বিবিধ মাসাইল


কোন মহিলার যে কয়েক দিন হায়িয আসার অভ্যাস ছিল এর পূর্বে যদি তার রক্তস্রাব বন্ধ হয়ে যায় তবে রক্ত বন্ধ হওয়ার পরেই গোসল করে নামায পড়া ওয়াজিব। কিন্তু অভ্যাসের দিনগুলি পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত সহবাস করা মাকরূহ। কেননা হয়তো আবার রক্ত জারী হতে পারে। দশ দিনের কম রক্ত বন্ধ হলে এবং পানি না পাওয়ার কারণে তায়াম্মুম করে নিলে এ অবস্থায় ইমাম আবূ হানীফা এবং ইমাম আবূ ইউসূফ (رحمة الله) -এর নতে নামায যায়িয হবে না। এ অবস্থায় তিলাওয়াত করা হারাম হবে। কিন্তু সহবাস করা হারাম হবে না (আলমগীরী)।



কোন বালিগার সর্বপ্রথম হায়িয আসার সময় রক্তস্রাব যদি দশ দিনের কমে বন্ধ হয়ে যায় অভ্যাস ওয়ালী মহিলার রক্তস্রাব যদি অভ্যাসের চেয়ে কম সময়ের মধ্যে বন্ধ হয়ে যায় তবে অযূ গোসলের ক্ষেত্রে মাকরূহ ওয়াক্ত আসার পূর্ব পর্যন্ত অপেক্ষা করবে (আলমগীরী)।



যদি কোন মহিলার এক বা দুই দিন রক্ত দেখার পর তা বন্ধ হয়ে যায় তবেতার জন্য গোসল আদায় করবে। কিন্তু সহবাস করা জায়িয হবে না। এরপর যদি পনের দিন পাক থাকার পূর্বেই আবার রক্ত দেখা দেয় তবে মনে করতে হবে যে, পূর্বের রক্ত হায়িযের রক্ত ছিল। অতএব হায়িযের দিন বাদ দিয়ে গোসল করে নামায পড়তে আরম্ভ করবে। আর যদি পুরা পনের দিন পাক থাকে তবে মনে করতে হবে যে, পূর্বে যে রক্ত এসেছে তা ‘ইস্তিহাযা’ ছিল।



সুতরাং এক দিন বা দুই দিন রক্ত আসার কারণে যে কয় ওয়াক্ত নামায পড়া হয়নি এখন এর কাযা পড়তে হবে (বাহ্রুর রাইক)।



যে মহিলার তিন দিন হায়িয আসার ছিল কোন এক মাসে তার অবস্থা এরূপ হল যে তিন দিন পুরা হওয়া সত্ত্বেও তার রক্ত বন্ধ হল না এ অবস্থায় গোসলও করতে হবে না। এবং নামাযও পড়তে হবে না। যদি পুরা দশ দিনের মাথায় অথবা দশ দিনের কমে রক্ত বন্ধ হয় তবে অভ্যাসের অতিরিক্ত দিনগুলোর নামায মাফ হয়ে যাবে এবং এর কাযাও পড়তে হবে না। মনে করতে হবে তার অভ্যাস পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। অতএব এ কয় দিন সবই হায়িয হিসাবে গণ্য হবে। আর যদি দশ দিনের পরও রক্ত জারী থাকে তবে মনে করতে হবে যে তার হায়িয মাত্র তিন দিন ছিল। বাকী সব ইসতিহাযা ছিল। অতএব দশ দিন শেষ হওয়ার পর গোসল করবে এবং রক্ত জারী থাকা সত্তে¡ও নামায পড়বে আর পূর্বের সাত দিনের নামায কাযা করবে (ফাতহুল কাদীর)।



যদি দশ দিনের কম সময়ের মধ্যে হায়িয বন্ধ হয় এবং এমন সময় বন্ধ হয় যে নামাযের ওয়াক্ত প্রায় শেষ হয়ে গিয়াছে। যদি তৎক্ষণাৎ খুব তাড়াতাড়ি গোসল করে তবে এতটুকু সময় পেতে পারে যে, নিয়্যাত করে শুধু আল্লাহু আকবর বলে তাহরীমা বেঁধে দাঁড়াতে পারবে। এর চেয়ে বেশী সময় নেই তবে এ ওয়াক্তের তার উপর ওয়াজিব হবে এবং এর কাযা পড়তে হবে। যদি গোসল করে তাহরীমা বাঁধার সময়টুকুও না পায় তবে এ ওয়াক্তের  নামায মাফ হয়ে যাবে এবং কাযাও পড়তে হবে না (বাহরুর রাইক)।



রামাযান মাসের দিনের বেলায় হায়িযের রক্ত বন্ধ হয় তবে তৎক্ষণাৎ গোসল করবে। এবং নামাযের ওয়াক্ত হলে নামায পড়বে। তখন থেকে কোন কিছু পানাহার করা তার জন্য জায়িয হবে না। বরং ঐ সময় থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রোযাদাদের ন্যায় উপবাস থাকবে। কিন্তু পরে এ দিনের কাযা রাখতে হবে (শারহে বিকায়া)।



যদি পূর্ণ দশ দিন হায়িয আসার পর রাত্রে পাক হয় এবং তখন যদি এতটুকু রাত বাকী থাকে যে, এ সময়ের মধ্যে ‘আল্লাহু আকবার’ শব্দটি একবার উচ্চারণ করাও সম্ভব নয় এ অবস্থায়ও সুবহ সাদিক থেকে রোযা রাখা তার উপর ওয়াজিব হবে। যদি দশ দিনের কমে রাতে এমন সময় হায়িযের রক্ত বন্ধ হয় যে, এ সময়ের মধ্যে গোসল তো করা সম্ভব কিন্তু গোসলের পর ‘আল্লাহু আকবর’ শব্দটি একবার উচ্চারণ করাও সম্ভব নয় তবুও সুবহে সাদিক থেকে তার উপর রোযা ওয়াজিব হবে। এমতাবস্থায় গোসল না করলেও রোযার নিয়াত করবে। রোযা ছাড়বে না। সকালে গোসল করবে। আর যদি রাত্র থেকেও কম থাকে অর্থাৎ এ সময়ের ভেতর যদি গোসল করার সময়টুকুও না থাকে তবে রোযা রাখা তার জন্য জায়িয হবে না। কিন্তু দিনের বেলায় পানাহার করাও তার জন্য জায়িয নেই। বরং দিনে রোযাদারের মহত উপবাস থাকবে এবং পরে এর কাযা করবে (শরহে বেকায়া)।



যদি চল্লিশ দিনের পূর্বে কারো নিফাসের রক্ত বন্ধ হয় তবে স্রাব বন্ধ হওয়া মাত্রই গোসল করবে। যদি গোসল করলে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হওয়ার আশংকা থাকে তবে তায়াম্মুম করে নামায আদায় করবে। এক ওয়াক্ত নামাযও কাযা হতে দিবে না (বাহরুর  রাইক)।



কোন মহিলার নিয়ম ছিল প্রসবান্তে ত্রিশ দিন রক্তস্রাব হওয়ার কিন্তু একবার ত্রিশদিন অতিবাহিত হওয়ার পরও রক্ত বন্ধ হল না তবে সে গোসল করবে না। বরং অপেক্ষা করবে। যদি চল্লিশ দিন পূর্ণ হয়ে অথবা চল্লিশ দিনের ভেতর রক্ত বন্ধ হয় তবে সব দিনই নিফাসের মধ্যে গণ্য হবে। আর যদি চল্লিশ দিনের বেশী রক্তস্রাব জারী থাকে তবে ত্রিশ দিন নিফাস হবে এবং অবশিষ্ট দিনগুলো ইস্তিহাযা হবে। এ অবস্থায় ত্রিশ দিনের পরের দশ দিনের নামায কাযা পড়তে হবে (বাহরুর রাইক)।



যদি কোন মহিলার প্রসবান্তে চল্লিশ দিনের বেশী রক্তস্রাব হয় এবং এটাই হয় তার প্রথম প্রসব তবে চল্লিশ দিন পর্যন্ত নিফাস হবে। চল্লিশ দিন পুরা হওয়ার পর গোসল করে নামায পড়বে। আর যদি ইতিপূর্বে আরো সন্তান হয়ে থাকে এবং নিফাসের ক্ষেত্রে নির্ধারিত কোন অভ্যাস থাকে তবে অভ্যাসের কয় দিন নিফাস হবে এবং অবশিষ্ট দিনগুলো ইস্তিহাযা হবে। চল্লিশ দিনের পর গোসল করবে এবং নামায পড়বে। আর অভ্যাসের অতিরিক্ত দিনসমূহের নামায কাযা আদায় করতে হবে (বাহরুর রাইক)।



যে মহিলার প্রসবান্তে নির্দিষ্ট কয়েক দিন স্রাব হওয়ার অভ্যাস ছিল প্রসবের পর সে যদি রক্ত দেখে কিন্তু অভ্যাসের দিনগুলোর কথা ভুলে যায় তবে তার স্রাব চল্লিশ দিন অতিক্রম না করলে এবং চল্লিশ দিনের পর পূর্ণাঙ্গ পবিত্রতা হাসিল হলে যে সমস্ত নামায তার ছুটে গেছে এর কাযা আদায় করতে হবে না। অবশ্য স্রাব যদি চল্লিশ দিনের অধিক জারী থাকে অথবা চল্লিশ দিনের বেশী হয়নি কিন্তু এরপর পবিত্রতার সময় পনের দিন থেকে কম হয় তবে সে মনে মনে চিন্তা করবে। যদি নিশ্চিত ধারনা হয় যে, তার নিফাসের মুদ্দত এত দিন ছিল তবে এর উপর আমল করবে। আর যদি কোন কিছু মনে না পড়ে তবে সতর্কতাবশত পুরো চল্লিশ দিনের নামায কাযা করবে। যদি এখনো রক্ত বন্ধ না হয় তাহলে দশ দিন অপেক্ষা করবে এরপর চল্লিশ দিনের নামায কাযা করবে (আলমগীরী)।



যদি প্রসবান্তে কারো আদৌ রক্ত স্রাব না হয় তবুও তার জন্য গোসল করা ফরয (শরহে বেকায়া)।



প্রসবের সময় সন্তানের অর্ধেকের বেশী বের হওয়ার পর যে রক্তস্রাব হবে তা নিফাস হবে। আর অর্ধেকের কম বের হওয়ার পর যদি রক্তস্রাব হয় তবে তা ইস্তিহাযা হবে। এ সময় যদি উক্ত মহিলার হুশ থাকে তবে নামাযের ওয়াক্ত হলে এ অবস্থায় অযূ করে নামায আদায় করবে। নামায না পড়লে গুনাহ্গার হবে। এমনকি ইশারায় হলেও নামায আদায় করবে। হুশ থাকতে নামায কাযা করবে না। অবশ্য যদি নামায পড়লে সন্তানের জীবন নাশ হওয়ার আশংকা থাকে তবে এ অবস্থায় নামায পড়বে না (বাহরুর রাইক)।



হায়িযের ক্ষেত্রে যে মহিলার নির্ধারিত অভ্যাস ছিল তার যদি অনবরত রক্তস্রাব হতে থাকে এবং হায়িযের দিন ও মাসের ব্যাপারে তার যদি সন্দেহ সৃষ্টি হয় হবে সে চিন্তা করবে এবং নিশ্চিত ধারনার উপর আমল করবে। যদি নিশ্চিতভাবে হায়িয বা পবিত্রতা কিছুই বলা যাবে না। অবশ্য এ অবস্থায় সতর্কতা অবলম্বন করবে। অর্থাৎ প্রত্যেক নামাযের জন্যও গোসল করবে এবং হায়িয ওয়ালী মহিলা সে সব কাজ হতে বেঁচে থাকে এর থেকে বেঁচে থাকবে। শুধু ফরয, ওয়াজিব এবং সুন্নাতে মুয়াক্কাদা নামায পড়বে। শুদ্ধ মতে নফল নামায পড়বে না। নামাযে ফরয ও ওয়াজিব পরিমাণ কিরা‘আত পড়বে। যদি পবিত্রতা এবং হায়িয আরম্ভ হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ হয় তবে প্রত্যেক ওয়াক্তের নামাযের জন্য অযূ করবে। আর যদি পবিত্রতা এবং হায়িয হতে বের হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ হয় তবে প্রত্যেক ওয়াক্তের নামাযের জন্য গোসল করবে। ৩১৭


৩১৭.আলমগীরী, ১ম খণ্ড


সমাপ্ত

___________

কিতাব: নন্দিত নারী

লেখক: হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ ওসমান গণি

আরবি প্রভাষক, জামেয়া আহমাদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসা, ষোলশহর, চট্টগ্রাম।

সূত্রঃ 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন