কখন কোন সময় থেকে কা’বায় গিলাফ লাগানো শুরু হয়? এই রীতিটি কে চালু করেন?

 

❏ প্রশ্ন-: কখন কোন সময় থেকে কা’বায় গিলাফ লাগানো শুরু হয়? এই রীতিটি কে চালু করেন?

✍ উত্তর: হিজরতের ২২০ বছর পূর্বে কা’বার ওপর গিলাফ পরানোর রীতি চালু হয়। সর্বপ্রথম তুব্বা আবু কুরব আস‘আদ শাহ হুমাইর কা’বা ঘরকে স্বর্ণাবৃত চাদরের গিলাফ পরান। কা’বার জন্য একটি দরজা ও তালা-চাবিও বানিয়েছিলেন। এই রীতি তার অনুসারীদের মধ্যে প্রচলিত ছিল। তারা চামড়া এবং মিসরীয় কাপড়ের গিলাফ পরাত। এরপর অন্যান্য ভক্তরাও গিলাফের জন্য কাপড় পাঠাত।


কুসাই গিলাফ বাবদ গোত্রসমূহকে বাৎসরিক সহযোগিতা করতে একটি নির্ধারিত অংকের অনুদান ধার্য করে দেন।


ইসলামের পূর্বে এই রীতি ছিল যে, আবু রবিআ‘ বিন মুগিরা এক বছর গিলাফের ব্যবস্থা করতো আর অপর বছর কুরাইশের বিভিন্ন গোত্ররা করতো।


অন্ধকার যুগ ও ইসলাম-পূর্ব যুগের কা’বার সম্মান ও সৌন্দর্য্য-বর্ধনের এই রীতি-নীতি ইসলাম প্রণেতা নবী মুহাম্মদ (ﷺ) ও ঠিক রেখে নিজেই ইয়ামেনী কাপড়ের গিলাফ দ্বারা কা’বা ঘরকে সজ্জিত করেন। তাঁর পরে হযরত আবু বকর, হযরত উমর, হযরত উসমান রাদিআল্লাহু আনহুমও সৌন্দর্য বর্ধনের রীতি বহাল রাখেন। এরপর আবদুল্লাহ বিন যুবাইর (رضى الله تعالي عنه) মিসরীয় কবাতি কাপড় এবং স্বর্ণাবৃত কাপড় দ্বারা গিলাফ টানেন। এ-ভাবে উমাইয়া ও আব্বাসীসহ অন্যান্য খেলাফত যুগে খুব গুরুত্বের সাথে কা’বায় চাঁদর পরানো হত। কেউ এ-কথা বলেননি যে, এই সম্মান ও সৌন্দর্য বর্ধন রীতি অন্ধকার যুগের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, সুতরাং তা জায়েয হবে না। বুঝা গেল, ভালো সর্বদাই ভালো থাকে, আর মন্দ সর্বদা মন্দই হয়। অবশ্য স্পষ্টভাবে শরীয়তের কোন বিধান আসলে ভিন্ন কথা।


রোম বাদশার পক্ষ থেকে খুব শানদার ও ধুমধামের সাথে এই পবিত্র কাজটি করা হত। কুরাইশরা হাতিম ব্যতীত অন্য তিন পাশে একেক গজ করে যে অংশটা ছেড়ে দিয়েছিল মুহিব্বুদ্দিন তবরী শাফেয়ী এর যুগে সে-স্থানে প্রাচীরের নিম্নভাগে ১৬ আঙ্গুল পরিমাণ উঁচু করে টিলা তৈরি করে দেয়া হয়। যাতে সেদিক দিয়ে কেউ যাতায়াত করতে না পারে। দর্শকরা যাতে মনে করে, এটি দেয়ালের ভিত্তি মজবুত থাকার জন্য দেয়া হয়েছে। (মসজিদে হেরেমের ইতিহাস)


আবদুল মালিক বিন মারওয়ান নবী কারীম(ﷺ)   -এর অনুসরণ করেন। আব্বাসীয় খলিফা মাহদী ১৬০ হিজরীতে হজ্ব করার সময় প্রত্যক্ষ করেন যে, কা’বা ঘরের ওপর অসংখ্য চাঁদর ঝুলে আছে। খাদেম-সেবকদের কাছে এই বলে অভিযোগ করলেন, যদি এই অবস্থা চলতে থাকে, তাহলে এগুলোর ভারে তো ছাদের ক্ষতি হবে। তাঁরই আদেশে কা’বার ওপর শুধুমাত্র একটি চাঁদর রাখা হয়। এই নিয়ম এখনও চালু রয়েছে। প্রতি বছর হজ্বের দিন সকালে নতুন চাঁদর পরানোর সময় পুরাতন চাঁদরটি খুলে ফেলা হয়। পুরাতন চাঁদর যদি ফেঁটে-ছিড়ে যায়, সাধারণত তা মক্কার গভর্নর শরীফ হুসাইনের নিকট পাঠিয়ে দেয়া হতো।


যদি হজ্ব জুমার দিন হয়, তাহলে তা বাদশার কাছে পৌঁছিয়ে দেয়া হতো। অবশিষ্ট অস্বর্ণ খচিত কাপড় কা’বার তত্ত্বাবধায়ক শায়খ সিবী নিয়ে নিতেন এবং যে-কোনভাবে তা হাজীগণের হাতে পৌঁছে দিতেন। সুতরাং বাবুস্ সালামের কাছেই এর জন্য নির্দিষ্ট দোকান রয়েছে। গজ প্রতি সাত থেকে পনের রিয়ালে এটি কিনাতে পাওয়া যেত।




❏ প্রশ্ন-৫৫: কা’বা শরীফের ভিত্তি যা ইবরাহীম (عليه السلام) করেছিলেন এবং বর্তমান ভিত্তির মধ্যে কোনো পার্থক্য আছে কিনা?



✍ উত্তর: হ্যাঁ! অবশ্যই আছে। নিম্নোক্ত পরিমাপের ভিত্তিতে উভয়ের মধ্যে পার্থক্য স্পষ্ট হয়ে যাবে।



১. রুকনে হাজরে আসওয়াদ থেকে রুকনে ইরাকী পর্যন্ত ৩২ গজ হযরত ইবরাহীম (عليه السلام) এর ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। আর বর্তমান ভিত্তি হচ্ছে- ২৫ গজ।


২. রুকনে ইরাকী থেকে রুকনে শামী পর্যন্ত ২২ গজ। আর বর্তমান ভিত্তি হচ্ছে-২৪ গজ।


৩. রুকনে শামী থেকে রুকনে ইয়েমেনী পর্যন্ত ৩১ গজ। আর বর্তমান ভিত্তি হচ্ছে- ২২ গজ।


৪. রুকনে ইয়েমেনী থেকে রুকনে হাজরে আসওয়াদ পর্যন্ত ২০ গজ। আর বর্তমান ভিত্তি হচ্ছে- ২১ গজ।

_________________

কিতাবঃ ফতোয়ায়ে আজিজি (২য় খন্ড)

রচনায়ঃ মুহাম্মদ আজিজুল হক আল্-কাদেরী

সূত্রঃ 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন