রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কত তারিখ জন্ম গ্রহণ করেছিলেন এ বিষয়টি ইতিহাস সংক্রান্ত, তাই ঐতিহাসিকগণের মতামতের দিক বিচারে প্রমাণ করতে হবে ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ নবী করিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিলাদত (জন্ম) শরীফ-এর দিন। এটাই সবচেয়ে ছহীহ ও মশহূর মত।
যেমন, এ প্রসঙ্গে হাফিয আবূ বকর ইবনে আবী শায়বাহ (২৩৫হি.) ছহীহ সনদ সহকারে বর্ণনা করেছেন-
عن عفان عن سعيد بن مينا عن جابر وابن عباس رضى الله تعالى عنهما قالا ولد رسول الله صلى الله عليه وسلم عام الفيل يوم الاثنين الثانى عشر من شهر ربيع الاول
অর্থ: “হযরত আফফান রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণিত। তিনি হযরত সাঈদ ইবনে মীনা রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত জাবির ও হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা থেকে বর্ণনা করেছেন, হযরত জাবির ও হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা বলেন, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিলাদত শরীফ ‘হস্তি বাহিনী বর্ষের ১২ই রবীউল আউয়াল সোমবার শরীফ হয়েছিল। এ দিনেই তিনি নুবূয়্যাতেরর দায়িত্ব পেয়েছেন, এ দিনেই তিনি হিজরত করেছেন এবং মুবারাক ওফাতও এদিনেই লাভ করেছেন।”
আল্লামা ইবনে কাসীর র. বলেন, ইহাই প্রসিদ্ধ-মাশহুর মত।
গ্রন্থ সূত্র :
*_* হাফেজ ইবনে কাসীর র., "আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া"; খন্ড ২, পৃ., ২৬০ বৈরুতে মুদ্রিত।
*_* মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা দ্রষ্টব্য।
*_* বুলূগুল আমানী ফী শরহিল ফাততিহর রব্বানী’; খণ্ড ২, পৃ.,১৮৯ বৈরুতে মুদ্রিত।
ঐতিহাসিকগনের অভিমত সমূহ :
❇১/মুহাম্মাদ বিন ইসহাক (রাহ) এর মতঃ
মুহাম্মাদ বিন ইসহাক কে?
তাঁর পুরো নাম হচ্ছে আবু বাকার মুহাম্মাদ বিন ইসহাক। তিনি ৮৫ হিজরীতে মদীনা মুনাওওয়ারায় জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি তাঁর জীবনের অধিকাংশ সময় মদীনা শরীফে কাটিয়েছেন। তিনিই হচ্ছেন প্রথম মুসলিম ঐতিহাসিক যিনি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মহান জীবনের উপর গ্রন্থ লিখেছিলেন। তাঁর সীরাত গ্রন্থটির নাম হচ্ছে “সীরাতু রাসুলিল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম”।
মুহাম্মাদ বিন ইসহাক সম্পর্কে বিশ্ববিখ্যাত উলামাদের মন্তব্যঃ
ক/ ইমাম সুফিয়ান ছাওরী বলেন,
আমি ইমাম মুহাম্মাদ বিন ইসহাকের মজলিসে ৭০ বছরের চেয়েও বেশীদিন বসেছিলাম। আমি কাউকে কোনদিন তাঁর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করতে দেখিনি।
গ্রন্থ সূত্র :
তারীখে বাগদাদ-১/২১৮।
খ/ইমাম শু’বাহ বলেন,
ইমাম ইবনে ইসহাককে হাদিস শাস্ত্রে ব্যুৎপত্তির কারণে ইমামুল মুহাদ্দিসীন তথা মুহাদ্দিসগণের ইমাম বলা উচিৎ ।
গ্রন্থ সূত্র :
তারীখে বাগদাদ-১/২১৮।
গ/ইয়াহিয়া বিন মুয়ীন বলেন,
হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে সিকাহ তথা নির্ভরযোগ্য।
গ্রন্থ সূত্র :
তারিখে বাগদাদ-১/২১৮।
নোটঃ
ইমাম যাহাবীর লিখিত কিতাব ‘সিয়ারু আ’লামিন নুবালা’ পড়লে উপরোক্ত তথ্যগুলো পাবেন। কেউ কেউ ইমাম ইবনে ইসহাক সম্পর্কে সমালোচনা করার চেষ্টা করেছেন। ইমাম যাহাবী তাঁর এই কিতাবে প্রমাণ করেছেন যে, ইমাম মুহাম্মাদ বিন ইসহাক সম্পর্কে সকল অভিযোগ মিথ্যা।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্ম তারিখ সম্পর্কে ইমাম ইবনু ইসহাকের মতঃ
বিশ্বনন্দিত মুসলিম ঐতিহাসিক ইবনু হিশাম বলেন,
ইমাম ইবনু ইসহাক বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ আমুল ফীলে ( ঐ বছর, যে বছরে আবরাহা তার হস্তি বাহিনী নিয়ে মক্কা মুকাররামাহ আক্রমণ করেছিল) জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
গ্রন্থ সূত্র :
আস-সীরাতুন নাবাওয়িয়্যাহ - পৃ., ২০৮।
❇২/ ইতিহাস গ্রন্থের নামঃ তারীখুল ইসলাম
গ্রন্থকারঃ ইমাম যাহাবী (রাহ)
অধ্যায়ঃ মাওলিদুহুল মুবারাকু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
এই গ্রন্থে ইমাম যাহাবী (রা) ১২ই রবিউল আউয়াল সম্পর্কিত কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করেছেন। তাঁর উল্লেখকৃত প্রথম হাদীস সম্পর্কে তিইনি বলেছেন, এটি সহীহ নয়। উল্লেখকৃত বাকী হাদীসগুলোর ব্যাপারে তিনি কোন কমেন্ট করেন নি, যা প্রমাণ করে যে ঐ হাদীস গুলো সহীহ। অন্যথায় প্রথম হাদীসের ন্যায় এগুলোর ব্যাপারেও একই কমেন্ট করতেন।
এখানে দুর্বল সনদের হাদীসটি উল্লেখ করছিনা। বরং যে সহীহ হাদীসগুলো ইমাম যাহাবী উল্লেখ করেছেন, তা উল্লেখ করছিঃ
*-ক- ইমাম যুহরী বলেন, সাঈদ বিন মুসাইয়াব বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১২ ই রবিউল আউয়াল মাসে জন্মগ্রহণ করেছেন।
*-খ- মা’রুফ বিন খাররাবুয (রা) বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১২ই রবিউল আউয়াল মাসে জন্মগ্রহণ করেছেন।
❇৩/ গ্রন্থের নামঃ আস সীরাতুন নাবাওয়িয়্যাহ
গ্রন্থকারঃ ইমাম ইবনু কাছীর, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ১৯৯।
ইমাম ইবনু কাছীর (রাহ) রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মতারিখ সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত উল্লেখ করেছেন, যেমন,
কেউ কেউ বলেছেন, ৮ই রবিউল আউয়াল
কেউ কেউ বলেছেন, ১০ ই রবিউল আউয়াল
কেউ কেউ বলেছেন, রামাদান মাসে
কেউ কেউ বলেছেন, সফর মাসে
তারপর ইমাম ইবনু কাছীর (রাহ) বলেন,
কিছু উলামায়ে কেরাম বলেছেন, ১২ই রবিউল আউয়াল। ইমাম ইবনু ইসহাক এই মতকে গ্রহণ করেছেন। তাছাড়া ১২ই রবিউল আউয়ালের ব্যাপারে হাদীস ও পাওয়া যায়। হযরত জাবির ও ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমুল ফীলে ১২ ই রবিউল আউয়াল মাসে সোমবার দিন জন্ম গ্রহণ করেছেন। এইদিন তিনি নবুওওয়াত লাভ করেন। এইদিন তিনি মিরাজে যান, এবং এইদিন তিইনি ইন্তেকাল করেন।
এরপর ইমাম ইবনু কাছীর (রাহ) বলেন,
এটাই (১২ই রবিউল আউয়াল) বেশীরভাগ উলামাগণ বলেছেন এবং এটাই সুপ্রসিদ্ধ মত।
❇৪/ গ্রন্থের নামঃ আস সীরাতুন নাবাওয়িয়্যাতু ওয়া আখবারুল খুলাফা
গ্রন্থকারঃ আল- হাফিযুল কাবীর আবু হাতিম মুহাম্মাদ বিন হিব্বান - পৃষ্ঠা ৭।
ইমাম আবু হাতিম বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমুল ফীলে ১২ই রবিউল আউয়ালে জন্মগ্রহণ করেন।
❇৫/ গ্রন্থের নামঃ উয়ূনুল আছারি ফী ফুনূনিল মাগাযী ওয়াশ শামাইলি ওয়াস সিয়ারি।
গ্রন্থকারঃ ইমাম, হাফিয ইবনু সায়্যিদিন নাস; খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৮।
তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমু ফীলের ঘটনার ৫০ দিন পর ১২ই রবিউল আউয়াল সোমবার দিন জন্মগ্রহণ করেন।
❇৬/ গ্রন্থের নামঃ আর রাউদুল উনফ।
গ্রন্থকারঃ ইমাম সুহাইলী; খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৩০০।
ইমাম সুহাইলী ইমাম ইবনু ইসহাকের মতকে প্রাধান্য দিয়েছেন এবং বলেছেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমুল ফীলে ১২ই রবিউল আউয়াল মাসে সোমবার দিন জন্মগ্রহণ করেছেন।
❇৭/ গ্রন্থের নামঃ সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদি ফী সীরাতি খাইরিল ইবাদি।
গ্রন্থকারঃ ইমাম মুহাম্মাদ বিন ইউসুফ আস সালিহী; খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৩৪-৩৩৬।
এই গ্রন্থে তিনি ইমাম ইবনু ইসহাকের মতকে প্রাধান্য দিয়ে বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমুল ফীলে ১২ই রবিউল আউয়াল মাসে জন্মগ্রহণ করেন।
শুধু তাই বলেই তিনি শেষ করেননি, তিনি এটাও বলেছেন,
‘আমাদেরকে এটা অনুসরণ করতে হবে’।
❇৮/ গ্রন্থের নামঃ বাহজাতুল মাহাফিলি ওয়া বাগিয়্যাতুল আমাছিলি ফী তালখীসিল মু’জিযাতি ওয়াস সিয়ারি ওয়াশ শামা ইলি।
গ্রন্থকারঃ ইমাম আবু যাকারিয়া ইমাদুদ্দীন আল আমিরী; খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৫১।
তিনি বলেন, সকল উলামা একমত হয়েছেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সোমবার দিন জন্মগ্রহণ করেছেন। বেশীর ভাগ উলামা একমত হয়েছেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১২ই রবিউল আউয়াল তারিখে জন্মগ্রহণ করেছেন, আর এটাই বিশুদ্ধ মত।
❇৯/ গ্রন্থের নামঃ আস সীরাতুল হালাবিয়্যাহ ফী সীরাতিল আমীনিল মা’মূন।
(অন্য নাম হচ্ছে, ইনসানুল উয়ূন)
গ্রন্থকারঃ ইমাম আলী বিন বুরহানুদ্দীন আল হালাবি; খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৯৩।
তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মদিন ছিল ১২ই রবিউল আউয়াল। তিনি আরো বলেন, আমাদেরকে এটাই অনুসরণ করতে হবে।
❇১০/ গ্রন্থের নামঃ তারীখু তাবারী
গ্রন্থকারঃ ইমাম, ফকীহ, মুফাসসির, মু’আররিখ আবু জা’ফার মুহাম্মাদ বিন জারীর আত তাবারী। অধ্যায়ঃ যিকরু মাওলিদি রাসূলিল্লাহ; খন্ড ১, পৃষ্ঠা ২৬২।
তিনি ইমাম ইবনু ইসহাকের মতটি উল্লেখ পূর্বক সহমত পোষণ করে বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১২ই রবিউল আউয়াল মাসের সোমবার দিন জন্মগ্রহণ করেন।
❇১১/ গ্রন্থের নামঃ আল কামিলু ফিত তারীখ।
গ্রন্থকারঃ ইমাম ইবনুল আছীর, অধ্যায়ঃ যিকরু মাওলিদি রাসূলিল্লাহ; খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৫৫।
ইমাম ইবনুল আছীর ও একইভাবে ইমাম ইবনু ইসহাকের মতটি প্রাধান্য দিয়ে বলেন, ১২ই রবিউল আউয়াল সোমবার দিন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জন্মগ্রহণ করেছেন।
❇১২/ গ্রন্থের নামঃ দিওয়ানুল মুবতাদা ই ওয়াল খাবারি ফী তারীখিল আরাবি ওয়াল বারারি।
(গ্রন্থটি তারীখু ইবন খালদুন নামে পরিচিত)
গ্রন্থকারঃ আব্দুর রাহমান ইবনু খালদুন; খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৪০৭।
বিশ্ববিখ্যাত ঐতিহাসিক ইবনু খালদুন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মতারিখ সম্পর্কে বলেন, এটা ছিল আমুল ফীলের ১২ ই রবিউল আউয়াল।
❇১৩/ গ্রন্থের নামঃ আল ওয়াফা
গ্রন্থকারঃ ইবনূ জাওযী, পৃ., ৮৭।
তিনি বলেন, ইবনূ আসাকীর থেকে উম্মাহর প্রসিদ্ধ গ্রহনযোগ্য মতস্বরুপ আমাদর কাছে যে মতটি পোঁছেছে তা হলো রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মতারিখ ছিল আমুল ফীলের ১২ ই রবিউল আউয়াল।
❇১৪/ গ্রন্থের নামঃ ফতোয়ায়ে রেজভীয়া
গ্রন্থকারঃ ইমামে আহলুস সূন্নাহ্ শায়খুল ইসলাম আ'লা হযরত আহমদ রেজা খান বেরেলী রহ.; খণ্ড ২৬, পৃষ্ঠা ৪১১।
তিনি-ও অনুরুপ উল্লেখ করেছেন।
❇১৫/ গ্রন্থের নামঃ আশ শুমামাতুল আনবারিয়া ফী মওলিদী খায়রিল বারিয়া
গ্রন্থকারঃ উপমহাদেশে ফির্কায়ে আহলে হাদিস প্রতিষ্ঠার রুপকার নবাব সিদ্দিক হাসান খান ভূপালী, পৃ., ৭।
তিনি ইবনূ জাওযীর অনূরুপ উদ্ধৃতি পেশ করে বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মতারিখ ছিল আমুল ফীলের ১২ ই রবিউল আউয়াল।
❇১৬/ গ্রন্থের নামঃ ফাতহুল বারী
গ্রন্থকারঃ ইবনূ হাজর আল আসকালানী, খণ্ড ৮, পৃষ্ঠা ১৩০।
তিনিও অনূরুপ মত ব্যক্ত করেছেন।
|| প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস, বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকার ইমাম কাস্তালানী র. তদীয় জগৎ বিখ্যাত কিতাব "মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া" কিতাবে বলেছেন,
"প্রসিদ্ধ মতানুযায়ী নিশ্চয় নাবী কারিম সল্লাল্লহু আ'লাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম ১২ই রবিউল আউয়াল, সোমবার সুবহে সাদিক-এর সময় দুনিয়াতে জন্ম বা শুভাগমন করেছেন এবং এ মত হল প্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক ইমামুল মাগাযী ইবনে ইসহাক র. ও অন্যান্য সকল ইমামগণের"।
দেখুন, উক্ত কিতাবের শরাহ্
*_* শারহে আল্লামাতুল জুরকানী আলাল মাওয়াহেব; খণ্ড ১, পৃ., ১৪৮।
উক্ত কিতাবে আরো বলেন,
"এবং ১২ই রবিউল আউয়াল তারিখেই পবিত্র মক্কা নগরীর অধিবাসীদের মাঝে নাবী কারিম সল্লাল্লহু আ'লাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম-এর পবিত্র জন্মস্থান যিয়ারত করার আ'মাল বর্তমান সময় পর্যন্ত বহাল রয়েছে"।
দেখুন,
*_* শারহে আল্লামাতুল জুরকানী আলাল মাওয়াহেব; খণ্ড ১, পৃ., ১৪৮।
আল্লামা জুরকানী র. তদীয় "শরহে আল্লামাতুল জুরকানী" কিতাবে বলেন,
"প্রখ্যাত ঐতিহাসিক আল্লামা ইবনে কাসীর র. বলেন, ১২ই রবিউল আউয়াল তারিখই দুনিয়ায় নাবী কারিম সল্লাল্লহু আ'লাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম-এর পবিত্র জন্ম তারিখ/শুভাগমন তারিখ হিসেবে জামহুর উলামায়ে ক্বিরামের নিকট প্রসিদ্ধ"।
*_* ইমাম জুরকানী র., শারহে আল্লামাতুল জুরকানী আলাল মাওয়াহেব; খণ্ড ১, পৃ., ২৪৮।
উক্ত পৃষ্ঠায় তিনি আরো বলেন,
"উক্ত ১২ই রবিউল আউয়াল তারিখই নাবী কারিম সল্লাল্লহু আ'লাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম-এর পবিত্র জন্ম তারিখ/শুভাগমন তারিখ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে"।
*_* ইমাম জুরকানী র., শারহে আল্লামাতুল জুরকানী আলাল মাওয়াহেব; খণ্ড ১, পৃ., ২৪৮।
এখন দেখুন,
|| ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম ও অন্যতম মুহাদ্দিস শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলাভী র. বলেন,
"নাবী কারিম সল্লাল্লহু আ'লাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম-এর পবিত্র জন্ম তারিখ/শুভাগমন তারিখ হিসেবে ১২ই রবিউল আউয়াল তারিখই প্রসিদ্ধ। এবং মক্কাবাসীদের আ'মাল হল তাঁরা উক্ত তারিখে নাবী কারিম সল্লাল্লহু আ'লাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম-এর পবিত্র জন্ম স্থান/শুভাগমন স্থান যিয়ারত করতেন; যা বর্তমান সময় পর্যন্ত (মুহাদ্দিস র.-র সময়কাল ১০৫১হি.) প্রচলিত রয়েছে"।
*_* শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলাভী র., "মা সাবাতা বিস সূন্নাহ্" উর্দু গ্রন্থ, পৃ., ৮১।
তিনি উক্ত কিতাবে আরো বলেন,
"আল্লামা ইমাম ত্বীবী র. বলেন- সমস্ত মুসলিম উম্মাহ্ এ বিষয়ের উপর একমত যে, নাবী কারিম সল্লাল্লহু আ'লাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম ১২ই রবিউল আউয়াল তারিখে এ দুনিয়ায় শুভাগমন করেছেন"।
*_* শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলাভী র., "মা সাবাতা বিস সূন্নাহ্" উর্দু গ্রন্থ, পৃ., ৮২।
আরো দেখুন,
|| মাওলানা মুফতি এনায়েত আহমদ র. তদীয় প্রসিদ্ধ কিতাব "তাওয়ারিখে হাবীবে ইলাহ্"-তে বলেন,
"যে বছর আবরাহার হস্তী বাহিনী ধ্বংস হয়েছিল ঐ বছর ১২ই রবিউল আউয়াল সোমবার, সুবহে সাদিক-এর সময় নাবী কারিম সল্লাল্লহু আ'লাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম দুনিয়ায় শুভাগমন করেছেন"।
*_* মাওলানা মুফতি এনায়েত আহমদ র.; "তাওয়ারিখে হাবীবে ইলাহ্", পৃ., ১১।
তিনি অপর পৃষ্ঠায় বলেন,
"মক্কা ও মদিনা শরীফ এবং অধিকাংশ ইসলামী রাষ্ট্রে এ প্রথা প্রচলিত আছে যে, পবিত্র রবিউল আউয়াল মাসে মীলাদুন্নাবী সল্লাল্লহু আ'লাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম-এর মাহফিল অায়োজন করে মুসলমানদের একত্র করে মীলাদ শরীফ পাঠ করা হতো। এবং নাবী কারিম সল্লাল্লহু আ'লাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি বেশী বেশী দরুদ শরীফ পড়ে লোকদেরকে দাওয়াত দিয়ে খানা খাওয়ানো এবং নেওয়াজ বিতরণ করা হতো। ইহা একটি বিরাট বারকাতময় কাজ এবং নাবী কারিম সল্লাল্লহু আ'লাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম-এর সাথে ভালবাসা বৃদ্ধির একটি মাধ্যম। রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ মদিনা মুনাওয়ারায় মাসজিদে নাববীতে এবং মক্কা শরীফে নাবী কারিম সল্লাল্লহু আ'লাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম-এর জন্মস্থলে মীলাদুন্নাবী সল্লাল্লহু আ'লাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম-এর এ বারকাতময় মাহফিল অনুষ্ঠিত হতো"।
*_* মাওলানা মুফতি এনায়েত আহমদ র.; "তাওয়ারিখে হাবীবে ইলাহ্", পৃ., ১২।
নবীজির বিলাদত দিবস (জন্মদিবস) কে বিকৃতকারী মিশরীয় জ্যোতির্বিদ মাহমুদ পাশা আসলে কেমন ছিলো?
সহিহ হাদীসের বর্ণিত আছে নবীজির বিলাদত দিবস হচ্ছে ১২ই রবিউল আউয়াল শরীফ।
কিন্তু এরপরও কিছু লোক মিশরীয় জ্যোতির্বিদ মাহমুদ পাশা’র রেফারেন্স দিয়ে দাবি করে নবীজির বিলাদত নাকি ৯ই রবিউল আউয়াল।
এক্ষেত্রে বেশি ভূমিকা রেখেছে দুটি বই-
১) ব্রিটিশদের থেকে ডিলিট উপাধি প্রাপ্ত সুলাইমান নদভীর লেখা ‘সীরাতুন্নবী’ নামক গ্রন্থ।
২) কট্টর আহলে হাদীস সাফিউর রহমান মুবারকপুরীর লেখা ‘আর-রাহীকুল মাকতুম’, ইংরেজী বইটির নাম The Sealed Nectar।
উভয় বইয়ে মিশরীয় জ্যোতির্বিদ মাহমুদ পাশার রেফারেন্স দিয়ে সহিহ হাদীসকে অস্বীকার করা হয়েছে। বলা হয়েছে ১২ তারিখ নয় নবীজির বিলাদত ৯ তারিখ।
এখন কথা হচ্ছে মিশরীয় জ্যোতির্বিদ মাহমুদ পাশা আসলে কেমন ছিলো? সে কি ঈমানদার ছিলো, নাকি নাস্তিক ছিলো? আসুন জেনে নেই-
উইকিতে কথিত জোতির্বিজ্ঞানী মাহমুদ পাশা সম্পর্কে রয়েছে, মাহমুদ পাশা আল ফালাকি (1815-1885) ছিল উনবিংশ শতাব্দীর একজন মিশরীয় জ্যোতির্বিদ। সে ছিল Egyptian Renaissance বা মিশরীয় রেনেসার একজন মূল ব্যক্তি। সে ফ্রান্সের বৃত্তি নিয়ে গবেষণা ও পড়াশোনা চালিয়েছিল।
http://en.wikipedia.org/wiki/User:Dave_Light/Al-Faliki
এই মিশরীয় রেনেসাঁকে আরবীতে বলা হয় ‘আল-নাহদা’। ১৮০০-১৯০০ সালের মাঝামাঝি সময়টিতে এই কথিত ‘মিশরীয় রেনেসা’ সংঘটিত হয়। উইকিতে আল নাহদার মূল ব্যক্তি বলা হয়েছে ‘রিফা আল তাহতাবী’ (Rifa'a el-Tahtawi) নামক ব্যক্তিকে। তার সম্পর্কে উইকিতে রয়েছে যে, তাকেও ফ্রান্সে পাঠানো হয়েছিল। সে মিশরে এসে প্রচার চালায় যে, মুসলমানদেরকে অবশ্যই পাশ্চাত্য সংস্কৃতি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে।
রিফা আল তাহতাবী ছাড়াও এই ‘আল-নাহদা’র আরেক মূল ব্যক্তি ছিল ‘বুরতুস আল বুসতানী’। সে মুসলমানও ছিল না, ছিল এক লেবানিজ ম্যারেনাইট খ্রিস্টান।
এই প্রত্যেকটি দলিল পাবেন উইকির এই লিঙ্কে : http://en.wikipedia.org/wiki/Al-Nahda
অর্থাৎ মিশরীয় রেনেসাঁ সংশ্লিষ্টরা ফ্রান্সপন্থী ছিল। ফ্রান্সের বৃত্তি পেয়ে পড়াশোনা করে তারা মুসলিম মূল্যবোধ মুছে দিয়ে পাশ্চাত্য সংস্কৃতি চালু করতে উঠেপড়ে লেগেছিল। তাদের মধ্যে অনেকেই ছিল খ্রিস্টান, এমনকি উইকির উপরোক্ত লিঙ্ক অনুযায়ী শিয়ারাও তাদের মধ্যে ছিল।
আরেকটি বিষয় বলতে হয়। তা হলো, তারা ছিল প্রাচীন মিশরের ফেরাউনদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। মিশরীয় রেনেসার সাথে জড়িত এক ভাস্কর্যশিল্পী মাহমূদ মোখতার বানিয়েছিল Egypt's Renaissance বা ‘মিশরের নবজাগরণ’ নামক এক মূর্তি, যা ছিল ফেরাউন ও স্ফিংসের জোড়া ভাস্কর্য। অর্থাৎ মিশরীয় রেনেসা ছিল ফেরাউনের যুগে ফিরে যাওয়ার চেতনা ধারী।
http://en.wikipedia.org/wiki/Mahmoud_Mokhtar
বিষয়টি আমাদের দেশের তথাকথিত ‘সুশীল সমাজে’র সাথে তুলনীয়। এরা বিদেশে কাফিরের দেশে বৃত্তি পেয়ে সেদেশে পড়াশোনা করে। পড়াশোনা শেষে এদেশে ফিরে তারা কাফিরদের এজেন্ট হিসেবে কাফিরদের সংস্কৃতির পক্ষে প্রচার চালায়। উল্লেখ্য, বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যে মেয়েদের মধ্যে ইউরোপীয় স্টাইলে পোষাক পরার খুব চল দেখা যায়। আর কামাল আতাতুর্কের ব্যাপারে তো সবাই জানে। এ সবেরই সূচনা হয়েছিল উনবিংশ শতাব্দীর ‘আল-নাহদা’ থেকেই।
অর্থাৎ উনবিংশ শতাব্দীর মিশরের এক নাস্তিক ‘জ্যোতির্বিদ’ নবীজি (صلى الله عليه و آله و سلم) এঁর বিলাদত দিবসকে বিকৃত করে বই রচনা করেছে।
কিন্তু বর্তমান জামানায় সহীহ হাদীস শরীফ তো রয়েছেই, পাশাপাশি ইসলামী ভাবাপন্ন জোতির্বিদরাও প্রমাণ করেছেন নবীজি (صلى الله عليه و آله و سلم) এঁর বিলাদত দিবস হচ্ছে ১২ই রবিউল আউয়াল শরীফ।
কিন্তু এরপরও সেগুলো বাদ দিয়ে ফেরাউনপন্থী এক ইসলামবিরোধী গোষ্ঠীর বক্তব্য চৌক্কা (^) মৌলভীদের কাছে দলিল হয়ে গেল !! আশ্চর্য !!!
সন্দেহের অপনোদন
ইনতিকালের তারিখ সম্পর্কে ভুল ধারণার অপনোদন
============
আহলে হাদীস বা লা-মাযহাবীদের নেতা মাওলানা আকরাম খাঁ, ওহাবী ও মউদূদী পন্থীসহ ঈদে মিলাদুন্নবী বিরোধীরা নবী করিম [ﷺ]-এঁর ইনতিকালের তারিখ নিয়ে মানুষের মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা করে প্রতি বৎসর পেপার পত্রিকায় প্রচারণা চালাচ্ছে। তাদের অবশ্যই জানা থাকার কথা যে, কোন একটি বিষয়ে বিভিন্ন বর্ণনা ও মতামত থাকলেও নির্ভরযোগ্য এবং গ্রহণযোগ্য একটি সিদ্ধান্ত অবশ্যই আছে। অনুসন্ধান করে সেটা বের করা এবং সে অনুযায়ী আমল করাই ঈমানদারের কাজ এবং মানুষকেও ঐ সত্যটি অবগত করানো উচিত। কিন্তু তারা ইচ্ছাকৃতভাবেই সন্দেহের সৃষ্টি করে রাখে - কিতাবের বর্ণনা অনুযায়ী সঠিক ফয়সালাটি তারা বলেনা। তাদের কেউ বলে, রবিউল আউয়াল মাসের ২ তারিখে নবী করিম [ﷺ] ইনতিকাল করেছেন। কেউ কেউ বলেন, ৮ তারিখ। কেউ বলে, ৯ তারিখ। কেউ বলে, ১০ তারিখ। কিন্তু ১২ই রবিউল আউয়ালের বর্ণনাটি যে সঠিক এবং অধিকাংশের মত, এ কথাটা তারা গোপন রাখে।
তাই আমি পাঠকদের খেদমতে ইবনে কাছির প্রণীত আল-বিদায়া ওয়ান-নেহায়া গ্রন্থের ৫ম খন্ড পৃষ্ঠা ২৫৪-২৫৬ হতে প্রয়োজনীয় উদ্ধৃতি পেশ করলাম- যেন তারা আপন গুরুর কথা মানে। ইমাম আহমত রেযা (رحمة الله عليه) এর ফতোয়াও এতদসঙ্গে উল্লেখ করা হলো।
ইবনে কাছির (মৃত্যু ৭৭৪ হিজরী) বলেন - “ইবনে ইসহাক ও ওয়াকেদীর বিশুদ্ধ বর্ণনামতে নবী করিম [ﷺ] ১২ই রবিউল আউয়াল তারিখ সোমবার দিন ইনতেকাল করেছেন।” উক্তিটি নিম্নরূপঃ
توفى رسول الله صلى الله عليه وسلم لاتنتي عشرة ليلة خلت من شهر ربيع الاول فى اليوم الذي قدم فيه المد ينة مها جرا ـ
অর্থ- ”নবী করিম [ﷺ] ১২ই রবিউল আউয়াল তারিখে সোমবার দিনে ইনতেকাল করেন- যে দিনে তিনি হিজরত করে মদিনায় প্রবেশ করেছিলেন” (বেদায়া-নেহায়া ৫ম খন্ড ২৫৫ পৃষ্ঠা)। এরপর ইবনে কাসির মন্তব্য করেনঃ-
والمشهور قول ابن اسحاق والوا قدى ورواه الواقدى عن ابن عباس عن عاإشة رضي الله عنها وعن عروة عن عاإشة قالا توفى رسول الله صلى الله عليه وسلم يوم الا ثنين لثنتى عشرة ليلة خلت من ربيع الا ول ورواه ابن اسحاق عن عبد الله بن ابى بكر بن حزم عن ابيه مثله ـ وزاد ودفن ليلة الاربعاء ـ
অর্থ- “নবী করিম [ﷺ]-এঁর ইনতেকালের তারিখের বিভিন্ন বর্ণনার মধ্যে ইবনে ইসহাক ও ওয়াকিদীর বর্ণনাই প্রসিদ্ধ ও মশহুর। ওয়াকেদী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) এবং ওরওয়া ইবনে যুবাইর (رضي الله عنه)-এঁর সূত্রে হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (رضي الله عنها) থেকে রেওয়ায়াত করেন- তাঁরা উভয়ে বলেন- “রাসূল কারিম [ﷺ] ১২ই রবিউল আউয়াল তারিখে বেছালপ্রাপ্ত হন। ইবনে ইসহাক আবদুল্লাহ ইবনে আবু বকর ইবনে হজম সূত্রে উপরোক্ত রেওয়ায়াত বর্ণনা করেছেন। তাঁর বর্ণনায় অতিরিক্ত এই কথাটি ছিল- “এবং মঙ্গলবার দিবাগত বুধবার রাত্রে নবী করিম [ﷺ]-কে দাফন করা হয়” (বেদায়া নেহায়া ৫ম খন্ড ২৫৫-২৫৬ পৃষ্ঠা)।
ইনতিকাল তারিখ নির্ধারণে মতভেদের প্রকৃত কারণঃ
ইবনে কাছির বলেন- নবী করিম [ﷺ]-এঁর ইনতেকালের তারিখ নিয়ে বিভিন্ন মতের কারণ হলো - চন্দ্র দর্শনের হিসাব নিয়ে গোলমাল। কেননা, প্রথম চন্দ্র দর্শনের তারিখটি বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন রকম হয়। মক্কা শরীফ ও মদিনা শরীফেও কোন কোন সময় ১ দিনের ব্যবধান হয়ে যায়। পূর্বাঞ্চলে ২ দিনের ব্যবধানও লক্ষ্য করা যায়। সুতরাং মদিনা শরীফের চাঁদের হিসাবটিই এই ক্ষেত্রে মানদন্ড ধরে নিলে কোন সমস্যা থাকে না। সব হিসাব মিলে যাবে। সে মতে ১০ম হিজরীর শেষ মাস যিলহজ্ব চাঁদের ১লা তারিখ মদিনাবাসীগণ শুক্রবার থেকে গণনা করেন। কিন্তু মক্কাবাসীগণ আগের দিন বৃহস্পতিবার থেকে গণনা করে ৯ তারিখ শুক্রবার হজ্বের দিন ধার্য্য করেন - অথচ সেদিন মদিনা শরীফে ছিল, চাঁদের ৮ তারিখ। মক্কা মদিনার দূরত্ব ৫০০ কিঃ মিঃ। সুতারং চন্দ্র দর্শন বেশকম হতে পারে।
সে মতে এ মাস থেকে পূর্ববর্তী ৩ মাস মদিনায় একাধারে ৩০ দিনে পূর্ণ হয়। সে হিসেবে মহররম মাসের ১লা তারিখ মদিনা শরীফে ছিল রবিবার। পরবর্তী সফর মাসের ১লা তারিখ ছিল মঙ্গলবার। তার পরবর্তী মাস রবিউল আউয়ালের ১লা তারিখ ছিল বৃহস্পতিবার এবং ১২ তারিখ ছিল সোমবার। সুতরাং নবী করিম [ﷺ]-এঁর ইনতেকাল তারিখটি ছিল ১২ই রবিউল আউয়াল সোমবার। (বেদায়া নেহায়া ৫ম খন্ড পৃষ্ঠা ২৫৬) ওয়াকেদীর ব্যাপারে কারো আপত্তি থাকলেও ইবনে ইছহাকের ব্যাপারে কারো কোন আপত্তি নেই। সুতরাং উপরের রেওয়াতটি বিশুদ্ধ।
আর একটি সহীহ বর্ণনা দেখুনঃ
عن عفان عن سعيد بن مينا عن جابر وابن عباس أنهما قالا : ولد رسول الله صلى الله عليه وسلم عام الفيل يوم الاثنين الثاني عشر من شهر ربيع الأول ـ وفيه بعث ـ وفيه حاجرـ وفيه مات . وهذا هوا لمشهور (البد اية والنهايةج ٢ صفحة ٢٦)
অর্থ- “হযরত জাবের (رضي الله عنه) ও হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে সায়ীদ ইবনে মীনা সূত্রে আফফান বর্ণনা করেছেন-জাবের ও ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেনঃ ”নবী করিম [ﷺ] হস্তীসনের ১২ই রবিউল আউয়াল সোমবার দিন ভূমিষ্ট হয়েছেন। ঐ ১২ তারিখে এবং ঐ সোমবার দিনেই তিনি নবুয়তের দায়িত্ব লাভ করেছেন, হিজরত করেছেন ও ইনতেকাল করেছেন। এটাই প্রসিদ্ধ বর্ণনা।” (বেদায়া ২য় খন্ড ২৬০ পৃষ্ঠা)।
৭৭৪ হিজরী সনের পূর্বেই ইবনে কাছির তাঁর গ্রন্থে নবী করিম [ﷺ]-এঁর জন্ম ও ইনতিকালের তারিখ এবং দিনক্ষণের সুষ্ঠু সমাধান দেয়ার পর বর্তমানকালের স্বঘোষিত পন্ডিতগণ বিভ্রান্তি সৃষ্টির পাঁয়তারা করায় তাদের আসল উদ্দেশ্য বুঝতে কারো কষ্ট হবার কথা নয়। আল্লাহ বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারীদের সুমতি দান করুন। তাদের মতেই ইবনে ইসহাক ও মীনা নির্ভরযোগ্য রাবী। সেজন্যই তাঁদের উদ্ধৃতি পেশ করলাম।
ইমাম আহমদ রেযা (رحمة الله عليه)-এঁর ফতোয়াঃ
ইমাম আহমদ রেযা (رحمة الله عليه) তাঁর (নুৎকুল হিলাল) গ্রন্থে ১২ই রবিউল আউয়াল সোমবার হুযুর [ﷺ]-এঁর বেছাল শরীফের তারিখটি আটটি দলিল দ্বারা প্রমাণ করেছেন। তার মধ্যে তাবাকাতে ইবনে সা’আদ সূত্রে হযরত আলী (رضي الله عنه) এর রেওয়ায়াত, যারকানী শরীফ সূত্রে ইবনে ইসহাক এর রেওয়াআত, আল্লামা দিয়ার বিকরীর তারিখুল খামিছ সূত্রে দুইটি রেওয়ায়াত, যারকানী শরীফে জমহুর উলামা সূত্রে অন্য একটি রেওয়াআত, ইমাম আবু হাতেম রাযী, ইমাম রাযীন আবদারী ও ইমাম ইবনে যাওজীর কিতাবুল ওয়াফী সূত্রে, ইমাম ইবনে জাযরীর কামিল গ্রন্থ সূত্রে, মাজমাউল বিহারিল আনওয়ার সূত্রে এবং ফাযেল মুহাম্মদ সাব্বাব কৃত আছআফুর রাগিবীন গ্রন্থ সূত্রে - সর্বমোট আটটি রেওয়ায়াত অতি প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। রাবীগণের মধ্যে হযরত আলী, হযরত আয়েশা, ছাআদ, উরওয়া, ইবনে মুসাইয়িব, ইবনে শিহাব, আফফান, ছায়ীদ, ইবনে মিনা, জাবের, ইবনে আব্বাস, ইবনে ইসহাক-প্রমুখ রাবীগণ একবাক্যে বলেছেন- ১২ তারিখ সোমবার হুযুর [ﷺ]-এঁর ওফাত তারিখ।
হুযুরের পরিবারবর্গের রেওয়ায়াতকে পাশ কাটিয়ে অন্যের দুর্বল রেওয়ায়াত গ্রহণ করে একটি প্রতিষ্ঠিত বিষয় বিতর্ক সৃষ্টি করা কোন মতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আ’লা হযরত ইমাম আহম্মদ রেযা (رحمة الله عليه) এর গবেষণামূলক ফতোয়া আমার মাসিক পত্রিকা সুন্নীবার্তা ৫৯ নম্বরে ছাপা হয়েছে। সেখানে বিস্তারিত দলীল ও হিসাব বর্ণনা করা হয়েছে। গবেষকগণের জন্য এটি অতি মূল্যবান তথ্য।
_______________
মাওলিদ-উন-নবী (ﷺ) পরিচিতি, আল-কুরআন ও তফসীরের আলোকে।
লেখক, সংকলকঃ মাসুম বিল্লাহ সানি
🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন