কবর যিয়ারতের সফর প্রসঙ্গে আহলে সুন্নাতের অবস্থান

 

কবর যিয়ারতের সফর প্রসঙ্গে আহলে সুন্নাতের অবস্থান


কবর যিয়ারত প্রসঙ্গে নাজাতপ্রাপ্ত দল তথা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত এর অবস্থান হল, কবর যিয়ারত করা মােস্তাহাব-সুন্নাত এবং কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করাও মােস্তাহাব। যেমন নিচের দলিল গুলাে লক্ষ্য করুন।৷ হানাফী মাজহাবে বিখ্যাত ফকিহ আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী (رحمة الله) উল্লেখ করেন, 

لم أر من مميز به من أمتنا ، ومنع منه بعض أﺉمة الشافعية إلا لزيارته صلى الله عليه وسلم قياسا على منع الرحلة لغير المساجد اللائي . ورده الغالي بوضوح الفري ، قﻻ ما عدا تلك المساجد التلاثة مستوية في الفضل ، فلا فاﺉدة في المملة إليها . أما الأولياء فإنهم متفاوتون في المميز من الله تعالى ، ونفع الربيرين يجب معارفهم وأسرارهم .

-”কবর যিয়ারত নিষেধ করেছেন এরূপ কোন সু-স্পষ্ট দলিল আমাদের মাশায়েখগণের কাছে দেখিনি। শাফেয়ী মাজহাবের সামান্য কিছু লােক তিন মসজিদ ব্যতীত অন্য জায়গায় সফর নিষিদ্ধ। এই হাদিসের উপর অনুমান করে ইহা নিষেধ করে, তবে রাসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) এর যিয়ারত ব্যতীত। কিন্তু ইমাম গাজ্জালী (رحمة الله) এই মত খন্ডন করেছেন। কেননা এই তিন মসজিদ ব্যতীত অন্য মসজিদ ফজিলতের দিকে অধিক মর্যাদা সম্পন্ন নয়, তাই এরূপ মসজিদের উদ্দেশ্যে সফর করা ফায়দাহীন। আর আউলিয়ায়ে কেরাম নৈকট্যের দিকে আল্লাহর নিকটবর্তী। ফলে যিয়ারতকারীরা তাদের গােপনীয়তা ও পরিচয়ের মাধ্যমে উপকার লাভ করবে 


(ফাতওয়ায়ে শামী, ৩ য় খন্ড, ১৫১ পৃঃ)।



এ বিষয়ে আল্লামা আব্দুর রহমান জাযরী رحمة الله তদীয় কিতাবে বলেন,



ولا فرق في الزيارة بين كون المقابر قريبة أو بعيدة ، وخالف الحنابلة ، فانظر مذهبهم تحت الخط  ، بل يندب السفر لزيارة الموتى خصوصا مقابر الصالحينঃ أما زيارة قبر النبي صلى الله عليه وسلم ، فهي من أعظم القرب ، وكما تندب زيارة القبور للرجال تندب أيضا للنساء العجائز اللاتي لا يخشى منهن الفتنة



-”কবর নিকটে হােক অথবা দূরে হােক যিয়াতের ব্যাপারে কোন পার্থক্য নেই। হাম্বলী মাজহাবের কেউ কেউ ইহার বিপরীত বলেছেন, নিচে ২ নং টিকা দেখুন। বরং কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা মুস্তাহাব, বিশেষ করে নেক বান্দাগণের কবর যিয়ারত করা মুস্তাহাব। এর মধ্যে রাসূল (ﷺ) রওজা শরীফ যিয়ারত করা অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পুরুষ লােকের যেমনি কবর যিয়ারত মুস্তাহাব তেমনি বৃদ্ধা রমনীদের জন্যও কবর যিয়ারত মুস্তাহাব, যখন তাদের থেকে ফেতনার আশংকা না হবে।”(কিতাবুল ফিকহু আলা মাজাহিবিল আরবা, ১ ম খন্ড, ৪৯১ পৃঃ) 



ইমাম শাফেয়ী (رحمة الله) এর কবর যিয়ারতের নিয়তে বের হওয়া, 



إني لأتبرك بأي خيرية وأجيء إلى قبره ، فإذا تمت لي حاجة ضليت رﺉتين وسألت اللللہ تعالى عند قبره فقضى سريعا .



-”নিশ্চয় আমি আবু হানিফা (র .) এর দ্বারা বরকত হাছিল করি এবং তার কবরের কাছে যাই। যখন আমার কোন হাজত বা সমস্যা দেখা দেয় তখন দুই রাকাত নামাজ আদায় করি এবং ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله) এর মাজারের কাছে গিয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, ফলে আমার হাজর দ্রুত সমাধান হয়ে যেত।”(ইবনে আবেদীন ; ফাতওয়ায়ে শামী, ১ ম খন্ড, ১৪৯ পৃঃ)। 



সনদ সহকারে খতিবে বাগদাদী (رحمة الله) তদীয় তারিখের কিতাবে এভাবে উল্লেখ করেছেন,



أخبرنا القاضي أبو عبد الله الحسين بن علي بن محمد الصيمري ، قالঃ أخبرنا غتر بن إبراهيم المقري ، قالঃ كنا مکرم بن أحمد ، قالঃ حدنا عمر بن إسحاق بن إبراهيم ، قالঃ حدثنا علي بن میمون ، قالঃ سمعت الشافعي ، يقولঃ إني لأتبرك بأبي حنيفة وأجيء إلى قبره في كل يوم ، يعني زائرا ، فإذا عرضت في حاجة صليت ركعتين ، وجئت إلى قبره وسألت الله تعالى الحاجة عنده ، فما تبعد عني حتى تقضى .



-”আলী ইবনে মাইমুন বলেন, আমি ইমাম শাফেয়ী (رحمة الله) কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেনঃ আমি অবশ্যই ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله) এর  উছিলায় বরকত হাছিল করতাম এবং তার মাজারে প্রতিদিন যেয়ারতের উদ্দেশ্যে আসতাম। আমার যখন কোন হাজত থাকত তখন দুই রাকাত নামাজ আদায় করতাম এবং তার মাজারের কাছে যাইতাম ও আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতাম। ফলে আমার হাজত বা চাহিদা দ্রুত পূরণ হয়ে যেত।”(খতিবোগদাদীঃ তারিখে বাগদাদ, ১ ম খন্ড, ৪৪৫ পৃ; আখবারে আবী হানিফা ওয়া আছহাবিহী, ১ ম খন্ড, ৯৪ পৃঃ)।



অতএব, হানাফী মাজহাব মােতাবেক কবর যিয়ারত করা ও যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা উভয়ই মােস্তাহাব সুন্নাত। শাফেয়ী মাজহাকে কিয়দাংশ লােক এর বিরুধীতা করলেও ইমাম গাজ্জালী শাফেয়ী (رحمة الله) ইহা রদ বা খণ্ডন করেছেন। সর্বোপরি ইমাম শাফেয়ী (رحمة الله) সূদুর ফিলিস্তিন থেকে ইরাকের কুফায় ইমাম আজম আবু হানিফা (র.) এর মাজারে যিয়ারতের উদ্দেশ্যে আসতেন, তাই শাফেয়ী মাজহাবের ইমামের আমলের দিকে লক্ষ্য করলে আর কোন বিতর্ক থাকেনা। তাই সর্বসম্মতিক্রমে কবর যিয়ারত করা ও যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা উভয় মােস্তাহাব সুন্নাত। ইমাম শামছুদ্দিন  যাহাবী (رحمة الله) ও ইমাম সুবকী (رحمة الله) স্ব স্ব কিতাবে সনদ সহকারে বর্ণনা করেছেন যে, 



قحط المطر عندنا بمرقند في بعض الأعوام ، فاستسقى الناس مرارا ، فلم قوا ، فأتي رجل صالح معروف بالصلاح إلى قاضي سمرقند فقال لهঃ إني رأيت رأيا أعرضه عليك . قالঃ وما هو ؟ قالঃ أرى أن تخرج ويخرج التاس معك إلى قبر الإمام محمد بن إسماعيل البخاري وتستسقي عنده ، فعسى الله أن يسقينا . فقال القاضيঃ عم ما رأيت . فخرج القاضي والناس معه واستسقى القاضي بالناس وبكى التاش عند القبر وتشفعوا بصاحبه ، فأرسل الله تعالي الماء بماء عظيم غزير ، أقام الناس من أجله بخرتنك سبعة أيام أو نحوها ، لا يستطيع أحد الوصول إلى سمرقند من كثرة المطر وغزارته . وبين سمرقند ورتنك نحو ثلاثة أميال .



“সমরকান্দ শহরে কয়েক বছর যাবৎ বৃষ্টির অভাব দেখা দিল। লােকেরা একাধিকবার বৃষ্টির নামাজ পড়লাে কিন্তু বৃষ্টি হলনা। অতঃপর ছিলাহ নামে প্রসিদ্ধ এক নেককার ব্যক্তি কাজীর দরবারে আসল বলল, আমি একটি ভাল স্বপ্ন দেখেছি যা আপনার কাছে বর্ণনা করতে চাই। কাজী বললঃ বলাে। লােকটি বললঃ আমি সপ্নে দেখলাম আমি ও লােকেরা আপনার সাথে ইমাম বুখারী (رضي الله عنه) এর কবরের দিকে বের হয়েছি এবং তার মাজারের কাছে  দাড়িয়ে আল্লাহর কাছে বৃষ্টি প্রার্থনা করছি। অতঃ পর আল্লাহ পাক অচিরেই বৃষ্টি প্রদান করলেন। কাজী বললঃ তুমি উত্তম স্বপ্ন দেখেছ। অতঃ পর কাজী বের হল ও লােকের তার সাথে বের হল এবং ইমাম বুখারী (رحمة الله) মাজারের পাশে আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করলেন ও আল্লাহর কাছে বৃষ্টি প্রার্থনা করলেন। ফলে আল্লাহ তায়ালা আসমান থেকে প্রচুর পরিমানে বৃষ্টি বর্ষন করলেন। লােকেরা ইমাম বুখারী (رحمة الله) এর মাজারের কাছে ৭ দিন কিংবা অনুরূপ সসময় অবস্থান করল এবং একজন লােকও সমরকন্দ শহরে যেতে পারল না।”


(ইমাম যাহাবীঃ তারিখুল ইসলাম, ৬ ষ্ঠ খন্ড, ১৪০ পৃঃ ইমাম বুখারীর জিবনীতে ; যাহাবীঃ সিয়ারে আলামিন নুবালা, ১২ তম খন্ড, ৪৬৯ পৃঃ ইমাম বুখারীর আলােচনায় ; ইমাম সুবকীঃ তাবকাতুশ শাফেইয়্যা, ২ য় খন্ড, ২৩৪ পৃঃ)। 



এই ঘটনা থেকে প্রমাণিত হয় তৎকালিম মুসলমানেরা বৃষ্টি প্রার্থনার উদ্দেশ্যে ইমাম বুখারী (র.) এর মাজারে নিয়ত করে গিয়েছিল।

_______________

সহিহ হাদিসের আলােকে মাজার যিয়ারত পূজা নয় ও কদমবুছির সমাধান

গ্রন্থনায়ঃ  মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ আলাউদ্দিন জিহাদী 

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন