বিবাহ


আল্লাহ তা‘আলা পৃথিবীর প্রতিটি বস্তুকে জোড়ায় জোড়ায় নারী-পুরুষ করে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন-


 وَمِنْ كُلِّ شَيْءٍ خَلَقْنَا زَوْجَيْنِ


আমি প্রত্যেক বস্তু জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি, যাতে শিক্ষা গ্রহণ কর। ৬১


৬১.সূরা যায়িয়াত, আয়াত: ৪৯


 


অন্যত্র ইরশাদ করেছেন-


سُبْحَانَ الَّذِي خَلَقَ الْأَزْوَاجَ كُلَّهَا مِمَّا تُنْبِتُ الْأَرْضُ وَمِنْ أَنْفُسِهِمْ


পবিত্র তিনি, যিনি যমীন থেকে উৎপন্ন উদ্ভিদকে, তাদেরই থেকে মানুষকে জোড়া জোড়া করে সৃষ্টি করেছেন। ৬২


৬২.সূরা ইয়াসীন, আয়াত: ৩৬


 


মহান আল্লাহ সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও তিনি নারী-পুরুষের মিলনের মাধ্যমেই পৃথিবীতে প্রত্যেক প্রাণীর বংশ বিস্তার করেন। যেভাবে নেগেটিভ ও প্রজেটিভের সমন্বয়ে বৈদ্যুতিক আলো সৃষ্টি হয় তেমনি নর-নারীর মিলনে মানব বংশ সৃষ্টি হয়।



আল্লাহ তা‘আলা নারীজাতি সৃষ্টি করার অন্যতম উদ্দেশ্য পুরুষের একাকীত্ব দূরীকরণ, শান্তিলাভ ও মানব বংশ বিস্তার ইত্যাদি। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন-


 وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَلَكُمْ مِنْ أَنْفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُم ْمَوَدَّةً وَرَحْمَةً


আর এ নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সংগিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তি অর্জন কর, এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। ৬৩


৬৩.সূরা রূম, আয়াত: ২১


 


উপরিউক্ত আয়াতে নর-নারীর দাম্পত্য জীবনের লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে স্ত্রী দ্বারা পুরুষের মনের শান্তি অর্জন। এটা তখন সম্ভবপর যখন উভয়পক্ষ একে অপরের অধিকার সম্পর্কে সজাগ থাকে এবং তা আদায় করে। যে পরিবারে এটা বর্তমান আছে, সেই পরিবারে সৃষ্টির ও বৈবাহিক জীবনের উদ্দেশ্য সফল। যে পরিবারে মানসিক শান্তির অনুপস্থিত সেই পরিবারে আর যাই থাকুক দাম্পত্য জীবনে সাফল্য নেই।



হযরত আদম (عليه السلام) জান্নাতের ন্যায় সুখ-শান্তির চরম স্থানে থাকা সত্ত্বেও মানসিক শান্তির অভাববোধ করেছিলেন এবং নিঃস্ব মনে করেছিলেন। তাই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বাম পাঁজরের হাড্ডি থেকে হযরত হাওয়া (عليه السلام) কে সৃষ্টি করেছেন। এখানে শান্তি দ্বারা যৌনতৃপ্তির শান্তি উদ্দেশ্য নয়। কারণ এটি নর-নারী উভয় অর্জন করে থাকে। এখানে শান্তি দ্বারা নারী থেকে পুরুষ মানসিক শান্তি উদ্দেশ্য। নারী তার কোমল, নাজুক ও নম্র স্বভাব-আচরণের মাধ্যমে স্বামীকে মানসিক শান্তি দান করবে।



তাছাড়া স্বামী-স্ত্রীর যৌবন ঢলে পড়ার পরে বার্ধক্য অবস্থায় তাদের মধ্যে এক অনবদ্য আন্তরিকতার সম্পর্ক গড়ে উঠে যা তাদের শেষ জীবনকে করে তোলে সুমধুর। তাই আয়াতে সেই দিকেই ইঙ্গিত করে বলা হয়েছে


 وَجَعَلَ بَيْنَكُمْ مَوَدَّةً وَرَحْمَةً


অর্থাৎ যাতে করে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্প্রীতি, ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পরস্পর পরস্পরের প্রেম-ভালোবাসা ও বিশ্বাস বড় প্রয়োজন। এটার অভাবে অনেক সময় পারিবারিক জীবন জান্নাতের পরিবর্তে জাহান্নামে পরিণত হয়ে উঠে। পরিশেষে দাম্পত্য জীবন ভেঙ্গে খান খান হয়ে যায়। দুই পরিবারের মধ্যে খুন-খারাবী ও মামলা মোকাদ্দামা আরম্ভ হয়। ফলে বিয়ের বহুমুখী কল্যাণ ও উদ্দেশ্য পণ্ডু হয়ে যায়।



মানুষ হলো আশরাফুল মাখলুখাত তথা সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ বিবেক-বুদ্ধি সম্পন্ন জাতি। তাই পশু-পাখির ন্যায় লাগামহীন ভাবে যৌন মিলনে লিপ্ত হতে পারে না। সামাজিক স্বীকৃতির মাধ্যমে বৈধ পন্থায় বিবাহ বন্ধনের মাধ্যমে নারী-পুরুষের যুগল জীবন বিবাহের মাধ্যমে শুরু হয়। আদি পিতা আদম (عليه السلام) ও আদি মাতা হাওয়া (عليه السلام) থেকে বিবাহ প্রথা শুরু হয়। আল্লাহ তা‘আলা ফেরেশতাদের সাক্ষ্যের মাধ্যমে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহ আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র উপর দুরূদ শরীফ পাঠকে মাহর নির্ধারণ করে তাদের বিবাহ সম্পন্ন করেন।



আল্লাহ তা‘আলা আরো ইরশাদ করেন-


 هُوَ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ وَجَعَلَ مِنْهَا زَوْجَهَا لِيَسْكُنَ إِلَيْهَا


তিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন ও তার থেকে তার সঙ্গিনী সৃষ্টি করেন, যাতে সে তার নিকট শান্তি পায়। ৬৪


৬৪.সূরা আ’রাফ, আয়াত: ১৮৯)।




বিবাহের সংজ্ঞা



বিবাহ শব্দের আরবি প্রতিশব্দ হলো নিকাহ। নিকাহ শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো মিলানো, একত্র করা ও সঙ্গম করা। রূপকভাবে এ শব্দটি বৈবাহিক বন্ধন অর্থেও ব্যবহৃত হয়। কেউ কেউ বলেন, নিকাহ শব্দটি মিলন ও বৈবাহিক বন্ধন উভয় অর্থেই সমানভাবে ব্যবহৃত হয়। যার দ্বারা স্বামী তার স্ত্রীর সাথে মিলনের অধিকার লাভ করে।৬৫


৬৫.আল্লামা ইবনে হাজর আসকালানী র (৮৫২ হি.), খণ্ড,৩



মানবজাতির অস্তিত্ব রক্ষা ও বংশবৃদ্ধির জন্য নারী-পুরুষের যৌনমিলন অপরিহার্য। এই যৌন জীবনকে সুশৃঙ্খল, শান্তিপূর্ণ ও বংশধারার সঠিকত্বের জন্য বৈবাহিক প্রথা অপরিহার্য। হযরত আদম (عليه السلام) ও হযরত হাওয়া (عليه السلام) হলেন আদি মানব দম্পতি। তখন থেকে অদ্যবধি এই বিবাহ প্রথা চলে আসছে। যুগ, জামানা, জাতি, বর্ণভেদে বিবাহের বিভিন্ন প্রথা ও পদ্ধতি চালু ছিল এবং বর্তমানেও চালু আছে। ইসলামের আবির্ভাবের পূর্বে জাহেলী যুগে আরব সমাজে বিবাহের নামে বহু কুপ্রথা ও অপসংস্কৃতি চালু ছিল। ইসলাম সকল কুসংস্কার ও অশ্লীলতার অবসান ঘটিয়ে পূত-পবিত্র ও সুশৃঙ্খল বিবাহ রীতি প্রবর্তন করে।



মানুষ যেহেতু পশু নয়, তাই উচ্ছৃঙ্খলভাবে যত্রতত্র যৌনক্ষুধা নিবারণের অনুমতি দেয়া হয়নি তাকে, বরং নিয়ম-নীতির আলোকে সুশৃঙ্খল পদ্ধতিতে সম্মানজনক পন্থায় কাম-চাহিদা পূরণ ও তা ফলপ্রদ করার পূণ্যময় রীতি প্রণয়ন করেছে শরীয়ত।




বিবাহের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য



বিবাহের লক্ষ্য হচ্ছে-অশ্লীলতা ও ব্যভিচার থেকে নিজেকে সংরক্ষণ করা, অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করার মাধ্যমে ধ্বংস থেকে নারীর সত্ত্বা রক্ষা করা। ঈমানদার সন্তান লাভ করা মানব বংশধারা সংরক্ষণ করা এবং ঘর-সংসার সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার ব্যবস্থা করা।

___________

কিতাব: নন্দিত নারী

লেখক: হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ ওসমান গণি

আরবি প্রভাষক, জামেয়া আহমাদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসা, ষোলশহর, চট্টগ্রাম।

সূত্রঃ 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন