কোনো খোদায়ী আশীর্বাদ লাভে খুশি প্রকাশ করা আম্বিয়া (عليه السلام)-বৃন্দের সুন্নাত

কোনো খোদায়ী আশীর্বাদ লাভে খুশি প্রকাশ করা আম্বিয়া (عليه السلام)-বৃন্দের সুন্নাত

সর্বশক্তিমান আল্লাহতা’লার কাছে পয়গম্বর ঈসা (عليه السلام) তাঁর নিজের জাতির জন্যে আসমান হতে খাদ্যভর্তি খাঞ্চা মঞ্জুর করার আবেদন জানানোর সময় আরয করেন:

“হে আল্লাহ, হে আমাদের রব্ব! আমাদের প্রতি আকাশ থেকে একটা খাদ্যভর্তি খাঞ্চা অবতীর্ণ করুন, যা আমাদের জন্যে ঈদ হবে – আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তীদের জন্যে, এবং তা আপনার কাছ থেকে হবে (এক) নিদর্শন।” [আল-ক্বুরআন, ৫:১১৪]

ওপরের আয়াতটিতে কুরআন মজীদ এই পয়গম্বরের কথার উদ্ধৃতি দিয়ে এ বিষয়টি স্পষ্ট করেছে যে, আল্লাহতা’লার আশীর্বাদ যেসব দিনে বর্ষিত হয় সেগুলো ঈদ হিসেবে উদযাপন করা উচিত; এটাই খোদায়ী আশীর্বাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের প্রশংসনীয় উপায়। ‘আমাদের পূর্ববর্তী’ ও ‘আমাদের পরবর্তীদের জন্যে’ বাক্যগুলো ইঙ্গিত করে যে ওই আশীর্বাদপ্রাপ্তির পর ওই কওম বা জাতির অন্তর্গত প্রাথমিক যুগে মানুষেরা আসবেন এবং পরবর্তী যুগগুলোতেও মানুষেরা আসবেন; এমতাবস্থায় যাঁরা পূর্ববর্তী যুগে আগমন করবেন তাঁদের ঈদ হিসেবে তা উদযাপন করা উচিত, আর পরবর্তী যুগে যাঁরা আসবেন, তাঁদেরও অনুরূপ করা উচিত।




৪.৪.১ বিবেচনাযোগ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

উক্ত আয়াতটিতে ‘আমাদের পূর্ববর্তীদের’ ও ‘আমাদের পরবর্তীদের’ বাক্যগুলোতে ব্যক্তিবাচক সর্বনাম ‘আমাদের’  বিদ্যমান, যা ইঙ্গিত করে যে এই আশীর্বাদটি কেবল তাঁরাই মূল্যায়ন করবেন যাঁরা ‘আমাদের’ মধ্য হতে (আবির্ভূত হবেন)। কিন্তু যারা ‘আমাদের’ মধ্য হতে নয়, তাদের এই উদযাপনে অংশীদার হওয়ার কোনো (সঙ্গত) কারণ-ই নেই। এখানে আল-ক্বুরআন মানুষের মাঝে একটি মানদণ্ড/মাপকাঠি স্থাপন করেছে। সেই ঘটনা ছিল পয়গম্বর ঈসা আলাইহিস্ সালামের কওম বা জাতির, আর এখন হচ্ছে মহানবী হযরতে মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের উম্মত। এই একই মানদণ্ড বা মাপকাঠি আমাদের প্রতিও আরোপ করা হয়েছে এ মর্মে যে যখন মহানবী (ﷺ)-এর বেলাদতের দিনকে ধারণকারী রবিউল আউয়াল মাস আগমন করে, ওই সময় কারা এই মহা আশীর্বাদের সাথে সংশ্লিষ্ট হয়ে সাক্ষ্য বহন করে, আর কারা তা করে না, এটা আমাদের প্রত্যক্ষ করা উচিত। মওলিদুন্নবী (ﷺ)-এর আগমনে কেউ ক্ষুব্ধ বোধ করলে বা তাতে সন্দেহ পোষণ করলে সেটা ঈমানী ঘাটতির স্পষ্ট আলামত/লক্ষণ; যার জন্যে আল্লাহতা’লার কাছে তওবা করা উচিত। তা এ কারণে যে এটা এমনই এক বিপজ্জনক ব্যাধি যা পরিহার করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ও কর্তব্য, যদি কেউ নিজের ধর্মকে হেফাযত করতে চান। কেউ প্রিয়নবী (ﷺ)-কে ভালোবাসার এবং তাঁর উম্মত হওয়ার দাবিদার কীভাবে হতে পারে যদি তাঁরই মীলাদ-দিবসে খুশি প্রকাশ না করে?

মওলিদুন্নবী (ﷺ)-এর পক্ষে (শরঈ) প্রামাণ্য দলিল দাবি করা এবং এবিষয়টির অবৈধতা প্রমাণ করার জন্যে তর্ক-বিতর্ক করা ঈমানের পূর্বশর্ত সৃষ্টিকুলশ্রেষ্ঠ প্রিয়নবী (ﷺ)-এর প্রতি ভালোবাসা ও ভক্তিশ্রদ্ধা প্রদর্শনকে রহিত করে দেয়। বস্তুতঃ ভালোবাসার কোনো দলিলের প্রয়োজন-ই নেই। তাঁর বেলাদতের মাস রবিউল আউয়াল শরীফ যখন আগমন করে, তখন ঈমানদারের হওয়া চাই উৎফুল্ল চিত্ত এবং এর প্রতি আগ্রহান্বিত। এমতাবস্থায় তাঁর খুশির মোকাবেলায় অন্যান্য সব আনন্দ-ফুর্তি অর্থহীন হয়ে যায়, কেননা প্রিয়নবী (ﷺ)-এর বেলাদতে খুশি হওয়াতেই প্রকৃত সুখ নিহিত। ঈমানদার ব্যক্তির অনুভব করা উচিত যে এই দিনটির চেয়ে বেশি আনন্দঘন আর কোনো দিন-ই হতে পারে না, আর তিনি এই বিশ্বজগতে এর চেয়ে বেশি খুশি কল্পনা করতেও অক্ষম।

__________________

মওলিদুন্নবী (ﷺ)-এর উদযাপন ও অনুমতি (১ম খণ্ড)

মূল: শায়খুল ইসলাম ড: মুহাম্মদ তাহিরুল কাদেরী

অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন