সায়্যিদুনা জাবির বিন আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه)’র আক্বিদা
খানার উপর দো‘আ চাওয়া এবং খানার মধ্যে বরকত-
সায়্যিদুনা হযরত জাবির (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন যে, যখন (খন্দক) গর্ত খনন করা হল তখন আমি রাসূল (ﷺ)’র মধ্যে অধিক ক্ষুদার প্রভাব দেখলাম।
আমি আমার পরিবারের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম যে, তোমার কাছে খাওয়ার কিছু আছে? কেননা, আমি রাসূল (ﷺ)’র মধ্যে অধিক ক্ষুধার প্রভাব দেখেছি।
তখন তিনি একটি থলে বের করলেন, যার মধ্যে চার কেজি যব ছিল, আর আমার কাছে একটি গৃহপালিত ছাগল ছিল। আমি বকরিটিকে জবেহ করলাম আর আমার বিবি আটা পিসতেছে। তিনিও আমার সাথে সাথে কাজ শেষ করলেন। আমি ছাগলের গোশত কেটে ডেকসির মধ্যে ঢেলে দিলাম।
অতঃপর আমি রাসূল (ﷺ)’র খিদমতে যাচ্ছিলাম, তখন আমার বিবি আমাকে বললেন, আমাকে রাসূল (ﷺ) এবং সাহাবায়ে কিরাম (رضي الله عنه)’র সামনে লজ্জিত করবেন না। আমি রাসূল (ﷺ)’র খেদমতে উপস্থিত হলাম এবং তাঁর কান মুবারকে চুপে চুপে বললাম, হে রাসূল (ﷺ)! আমরা একটি ছাগলের বাচা জবেহ করেছি এবং এক সা যব পিসেছি যেগুলো আমাদের কাছে ছিল। আপনি কয়েকজন সাহাবাকে নিয়ে আমাদের এখানে তাশরীফ নিবেন।
তখন রাসূল (ﷺ) উঁচু আওয়াজে বললেন-
يَا أَهْلَ الخَنْدَقِ إِنَّ جَابِرًا قَدْ صَنَعَ سُؤْرًا، فَحَيَّ هَلًا بِكُمْ
-‘‘হে খন্দকবাসী, জাবির তোমাদেরকে দাওয়াত দিয়েছেন। সুতরাং তোমরা চলো।’’
রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করলেন-
لاَ تُنْزِلُنَّ بُرْمَتَكُمْ، وَلاَ تَخْبِزُنَّ عَجِينَكُمْ حَتَّى أَجِيءَ
-‘‘আমি না আসা পর্যন্ত ডেকসি আনবে না এবং রুটিও পাকাবে না।’’
অতঃপর আমি আসলাম এবং রাসূল (ﷺ)ও তাঁর সাহাবাদের নিয়ে আসলেন। আমি আমার পারিবারের কাছে গেলে, তিনি বললেন, তোমারই বদনাম ও অসম্মান হবে। আমি বললাম, তুমি যে রকম আমাকে বলেছ, আমি সে রকমই করেছি। অতঃপর পিসনকৃত আটা বের করলেন।
فَبَصَقَ فِيهِ وَبَارَكَ
-‘‘রাসূল (ﷺ) এর মধ্যে থুথু মোবারক দিলেন এবং বরকতের জন্য দোয়া করলেন।’’
অতঃপর ডেকসির মধ্যে থুথু মোবারক দিলেন এবং বরকতের জন্য দোয়া করলেন, তারপর বললেন, রুটি বানানোর জন্য। আরেকজনকে ডাক। আর তোমরা দুজনে মিলে রুটি বানাও। আর ডেকসির থেকে তরকারি পরিবেষণ কর কিন্তু ডেকসি চুলা থেকে নামাবে না।
وَهُمْ أَلْفٌ، فَأُقْسِمُ بِاللَّهِ لَقَدْ أَكَلُوا حَتَّى تَرَكُوهُ
সাহাবায়ে কিরাম ছিলেন এক হাজার, আল্লাহর শপথ, তাঁরা সবাই খেয়েও হুবহু অবশিষ্ট রেখেছিলেন। আর যে সময় তিনি পুনরায় আসলেন আমাদের ডেকসিটি উতরানো ছিল এবং আমাদের পিসনকৃত আটাগুলো প্রথমবার যেভাবে ছিল সেভাবেই রয়ে গেল (সুবহানাল্লাহ!)। ১৫০
{১৫০. সহীহ মুসলিম শরীফ, ৩/১৬১০ পৃ. হা/২০৩৯, ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, ৫/১০৮ পৃ: হা/৪১০২, ইমাম হাকেম, আল-মুস্তাদরাক, ৩/৩২ পৃ. হা/৪৩২৪, ইমাম ইবনে আছির, জামেউল উসূল, ১১/৩৫৩ পৃ. হা/৮৯০৯, খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ৩/১৬৪৫ পৃ. হা/৫৮৭৭}
আক্বিদা
খাবার সামনে নিয়ে দো‘আ চাওয়া বৈধ। সামান্য জিনিসকে বেশি করা এটা প্রিয় নবী (ﷺ)’র মু’জিযা। অনুরূপ রাসূল (ﷺ)’র এই জ্ঞান হওয়া যে, হযরত জাবির (رضي الله عنه)’র ঘরের মধ্যে সমস্ত সাহাবাদের খাওয়ার জন্য ব্যবস্থা করা হয়নি, এরপরেও সকল সাহাবাদেরকে যাওয়ার জন্য আদেশ দেয়া এবং এটাও বলা যে, আমি না আসা পর্যন্ত ডেকসি আনবে না এবং আটা রুটিও আনবে না।
এটা স্পষ্টভাবে বুঝা গেল যে, রাসূল (ﷺ) জানতেন যে, এই গোশত এবং রুটিগুলো দ্বারা সমস্ত সাহাবাদের জন্য ভালভাবেই হয়ে যাবে। আর এটা এমন জ্ঞান যা ইলমে গায়বের সাথে সম্পর্ক রাখে। সুতরাং এভাবেই হয়েছে। হযরত জাবের (رضي الله عنه) বলেন, সৈন্য ছিল প্রায় এক হাজার মুজাহিদ।
____________________
আকাইদে সাহাবাহ
(সাহাবায়ে কিরামদের সাথে সুন্নি আক্বিদার সাদৃশ্য)
মূল:আল্লামা আবুল হামিদ মুহাম্মদ যিয়াউল্লাহ
ক্বাদেরী আশরাফী (رحمة الله)
বঙ্গানুবাদ: মাওলানা হাফেয মুহাম্মদ আতিকুর রহমান
সূত্রঃ 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন