ইসলামী তাবলিগ বনাম ইলিয়াসী তাবলিগ

 

ইসলামী তাবলিগ বনাম ইলিয়াসী তাবলিগঃ

১। ইসলামী তাবলীগের প্রবর্তক হলেন স্বয়ং আল্লাহর হাবীব (ﷺ), যা শুরু হয়েছে মক্কার হেরা গুহা/ জবালে নূর হতে। আর বর্তমানে প্রচলিত তাবলীগের প্রবর্তক হলাে মৌ: ইলিয়াস মেওয়াতী, যা শুরু হয় ভারতের মেওয়াত হতে।


২। ইসলামী তাবলীগের উসূল বা ভিত্তি ০৫ টি। যথা-কালিমা, নামাজ, রােজা, হজ্জ ও যাকাত। আর তাবলীগ জামাতে হলাে ০৬ টি। যথা-কালিমা, নামাজ, এলেম ও জিকির, ইকরামুল মুসলিমীন, তা সহীহে নিয়ত এবং তাবলীগের জন্য বের হওয়া।



৩। ইসলামী তাবলীগের ০৫ টি ভিত্তি আল্লাহর রাসূল (ﷺ) ওহীর মাধমে পেয়েছেন যা আল্লাহ্ পক্ষ। থেকে নাযিল হয়। কাজেই এর মধ্যে কোন সংযােজন বা বিয়ােজনের সুযােগ নেই। আর ইলিয়াসী তাবলীগের ০৬ টি ভিত্তি মেওয়াতী সাহেব স্বপ্নে পেয়েছেন। তন্মধ্যে শুধু কলেমা ও নামাজ ইসলামী ভিত্তি হতে নেয়া হয়েছে এবং অপর তিনটি (হজ্জ, রােজা ও যাকাত) বাদ দিয়ে নতুন ০৪ টি উসূলের সংযােজন করা হয়েছে। ফলে উক্ত মতবাদের অনুসারী/ বিশ্বাসীরা ইসলাম হতে খারিজ কিনা তা পাঠক গণের বিবেচনার জন্য ছেড়ে দিলাম।



৪। ইসলামী তাবলীগের ৫ উসূল/ ভিত্তি কুরআন, হাদীস, ইজমা, কিয়াস দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু তাবলীগের ৬ উসূলের দলিল তাদের নিজেদের কিতাবাদি ছাড়া অন্য কোথাও নেই। তাই তাদের কার্যকলাপ ও কর্মপদ্ধতি দৃশ্যত নাজায়েয।



৫। ইসলামী তাবলীগের উদ্দেশ্য হলাে কাফের মুশরিককে দ্বীনের দাওয়াত দেওয়া। হুজুর (ﷺ), সাহাবায়ে কেরাম ও আউলিকেরাম মুসলমানকে মুসলমান। হওয়ার দাওয়াত দেননি, কেবলমাত্র অমুসলিমকে ইসলাম কবুল করার দাওয়াত দিয়েছেন। কিন্তু ইলিয়াসী তাবলীগের লক্ষ্যস্থল হলাে মুসলমান এবং মসজিদ দখল। তারা মুসলমানদেরকে দাওয়াত দেয় তাদের আকিদায় বিশ্বাসী বানাতে যা ইসলামী আক্বিদা ও ইসলামী তাবলীগের পরিপন্থী। মােটকথা তাদের প্রচেষ্টার উদ্দেশ্য অমুসলিমকে মুসলমান বানানাে নয়, বরং মুসলমানদেরকে তাবলীগী বানিয়ে প্রকৃত ইসলাম থেকে খারিজ করে তাদের নিজেদের আক্বীদায় বিশ্বাসী বানানাে।



৬। ইলিয়াসী তাবলীগের অনুসারীরা ঘরে-ঘরে গিয়ে এবং লাইন বেঁধে গাত করে সদস্য সংগ্রহের ফাঁদ পাতে। এমন কি অনেক আলিম ও বুজুর্গ ব্যক্তিগণকেও দ্বীনের দাওয়াত দেয়ার মত বেয়াদবীপূর্ণ আচরণ তাদের মধ্যে অহরহ পরিলক্ষিত হয়।



৭। চিশতিয়া তরীকার কোন কোন বুজুর্গ আত্মশুদ্ধি ও মারেফত লাভের উদ্দেশ্যে বনে-জঙ্গলে কিংবা পাহাড়-পর্বতে একাকী গিয়ে মােরাকাবা-মােশাহেদায় লিপ্ত হতেন। এটাই তাদের চিল্লা। কিন্তু ইলিয়াসী তাবলীগের অনুসারীগণ চিল্লা করতে যান দলে দলে এবং লােকালয়ে।



৮। ইসলামী তাবলীগে হাড়ি-পাতিল, কম্বল, লােটা ইত্যাদির প্রয়ােজন নেই। ইলিয়াসী তাবলীগে এসব মােটামুটি বাধ্যতামূলক।



৯। ইসলামী তাবলীগে মসজিদকে সরাইখানা বানানাের প্রয়ােজন নেই। ইলিয়াসী তাবলীগে মসজিদ হলাে সরাইখানা। এ ক্ষেত্রে তাদের উপস্থাপিত ইতেকাফের দলিল গ্রহণযােগ্য নয়। যাদের ঈমান শুদ্ধ নয়, তাদের ইতিকাফ অকেজো।



১০। ইসলামী তাবলীগের উদ্দেশ্য হলাে অমুসলমানকে মুসলমান। বানানাে। ইলিয়াসী তাবলীগের উদ্দেশ্য হলাে মুসলমানগণকে ওহাবী আকিদার বিশ্বাসী বানানাে।



১১। ইসলামী তাবলীগের শিক্ষা হলাে উম্মত কখনাে নবীর সমতুল্য হতে পারে না। তাদের শিক্ষা হলাে তারা নবীগণের সমকক্ষ। (মালফুজাত নং-৫০) ‘ তােমাদিগকে আম্বিয়ায়ে কেরামদের মতই মানুষের উপকার করার জন্য বাহির করা হয়েছে।' (নাউযুবিল্লাহ) অথচ কোরআনের সুরা আলে ইমরানের ১১০ নং আয়াতটি উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য প্রযােজ্য হলেও এ আয়াতে উম্মতে মুহাম্মদীকে ‘ আম্বিয়া কেরামের ' মত উল্লেখ নেই, যা ওয়াতী সাহেব উল্লেখ করেছেন।



১২। ইসলামী শিক্ষা হলাে নবীগণের কাজ আম জনতা করতে পারে না। তাদের শিক্ষা হলাে-তারা নবীওয়ালা কাজ করে। থাকে। (দেখুন-তাবলীগ জামাত প্রসঙ্গে ১৩ দফা, ১৪ পৃ:-লেখক মুহাম্মদ মুযাম্মিল হক)



১৩। ইসলামী শিক্ষা হলাে নবীগণের অন্তর কুফরী ও শিরকের দাগ হতে মুক্ত এবং তারা অন্যদের অন্তরের দাগ ও ময়লার ডিটার্জেন্ট (ময়লা পরিষ্কারকারী) হিসাবে কাজ করেন। তাদের শিক্ষা হলাে নবীজির হৃদয়ে কাফেরদের ময়লার দাগও লেগে যেত, তাই তিনি রাত্রে ইবাদত দ্বারা তা পরিস্কার করতেন। (নাউযুবিল্লাহ)। (দেখুন-মলফুজাত ৭ ম কিস্তি-১১১ নং মালফুজাত)



১৪। ইসলামী শিক্ষা হলাে আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় ইবাদত হলাে ফরজ ইবাদত। তন্মধ্যে যাকাতও রয়েছে। তাদের শিক্ষা হলাে ফরজ যাকাতের মর্তবা নফল হাদিয়ার চেয়ে কম। (মলফুজাত নং-৫১)



১৫। ইসলামী শিক্ষা মতে যাকাত পাবে এতিম, গরীব, মিসকিন। তাদের শিক্ষা ও তালিকামতে ৪০ জন তাবলীগ কর্মীকে যাকাত দেয়া উত্তম, কেননা তাদের মধ্যে লােভ-লালসা নেই। (মলফুজাত নং-৬২)



১৬। ইসলামী শিক্ষা হলাে নিজে এবং নিজ পরিবারকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাতে হবে (সূরা তাহরীম ৬)। আর তাদের শিক্ষা। হালাে নিজ ঘর ও পরিবারকে বাদ দিয়ে চিল্লার নামে বাইরে চলে যাওয়া। নিজেও তার পরিবার জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে কিনা তার খবর নেই, অথচ অন্যকে জান্নাতী বানাতে বেরিয়ে যায়। এটা আল্লাহর হুকুমের বিরােধিতা বৈকি।



১৭। ইসলামী শিক্ষা হলাে হাশরের দিন সমস্ত নবী আখেরী নবী (ﷺ)-এর ঝান্ডার ছায়াতলে। থাকবেন (মেশকাত-পৃ: ৫১৩)। আর তারা বলে নবীগণ নাফসী নাফসী বলে ভয়ে চিক্কার করতে থাকবেন, আর তাবলীগী মুজাহিদ বান্দাগণকে আল্লাহ সম্পূর্ণ ভয়শূন্য অবস্থায় শান্তির ছায়াতলে রাখবেন। (দাওয়াতে তাবলীগ-১ ম সংস্করণ, ১ ম খন্ড, ৫৪ পৃ:-লেখক আম্বর আলী)



১৮। ইসলামী আক্বিদা হলাে আরাফাতের জামায়েত হলাে বিশ্ব মুসলিম ইজতিমা এবং এটা কোরআন ও হাদীস দ্বারা সমর্থিত। তাদের দাবী হলাে টঙ্গীর জামায়েত বিশ্ব ইজতিমা, যা কোরআন ও হাদীসের কোথাও নেই।



১৯। ইসলামী তাবলীগ বলে আরাফাতের সমাবেশ হলাে অতুলনীয়। একক এবং ফরজ। তাদের দাবী টঙ্গী ইজতিমা দ্বিতীয় বৃহত্তম বিশ্ব ইজতিমা। (আরাফাতের সাথে তুলনা বা তার বিকল্প। মনে করা বেদ্বীনি কাজ। আজকাল মুখে মুখে তাদের মধ্যে ইহা প্রচলিত রয়েছে যে ইজতিমার সওয়াব গরীবের জন্য হজ্জের সমান।) (নাউযুবিল্লাহ)



২০। ইসলামী শিক্ষা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ হলাে পূর্ণ কালিমা। তাদের মতে "মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ কালিমার অংশ নয়। (দেখুন-মেওয়াতী সাহেবের প্রথম কাতারের অনুসারী মৌ: হাসান আলীর ‘ চৌদা মাসায়েল)



২১। ইসলামী তাবলীগের দায়িত্ব পালন করেছেন স্বয়ং হুজুর পাক (ﷺ), সাহাবায়ে কেরাম, আউলিয়ায়ে কেরাম ও ওলামায়ে কেরামগণ। আর তাদের দাওয়াতের দায়িত্ব পালন করে-আলেম নন এমন লােকেরা।



২২। কুরআনের শিক্ষা হলাে "তােমরা সত্যবাদীদের (সিদ্দিকিন বা বুজুর্গ ব্যক্তি) সঙ্গী হও "(সুরা তওবা: ১১৯) এবং "তােমরা কিছু জানলে জ্ঞানীদের জিজ্ঞাসা কর।"(সুরা নহল: ৪৩) কিন্তু তাদের শিক্ষা হলাে হক্কানী ওলামা কেরামের নিকট তাবলীগের দাওয়াত দেয়া যাবে না, কারণ তাবলীগের আসল গুরুত্ব ভালভাবে তাদেরকে নিশ্চিত করা যাবে না যে তাদের (ওলামাদের) অপরাপর দ্বীনি কর্মকান্ডের তুলনায় এ কাজ (তাবলীগের কাজ) অধিক উপকারী। তাদের কাছে শুধু ফায়দা অর্জনের জন্য যাবে, কিন্তু তাদের চতুর্পার্শে অধিক মেহেনতের মাধ্যমে তাবলীগের কাজ করতে হবে (মালফুজাত নং-২৯)। (সম্ভবত হক্কানী ওলামা/ বুজুর্গগণের ভিত দুর্বল করে যেন তাদের দূর্গ-দখল করা যায়।)


২৩। ইসলামী তাবলীগের ক্ষেত্রে মহিলাদের তাবলীগ বা ইজতেমা নেই। কিন্তু ইলিয়াসী তাবলীগের সর্বশেষ সর্বনাশা সংযােজন হলাে মহিলা তাবলীগ ও মহিলা ইজতেমা, যা ইসলামী শিক্ষার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। ইসলামী শিক্ষা হলাে মহিলারা তাদের ঘরের নিরব ও নিভৃত কোণে ইবাদত করবে।

__________________

কিতাবঃ ইসলামী তাবলিগ বনাম বর্তমান তাবলিগ

সংকলকঃ  ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খুরশীদ আলম (অবঃ)

🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন