মাওলানা কেরামত আলী জৈনপুরী সাহেবের লিখিত ‘জখিরায়ে কেরামত’ নামক কিতাবে যে সমস্ত ভ্রান্ত ওহাবী আক্বিদা হিসেবে প্রমাণিত এর মধ্যে কতিপয় ভ্রান্ত আক্বিদা নিম্নে প্রদত্ত হলো

 

মাওলানা কেরামত আলী জৈনপুরী সাহেবের লিখিত ‘জখিরায়ে কেরামত’ নামক কিতাবে যে সমস্ত ভ্রান্ত ওহাবী আক্বিদা হিসেবে প্রমাণিত এর মধ্যে কতিপয় ভ্রান্ত আক্বিদা নিম্নে প্রদত্ত হলো

 বাতিল আক্বিদা-১. (জখিরায়ে কেরামত ১ম খণ্ড ২৩১ পৃষ্ঠা)

 ‘নামাযে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেয়াল হতে নিজের গরু-গাধার খেয়ালে ডুবে থাকা ভাল। ইচ্ছা করে রাসূলেপাকের খেয়াল করলে মুশরিক হবে। আর অনিচ্ছায় নবীয়ে পাকের খেয়াল এসে গেলে শয়তান ওয়াছ ওয়াছা দিয়েছে মনে করে ওয়াছ ওয়াছা ওয়ালী এক রাকাআতের পরিবর্তে চার রাকাআত নফল নামায আদায় করতে হবে। (সিরাতে মুস্তাকিমেও অনুরূপ রয়েছে)

 আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আক্বিদা হলো-

 নামাযের মধ্যে তাশাহহুদ অথবা তেলাওয়াতে কালামেপাকে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম মোবারক আসলে রাসূল হিসেবে খেয়াল ও তা’জিম করতে হবে।

 এহইয়ায়ে উলুমিদ্দিন ১/৯৯ পৃষ্ঠায় নামাযের বাতেনী শর্তের বয়ানে উল্লেখ আছে-


 واحضر فى قلبك النبى صلى الله عليه وسلم وشخصه الكريم وقل السلام عليك ايها النبى ورحمة الله وبركاته


 অর্থাৎ ‘তোমার ক্বলব বা অন্তরে রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হাজির করো এবং তাঁর পবিত্র দেহাকৃতিকে উপস্থিত জানবে এবং বলবে আসসালামু আলাইকা আইয়ুহান্নাবীউ ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতাহু।’ 

 শাহ ওলী উল্লাহ মোহাদ্দিসে দেহলভী (আলাইহির রহমত) তদীয় ‘হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা’ ২/৩০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন-


 ثم اختار بعده السلام على النبى صلى الله عليه وسلم تنويها بذكره واثباتا للاقرار برسالته واداء لبعض حقوقه


 অর্থাৎ ‘অতঃপর (তাশাহহুদের মধ্যে) নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার উপর সালাম প্রদানকে নির্ধারণ করেছেন, এজন্য যে, নবীর জিকির (স্মরণ) যেন তা’জিমের সাথে হয় এবং নবীর রিসালতের স্বীকৃতি যেন প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় এবং তাঁর কিছু হক্বও যেন আদায় হয়ে যায়।’ 

 দেখলেন তো! জৈনপুরী কেরামত আলী ফতওয়া প্রদান করলেন ইচ্ছা করে নামাযে তা’জিমের সাথে নবীর খেয়াল করলে মুশরিক হবে। অপরদিকে শাহ ওলী উল্লাহ মোহাদ্দিসে দেহলভী (আলাইহির রহমত) নবীর শান যে মহান তা প্রমাণ করতে গিয়ে বলেন, তা’জিমের সাথে নবীর জিকির হওয়ার জন্যই তাশাহহুদে আল্লাহর হাবীবকে সালাম প্রদান করার বিধান আল্লাহ তায়ালা দিয়েছেন। সাথে সাথে রিসালতের স্বীকারোক্তি ও নূর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার কিছু হক আদায় হওয়ার কথাও ব্যক্ত করেছেন।

 কি আশ্চর্যের বিষয় জৈনপুরী কেরামত আলীর ফতওয়ায় শাহ ওলী উল্লাহ মোহাদ্দিসে দেহলভী, ইমাম গাজ্জালী (আলাইহির রহমত) সহ সকল মুহাদ্দিসীন, মুফাসসিরীন এমনকি সাহাবায়ে কেরামও মুশরিক সাব্যস্থ হয়ে যান। (নাউজুবিল্লাহ)

 বাতিল আক্বিদা-২. (জখিরায়ে কেরামত ৩/১১২ পৃষ্ঠা)

 ‘মাহফিলে মিলাদে রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার রূহ মোবারক হাজির হন এ আক্বিদা রাখা শিরিক।’ 

 আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আক্বিদা হলো-

 আল্লাহর হাবীব ছরকারে কায়েনাত নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রূহ মোবারক ঈমানদার মুসলমানদের প্রতিটি ঘরে হাজির আছেন।

 শরহে শিফা মূল্লা আলী ক্বারী (আলাইহির রহমত) নাছীমুর রিয়াজ) ৩/৪৬৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে-


 ان لم يكن فى البيت احد فقل السلام على النبى ورحمة الله وبركاته اى لان روحه عليه السلام حاضرة فى بيوت اهل الاسلام


 বাতিল আক্বিদা- ৩. জৈনপুরী সাহেবের আক্বিদা ও বিশ্বাস হলো- 

 ‘তাকভীয়াতুল ঈমান’ কিতাবে ইসমাইল দেহলভী যা লিখেছেন তা সঠিক। এ কিতাব (তাকভীয়াতুল ঈমান) তিনি নিজেই গভীর মনোযোগের সাথে দেখেছেন এবং উপলব্ধি করেছেন যে, ‘তাকভীয়াতুল ঈমান’ কিতাবে লিখিত সকল আক্বিদা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের পূর্ণ অনুকুলে, তার মধ্যে কোন ব্যতিক্রম নেই। (তাকভীয়াতুল ঈমান) কিতাবে অনেক গুলি কুফুরি আক্বিদা থাকা সত্ত্বেও জৈনপুরী সাহেব তা সমর্থন করে নিলেন) (নাউজুবিল্লাহ)

 বাতিল আক্বিদা-৪. জখিরায়ে কেরামত ১/২০ পৃষ্ঠায় মাওলানা কেরামত আলী জৈনপুরী সাহেব তাহকীকের সাথে ফতওয়া দিচ্ছেন, যারা ‘তাকভীয়াতুল ঈমান’ কিতাবে লিখিত আক্বিদাগুলিকে সমর্থন করবে না, তারা মুশরিক বা ঈমানহারা। (জৈনপুরী সাহেবের ফতওয়া তাকভীয়াতুল ঈমানের কুফুরি আক্বিদা সমর্থন না করলে মুশরিক) (নাউজুবিল্লাহ)

 বাতিল আক্বিদা-৫. জৈনপুরী সাহেবের বক্তব্য ‘তাকভীয়াতুল ঈমান’ কিতাবটি সঠিক কিতাব। অতঃপর তিনি নসিহত করে বলেন, এই কিতাবকে মিথ্যা বলে প্রতিপন্ন করে যেন কেহ মুশরিক না হয়। (কত বড় আজগুবি কথা নাউজুবিল্লাহ)

 জৈনপুরী সাহেবের এসব বক্তব্য দ্বারা বুঝা গেল যখন ‘তাকভীয়াতুল ঈমান’ কিতাবখানা ইসমাইল দেহলভী লিখে প্রকাশ করেছিল, তখনই এ কিতাবের বাতিল আক্বিদার রদে বা প্রতিবাদে হক্বানী ওলামায়ে কেরাম বই-পুস্তক লিখেছিলেন এবং সরলপ্রাণ মুসলমানগণকে এ কিতাবের বাতিল আক্বিদা থেকে ঈমান রক্ষা করতে পারে এ প্রসঙ্গে হেন্ডবিলও প্রকাশ করেছিলেন।

 বাতিল আক্বিদা-৬. জৈনপুরী কেরামত আলী সাহেব ভ্রান্ত ফতওয়া: জখিরায়ে কেরামত ১/২৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে-


 اور اگر اپنی مرشد میں جس سے بیعت کرچکا ہے عقیدے کا فساد نہ پاوے اگر چہ وہ مرشد گناہ کبیرہ میں گرفتار ہو تو اسکے بیعت کے علاقے کو نہ چہوڑے۔


 ভাবার্থ: আপনি যে মুর্শিদ বা পীরের নিকট বায়আত গ্রহণ করেছেন (মুরিদ হয়েছেন) তার মধ্যে যদি আক্বিদাসংক্রান্ত মাসআলার মধ্যে কোন ফাসিদ আক্বিদা না থাকে, এ ধরনের পীর ও মুর্শিদ যদিও কবীরা গোনাহে লিপ্ত থাকেন, এমতাবস্থায়ও তার বায়আত এর এলাকা ছাড়বে না অর্থাৎ তাকে মুর্শিদ হিসেবে মানবে। এ কবীরা গোনাহে লিপ্ত থাকার দরণ এ মুর্শিদকে ত্যাগ করে অন্য কোন মুর্শিদের আশ্রয় নিবে না।’ 

 আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের মতে কবীরা গোনাহে লিপ্ত থাকা যার সঠিক ভাবার্থ হলো- নামায ছেড়ে দেওয়া, জিনা ও শরাব পানে লিপ্ত থাকা, অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা, যে এ সকল কুকর্মে লিপ্ত থাকবে, সে মুর্শিদ হতে পারবে না।

 মুর্শিদ হওয়ার জন্য শর্ত হলো- ১. আক্বিদা শুদ্ধ থাকতে হবে। ২. মুত্তাকী ও পরহেজগারিতে অটল থাকবে। অর্থাৎ কবীরা ও ছগীরা গোনাহ থেকে বেঁচে থাকবে অর্থাৎ কবীরা ও ছগীরা গোনাহ থেকে বেঁচে থাকবে এমনকি সুন্নাত মোতাবেক প্রত্যেকটি কাজকর্ম অবশ্যই আঞ্জাম দিবেন।

 মুর্শিদ যদি গোনাহে কবীরাতে লিপ্ত থাকেন এবং সুন্নতবিরোধী কার্যক্রমে অভ্যস্থ থাকেন, তাহলে এ মুর্শিদ তার মুরিদকে কি শিক্ষা দিবেন?

 এ প্রসঙ্গে শরহে আক্বাঈদে নাসাফী ১১০ পৃষ্ঠায় (পুরাতন ছাপা) উল্লেখ রয়েছে-


 اصل المسالة ان الفاسق ليس من اهل الولاية عند الشافعى رح لانه لاينظر لنفسه فكيف ينظر لغيره


 জৈনপুরী কেরামত আলী সাহেব এ ধরণের ফতওয়া প্রদানের কারণ হলো- বালাকোটের যুদ্ধে তার পীর ও মুর্শিদ পাঠান মেয়েদেরকে জোরপূর্বক বিবাহ করেছেন। জোরপূর্বক কোন বিবাহ শুদ্ধ হয় না, মহিলা রাজি হয়ে এজিন দিতে হবে। এজিন ব্যতিরেকে কোন বিবাহ শুদ্ধ হয় না।

 জৈনপুরীর পীর ও মুর্শিদ সৈয়দ আহমদ বেরলভী জোরপূর্বক পাঠান মেয়েদেরকে বিবাহ করেছেন, হয়তো কোন মহিলা এজিন দেয় নাই, এমতাবস্থায় তার বিবাহ হল। যার কারণে এ মিলন কবীরা গোনাহে পরিণত হলো। সে প্রেক্ষাপটে জৈনপুরী সাহেবের মুর্শিদের পীরাকী অক্ষুন্ন রাখার জন্য তিনি এ ধরণের জঘণ্য ফতওয়া প্রদান করলেন।

 উল্লেখ্য যে, ব্যভিচার ও চুরি করলে হবে ফাজির এবং নামায কাযা বা এ ধরণের অন্যান্য গোনাহে কবীরাতে লিপ্ত থাকলে হবে ফাছিকে মু’লিন বা প্রকাশ্য ফাসিক।

 আল্লাহপাক সঠিক ঈমান ও আমলের হেফাজতের মালিক।

_______________

ইজহারে হক্ব

লেখক : অধ্যক্ষ শেখ মোহাম্মদ আব্দুল করিম সিরাজনগরী (মা:জি:আ:)

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন