বারো মাসের গণনা প্রথা কখন হতে শুরু হয়?

 

❏ প্রশ্ন-১৫১: বারো মাসের গণনা প্রথা কখন হতে শুরু হয়?


✍ উত্তর: শাহরুন শব্দের অর্থ হল মাস। এর বহুবচন হচ্ছে শুহুর বা আশহুর। মুসলমানদের নিকট মাসের সংখ্যা হচ্ছে বারোটি। তন্মধ্যে চারটি মাস হচ্ছে নিষিদ্ধ মাস তথা শিষ্টাচার ও জননিরাপত্তার মাস। এগুলোতে যুদ্ধ করা নিষিদ্ধ।

কোরআন মজিদে বর্ণিত রয়েছে,

إِنَّ عِدَّةَ الشُّهُورِ عِنْدَ اللهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا فِي كِتَابِ اللهِ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ .



অর্থাৎ যে দিন আল্লাহ তা‘আলা আসমান-জমিন সৃষ্টি করেছেন তখন হতে আল্লাহ'র নিকট মাসের গণনা বা সংখ্যা কিতাবুল্লাহ তথা লওহে মাহফুজে বারো মাস লিপিবদ্ধ আছে। তন্মধ্যে চারটি মাস হচ্ছে শিষ্টাচার ও জননিরাপত্তার মাস। শিষ্টাচার ও জন নিরাপত্তার মাস দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে জিলক্বদ, জিলহজ্ব, মহররম ও রজব।  


211. সূরা তাওবা, আয়াত: ৩৬।





❏ প্রশ্ন-১৫২: আরববাসীগণ নিজেদের চান্দ্র মাসের কী কী নাম রেখেছিলেন?



✍ উত্তর: আরববাসীগণ নিজেদের চান্দ্র মাসের নাম রেখেছিলেনঃ তাতিক, নুফাইল, তালিক, আছাখ, আসাখ, হালাক, তারহিব (রজব), কাসাজ, যাহের, নুত, হরফ ও লাফিস। তাতিক দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে মুহররম এবং নুফাইল দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে সফর। অন্যান্য মাসসমূহ এর ওপর অনুমান করতে হবে। এরপর আরববাসীগণ নিজেদের মাসসমূহের জন্য ওই নাম নির্ধারণ করলেন যা বর্তমানে প্রসিদ্ধ অর্থাৎ মুহররম, সফর, রবিউল আউয়াল, রবিউল উখরা, জুমাদাল উলা, জুমাদাল উখরা, রজব, শা’বান, রমযান, শাওয়াল, জিলক্বদ ও জিলহজ্ব।



মুহররম: মুহররম শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে নিষিদ্ধ। যেহেতু আইয়ামে জাহেলিয়াতে এই মাসে যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষিদ্ধ ও হারাম ছিল, তাই মাসটির নামকরণ করা হল মুহররম।



সফর: সফর শব্দটি ‘সিফির’ শব্দ হতে গঠিত। এর অর্থ হচ্ছে শূন্য। যেহেতু এই মাসটি আসে মুহররমের পর এবং হুযূর   এর আবির্ভাবের পূর্বে মুহররম মাসে যুদ্ধ নিষিদ্ধ ছিল আর আরবের লোকেরা এ মাসে যুদ্ধ করার জন্য বের হতো এবং তাদের ঘর-বাড়ি খালি অবস্থায় রেখে যেতো, তাই এই মাসটির নামকরণ করা হলো সফর। কেউ কেউ বলেন, এ মাসটির নামকরণ করার সময়টি ছিল হেমন্তকাল। এই ঋতুতে গাছের পত্রপল­ব হলুদ বর্ণ ধারণ করে। তাই এ মাসটির নামকরণ করা হলো সফর। এমতাবস্থায় সফর শব্দটি গঠিত হবে সাফরুন শব্দ হতে। এর অর্থ হচ্ছে হলুদ বর্ণ। হানাজাতুত তারাব গ্রন্থ প্রণেতা লিখেন, সফর মাসে আরববাসীগণ নিজেদের ঘর বাড়িকে হলুদ বর্ণে বর্ণিল করতো। কেননা তারা এ মাস হতে যুদ্ধে যাবার ইচ্ছা পোষণ করতো।



রবিউল আউয়াল: যেহেতু এ মাসটির নামকরণ করার সময়টি ছিল বসন্তকালের প্রারম্ভকাল, তাই মাসটিকে এ নামে নামকরণ করা হলো।



রবিউল আখর: ‘খা’ বর্ণে যবর বিশিষ্ট। মনে রেখো, সাধারণ জনগণ যেরূপ ‘রবিউস সানি’ ব্যবহার করে তা সঠিক নয়। কেননা অধিকাংশ আরববাসী ‘রবিউল আখর’ ব্যবহার করে। কারো কারো মতে, ‘ছানি (দ্বিতীয়)’ শব্দটির ব্যবহার ওই স্থানেই করা হয় যেখানে ‘ছালেছ’ (তৃতীয়) শব্দটি পরবর্তীতে থাকে। যেহেতু এ মাসটির নামকরণ করার সময়টি ছিল বসন্তকালের শেষ সময়, তাই এই মাসটির নামকরণ করা হলো রবিউল আখর।



জুমাদাল উলা: সাধারণ লোকের মুখে এ মাসটির নাম জুমাদাল আউয়াল বলে শুনা যায়। তা ভুল ও সঠিক নয়, কেননা জুমাদা শব্দটি স্ত্রীলিঙ্গ বাচক শব্দ, কারণ শব্দটির শেষে রয়েছে আলিফে মাকছুরা, তাই এর বিশেষণও আউয়াল শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ উলা ব্যবহার করতে হবে। যাতে বিশেষ্য ও বিশেষণের মধ্যে পুংলিঙ্গ ও স্ত্রীলিঙ্গ বিষয়ক বিধানের সমন্বয় সাধিত হয়। যেহেতু মাসটির নামকরণ করা হয় এমন মৌসুমের শুরুতে যখন পানি জমাটবদ্ধ হয়ে যেতো, তাই মাসটির নামকরণ করা হলো জুমাদাল উলা।



জুমাদাল উখরা: আরবগণ জুমাদাল উখরা বা জুমাদাল আখেরাহ ব্যবহার করে। আর জুমাদাস ছানি নামটি যেরূপ প্রসিদ্ধ আছে তা কিন্তু সঠিক নয়। যেহেতু এ মাসটির নামকরণ করা হয় এমন মৌসুমের বিদায়লগ্নে যখন পানি জমাটবদ্ধ হয়ে যেতো, তাই মাসটির নামকরণ করা হলো জুমাদাস ছানি।



রজব: ‘রা’ ও ‘জিম’ বর্ণে যবর বিশিষ্ট। এই শব্দটি ‘তারজিব’ শব্দ হতে গঠিত। যার অর্থ হচ্ছে সম্মান ও মহান। যেহেতু আরবের লোকেরা এ মাসটিকে ‘শাহার’ বলতো এবং সম্মান করতো, তাই এ নামে মাসটির নামকরণ করা হলো। হুযূর   বলেন, রজব হচ্ছে জান্নাতের একটি হ্রদ যার পানি মধুর চেয়ে সুমিষ্ট এবং বরফের চেয়ে সাদা। যে ব্যক্তি এ মাসে রোযা রাখবে কিয়ামতের দিন তাকে ওই হ্রদ হতে পানি পান করানো হবে।



শা‘বান: যেহেতু এ মাসে অপার কল্যাণ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে এবং জগতের যাবতীয় নির্ধারিত বিষয়াবলী আলাদা হয়ে পড়ে, তাই এ নামে মাসটির নামকরণ করা হলো।



রমযান: তিনো বর্ণে যবর বিশিষ্ট শব্দটি ‘রামাদুন’ শব্দ হতে গঠিত। এর অর্থ জ্বালানো। এটি باب ضرب এর অন্তভুর্ক্ত। যেহেতু এ মাসটি পাপসমূহ পুড়িয়ে দেয়, তাই এ নামে মাসটির নামকরণ করা হলো কিংবা রমযান শব্দটি নামবাচক বিশেষ্য যা রামাদাউন শব্দ হতে গঠিত। রামাদাউন বলা হয় জ্বলন্ত ভূমিকে। এ মাসে প্রচন্ড গরম পড়ে। তাই এ নামে মাসটির নামকরণ করা হলো।


ওলামায়ে কেরাম বলেন, মাহে রমাদানকে কেবল রমাদান বলা জায়েয নয়। কেননা হাদিস শরীফে রয়েছে যে, মাহে রামাযানকে কেবল রামাযান বলো না। কেননা এটা আল্লাহর নাম। বরং এভাবে বলো, শাহরু রামাযান অর্থাৎ আল্লাহর মাস।



শাওয়াল: শাওয়াল শব্দটি ‘শাওলুন’ শব্দ হতে গঠিত, যার অর্থ স্থানান্তরিত হওয়া। যেহেতু এ মাসে আরবের লোকেরা ভ্রমণ ও শিকারে যেতো এবং ঘরবাড়ির বাইরে চলে যেতো, তাই এ নামে মাসটির নামকরণ করা হলো। কিংবা শব্দটি ‘শুলুন’ শব্দ হতে গঠিত যার অর্থ হচ্ছে উটের লেজ তোলা বা উঠানো। এটি باب نصر এর মাসদার। এ মাসে উটের যৌন চাহিদা বেড়ে যায়।



জিলক্বদ: যেহেতু এ মাসটি পুরোপুরি একটি নিষিদ্ধ মাস, তাই আরবগণ এ মাসে যুদ্ধ-বিগ্রহ হতে বিরত থাকে। এ কারণে এই নামে মাসটির নামকরণ করা হলো।



জিলহজ্ব: যেহেতু এ মাসে হজ্ব অনুষ্ঠিত হয়, তাই মাসটির নামকরণ করা হলো জিলহজ্ব।


212. ইসলামী মা’লুমাত, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা নং- ১২৪১, মৌলভী মাহবুব আলম।

________________

কিতাবঃ ফতোয়ায়ে আজিজি (২য় খন্ড)

রচনায়ঃ মুহাম্মদ আজিজুল হক আল্-কাদেরী

সূত্রঃ 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন