পূণ্য কর্ম দ্বারা গুণাহ মিটিয়ে দেয়া-
❏ হযরত ‘ওসমান ইবনু আফ্ফান (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, প্রিয় নবী রাসূলে আরাবী (ﷺ) বলেন-
مَنْ تَوَضَّأَ لِلصَّلَاةِ فَأَسْبَغَ الْوُضُوءَ، ثُمَّ مَشَى إِلَى الصَّلَاةِ الْمَكْتُوبَةِ فَصَلَّاهَا مَعَ النَّاسِ أَوْ مَعَ الْجَمَاعَةِ أَوْ فِي الْمَسْجِدِ غَفَرَ اللَّهُ لَهُ ذُنُوبَهُ
-‘‘যে ব্যক্তি নামাযের জন্য উত্তমভাবে ওযূ করবে তারপর ফরজ নামাযের জন্য মানুষের সাথে বা জামা‘আতের সাথে অথবা মসজিদে হেটে যাবে মহান প্রতিপালক তার গুণাহ (ছগীরা) মাফ করে দিবেন।’’ ৪০
{ ৪০. ইমাম নাসাঈ, আস-সুনান, ২/১১১ পৃ. হা/৮৫৬ এবং আস-সুনানুল কোবরা, ১/৪৪৯ পৃ. হা/৯৩১, ইমাম বায়হাকী, আস-সুনানুল কোবরা, ১/১৩১ হা/৩৮৫, ইমাম মুসলিম, আস-সহীহ, ১/২০৮ পৃ. হা/২৩২}
আক্বিদা
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আক্বিদা হল নেক আমল গুণাহকে মিটিয়ে দেয়; কিন্তু কবীরা গুণাহ এর জন্য তাওবা করা শর্ত। ৪১
{৪১. সম্পাদক কর্তৃক সংযোজিত।}
দাফনের পরে দোয়া এবং ঈসালে সাওয়াব-
❏ ইমাম আবু দাউদ (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-
عَنْ عُثْمَانَ بْنِ عَفَّانَ، قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، إِذَا فَرَغَ مِنْ دَفْنِ الْمَيِّتِ وَقَفَ عَلَيْهِ، فَقَالَ: اسْتَغْفِرُوا لِأَخِيكُمْ، وَسَلُوا لَهُ بِالتَّثْبِيتِ، فَإِنَّهُ الْآنَ يُسْأَلُ
-‘‘হযরত ‘ওসমান ইবনু আফ্ফান (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) কোন এক মায়্যিতের দাফন কার্য শেষ করে সেখানে দাঁড়িয়ে অতঃপর তিনি বললেন, তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং দোয়া কর যেন আল্লাহ এখন তাকে (ফিরিশতাদের প্রশ্নের জবাবে) ঈমানের উপরে অটল রাখেন, কেননা এখনই তাকে প্রশ্ন করা হবে।’’ ৪২
{৪২. সুনানে আবি দাউদ, ৩/২১৫ পৃ. হা/৩২২১, ইমাম বায়হাকী, আল-মা‘রিফাতুল সুনানি ওয়াল আছার, ৫/৩৩৩ পৃ. হা/৭৭৪৭ এবং আস-সুনানুল কোবরা, ৪/৯৩ পৃ. হা/৭০৬৪ এবং আস-সুনানুস সুগরা, হা/১১২২ এবং ইসবাতু আযিবিল কুবুর, ৪৭ পৃ. হা/৪০ এবং দাওয়াতুল কাবীর, ২/২৯৪ পৃ. হা/৬৩৬, ইমাম ইবনে আবদিল র্বা, আল-ইস্তিযকার, ৩/৬২ পৃ. ইমাম হাকেম, আল-মুস্তাদরাক, ১/৫২৬ পৃ. হা/১৩৭২, তিনি বলেন-
هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحٌ عَلَى شَرْطِ الْإِسْنَادِ، وَلَمْ يُخَرِّجَاهُ
-‘‘ইমাম ইবনে সুন্নী, আমালুল ইয়াউম ওয়াল লাইলা, ৫৩৭ পৃ. হা/৫৮৫, ইমাম আহমদ, ফাযায়েলুস সাহাবা, ১/৪৭৫ পৃ. হা/৭৭৩, ইমাম মুকাদ্দাসী, আহাদিসুল মুখতার, ১/৫২২ পৃ. হা/৩৮৮, ইমাম বাগভী, শরহে সুন্নাহ, ৫/৪১৮ পৃ. হা/১৫২৩, ইবনে হাজার আসকালানী, তালখিসুল হবীর, ২/৩১০ পৃ. হা/৭৯৬, শায়খ ইউসুফ নাবহানী, ফতহুল কাবীর, হা/১৭৬০ এবং হা/৯১৫৮, ইমাম ইবনে আছির, জামেউল উসূল, ১১/১৪৯ পৃ. হা/৮৬৫৮, মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ৭/১৫৮ পৃ. হা/১৮৫১৪ এবং ১৫/৫৫৭ পৃ. হা/৪২১৬০, ইমাম নববী, খুলাসাতুল আহকাম, ২/১০২৮ পৃ. হা/৩৬৭৪, তিনি বলেন- رَوَاهُ أَبُو دَاوُد بِإِسْنَاد حسن. -‘‘ইমাম আবু দাউদ হাদিসটি বর্ণনা করেছেন, আর সনদটি ‘হাসান’।’’ ইমাম মুনযিরী, তারগীব ওয়াত তারহীব, ৪/১৮০ পৃ. হা/৫৩৩৪, আল্লামা মানাভী (رحمة الله) লিখেন- بِإِسْنَاد حسن -‘‘এ সনদটি ‘হাসান’।’’ (মানাভী, তাইসির, ২/২৫৪ পৃ.) }
আক্বিদা
এ হাদিস থেকে বুঝা গেল দাফনের পরে দোয়া করা সুন্নাত, আর এটাই ছিল সাহাবীগণের আক্বিদা।
❏ আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) এ হাদিসের ব্যাখ্যায় লিখেন-
وَفِيهِ دَلِيلٌ عَلَى أَنَّ دُعَاءَ الْأَحْيَاءِ يَنْفَعُ الْأَمْوَاتَ خِلَافًا لِلْمُعْتَزِلَةِ
-‘‘এই হাদিস শরীফ হলো এ বিষয়ের দলিল যে, জীবিত ব্যক্তিগণের দোয়া মৃত ব্যক্তিগণের জন্য উপকারী, (এটাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের অভিমত) মুতাযিলারা এর বিপরীত মত পোষণ করে।’’ ৪৩
{৪৩ . আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, ১/২১৬ পৃ. হা/১৩৩ এর ব্যাখ্যা।}
❏ আল্লামা সান‘আনী (رحمة الله) লিখেন-
فِيْه دَلِيْل عَلى أَنَّ الدُّعَاء نَافِع لِلْمَيِّتْ
-‘‘এ হাদিস এই বিষয়ের দলিল যে জীবিত ব্যক্তিগণের দোয়া মৃত ব্যক্তিগণের জন্য উপকার করে থাকে।’’
(সান‘আনী, তানভীর শরহে জামেউস সগীর, ৮/৪২৯ পৃ.)
❏ ইমাম তাহাভী (رحمة الله) লিখেন-
(سَلُوْا)) مَعْنَى الدُّعَاءِ
-‘‘তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য প্রার্থনা কর এর মমার্থ হলো তার জন্য দোয়া।’’
(শরহে তাহাভী, ২/৫৯৮ পৃ.)
উপরের হাদিসে পাক থেকে বুঝা গেল কবরের পাশে দাঁড়িয়ে দু‘আ করা রাসূল (ﷺ) এবং সাহাবায়ে কিরামের সুন্নাত; এ বিষয়ে আরও অনেক হাদিসে পাক দেখতে পাই। ইমাম তাবরানী (رحمة الله)সহ আরও অনেক ইমাম সংকলন করেন যে হুছাইন ইবনে ওয়াহওয়াহ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ত্বালহা ইবনু বারা (رضي الله عنه) একদা অসুস্থ হলে রাসূল (ﷺ) তাকে দেখতে এসে বলেছিলেন, ত্বালহা মৃত্যুর রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। অতঃপর তিনি রাতে মারা গেলে তাকে তাড়াহুড়া করে দাফন করে দিলেন। রাসূল (ﷺ) কে ইয়াহুদীদের ভয়ে জানালেন না এই ভয়ে যাতে তার কোন ক্ষতি করে না বসে।
فَأُخْبِرَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِينَ أَصْبَحَ فَجَاءَ حَتَّى وَقَفَ عَلَى قَبْرِهِ فَصَفَّ النَّاسَ مَعَهُ ثُمَّ رَفَعَ يَدَيْهِ فَقَالَ اللَّهُمَّ الْقَ طَلْحَةَ يَضْحَكُ إِلَيْكَ وَتَضْحَكُ إِلَيْهِ
-‘‘অতঃপর সকাল হলে রাসূল (ﷺ) এ সংবাদ শুনতে পান। ফলে তিনি এসে তাঁর কবরের পাশে দাঁড়ান এবং লোকেরাও তাঁর সাথে কাতারবন্দি হয়ে দাঁড়ায়। তারপর তিনি তাঁর দু‘হাত তুললেন এবং দু‘আ করলেন, হে আল্লাহ! ত্বালহার জন্য বংশধর অবশিষ্ট রাখুন, যার জন্য সে আপনার প্রতি সন্তুষ্ট হবে আর আপনিও তার প্রতি সন্তষ্ট হবেন।’’ ৪৪
{ ৪৪.ইমাম তাবরানী, মু‘জামুল কাবীর, ৪/২৮পৃ. হা/৩৫৫৪, ইবনে হাজার আসকালানী, ফতহুল বারী, ৩/১১৮পৃ. }
❏ বিখ্যাত হাফেজুল হাদিস ইমাম নুরুদ্দীন ইবনে হাজার হাইছামী (رحمة الله) এই সনদ প্রসঙ্গে বলেন-
رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ فِي الْكَبِيرِ، وَإِسْنَادُهُ حَسَنٌ.
-‘‘ইমাম তাবরানী (رحمة الله) এই সনদটি সংকলন করেছেন, আর এর সনদ ‘হাসান’ পর্যায়ের।’’ ৪৫
{৪৫ .ইমাম হাইছামী, মাযমাউয-যাওয়াইদ, ৩/৩৭পৃ. হা/৪১৯৪}
তাই যারা দোয়ার বিরোধীতা করছেন তারা রাসূল (ﷺ) এবং সাহাবীদের বিরোধী। ৪৬
{৪৬. সম্পাদক কর্তৃক সংযোজিত।}
____________________
আকাইদে সাহাবাহ
(সাহাবায়ে কিরামদের সাথে সুন্নি আক্বিদার সাদৃশ্য)
মূল:আল্লামা আবুল হামিদ মুহাম্মদ যিয়াউল্লাহ
ক্বাদেরী আশরাফী (رحمة الله)
বঙ্গানুবাদ: মাওলানা হাফেয মুহাম্মদ আতিকুর রহমান
সূত্রঃ 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন