আমলঃ নামাজ প্রসঙ্গ


এ পর্যন্ত বিশুদ্ধ আকিদার বর্ণনা করা হলো। আকিদা বিশুদ্ধ করার পর আসে ফেকাহর নির্দেশাবলী অবগত হওয়ার দায়িত্ব। ফরজ, ওয়াজিব, হালাল, হারাম, সুন্নত, মোস্তাহাব, মাকরূহ, মোবাহ ইত্যাদি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা লাভ করতে হবে। এ সমস্ত এলেম অর্জন করলেই কেবল দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। বরং এলেম অনুযায়ী আমলও করতে হবে।


হযরত মোজাদ্দেদে আলফে সানি (রহঃ) বলেন ‘ফেকাহর কিতাবসমূহ পাঠ করাও জরুরী জানবেন এবং নেক আমল করার যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন। 


‘নামাজ’ দ্বীন ইসলামের স্তম্ব। তাই নামাজের বিষয়ে যৎকিঞ্চিৎ লিখছি। মনোযোগের সঙ্গে শুনুন।


প্রথমতঃ ভালোভাবে ওজু সম্পাদন করতে হবে। প্রত্যেক অঙ্গ তিনবার করে ধুয়ে নিতে হবে, যাতে ‘সুন্নত’ প্রতিপালিত হয়। মাথা মুছবার সময় সমস্ত মাথা মুছতে হবে। কান এবং কাঁধ সাবধানতার সঙ্গে মুছবেন। পায়ের আঙুল খিলাল করার  সময় বাম হাতের কনিষ্ঠা আঙুল দ্বারা  নিচ থেকে উপরের দিকে খিলাল করতে হবে (এরকম করা মোস্তাহাব)।


মোস্তাহাবকে সামান্য ধারণা করবেন না।

‘মোস্তাহাব’ অর্থ আল্লাহ্ তায়ালার প্রিয় কাজ। তাঁর পছন্দনীয় বস্তু। যদি সমস্ত পৃথিবীর বিনিময়েও আল্লাহ্ তায়ালার কোনো প্রিয় বস্তুর সন্ধান পাওয়া যায় এবং ওই কাজ  করার  সুযোগ পাওয়া  যায়, তবে তাকেই যথেষ্ট জানবেন। এর মূল্য ওইরকম, যেমন কোনো ব্যক্তি ভাঙা মাটির পাত্রের বিনিময়ে অতি মূল্যবান মুনিমুক্তা ক্রয় করে। 


যেনো জড়বস্তুর বিনিময়ে প্রাপ্ত হয় রূহ বা আত্মা।পূর্ণরূপে পবিত্র হয়ে এবং উত্তমরীতিতে ওজু সম্পাদনের পর মুমিনের মেরাজতুল্য ‘নামাজ’ পাঠের সংকল্প বা নিয়ত করবেন। খেয়াল রাখবেন, যেনো ফরজ নামাজ জামাত ছাড়া না পড়া হয়। ইমামের সঙ্গে প্রথম তাকবীরের সৌভাগ্য যেনো হাতছাড়া না হয়। মোস্তাহাব সময়ের মধ্যে নামাজ পাঠ করা উচিত। 


সুন্নত পরিমাণ ক্বেরাত বা কোরআন আবৃত্তি করা আবশ্যক। রুকু ও সেজদা ধীর ও শান্ত ভাবে সম্পাদন করবেন, যেহেতু অধিকাংশের মতে এরকম করা ফরজ কিংবা ওয়াজিব। কেয়াম বা দণ্ডায়মান হওয়ার সময় সোজা দাঁড়াবেন, যেনো অস্থিসকল নিজ নিজ স্থানে স্থিত হয়।


রুকু থেকে দাঁড়াবার পর কিছুক্ষণ স্থির থাকা আবশ্যক। তা-ও প্রতিপালন করবেন। এরকম করা ফরজ, ওয়াজিব অথবা সুন্নত— এ সম্পর্কে কিঞ্চিৎ মতভেদ আছে। একইভাবে সেজদাদ্বয়ের মধ্যে বসার সময়ও কেয়ামের মতো কিছুক্ষণ শান্ত থাকা প্রয়োজন। রুকু এবং সেজদার মধ্যে তসবীহ্ পড়বার সর্বনিম্ন সংখ্যা তিনবার। ঊর্ধ্ব সংখ্যা সাত থেকে এগারো বার। সংখ্যার ব্যাপারেও মতভেদ আছে। ইমাম মোক্তাদীগণের অবস্থা অবগতিতে রেখে তসবীহ্ পাঠ করবেন। 


একা নামাজ পাঠকারী শক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যদি সর্বনিম্ন সংখ্যক তসবীহ্ পাঠ করে, তবে তা লজ্জার বিষয়। একান্ত অক্ষম হলে অন্ততপক্ষে পাঁ অথবা সাতবার পাঠ করা উচিত। সেজদা করবার সময় শরীরের যে অঙ্গ মাটির কাছাকাছি তা প্রথমে মাটিতে স্থাপন করতে হবে। সুতরাং, প্রথমে দুই হাঁটু, তারপর দুই হাত, তারপর নাক, তারপর ললাট। হাঁটু এবং হাত স্থাপনের সময় ডান হাঁটু ও ডান হাত কিঞ্চিৎ আগে মাটিতে স্থাপন করবেন। 


সেজদা থেকে উঠবার সময় শরীরের যে অঙ্গ আকাশের দিকে সেই অঙ্গ আগে ওঠাতে হবে। অতএব আগে ওঠাতে হবে কপাল (তারপর নাক, হাত ও হাঁটু)। কেয়াম অবস্থায় সেজদা দেওয়ার স্থানে দৃষ্টিপাতকে স্থিরনিবদ্ধ রাখবেন (কোনো কিছুকে একত্রে সেলাই করে রাখলে তা যেমন স্থির থাকে)। রুকুর সময় দুই পায়ের মধ্যস্থলে, সেজদার সময় নাকের অগ্রভাগে এবং উপবেশনকালে দুই হাতে অথবা কোলে দৃষ্টিকে নিবদ্ধ রাখবেন। এরূপ দৃষ্টিনিবদ্ধতা রক্ষা করতে পারলে মনোযোগের সঙ্গে নামাজ পাঠ করা সম্বব হবে এবং অন্তরে নম্রতাও অর্জিত হবে। নবীয়ে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এরকম বর্ণিত হয়েছে।


আবার রুকুর সময় হাতের আঙুল ফাঁক করে রাখা এবং সেজদার সময় মিলিত রাখাও সুন্নত। এর প্রতিও সতর্কতা অবলম্বন করবেন। আঙুল পৃথক রাখা এবং একত্রিত রাখা বিনা কারণে নয়। নিশ্চয়ই এরকম আমলের উপকারিতা আছে, যার প্রতি লক্ষ্য করে সাহেবে শরা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরকম নির্দেশ দিয়েছেন। 


আমাদের জন্য তাঁর অনুসরণ তুল্য উপকার কোনোকিছুতেই নেই। ফেকাহের কিতাবসমূহে এসকল বিষয়ের বিস্তৃত বিবরণ লিপিবদ্ধ রয়েছে। এ স্থলে এর উল্লেখ ফেকাহের নির্দেশানুযায়ী আমলের প্রতি উৎসাহদান মাত্র। আল্লাহ্ পাক আমাদেরকে এবং আপনাদেরকে নবীয়ে রহমত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উসিলায় ইসলামের আকিদা-বিশ্বাস দুরস্ত করবার পর শরিয়তের নির্দেশানুযায়ী নেক-আমল করবার তওফীক বা সুযোগ প্রদান করুন। আমিন’।

________________

ইসলামী বিশ্বাস

কৃত: মোহাম্মদ মামুনুর রশীদ

ইসলামী বিশ্বকোষ  ও ইসলামিক বই সম্ভার

এপ্সে রয়েছে ২৩০ টি কিতাব

👉https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan

🌬যাজাকাল্লাহু খাইরান

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন