যারা রাসূলে পাক (ﷺ) এর পিতামাতা নাজাতপ্রাপ্ত নন বলেন তাদের দলীল ও জবাব

 

যারা রাসূলে পাক (ﷺ) এর পিতামাতা নাজাতপ্রাপ্ত নন বলেন তাদের দলীল ও জবাব


যারা রাসূলে পাক (ﷺ) এর পিতামাতাকে জাহান্নামী বলেন তারা দুটি দলীল পেশ করে থাকেন।


প্রথম দলীল ও এর জবাব

বিরোধীদের প্রথম দলীল হলো-

-‘একদিন এক সাহাবী রাসূলে পাক (ﷺ) এর কাছে এসে আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ আমার পিতা কোথায়? রাসূলে পাক (ﷺ) জবাব দিলেন, তোমার পিতা জাহান্নামে। সে ব্যক্তি নিরাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছিলেন তখন রাসূলে পাক (ﷺ) তাঁকে ডেকে বললেন, নিশ্চয়ই আমার পিতা এবং তোমার পিতা জাহান্নামে।’



উপরোক্ত দলীলের জবাব উলামায়ে কিরামের বক্তব্য নিম্নরূপঃ

হাদীসটি খবরে ওয়াহিদ, যা কুরআনের বিপরীতে গ্রহণযোগ্য নয়



ইসলামী শাস্ত্রবিদগণ প্রথম হাদীসের জবাব দেন এভাবে যে, প্রথম হাদীসটি যদিও সহীহ কিন্তু এটি ‘আহাদ হাদীস’। আর উসূলে হাদীসের পরিভাষায় ‘আহাদ হাদীস’ দ্বারা দলীল সাব্যস্ত করা যায় না, যদি তার বিপরীতে কুরআন মজীদের কোনো আয়াত পাওয়া যায়। যেহেতু আল্লাহর রাসূলের পূর্বপুরুষদের ঈমান এবং পবিত্রতা সম্পর্কে কুরআন মজীদ এবং বিভিন্ন হাদীসে বর্ণনা রয়েছে সুতরাং এ হাদীসের অর্থ এ ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য নয়।



ঈমান আনয়নের হাদীস দ্বারা অন্য সকল হাদীস মানসূখ



ইবনে আবিদীনসহ ইসলামী শাস্ত্রবিদগণ উল্লেখ করেন যে, এক হাদীসে এসেছে, রাসূলে পাক (ﷺ) এর পিতা-মাতাকে আল্লাহ পাক তাঁর হাবীবের আকাক্সক্ষার কারণে বিদায় হজ্জের সময় জীবিত করেছেন এবং তাঁরা আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছেন। সুতরাং প্রথম হাদীসে যদিও আল্লাহর রাসূলের পিতাকে জাহান্নামে বলা হয়েছে সেই ঘটনা ছিল আগের এবং তাঁদের ঈমান আনয়নের ঘটনা বিদায় হজ্জের সময়ের অর্থাৎ রাসূলে পাক (ﷺ) এর ইন্তেকালের মাত্র তিন মাস আগের, যা পূর্ববর্তী হাদীসের হুকুমকে রহিত করে দিয়েছে।



আরবী ‘আবুন‘ শব্দ দ্বারা চাচাকেও বুঝানো হয়



ইসলামী শাস্ত্রবিদগণ উল্লেখ করেন যে, উল্লেখিত হাদীসে ‘আমার পিতা’ বলে রাসূলে পাক (ﷺ) তাঁর চাচা আবু তালিবকে বুঝিয়েছেন। কেননা কুরআন কারীমে বিভিন্ন স্থানে পিতা বলে চাচাকে বুঝানো হয়েছে। তাছাড়া মক্কা শরীফের মুশরিকগণ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে ‘আবূ তালিবের ছেলে’ বলে সম্বোধন করত, যেহেতু রাসূলে পাক (ﷺ) আবূ তালিবের লালন-পালনে প্রতিপালিত হয়েছিলেন।



✦যেমন তারা তাঁর চাচা আবূ তালিবকে এসে বলেছিল-


‘তোমার ছেলেকে বলো সে যেন আমাদের মূর্তিদের নিন্দা না করে।’ আর একথা সুপ্রসিদ্ধ যে আবূ তালিব কুফুরীর উপর মৃত্যুবরণ করেছেন।



সুতরাং এ হাদীসে রাসূলে পাক (ﷺ) ‘আমার পিতা এবং তোমার পিতা জাহান্নামে’ দ্বারা তাঁর চাচা আবু তালিবের কথা বুঝিয়েছেন।




দ্বিতীয় দলীল ও এর জবাব



বিরোধীদের দ্বিতীয় দলীল হচ্ছে,


রাসূলে পাক (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, ‘আমি আমার মাতার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনার অনুমতি চাইলাম, তিনি আমাকে অনুমতি দেননি। তখন আমি তাঁর কবর যিয়ারতের অনুমতি চাইলাম, তিনি আমাকে অনুমতি দিলেন।’



এর জবাবে মুহাদ্দিসীনে কেরাম বলেন, এ হাদীসেই বর্ণিত হয়েছে যে, আল্লাহপাক রাসূলে পাক (ﷺ) কে মায়ের কবর যিয়ারতের অনুমতি দিয়েছেন। যদি তিনি মুশরিক হতেন তাহলে আল্লাহ পাক তাঁকে কবর যিয়ারতের অনুমতি দিতেন না।



✦কারণ কুরআনে কারীমে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন,


‘আর তাদের মধ্যে কারো মৃত্যু হলে কখনও তার জানাযার নামায পড়বেন না এবং তার কবরে দাঁড়াবেন না। তাঁরা তো আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের প্রতি কুফুরী করেছে এবং নাফরমান অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেছে।’



এ আয়াতে দেখা যায়, যারা কুফুরীর উপর মারা যায় তাদের কবরে দাঁড়ানোকে আল্লাহ নিষেধ করেছেন, অথচ আল্লাহ পাক রাসূল (ﷺ) কে তাঁর মাতার কবর যিয়ারতের অনুমতি দিয়েছেন। যদি তিনি মুশরিক হতেন তাহলে তাঁকে এ অনুমতি দেওয়া হতো না।



তাছাড়া দ্বিতীয় হাদীসের ক্ষেত্রে এ কথাও প্রযোজ্য যে, ক্ষমা প্রার্থনার নিষেধাজ্ঞা ঈমান আনয়নের হাদীস দ্বারা মানসুখ।



আল্লাহ পাক আমাদের তাঁর হাবীবের প্রতি যথাযথ ঈমান আনার তাওফীক দান করুন এবং তাঁর সম্মানহানী হয় এমন ঈমানবিধ্বংসী মন্তব্য ও বিশ্বাস থেকে হিফাযত করুন।

আমীন।

_________________

রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর মাতা-পিতা জান্নাতী না জাহান্নামী

কৃতঃ খায়রুল হুদা খান

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন