পীর ধরা সম্পর্কে হাদীস হতে দলিল ও কিছু যুক্তি-প্রমাণ
১. হাদীস শরীফে আছে- শরীরে এক টুকরা গোশ্ত আছে যা পরিশুদ্ধ হলে শরীর পরিশুদ্ধ, আর তা নাপাক হলে শরীর নাপাক। যা পরিস্কারের ঔষধ হলো আল্লাহর যিকির আর যিকির দায়েমী করার জন্য প্রয়োজন কামেল মুর্শীদ। ৪৮
➥৪৮. বুখারী ও মুসলিম।
২. পবিত্র হাদীসে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরশাদ করেন,
اَلصَّلَاةُ مِعْرَاجُ اْلمُوْمِنِيْنَ.
-সালাত হলো মু’মিনের মি’রাজ। ৪৯
➥৪৯.
ক) হক্কী : রুহুল বয়ান, সূরা হজ্ব, আয়াত: ৭৮, ৬:৬৪।
খ) আলুসী : রুহুল মা‘আনী, সূরা ফাতিহা, ১:৯১।
আর সালাত সঠিকভাবে আদায়ের জন্য প্রয়োজন হুযুরী ক্বলব তথা একনিষ্ঠতা। এই হুযুরী কামেল মুর্শীদের গোলামীতেই হাসিল হয়।
৩.
قَلْبُ اْلمُؤْمِنِ عَرْشُ اللهِ.
অর্থ : মু’মিনের ক্বলব হলো আল্লাহর আরশ। ৫০
➥৫০. হক্কী : রুহুল বয়ান, সূরা আ‘রাফ, ৩:১৩৩।
আর এই আরশকে সাজিয়ে দেন কামেল পীর।
৪.
لَا صَلَاةَ إِلَّا بِحُضُوْرِ الْقَلْبِ.
অর্থ : হুযুরী দিল ছাড়া নামাজ পড়লে তা গ্রহণযোগ্য হয় না বরং মুখমন্ডলে নিক্ষিপ্ত হয়। তবে পীরের আনুগত্যের মাধ্যমে হুযুরী অর্জনে সহায়ক।
৫. ১০০ খুনের আসামী এখলাসের সাথে তওবা ও মুক্তির উদ্দেশ্যে ‘খবিস বস্তি’ হতে আল্লাহওয়ালাদের বস্তির দিকে রওয়ানা দেওয়ার কারণেই (যদিও মৃত্যু তাকে গন্তব্যে পৌঁছতে দেয়নি) নাজাত লাভ করেন। ৫১
➥৫১. বুখারী ও মুসলিম।
৬. ঈসা আলাইহিস্ সালাম ৬ষ্ঠ আসমান থেকে সিরিয়ার একটি মসজিদের ছাদের উপর অবতরণ করিয়া নীচে আসার জন্য একটি মইয়ের সাহায্য নিবেন।
৭. আল্লাহ্ পবিত্র কালাম মাজীদকে কুদরাতি ভাবে প্রত্যেকের ঘরে ঘরে না পৌঁছিয়ে নবী (ﷺ) এর মাধ্যমে আমাদের নিকট পৌঁছিয়েছেন।
৮. হাদীসে জিব্রাঈল- এ হাদীস দ্বারা ইহসান অর্জন অপরিহার্য প্রমাণিত হয়। আর ইহসান অর্জনের জন্য তরীকত অপরিহার্য।
৯. এখলাস অর্জন- এখলাস অর্জনের ক্ষেত্রেও তরীকতের মাশাইখদের সোহবত অপরিহার্য।
১০. হাদীস শরীফ : ‘যা আমি বলেছি- তা শরীয়ত, যা আমি করেছি- তা তরীকত, যা দেখেছি- তা হাকীকত, আর যা চিনেছি ও জেনেছি- তা মা’রিফাত। এ হাদীসও তরীকত-মা’রিফাতের সুস্পষ্ট দলীল।
নোট : ফেরেস্তা রূহ ফুঁকে দেয়, বান্দার হেফাজত করে, বৃষ্টি নাযিল করে, মেঘমালা তৈরী ও সঞ্চালন করে, রিজিক বন্টন করে, মৃত্যু দান করে ইত্যাদি। ডাক্তার ঔষধের মাধ্যমে রোগ দূর করে, সূর্য তাপের মাধ্যমে পৃথিবীকে উষ্ণ রাখে, পিতা-মাতার মিলনে সন্তান ইত্যাদি। এই বিষয়গুলি তো সোহবত, মাধ্যম, ওয়াসীলাই প্রমাণ করে। আর এ জন্যই প্রয়োজন তরীকত ও মুর্শিদ। অথচ এর বিপরীতে দেখি মানুষ আজকাল তরিকাবিমূখ, এমনকি তরিকা বিদ্বেষী। আর দেখুন আল্লাহ কি ফরমান-
(১) পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন,
كُلُّ حِزْب بِمَا لَدَيْهِمْ فَرِحُوْنَ-
অর্থ : (মুশরিকদের) প্রত্যেক দলই নিজ নিজ মতবাদ লইয়া উৎফুল্ল। ৫২
➥৫২. আল কুরআন : সূরা আর-রূম, ৩০:৩২।
(২) পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন,
فَتَقَطَّعُوْا أَمْرَهُمْ بَيْنَهُمْ زُبُرًا كُلُّ حِزْبِ بِمَا لَدَيْهِمْ فَرِحُوْنَ-
অর্থ : কিন্তু তারা নিজের মধ্যে তাদের দ্বীনকে বহুধা বিভক্ত করেছে। প্রত্যেক দলই তাদের নিকট যা আছে তা নিয়ে আনন্দিত। ৫৩
➥৫৩. আল কুরআন : সূরা আল-মু’মিন, ২৩:৫৩।
(৩) পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন,
كَذَالِكَ زَيَّنَّا لِكُلِّ أُمَّةٍ عَمَلَهُمْ-
অর্থ : এইভাবে আমি প্রত্যেক জাতির দৃষ্টিতে তাদের কার্যকলাপ সুশোভন করেছি। ৫৪
➥৫৪. আল কুরআন : সূরা আল-আন‘আম, ৬:১০৮।
(৪) পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন,
إِنَّ الَّذِيْنَ فَرَّقُوْا دِيْنَهُمْ وَكَانُوْا شِيْعًا لَّسْتَ مِنْهُمْ فِىْ شّْئْءٍ-
অর্থ : যারা দ্বীন সম্পর্কে নানা মতের সৃষ্টি করেছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে, তাদের কোন দায়িত্ব তোমার নয়। ৫৫
➥৫৫. আল কুরআন : সূরা আল-আন‘আম, ৬:১৫৯।
(৫) পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন,
يَوْمَ نَدْعُوْا كُلَّ أُنَاسِ بِإِمَامِهِمْ-
অর্থ : স্মরণ কর, সেই দিনকে যখন আমি প্রত্যেক স¤প্রদায়কে তাদের নেতাসহ আহবান করবো। ৫৬
➥৫৬. আল কুরআন : সূরা বনী ইসরাঈল, ১৭:৭১।
নোট :
(১) উপরোক্ত ৫টি আয়াত দ্বারা বুঝা যায় আমরা আমাদের নিজস্ব মতবাদ, ফিরকা ও দল এবং দলপতি, নেতা ও ইমাম নিয়ে সন্তুষ্ট। কিন্তু আল্লাহ্ যখন হাশরে যে দলপতি সহকারে আমাদেরকে আহবান করবেন সে দলপতি যদি নিজেই অভিশপ্ত হয় তখন আমাদের কি উপায় হবে?
(২) সূরা আন‘আমের ১৫৮নং আয়াতে আল্লাহ বলেন,
لَمْ تَكُنْ آَمَنَتْ مِنْ قَبْلُ أَوْ كَسَبَتْ فِي إِيمَانِهَا خَيْرًا قُلِ انْتَظِرُوا إِنَّا مُنْتَظِرُونَ
-যে ব্যক্তি পূর্বে ঈমান আনেনি কিংবা যে ব্যক্তি ঈমানের মাধ্যমে কল্যাণ অর্জন করেনি, তাদের ঈমান কাজে আসবে না; অর্থাৎ তারা উভয়ে সমান। ৫৭
➥৫৭. আল কুরআন : সূরা আন্‘আম, ৬:১৫৮।
১১. সকল আউলিয়া কিরাম, আয়িম্যায়ে মুজতাহিদীন, সলফে সালেহীন ও বুযুর্গানে দ্বীন কর্তৃক একথা স্বীকৃত যে, আল্লাহর পরিচয় লাভ কিংবা কামালিয়াত অর্জন কিংবা আল্লাহর মাকবুল বান্দা (অলী) হওয়ার জন্য তিনটি ধাপ বা সোপান রয়েছে। আর তা হলো- (১) ফানা ফিশ্-শাইখ, (২) ফানা ফির-রাসূল ও (৩) ফানাফিল্লাহ; অর্থাৎ নিজ অস্তিত্ব বা আমিত্বকে যথাক্রমে পীরের মধ্যে বিলীন, রাসূলে বিলীন ও আল্লাহতে বিলীন। এ তিন ধাপ অতিক্রম করার পরেই তালেবে মাওলা (আল্লাহকে তলবকারী) বা আল্লাহর পথের পথিক বাকাবিল্লাহর স্তরে উন্নিত হয় এবং এ পথে স্থায়িত্ব লাভ করে। তখনই হয় সে কামেল-মোকাম্মেল (পরিপূর্ণ কামেল) এবং পরিপূর্ণ হাদী (হেদায়তকারী)। তাই আল্লাহর পরিচয় লাভ বা কামালিয়াত অর্জনের প্রথম ধাপ যার মাধ্যমে অতিক্রম করতে হবে, যদি আমরা সে পীর বা শায়খকেই না মানি তাহলে আমরা কোন দিনই পরবর্তী ধাপে পৌঁছতে পারবো না। সেক্ষেত্রে আল্লাহর পরিচয় লাভ হবে সুদূরপরাহত।
_________________
কুরআন-হাদীসের আলোকে তরীকার প্রয়োজনীয়তা
গ্রন্থনা ও সংকলনেঃ
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খুরশীদ আলম (অবঃ)
🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন