আল্লাহর হুকুমে জীবিত হয়ে ঈমান আনয়নের ভিত্তিতে নাজাতপ্রাপ্ত

 

আল্লাহর হুকুমে জীবিত হয়ে ঈমান আনয়নের ভিত্তিতে নাজাতপ্রাপ্ত


তৃতীয় পন্থা হচ্ছে, রাসূলে পাক (ﷺ) এর আবেদনের প্রেক্ষিতে তাঁর পিতা-মাতাকে আল্লাহ পাক জীবিত করেছিলেন এবং তাঁরা রাসূলে পাক (ﷺ) এর উপর ঈমান আনয়ন করেছিলেন। মুহাদ্দিসীনে কিরামের বড় এক অংশ এই মতের প্রবক্তা।



✦তাঁদের মধ্যে হাফিয ইবনে শাহিন, হাফিয আবু বকর আল বাগদাদী, আবুল কাসিম আস সুহায়লী, ইমাম আল কুরতুবী, ইমাম তাবারানী, ইবনে আসাকির (رحمة الله) প্রমুখ।



✦এ সম্পর্কে হযরত আয়িশা সিদ্দীকা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ) আমাদের নিয়ে হজ্জ আদায় করলেন। অতপর তিনি আমাকে নিয়ে ‘আকাবায়ে হুযুন’ এর পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। এসময় তিনি অত্যন্ত দুঃখন্ডভারাক্রান্ত হয়ে কাঁদতে আরম্ভ করলেন। তিনি সেখানে অবতরণ করলেন এবং আমার কাছ থেকে দীর্ঘ সময়ের জন্য চলে গেলেন। যখন তিনি ফিরে আসলেন তখন তিনি ছিলেন হাস্যোজ্জ্বল এবং আনন্দিত। আমি তাঁর কাছে এর কারণ জানতে চাইলাম। তিনি বললেন, ‘আমি আমার মায়ের কবরের কাছে গেলাম এবং আল্লাহর কাছে আরজ করলাম আমার মাকে জীবিত করে দেওয়ার জন্য। আল্লাহ পাক তাঁকে জীবিত করে দিলেন, তিনি আমার উপর ঈমান আনলেন এবং আবার মৃত্যুবরণ করলেন।’



✦অন্য হাদীসে আয়িশা সিদ্দীকা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ) আল্লাহর কাছে আরজ করলেন তাঁর মা-বাবাকে জীবিত করার জন্য। আল্লাহ পাক তাদের জীবিত করে দিলেন। তাঁরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর উপর ঈমান আনলেন এবং আবার মৃত্যুবরণ করলেন।


মুহাদ্দিসীনে কেরামের কেউ কেউ এ হাদীসের সনদ সম্পর্কে বলেন, এ হাদীসটি যয়ীফ। কিন্তু এ হাদীসের বর্ণনার আধিক্যের কারণে এটি ‘হাসান’ পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে।



✦এখন কেউ যদি প্রশ্ন করেন, মৃত ব্যক্তিকে কি এভাবে জীবিত করা সম্ভব এবং মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে ঈমানের স্বাক্ষী কি গ্রহণযোগ্য? এর জবাবে ইমাম কুরতুবী (رحمة الله) উল্লেখ করেছেন যে, কুরআন মজীদে বনী ইসরাঈলের এক ব্যক্তির হত্যাকারীর অনুসন্ধানে গরু জবাইয়ের দীর্ঘ আলোচনা এসছে সে ঘটনায় মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করা হয়েছিল এবং সে তার হত্যাকারীর ব্যপারে স্বাক্ষী প্রদান করেছিল। তাছাড়া ঈসা (عليه السلام) আল্লাহর হুকুমে মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করতে পারতেন এবং আমাদের নবী (ﷺ)ও আল্লাহর হুকুমে মৃতকে জীবিত করেছিলেন। এ রকম বিভিন্ন ঘটনা রয়েছে।



✦ফতোয়ায়ে শামী প্রণেতা আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী হানাফী (رحمة الله) বলেন, তোমরা কি একথা জানো না যে, আল্লাহ তা’আলা রাসূলে করীম (ﷺ) কে ক্ষমতা দিয়েছেন। তিনি নিজ পিতা-মাতাকে পুনরায় জীবিত করেছেন এবং তারাও রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর নবুওয়াত এর উপর ঈমান এনেছেন। (রদ্দুল মুহতার শরহে দুররুল মুখতার)



✦ইমাম আবদুল বাকী যুরকানী (رحمة الله) বর্ণনা করেন, রাসূলে করীম (ﷺ)-এর পিতা-মাতা কখনোই কাফির কিংবা মুশরিক ছিলেন না। তাঁরা কুফর ও মুর্তিপুজা থেকে সর্বদাই পবিত্র ছিলেন। (যুরকানী, শরহে মাওয়াহিবে লাদুনিয়্যাহ, ১ম খন্ড)



✦বিখ্যাত মুহাক্কিক ও মুহাদ্দিস শাহ আবদুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) লিখেছেন, ‘উলামায়ে কিরাম একথাই প্রমাণসহ প্রতিষ্ঠা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর পিতামাতা, উর্ধ্বতন পিতা-মাতা ও পিতা-মাতামহগণ এমনকি আদম (عليه السلام) পর্যন্ত তাঁর সমগ্র পিতৃপুরুষই (রাসূলের বংশের সবাই) সত্যধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। (আশি’আতুল লুমআত : ১ম খন্ড)



✦ইমাম কালবী (رحمة الله) বলেন, ‘আমি রাসূলে করীম (ﷺ)-এর উর্ধ্বতন পাঁচশত বছরের মাতাগণের জীবনী লিখেছি। কোনো যুগেই তাদের মধ্যে জাহিলিয়াতের কোনো অপবিত্রতা ও চরিত্রহীনতার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। (কিতাবুশ শিফা)



✦এখানে আরেকটি হাদীস লক্ষ্যণীয় যে, সহীহ বুখারী শরীফে এসেছে, আবূ লাহাব মারা যাওয়ার পর একদিন তার পরিবারের কিছু লোক তাকে স্বপ্নে খুবই খারাপ অবস্থায় দেখল। প্রশ্ন করা হলো, তুমি কি অবস্থায় আছো? সে বলল, তোমাদের থেকে পৃথক হয়ে আসার পর আমার ভাগ্যে ভাল কিছু নসীব হয়নি। তবে প্রতি সোমবার আমার (শাহাদাত) আঙ্গুলি হতে পানি পাওয়া যায়। কেননা (এর দ্বারা) আমি আমার দাসী সুয়াইবাকে আযাদ করে দিয়েছিলাম। (সহীহ বুখারী)



যেখানে আবু লাহাবের মত কাফির রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর জন্মের সংবাদে খুশি হয়ে দাসী সুয়াইবাকে মুক্ত করে দেওয়ায় প্রতি সপ্তাহে একদিন সোমবার আল্লাহ তার শাস্তি হালকা করে দিয়েছেন তাহলে যারা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে জন্ম দিয়েছেন তাঁদের সম্মান আল্লাহ কি কম দিবেন নাকি বেশি দিবেন? তারা কি জাহান্নামী হতে পারেন? (নাউযুবিল্লাহ)



পরিশেষে বলা যায়, আল্লাহ পাক কুরআন কারীমের বিভিন্ন আয়াতে এবং রাসূলে পাক (ﷺ) বিভিন্ন হাদীসে মাতা-পিতার সম্মান এবং তাঁদের প্রতি দায়িত্ববোধের কথা আলোচনা করেছেন। সে সম্মান এবং দায়িত্ববোধ থেকেই প্রত্যেকটি মানুষই চায় তার পিতা-মাতা জান্নাতী হোক। সেক্ষেত্রে স্বীয় পিতা-মাতার প্রতি রাসূলে পাক (ﷺ)-এর সম্মান ও দায়িত্ববোধ বহুগুণ বেশি ছিল।



✦তাঁদের প্রতি সে দায়িত্ববোধের সম্মানেই আল্লাহপাক তাঁর হাবীবকে নির্দেশ দিয়েছেন, -‘হে নবী! আপনি বলুন, হে আমার রব, আমার পিতা-মাতা উভয়কে এমনভাবে রহম করো যেরূপ ছোটবেলা তারা আমাকে লালন পালন করেছেন’।


যদি তাঁরা ঈমানদার না হতেন তাহলে আল্লাহ এরূপ দোয়ার নির্দেশ দিতেন না।

_________________

রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর মাতা-পিতা জান্নাতী না জাহান্নামী

কৃতঃ খায়রুল হুদা খান

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন