নবী করীম (ﷺ) এর চাচা আবু তালেবের ঈমান গ্রহণ সম্পর্কে ইমামগণ বিভিন্ন মত পোষণ করেন। যেমন:
❏ ইমাম আহমদ ইবনে যীনি দহলান (رحمة الله) হুজুর (ﷺ) এর সম্মানিত মাতা-পিতা ও চাচা আবু তালেবের ঈমান সম্পর্কে ‘কাউলুল জলী’ নামে একটি রিসালা লিখিয়াছেন, অতঃপর তিনি বলিয়াছেন, আল্লামা মুহাম্মদ বিন রাসূল বরযঞ্জী উক্ত মাসয়ালার উপর একটি রিসালা লিখিয়াছেন, যাহার মধ্যে হুজুর (ﷺ) এর চাচা আবু তালেব নাজাতপ্রাপ্ত হওয়াকে বহু শক্তভাবে ছাবেত করিয়াছেন এবং উহার উপর ওলামাগণের বাণী ও কোরআন হাদীসের এই রকম দলিল এবং প্রমাণাদি কায়েম করিয়াছেন, যাহা বিন্দু পরিমাণও চিন্তা করিলে দৃঢ়বিশ্বাস হইয়া যাইবে যে, আবু তালেব নিশ্চয় নাজাতপ্রাপ্ত। আবার সঙ্গে সঙ্গে ইহাও স্পষ্ট হইয়া যাইবে যে, আবু তালেব জাহান্নামী হওয়ার উপর যেই প্রমাণসমূহ বর্ণিত হইয়াছে উহার ছহীহ অর্থ এই রকম, যাহার মোখালিফতির মূল স্পষ্ট হইয়া যায়।
❏ ইমাম ইবনে যীনি দহলান (رحمة الله) বলিয়াছেন, আল্লামা বরযঞ্জী (رحمة الله) প্রথমে অকাট্য প্রমাণাদি দ্বারা আবু তালেবের ঈমান ছাবেত করিয়াছেন। অতঃপর তাহার নাজাত ছাবেত করিয়া বলিতেছেন,
الاسلام علانية والا يمان فى القلب .
অর্থাৎ- ইসলাম প্রকাশ্য এবং ঈমান অন্তরে বিরাজমান। কখনো ইহারা উভয় একত্রিত হইয়া যায়। যেমন, সেই ব্যক্তি যাহার তাছদীকে কলবী (আন্তরিক বিশ্বাস) রহিয়াছে এবং শাহাদাতাঈনের স্বীকৃতিও মুখে রহিয়াছে। আবার কখনো ইসলাম ঈমান হইতে পৃথকও হইয়া যায়। যেমন, মোনাফেক শাহাদাতাঈনের স্বীকার মুখেও করে এবং প্রকাশ্য ভাবে ইসলামী হুকুমসমূহের অনুসারীও হয়। কিন্তু অন্তরে ইসলামকে বিশ্বাস করে না বরং মিথ্যা প্রতিপাদন করে। আবার কখনো ঈমান ইসলাম হইতে পৃথক হয়। যেমন, বহু ইয়াহুদী ওলামা, যাহারা অন্তরে বিশ্বাস করিত কিন্তু শত্র“তার কারণে না শাহদাতাঈনকে স্বীকার করিত না শরীয়াতের হুকুম সমূহের অনুসারী ছিল, আর না হুজুর (ﷺ) এর অনুসরণ ও অনুকরণ করিত।
❏ আল্লাহ তায়ালা সেই সমস্ত লোকদের ব্যাপারে অবতীর্ণ করেন,
يَعْرِفُونَهُ كَمَا يَعْرِفُونَ أَبْنَاءَهُمْ
অর্থাৎ- তাহারা নবী (ﷺ)কে তাহাদের ছেলেদের মত চিনিত। কিন্তু শত্র“তামূলক রিসালাত স্বীকার করিত না এবং অন্তরের মধ্যে তাঁহার রিসালাতের দাবীর তাছদীক রাখিত। অতঃপর এই ধরণের লোক গোপনীয়তায় মুমিন ও স্পষ্টতায় শত্র“তার কারণে মিথ্যা প্রতিপাদনকারী। তাহারা শত্র“তামূলক স্পষ্টতাকে মিথ্যা প্রতিপাদন করার কারণে তাহাদের অপ্রকাশ্য ঈমান কোন উপকারী হইবে না।
হ্যাঁ! যাহারা এই ধরণের লোক হইবে যে, অন্তরে বিশ্বাসী হইবে ও শত্র“তাবিহীন কোন যুক্তিসম্মত ওজর বা আপত্তির কারণে প্রকাশ্য হুকুম সমূহের অনুসরণ না করিবে এবং মুখে শাহাদাতাঈনকেও স্বীকার না করিবে, তাহা হইলে সেই সমস্ত লোকজন প্রতি দিবসের দিন গোপনীয় ঈমান দ্বারা খোদার দরবারে উপকৃত ও লাভবান হইবে। কিন্তু তাহাদের সহিত প্রকাশ্য মোয়ামিলা কাফেরদের ন্যায় হইবে এবং পার্থিব হুকুম অনুযায়ী তাহাদের নাম কাফের হইবে। তদ্রূপ ঐতিহাসিকগণ আবু তালেবের ঈমানও যাহা অন্তরে বিদ্যমান ছিল ছাবেত করিয়াছেন।
❏ হযরত শাহ্ মোহাক্কেক আবদুল হক মোহাদ্দেস দেহলভীর “মা ছবাতা মিনাচ্ছুন্না” নামক কিতাবের মধ্যে উল্লেখ আছে,
وارملة وهذا البيت من قصيدة ابى طالب ذكرها ابن اسحاق بطولها وله فى مدحه صلّى الله عليه وسلّم قصائد اخر وكفالته وحمايته صلّى الله عليه وسلّم وتعقبه الحافظا بن حجران ابن اسحاق ذكر ان انشاد ابى طالب بهذا الشعر كان بعد البعث ومعرفة ابى طالب بنبوته جاء فى كثير من الاخبار .
অর্থাৎ- কবিতার এই পংক্তি আবু তালেবের কছিদার অংশ বিশেষ, যাহা ইবনে ইসহাক দীর্ঘায়িতাকারে যিকির করিয়াছেন এবং হুজুর (ﷺ) এর প্রশংসা, তাঁহাকে পালিত করা এবং তাঁহাকে সহায়তা করার ব্যাপারেও তাহার অন্যান্য কছিদা রহিয়াছে।
❏ হাফেজ ইবনে হাযার (رحمة الله) তাঁহার অনুসরণ করিতে যাইয়া বলিয়াছেন যে, ইবনে ইসহাক বলিয়াছেন, আবু তালেবের এই শে’র (কবিতা) পড়া, হুজুর (ﷺ) এর দুনিয়াতে তশরীফ আনয়নের পরে ছিল এবং আবু তালেব তাঁহার নুবুওয়াতের পরিচয় লাভ করার ব্যাপারে বহু হাদীস শরীফ বর্ণিত হইয়াছে।
❏ উপরোলেখিত বক্তব্যগুলি মন্তব্যস্বরূপ। আবু তালেবের ঈমান সম্পর্কে স্পষ্টাকারে হাদীস ও আছার মওজুদ রহিয়াছে, যেমন বর্ণিত আছে,
ان العباس رضى الله عنه اخبر النبى صلّى الله عليه وسلّم باسلام ابى طالب بعد ما رجع النبى صلّى الله عليه وسلّم عنه، (حاشيه بخارى-جلد ২০، صفحه ৯১৭০)।
অর্থাৎ- হযরত আব্বাস (رضي الله عنه) হুজুর (ﷺ) আবু তালেবের নিকট হইতে চলিয়া যাওয়ার পরে তাহার (আবু তালেবের) ঈমান সম্পর্কে হুজুর (ﷺ)কে সংবাদ দিয়াছেন। বোখারীর টিকা দ্বিতীয় খণ্ডের ৯১৭ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য।
প্রমাণিত হইল যে, ঈমান না আনার রেওয়ায়েত মৃত্যুর পূর্বে আর ঈমান আনার রেওয়ায়েত মৃত্যুর সময় বর্ণিত হইয়াছে। অতএব, এখন কোন তায়ারুজ ও প্রতিবাদ রহিল না।
ফত্ওয়া কাজীখান সম্মিলিত ফত্ওয়া সিরাজী ২য় খণ্ডের ৪১৪ পৃষ্ঠায়ও তদ্রূপ উল্লেখ রহিয়াছে।
_______________
নবী করীম (ﷺ) এর চাচা আবু তালেবের নাজাত সম্পর্কে বর্ণনা
রচনায়ঃ মুহাম্মদ আজিজুল হক আল-কাদেরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)
🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন