ نَفْسَهُ فَقَدْ عَرَفَ رَبَّهُ.



        -যে নিজেকে চিনেছে, সে আল্লাহকে চিনেছে। ৬৭


➥৬৭. আলুসী : তাফসীরে রুহুল মা‘আনী, ১:৫৩।



১৪.        হাদীস- মু’মিনের হৃদয় আল্লাহর সিংহাসন।



১৫.        হাদীস- ফকিরগণের (সূফীদের) মাধ্যমে আল্লাহর অনুসন্ধান কর।



১৬.        হাদীস- দুনিয়াতে এমন কিছু জির্ন-শীর্ণ ও উশ্কো-খুশকো আল্লাহর বান্দা আছে, যাদের তোমরা চিন না; কিন্তু তারা আল্লাহর দরবারে হাত উঠালে আল্লাহ তা ফিরান না। ৬৮


➥৬৮. ইবনে মাজাহ।



        উপরোক্ত দলীলসমূহ তো অলী, সূফী বা পীরের পরিচয় ও মর্যাদারই জানান দেয়। আর সৌভাগ্যবানরাই তাঁদের অনুসারী হয়। হযরত ওমর (رضي الله عنه) বলেন, ‘আমার অন্তর আমার রবকে তাঁর জ্যোতি দ্বারা দর্শন করেছে।’ আর হযরত আলী (رضي الله عنه)র ফরমান- ‘আমি এমন রবের ইবাদত করি না, যাকে আমি দেখিনা।’ (অর্থাৎ আমি আমার রবকে দেখে দেখে ইবাদত করি)।



        আখিরাতে সব জান্নাতিই কোন মধ্যস্থতা ব্যতিত আপন হৃদয় দর্পনে আল্লাহ তা‘আলা জামাল/ সৌন্দর্য অবলোকন (দীদার) করবে। আর দুনিয়াতে আল্লাহর জ্যোতির দর্শন কিম্বা তাঁকে দেখা (যেমনটা হযরত আলী (رضي الله عنه) ও হযরত ওমর (رضي الله عنه) দেখেছেন) -এ সৌভাগ্য শুধু কামীয়াব ও ভাগ্যবান তরীকত পন্থীদেরই নসীব হবে।



নোট :



(১)        প্রত্যেক অলীই হলেন কোন না কোন মাযহাব ও কোন না কোন তরীকতের অনুসারী।



(২)        অলীর খানকা ছাড়া কেউ কোনো দিন অলী হতে পারেনি এবং ভবিষ্যতেও পারবে না। পীরের খানকা হল অলী তৈরির কারখানা।



(৩)        আলেম অর্থ জ্ঞানী। আর ‘হক্কানী আলেম’ হলেন তারা যারা ইলমে শরীয়ত এবং ইলমে মা‘রিফাত- উভয় জ্ঞানে জ্ঞানী।



(৪)        অলী নির্বাচনের ক্ষেত্রে এখলাসের সাথে আল্লাহর দয়া ভিক্ষা নিয়ে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে এগুতে হবে। ভন্ডের হাতে পড়লে দু’কুলই শেষ।

_________________

কুরআন-হাদীসের আলোকে তরীকার প্রয়োজনীয়তা

গ্রন্থনা ও সংকলনেঃ

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খুরশীদ আলম (অবঃ)

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন