পরকালের হিসাব এবং মীযান (তুলাদণ্ড) সত্য। মীযানের মাধ্যমে মানুষের পুণ্য ও পাপের ওজন করা হবে। পুণ্যের পাল্লা ভারী হলে বেহেশত। পাপের পাল্লা ভারী হলে দোজখ। সত্য সংবাদদাতা হজরত নবীয়ে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই সংবাদ জানিয়ে দিয়েছেন। নবুয়তের রীতি সম্পর্কে অজ্ঞ ব্যক্তিরা এই বিষয়ে সন্দিগ্ধ। তাদের দ্বিধা ধর্তব্য নয়। তারা তাদের প্রজ্ঞা দিয়ে সবকিছু বুঝতে চেষ্টা করে। কিন্তু নবুয়তের পদ্ধতি প্রজ্ঞার সীমানাবহির্ভূত। প্রজ্ঞা দিয়ে নবুয়তের রীতিনীতি বুঝতে চেষ্টা করা নবুয়ত অস্বীকারের নামান্তর। তারা জানে না যে, জ্ঞানের রীতিকে নবুয়তের রীতির অনুসারী করাই প্রকৃত কর্তব্যকর্ম।
পুলসিরাত সত্য। কিয়ামতের সময় আল্লাহ্ পাক দোজখের উপর একটি সেতু তৈরী করবেন। সেতুটি হবে চুলের চেয়ে চিকন এবং তলোয়ারের চেয়েও ধারালো। পুলসিরাত পার হবার জন্য সবাইকে হুকুম দেওয়া হবে। খাঁটি ইমানদারেরা অতি সহজে সেতু পার হয়ে বেহেশতে প্রবেশ করবেন। কেউ পার হবেন বিদ্যুতের গতিতে, কেউ প্রবহমান বাতাসের গতিতে, কেউ দ্রুতগামী ঘোড়ার গতিতে। মর্যাদার তারতম্য অনুযায়ী এই গতির তারতম্য ঘটবে। এই দুনিয়াতে ধর্ম এবং ন্যায়-বিচারকে পুলসিরাতের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। দোজখীরা পার হতে পারবে না। তাদের পা কেঁপে উঠবে এবং তারা দোজখে পড়ে যাবে।
পুলসিরাতের উপর দিয়ে প্রত্যেককে পার হতে হবে। সকল নবী, রসুল এবং স্বয়ং রসুলে আকরম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও পুলসিরাত অতিক্রম করবেন। তাঁর এই সেতু অতিক্রম প্রকৃতপক্ষে গোনাহ্গার উম্মতের জন্য দয়া ও সহানুভূতি।
এক বর্ণনায় হজরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস (রাদ্বিঃ) বলেন ‘রসুলে আকরম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই হুকুম থেকে পৃথক। তিনি দাঁড়িয়ে থাকবেন এবং সমস্ত উম্মতের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করবেন’।
একজন সাধারণ মুমিনকে লক্ষ্য করেও আগুন ফরিয়াদ করতে থাকবে ‘ হে মুমিন! দ্রুত চলে যাও। তোমার ঈমানের নূর যে আমার জ্বলন্ত শিখাকে নিবু নিবু করে ফেলছে’। একজন সাধারণ মুমিনের অবস্থা যদি এরকম হয়, তবে রসুলে আকরম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অবস্থা কিরকম হবে, তা অনুমান করাও শক্ত। প্রকৃত তত্ত্ব আল্লাহ্ পাকই
হাদিস শরীফে এসেছে ‘আমার শাফায়াত আমার উম্মতের বড় বড় পাপীদের জন্য’। আরও এরশাদ হয়েছে ‘আমার উম্মত রহমতপ্রাপ্ত উম্মত। পরকালে তাদের কোনো শাস্তি নেই’।
শাফায়াতের (সুপারিশের) দরোজা প্রথম উন্মুক্ত করবেন রসুলে আকরম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আর এর ফলে তিনি আল্লাহ্ পাকের দরবারে কতো উচ্চ মর্যাদার অধিকারী, তা সুষ্পষ্ট হয়ে পড়বে। হাশরের ময়দানের আতঙ্কিত ও অস্থির জনতা সুপারিশের আবেদন নিয়ে প্রথমে যাবে হজরত আদম (আঃ) এর কাছে। বলবে, আপনি মানব সম্প্রদায়ের পিতা। আল্লাহ্ পাক আপনাকে নিজ কুদরতে সৃষ্টি করেছেন। বেহেশতে স্থান দিয়েছেন। ফেরেশতারা আপনাকে সেজদা করে সম্মানিত করেছে। সকল জিনিসের নাম আপনার জানা। এই কঠিন দিনে আপনি আমাদের জন্য শাফায়াত করুন। হজরত আদম (আঃ) বলবেন ‘রব্বুল আলামীনের কাছে কিছু বলা আমার শক্তির বাইরে। নিষিদ্ধ বৃক্ষের কাছে যাওয়া এবং গন্দম খাওয়ার ব্যাপারে এখনও আমি লজ্জিত। তোমাদের কাজ হয়তো নূহের দ্বারা হতে পারে’।
হজরত নূহ (আঃ) ও অপারগতা প্রকাশ করবেন। এভাবে অপারগতা প্রকাশ করবেন হজরত ইব্রাহিম (আঃ) হজরত মুসা (আঃ) হজরত ইসা (আঃ)— সবাই। এরপর সবাই একত্রিত হবেন রসুলে আকরম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকটে। তিনি উঠবেন এবং প্রচণ্ড উদ্দীপনা নিয়ে আল্লাহ্ তায়ালার নিকটে সুপারিশের উদ্দেশ্যে সেজদাবনত হবেন। হুকুম হবে, মাথা ওঠান। আপনি যা কিছু চান, সবই পূর্ণ করা হবে। যা কিছু দাবী জানাবেন, মেনে নেয়া হবে’।
রসুলে আকরম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেজদা থেকে মাথা উঠিয়ে গোনাহ্গারদের মাগফিরাতের সুপারিশ করবেন। পুনরায় সেজদায় পড়ে দ্বিতীয় প্রকার পাপীদের জন্য শাফায়াত করবেন। এরপর তৃতীয়বারে সেজদা থেকে মাথা ওঠাবেন তখন, যখন সকল প্রকার গোনাহ্গারকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে। তখন কোরআনে পাকে উল্লেখিত আল্লাহ্ তায়ালার অস্তিত্ব অস্বীকারকারী কাফের-মুশরিক-মুনাফিক ছাড়া আর কেউ অবশিষ্ট থাকবে না।
কোরআনপাকে এরশাদ হয়েছে, হে আমার মাহবুব! হে আমার খাস বান্দা! আমি আপনাকে এতো বিপুল নেয়ামত দান করবো, এতো অসংখ্য রহমত বখশিষ করবো যে, আপনি সন্তুষ্ট হয়ে যাবেন। আপনার কোনো আশা অপূর্ণ থাকবে না।
হে মোহাম্মদ! সবাই আমার সন্তুষ্টির তালাশ করে, আর আমি আপনার সন্তুষ্টির অভিলাষী। সূরা দ্বোহা।
নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলবেন ‘একজন উম্মতও বিনা ক্ষমায় থাকা পর্যন্ত আমি সন্তুষ্ট হবো না’। প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে এই— দয়ার অসীম সমুদ্র আল্লাহ্ তায়ালার রহমতই গোনাহ্গারদের আসল আশা-ভরসা। যেমন তিনি রব্বুল আলামীন (বিশ্বসমূহের প্রতিপালক), তেমনি তাঁর হাবীব রহমাতুলিল আ’লামীন (বিশ্বসমূহের রহমত)।
শায়েখ আবদুল হক মোহাদ্দেছে দেহলভী (রহঃ) বলেন ‘তুমি তাঁর প্রকৃত উম্মত হও। তাঁর কাছে পূর্ণসমর্পিত হও। সমস্ত বাধাবিঘ্ন দূর হয়ে যাবে। অসুবিধা যদি দেখো তবে বুঝবে, এখনো তাঁর সঙ্গে তোমার পূর্ণ সম্পর্ক স্থাপিত হয়নি। সম্পর্ক অটুট হলে কোনো অসুবিধাই থাকবে না। অসংখ্য গোনাহ্ ঈমানের নিকট কিছুই নয়। ঈমানের নূর গোনাহর অন্ধকারে ঢাকা পড়ে না। যার ঈমানী চিন্তা আছে, তার অন্য কোনো চিন্তা
নেই’। হজরত সুফিয়ান সওরী (রহঃ)কে সারা রাত্রি জেগে থাকতে দেখা যেতো। মানুষেরা বলতো ‘কাঁদেন কেনো? প্রফুল্লচিত্ত থাকুন’। তিনি জবাব দিতেন ‘গোনাহ্ যদি পর্বত পরিমাণও হয়, তবুও আল্লাহ্ তায়ালার রহমতের সামনে তা অস্তিত্বহীন। আমিতো এজন্য কাঁদি যে, সঠিক ঈমান নিয়ে পৃথিবী ত্যাগ করতে পারবো কিনা’।
রসুলে আকরম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিয়ামত সম্পর্কে যা কিছু বিবরণ দিয়েছেন, তার সবকিছুকেই সত্য বলে বিশ্বাস করতে হবে। যেমন, পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হওয়া, তওবার দরোজা বন্ধ হয়ে যাওয়া, দাজ্জালের আবির্ভাব, হজরত ইসা (আঃ) এর আকাশ থেকে অবতরণ, ইমাম মেহেদী (আঃ) এর আবির্ভাব ইত্যাদি। তাঁর জানিয়ে দেওয়া সকল হুকুম এবং সংবাদের উপর আস্থা স্থাপন করা অত্যাবশ্যক।
__________________
ইসলামী বিশ্বাস
কৃত: মোহাম্মদ মামুনুর রশীদ
ইসলামী বিশ্বকোষ ও ইসলামিক বই সম্ভার
এপ্সে রয়েছে ২৩০ টি কিতাব
👉https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan
🌬যাজাকাল্লাহু খাইরান
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন