মালফুজাত প্রসঙ্গ

 

মালফুজাত প্রসঙ্গঃ

১। মালফুজাত নং-২৩-নামায শেষে আল্লাহর দরবারে এক বুজুর্গের প্রার্থনা ছিল,' আল্লাহ যেন দ্বীনের সাহায্যকারীকে সাহায্য করেন এবং বেইজ্জতকারীকে বেইজ্জত করেন। অথচ ইহার ব্যখ্যায় ইলিয়াস সাহেব বলেছেন-' দ্বীনের সাহায্য যারা করে না তাদের জন্য মারাত্বক বদদোয়া রয়েছে।


মন্তব্য-আল্লাহর হুকুম আহকাম মানাই আমাদের শরয়তের নির্দেশ। আর দ্বীনের সাহায্য', করতে পারলে ভালো, না করতে পারলে মারাত্বক বদদোয়া' রয়েছে বা অভিশাপের ভাগী হতে হবে-এমন কথা আমাদের শরীয়তে আছে কিনা সন্দেহ। দ্বীনের সাহায্য করা তাে আম ভাবে সবার পক্ষে সম্ভব নয়।



২। মালফুজাত নং-৩০-ইহাতে মৌ: ইলিয়াস সাহেব বুজুর্গানে। দ্বীনদের সম্বদ্ধে কটাক্ষ করে বলেন যে,"এসব বুজুর্গানের উপর এই কাজের (তবলীগে ইলিয়াসীর) পুরা হাকিকত এখনাে প্রকাশ পায় নাই"এবং"তারা (বুজুর্গানে দ্বীন গণ) দ্বীনের খাস খাদেম তাই শয়তান আমাদের চেয়ে তাদের বড় শত্রু"।



মন্তব্যঃ এমন উক্তি আওলিয়াকেরামদের জন্য খুবই অপমানজনক।



৩। মালফুজাত নং-৪০-আমাদের ধর্মীয় বিধানে মুসলমানদের জন্য জানমালের কোরবাণী অপরিহার্য। কারণ আল্লাহ নিজেই ফরমান যে, তিনি জান্নাত বিক্রি করে দিয়েছেন, মুমিনদের জান-মালের বিনিময়ে (সূরা-তওবা: ১১১)। এই কোরবাণীর প্রেক্ষিতে ইলিয়াস সাহেবের ব্যাখ্যা' জানের কোরবাণী হলাে আল্লাহর জন্য নিজের ঘর বাড়ী ছাড়া, আর মালের কোরবাণী হলাে তাবলিগী সফরের সময় নিজের যাবতীয় খরচ নিজেই বহন করা।



মন্তব্যঃ জান-মাল কোরবাণীর ক্ষেত্রে এ ব্যাখ্যা আমাদের শরীয়তে গ্রহনযােগ্য নয় ; বরং তার মনগড়া।



মালফুজাত নং-৪২-"মুসলমান দুই প্রকার। তৃতীয় কোন প্রকার নেই। প্রথমত: যারা আল্লাহর রাস্তায় (তাবলীগে) বের হয়ে যাবে। দ্বিতীয়ত: যারা তাদের সাহায্য করবে।"মন্তব্য-এর অর্থ দাঁড়ালাে যারা তাবলীগে যাবে এবং যারা তাদেরকে সাহায্য করবে, তারা ছাড়া অন্যরা মুসলমানই নয়। তা হলে বুঝা যায় মেওয়াতীর পিতাসহ পূর্ববর্তী সকল মেওয়াতীর তাবলীগের মুসলমান আবিস্কারের পরবর্তীতে যারা তাবলীগ করেনি তারা সবাই কাফেরে পরিনত হয়ে গেছে। (নাউযুবিল্লাহ)। এটা পরিত্র কোরআনের পরিপন্থী। কারণ, পবিত্র কোরআনে আল্লাহ এরশাদ করেছেন যে, সবাইকে একসঙ্গে জ্ঞানার্জন ইত্যাদির জন্য বের হয়ে যাওয়া সমীচিন হবে না। (সুরা তওবা: ১২২)



মালফুজাত নং-৫০-"তােমাদিগকে আম্বিয়া কেরামদের মত মানুষের উপকারের জন্য বাহির করা হয়েছে।



মন্তব্য-উম্মতকে নবীদের সাথে তুলনা করা সম্পূর্ণ কুরআন হাদীস ও ইসলাম বিরােধী। এই আক্বিদার বিশ্বাসকারীদের ঈমান থাকবে না। কারণ নবীজি (ﷺ) নিজেই বলেছেন-"আমি তােমাদের কারাে মত নই।' (বুখারী, ১ ম খন্ড, পৃ: ২৬৪, মুসলিম, ১ ম খন্ড, পৃ: ৩৫৩)



মালফুজাত নং-৫১:"যাকাতের মর্যাদা হাদিয়ার নিচে, এ কারণেই হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম এর জন্য সদকা হারাম ছিল, হাদিয়া হারাম ছিল না।"মন্তব্য-যাকাত হলাে ইসলামের ৫ টি রােকনের একটি এবং ইহা ফরজ। আদায় না করলে গুনাহগার হবে। পক্ষান্তরে। হাদিয়া হলাে মােস্তাহাব, না দিলে কোন গুনাহ হবে না। কিন্তু ইলিয়াস সাহেবের মতে হাদিয়ার মাধ্যমে মুসলমানদের অন্তরকে সন্তুষ্ট করা যাকাতের মাধ্যমে মালের ময়লা পরিষ্কার। করার চাইতে উত্তম। সম্ভবত এই কারণেই তিনি যাকাতকে তার ছয় উসূল থেকে বাদ দিয়েছেন। তাই যাকাতের বিষয়ে। ইলিয়াসী আকিদা ইসলাম বিরােধী। যারা যাকাতের উপর হাদিয়ার স্থান দেয়, তারা কেমন মুসলমান হবে ?



৭। মালফুজাত নং-৫৬:"তাবলীগের তরিকা হবে আমার আর তালীম হবে মৌ: আশরাফ আলী থানভীর।



মন্তব্যঃ ইসলামী তাবলীগের তরিকা ও তালীম হুজুর (ﷺ) স্বয়ং আল্লাহ্ হতে প্রাপ্ত হয়েছেন। আর ইলিয়াসী তাবলীগের তরিকা হলাে তার নিজের এবং তালীম হলাে মৌ: আশরাফ আলী থানভীর এমন উক্তির মাধ্যমে ইলিয়াস সাহেব তার দলকে ইসলামের বহির্ভূত একটি দল/ আকিদা বলে স্বীকার করে নিলেন মনে হয়। তাছাড়া, মৌঃ আশরাফ আলীর তালীম বা শিক্ষায় কুফরী পর্যন্ত পাওয়া যায়, আর ইলিয়াসী তরীকায় রয়েছে। মসজিদ অবমাননা আর ইসলাম বিরােধী বিভিন্ন পদ্ধতি।



৮। মালফুজাত নং-৯৩ ;"এই তাবলীগী সফর জিহাদের বিশেষত্ব ও বরকত নিজের মধ্যে রাখে। সেই জন্য ঐ পুরস্কারও আশা। করা যায়। যদিও ইহা যুদ্ধ নয়, এই কাজ জিহাদেরই একটি অংশ নিশ্চয়ই বটে। ইহা (তাবলীগী সফর) কোন কোন হিসাবে কাটাকাটি-রক্তারক্তি হতে যদিও নিম্নস্তরের, কিন্তু আবার কোন কোন হিসাবে উহা (জিহাদ) হতে উচ্চস্তরের।"(মৌ: সাখাওয়াতুল্লাহ কর্তৃক অনুবাদকৃত মালফুজাত নং-৯৩)



মন্তব্যঃ ইলিয়াস সাহেব আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করার চাইতে তার আবিস্কৃত তাবলিগী কার্যক্রম উচ্চস্তরের বলে প্রমাণের চেষ্টা করেছেন, যা ঈমান বিনষ্টকারী ও কুরআন বিরােধী। অথচ আল্লাহ ফরমান-"(যারা) নিজেদের জান ও মাল দিয়ে জিহাদ করেছে, তাদের বড় মর্যাদা রয়েছে আল্লাহর নিকট আর তারাই সফলকাম"(সূরা-তওবা: ২০)। একই সূরার ১০৭ নং আয়াতের তাফসিরে জানা যায় যে মুনাফিকরা মুসলমানদের সাথে জিহাদে অংশ গ্রহণ না করে নিজেরা মসজিদে কুবার নিকট মসজিদে দ্বিরার নির্মাণ করে হুজুর (ﷺ)-কে তা উদ্বোধন ও সালাত আদায় করার দাওয়াত দেয়। এই মসজিদ তৈরীর উদ্দেশ্য ছিল মুমিনদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা-এ কথা আল্লাহ্ জানিয়ে দিলে হুজুর (ﷺ) সাহাবাদেরকে ঐ মসজিদ ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ দেন। তাবলীগীদের মারকাজ মসজিদ তাে দ্বিরার মসজিদেরই নব্যরূপ মনে হয়।



৯। মালফুজাত নং-১১১ ; (৭ ম কিস্তি)-"আম্বিয়া আলাইহিমুচ্ছালাম গণ যদিও মাসুম (নিষ্পাপ) তথাপিও তারা যখন তালীম ও হেদায়াতের তাবলীগের জন্য সাধারণ লােকদের সাথে মেলামেশা করতেন তখন তাদের অন্তর সমূহে সেই সাধারণ লােকদের অন্তরের ময়লা ও আবর্জনা প্রতিফলিত হত।"



মন্তব্য-নবীগণ যখন নিস্পাপ, তখন তাদের অন্তরে আবার অন্যের অন্তরের ময়লা ও আবর্জনা কেমন করে প্রতিফলিত হবে ? তারা তাে নিজেরাই অন্যের অন্তরের ময়লা দূর করার জন্য প্রেরিত হয়েছেন। এটা নবীগণের শানে জঘন্য বেয়াদবী।



১০। মালফুজাত নং-১১৩:"যাকাত ও সদকা তাে হলাে পাতিলের ময়লা ও দূষিত অংশের মত, ইহা বের করে ফেলা জরুরী। হাদিয়া হলাে তৈরী খাবারে খুশবু সুগন্ধি ঢেলে দেয়া।"



মন্তব্যঃ যাকাত ইসলামের ০৫ রােকনের একটি এবং ইহা আদায় করা ফরজ, না করলে গুনাহ। পক্ষান্তরে হাদিয়া হলাে মােস্তাহাব, না করলে গুনাহ হবে না। প্রকৃতপক্ষে যাকাত এজন্য যে, যাকাত মুসলমানের জান-মালের। ময়লা/ আবর্জনা ভস্মিভূত করে তা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ও হালাল করে থাকে। অথচ ইলিয়াস সাহেব যাকাতের উপর হাদিয়ার প্রাধান্য দিয়েছেন এবং তার ছয় উসূলের মধ্যে যাকাত বাদ দিয়েছেন।



১১। মালফুজাত নং-১৪০:"তাবলীগের কাজ তিন দিন দাও, পাঁচ দিন দাও অথবা সাত দিন দাও-এসব কথা ছেড়ে দাও। শুধু এ কথাই বলতে থাক যে, ইহাই একমাত্র রাস্তা, যে যত বেশী করবে, ততই বেশী পাবে। এর কোন সীমা নাই শেষ নাই।”



মন্তব্যঃ ইলিয়াস সাহেবের আবিস্কৃত রাস্তাই কি ইসলামের একমাত্র রাস্তা। তাহলে কি ইলিয়াস সাহেবের পূর্বেকার মহান বুজুর্গানে দ্বীন সহ সকল মুমিনরাই যারা ইলিয়াসী তাবলীগ করেননি বা করছেন না, তারা সবাই বিপথগামী ? (নাউযুবিল্লাহ)



১২। মালফুজাত নং-১৭৯, মৌ: ইলিয়াস সাহেব বলেন,' আমাদের এই তাবলিগী আন্দোলন দুশমনকে খােশ করে ও দোস্তকে নাখােশ করে। যার মন চায় আসিতে পারে।' অথচ ইসলামী তাবলিগী দাওয়াত ও আন্দোলন দোস্তকে (মুমিনদেরে) খােশ দুশমনকে (কাফেরদেরে) নাখােশ করে। তবে কি ইলিয়াসী তাবলীগ দুশমন তথা কাফেরদেরে খােশ করার জন্য ? ১৩। মালফুজাত নং-২০৯: দ্বীনের দাওয়াতের গুরুত্ব বর্তমান জামানায় এতই জরুরী যে, যদি কোন ব্যক্তি নফল নামাজেরত অবস্থায় দেখে যে, একজন নতুন মানুষ এসেছে এবং ফিরে যাচ্ছে, পুনরায় তাকে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই,"তবে আমার মতে মধ্যখানে নামাজ ভেঙ্গে ঐ ব্যক্তির সাথে। দ্বীনি কথাবার্তা সেরে নেয়া উচিত।"


মন্তব্য-ইসলামী শরীয়তে কথা বলার জন্য নামাজ ভাঙ্গার অনুমতি নেই। ইলিয়াস সাহেব নিজেই বলেছেন যে,"আমার মতে"-অর্থাৎ এটা তার মনগড়া আকিদা/ আবিষ্কার। কাজেই শরীয়তের পরিপন্থী হেন আদেশ ও মতবাদ কতটুকু বিশ্বাস ও প্রতিপালন করা উচিত তা নিজেই একবার ভেবে দেখুন।

__________________

কিতাবঃ ইসলামী তাবলিগ বনাম বর্তমান তাবলিগ

সংকলকঃ  ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খুরশীদ আলম (অবঃ)

🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


1 মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন