হাদিসের আলোকে কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর

 

হাদিসের আলোকে কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর


কবর যিয়ারত করা যেমনিভাবে মােস্তাহাব তেমনিভাবে কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করাও মােস্তাহাব। কেননা স্বয়ং আল্লাহর রাসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) ও সাহাবায়ে কেরামগণ কবর যিয়ারত করার উদ্দেশ্য করে সফর করেছেন। যেমন নিচের হাদিস গুলাে লক্ষ্য করুন এ বিষয়ে আরেকটি হাদিসে আছে, 



حدثنا الی ، قالঃ ثنا شوية ، قالঃ أخبرنا ابن المبارك ، عن إبراهيم بن محمد ، عن سهل بن أبي صالح ، عن محمد بن إبراهيم التيمي قالঃ كان النبي صلى الله عليه وسلم يأتي قبور الشهداء ممن رأي الخول ، فيقولঃ السلام عليكم بما صبرم فنعم عقبى الدار . قالঃ وكان أبو بكر ومحمر وما يفعلون ذلك



-”মুহাম্মদ ইবনে ইব্রাহিম আত্-তায়মী (رحمة الله) বলেনঃ আল্লাহর রাসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) প্রতি বছরের শুরুতে উহুদের যুদ্ধে শহিদগণের কবরে আসতেন। অতঃ পর বলতেনঃ “আস-সালামু আলাইকুম বিমা দুবারতুম ফানি'মা উকবা দারে "। তিনি বলেনঃ হযরত আবু বকর সিদ্দিক (رضي الله عنه), হযরত উমর (رضي الله عنه) এবং হযরত উছমান (رضي الله عنه) অনুরূপ করতেন।”


(তাফছিরে তাবারী, হাদিস নং ২০৩৪৫, সূরা রা'দ এর ২৪ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় ; মুছান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, ৩ য় খন্ড, হাদিস নং ৬৭১৬ ; তাফছিরে ছা'লাভী, ৫ ম খন্ড, ২৮৭ পৃ ; তাফছিরে নিছাপুরী, ২ য় খন্ড, ২২৭ পৃঃ; তাফছিরে কুরতবী, ৯ ম খন্ড, ৩১২ পৃ ; তাফছিরে আবু হাউপ, ৫ ম খন্ড, ১৮ পৃঃ ; তাখরিজু আহাদিছুল কাশশাফ, হাদিস নং ৬৫১)



এই হাদিসের রাবী محمد بن ابراهيم التيمي { মুহাম্মদ ইবনে ইব্রাহিম আত তামী (رحمة الله) } একজন নির্ভরযােগ্য রাবী বা বর্ণনাকারী এবং বিখ্যাত তাবেঈ। যেমন-তার ব্যাপারে নিচের বর্ণনা গুলাে লক্ষ্য করুনঃ-ইমাম শামছুদ্দিন যাহাবী (رحمة الله) তদীয় কিতাবে বলেন, 



محمد بن ابراهيم التيمي ثقات التا بعين



-”মুহাম্মদ ইবনে ইব্রাহিম আত তামী বিশ্বস্ত তাবেঈগণের একজন।”(ইমাম যাহাবীঃ আল মুগনী ফিন-দোয়াফা, রাবী নং এ ৫২০৩)।



 আল্লামা হাফিজ ইবনে হাজার আস্কালানী (রহ .) বলেনঃ



قلتঃ وثقة الناس واحتج به الشيخان



-”আমি (ইবনে হাজার আস্কালানী) বলছিঃ লােকেরা তাকে বিশ্বস্ত বলেছেন। ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলীম (رحمة الله) তার উপর নির্ভর করেছেন।”(ইমাম আসকালানীঃ লিছানুল মিযান, ৫ ম খন্ড, ২০ পৃঃ)। 



ইমাম আজলী (رحمة الله) { ওফাত ২৬১ হিজরী } তদীয় কিতাবে বলেনঃ 



محمد بن إبراهيم التيميঃ مدني ثقة .



-”মুহাম্মদ ইবনে ইব্রাহিম আত-তায়মী মাদানী ’ বিশ্বস্ত রাবী।”(ইমাম আজলীঃ আছ-ছিক্কাত, রাবী নং ১৪৩২) 



সুতরাং মুহাম্মদ ইব্রাহিম আত তায়মী (رحمة الله) ' এর রেওয়াত সহিহ হিসেবে স্বীকৃত। আর এই সহিহ রেওয়াত হতে জানা যায় যে, প্রিয় নবীজি (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) প্রতি বছরের শুরুতে নির্দিষ্ট দিনে উহুদের যুদ্ধের শহিদগণের মাজার যিয়ারত করতেন, এমনকি হজরত আবু বকর সিদ্দিক (رضي الله عنه), হজরত উমর (رضي الله عنه) ও হজরত উছমান (رضي الله عنه) এরূপ আমল করেছেন। সুতরাং নির্দিষ্ট দিনে কবর যিয়ারতে যাওয়া স্বয়ং রাসূলে পাক (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) ও তিন খলিফার মুস্তাহাব পর্যায়ের সুন্নাত। এ বিষয়ে নিচের হাদিসটি উল্লেখযােগ্য, 



قال أبو غسانঃ حدثني عبد العزيز بن عمران ، عن موسى بن يعقوب المعي ، عن عباد بن أبي صالح ، أ رسول الله صلى الله عليه وسلم كان يأتي قبور الشهداء بأخير على رأس كل كول فيقولঃ (لام عليكم بما صبرم فيعم في الدار الرعدঃ 24 قالঃ وكاءها أبو بكر ، ثم غم ، ثم عثمان رضي الله عنهم



-”আব্বাদ ইবনে আবী ছালেহ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, নিশ্চয় আল্লাহর নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) উহুদের যুদ্ধের সকল শহিদগণের মাজারে প্রতি বছরের শুরুতে আসতেন। অতঃপর বলতেনঃ তােমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হউক যে তােমরা ধৈর্য ধারণ করেছ, আর সেখানেই রয়েছে উত্তম প্রতিদান। তিনি বলেন ; আর সেখানে হজরত আবু বকর (رضي الله عنه), উমর (رضي الله عنه) ও উসমান (رضي الله عنه) যেতেন।”


(তারিখে মাদিনা লি-ইবনে শিবাহ, ১ ম খন্ড ১৩২ পৃঃ ইবনে জারির তার ' তাফছিরে ১৩ তম খন্ড, ৬ পৃঃ ; তাফছিরে দূরে মানছুর, ৪ র্থ খন্ড, ৬৪১ পৃঃ, তাফছিরে কবীর, সূরা রা'দ এর ২০-২৪ এর ব্যাখ্যায় ; ইমাম আইনীঃ উমদাতুল ক্বারী, ৩৮২১ নং হাদিসের ব্যাখ্যায় ; শামীঃ যিয়ারত অধ্যায়ে, ২ য় খন্ড, ২২ পৃঃ)। 



এই হাদিসের সনদে ' আব্বাদ ইবনে আবী ছালেহ ' সম্পর্কে ইমাম যাহাবী رحمة الله তদীয় কিতাবে বলেনঃ



صا ح١ ا حاديث



 -”সে হাদিস বর্ণনায় গ্রহণযােগ্য।”(ইমাম যাহাবীঃ মিযানুল এ'তেদাল, ২ য় খন্ড, ৩৬৬ পৃঃ)। 



এই হাদিস পূর্বের হাদিসের সমর্থক। যদিও হাদিসটির সনদ নবী করিম (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) পর্যন্ত পৌছেনি। কিন্তু এর মারফূ ও পূর্ণ সনদ বিদ্যমান রয়েছে। কারণ ‘ আব্বাদ ইবনে আবী ছালেহ ’ তার পিতার সূত্রে হজরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে এই হাদিস বর্ণনা করেছেন।



 যেমন নিচের রেওয়াতটি লক্ষ্য করুন, 



وروى عبد العزيز بن عمران بن موسیঃ عن عباد بن أبي صالح ، عن أبيه ، ء أبي هريرة قالঃ كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يأتي قبور الشهداء ، فإذا أتى ممرضة الشعب يقولঃ السلام عليكم بما صبره فيعم قى الدار . وكان يفعله أبو بكر ثم عمر بعده ثم عثمان.



“আব্বাদ ইবনে আবী ছালেহ্ তার পিতার সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি হজরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে, তিনি বলেছেনঃ আল্লাহর রাসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) উহুদের যুদ্ধে শহিদগণের কবরে আসতেন।..... হজরত আবু বকর (رضي الله عنه), উমর (رضي الله عنه) ও উছমান (رضي الله عنه) অনুরূপ করতেন।”


(ইমাম যাহাবীঃ তারিখুল ইসলাম, ১ ম খন্ড, ১৪৩ পৃঃ ; ইমাম যাহাবীঃ সিয়ারে আ’লামী নুবালা, ১ ম খন্ড, ৪২৫ পৃঃ, গাজওয়ায়ে হামরায়ে আসাদ অধ্যায়ে)  



অতএব, মারফু ও নির্ভরযােগ্য হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হল যে, হজরত রাসূলে করিম (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ), সিদ্দিকে আকবর হজরত আবু বকর (رضي الله عنه), হজরত উমর (رضي الله عنه) ও হজরত উছমান (رضي الله عنه) প্রতি বছরের শুরুতে উহুদ যুদ্ধে শহিদগণের মাজার যিয়ারত করতে যেতেন। তাই বছরে নির্দিষ্ট দিনে কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে যাওয়া ও কবর যিয়ারত করা উভয়ই সুন্নাত। উহুদের যুদ্ধের শহিদগণের কবর যিয়ারতের একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হল এই, তিনি (ﷺ) (ওফাতের পূর্বে) সর্বশেষ যিয়ারত শেষে সেখানেই খুতবা দেন এবং ফরমানঃ



حدثنا محمد بن عبد الرحيم ، أخبرنا زکریا بن عدي ، أخبرنا ابن المبارك ، عن حيوة ، عن يزيد بن أبي حبيب ، عن أبي الخير ، عن عقبة بن عامر قالঃ صلی رسول الله صلى الله عليه وسلم على قتل أحد بعد ثماني سنين گالمودع الأحياء واموات ثم طلع المنبر فقالঃ إني بين أيديه ف وأنا عليك شهید و موعده الخوض وإني لأنظر إليه من مقامي هذا وإلى و أغطيت مفاتيح خزائن الأرض وإني لست أخشى عليك أن تشركوا بعدي ولكني أخشى عليكم الدنيا أن تنافسوها فيها



-”আমি তােমাদের অগ্রবর্তী, আমি তােমাদের পক্ষে সাক্ষী হব এবং তােমাদের সাথে প্রতিশ্রুতি থাকল কাউছার নামক ঝর্নার পাশে তােমাদের সাথে আবার সাক্ষাৎ হবে। আমি এখান থেকেই তা দেখতে পাচ্ছি। নিশ্চয় আমাকে জমীনের চাবি সমূহ দান করা হয়েছে। আমি তােমাদের ব্যাপারে এই আশংকা করিনা যে, তােমরা পুনরায় শিরিকে লিপ্ত হবে। বরং আমার ভয় হচ্ছে তােমরা দুনিয়ার লােভ-লালশায় লিপ্ত হয়ে পড়বে।”


(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১৩৪৪, ৪০৮৫, ৬৪২৬ ও ৬৫৯০ ; সহিহ মুসলীম, হাদিস নং ২২৯৬) 



এই হাদিস দ্বারা ইহা সুনির্দিষ্ট ভাবে প্রমাণিত যে, মাজার যিয়ারত জায়েয, যেমনটা আল্লাহর রাসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) আমল করেছেন। হুজুর ((ﷺ) ) তাঁর নূরানী দৃষ্টিতে দেখতে পাচ্ছিলেন যে, শেষ জামানায় মু'মীনদের উপর বাতিল পন্থিরা এই বৈধ আমলের জন্য শিরিকের অপবাদ দিবে। তাই তিনি নিজেই মাজার যিয়ারত শেষে এই খুতবা প্রদান করেন। এ বিষয়ে নিচের হাদিসটিও লক্ষ্য করুন, 



حدثنا أبو بكر بن أبي شيبة ، وهير بن حرب ، قالاঃ حدنا محمد بن عبيد ، عن يزيد بن گیان ، عن أبي حازم ، عن أبي هريرة ، قالঃ أتى رسول الل صلى الله عليه وسلم قبر أم بگی ، وأبى من حوله ، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلمঃ است ․ ربي تعالى على أن أستغفر لها فلم يؤذن لي ، استان أن يزور قبرها فأذن لي ، ژوژوا القبور فإنها تمر بالموت



-”হজরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) বলেন, আল্লাহর নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) তাঁর মায়ের পবিত্র কবর যিয়ারত করতে আসেন। তিনি কাদলেন ফলে আমরা তার সাথে কাঁদলাম। অতঃপর তিনি বললেনঃ আমি আল্লাহর কাছে আমার মায়ের মাগফেরাত কামনা করার অনুমতি চাইলাম কিন্তু আমাকে অনুমতি দিলেন না। ফলে তিনি আমাকে যিয়ারত করার অনুমতি দিলেন। তােমরা কবর যিয়ারত কর, কেননা এতে মৃত্যুর কথা স্বরণ হয়।”


(সহিহ মুসলীম, হাদিস নং ১০৮, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ১৫৭২ ; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৩২৩৪ ; ইমাম নাসাঈ ; সুনানে কুবরা, হাদিস নং ২১৭২ ; সুনানে নাসাঈ, হাদিস নং ২০৩৪ ; সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস নং ৩১৬৯ ; মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদিস নং ১৩৯০ ; ইমাম বাগভীঃ শরহে সুন্নাহ, হাদিস নং ১৫৫৪ ; ইমাম বায়হাকীঃ সুনানে ছাগির, হাদিস নং ১১৫২ ; ইমাম বায়হাকীঃ মারেফাতু সুনান ওয়াল আছার, হাদিস নং ৭৭৭৮ ; ইমাম বায়হাকীঃ সুনানুল কুবরা, হাদিস নং ৭১৫৭ ; মুছান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহ, হাদিস নং ১১৮০৭) 



এই হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়, প্রিয় নবীজি (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) স্বীয় মায়ের কবর যিয়ারত করার জন্য নিজ ঘর থেকে ‘ আবওয়া নামক স্থানে গিয়েছেন। উল্লেখ্য যে, দয়াল নবীজি (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) এর মাতার মাজার ‘ আবওয়া ' নামক স্থানে অবস্থিত, যার দুরত্ব মদিনা থেকে প্রায় ২৫০ কিঃ মিঃ। বলুন! রাসূল ((ﷺ) ) যদি ২৫০ কিঃ মিঃ সফর করে নিজের মায়ের মাজার যিয়ারত করতে পারেন, তাহলে আমরা কেন পারব না? প্রিয় নবীজি (ﷺ) এর কর্ম কি উম্মতের জন্য সুন্নাত নয়?

_______________

সহিহ হাদিসের আলােকে মাজার যিয়ারত পূজা নয় ও কদমবুছির সমাধান

গ্রন্থনায়ঃ  মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ আলাউদ্দিন জিহাদী 

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন