কুরআনের আলোকে উচ্চস্বরে জিকির
অনেকের ধারণা উচ্চ আওয়াজে জিকির করা নিষিদ্ধ। তবে আমার মতে এরুপ ধারণা করা ঢালাওভাবে সর্বক্ষেত্রে সঠিক নয়। কেননা উচ্চস্বরে আল্লাহর জিকির প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তা'লা এরশাদ করেন:
فاذكروا الله گذرم آباءكم أو أشد ذرا
(ফাজকুরুল্লাহা কাজিকরিকুম আবায়াকুম আও আশাদ্দা জিকরা)
"তােমরা আল্লাহর জিকির কর যেমনি তােমাদের বাপ দাদাদের স্বরণ করতে, বরং এর চেয়ে অধিক পরিমানে জিকির কর।" (সূরা বাকারা: ২০০ নং আয়াত)
এই আয়াতের তাফছিরে মহিউস সুন্নাহ ইমাম বাগভী(رحمة الله) উল্লেখ করেছেন,
وذلك أن العرب كانت إذا فرغت من الحج وقفت عند البيت فكرت مفاخر آبائها ، فأمرهم الله بذكره ،
-"এমনিভাবে আরবরা যখন হজ্বের কাজ থেকে বের হতে তখন বাইতুল্লাহর কাছে অবস্থান করতেন এবং পূর্বপুরুষদের সম্পর্কে কীর্তিগাথার মাধ্যমে ফখর করতেন। ফলে আল্লাহ তা'লা তাদেরকে আল্লাহর জিকির করতে আদেশ দেন। (তাফছিরে মাআলিমুত্তানজিল, ১ ম খন্ড, ২৫৭ পৃ: উক্ত আয়াতের তাফছিরে)
অনুরুপ ইমাম আবু জাফর ইবনে জারির আত- তাবারী(رحمة الله) তদীয় কিতাবে উল্লেখ করেন,
حدثني محمد بن عمرو ، قال: ثنا أبو عاصم ، عن عيسى ، عن ابن أبي نجيح ، عن مجاهد .. قال: تفاخرت العرب بيتها بفعل أبائها يوم النخر چين فرغوا ، فأمروا بذكر الله مكان ذلك
-"হযরত মুজাহিদ(رحمة الله) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: আরবের লােকেরা কোরবানী দিন তাদের বাপ- দাদার শানে কীর্তিগাথা বলত। অত:পর ঐ স্থানে আল্লাহর জিকির করার আদিষ্ঠ হন।" (তাফছিরে তাবারী, ৩ য় খন্ড, ৫৩৭ পৃ:)
অনুরুপ ইমাম আবু জাফর ইবনে জারির আত- তাবারী(رحمة الله) তদীয় কিতাবে আরাে উল্লেখ করেন-
حدثنا الحسن بن يحيى ، قال: أخبرنا عبد الرزاق ، قال: أخبرنا معمر ، عن قتادة ، في قوله قال: كانوا إذا قضوا مناسكهم اجتمعوا فافتخروا ، وذكروا آباءهم وأيامها ، فأمروا أن يجعلوا مكان ذلك ذكر الله ،
"হযরত কাতাদা(رحمة الله) আল্লাহ তা'লার বাণীর ব্যাখ্যায় বলেন, যখন জাহেলী যুগের লােকেরা তাদের হজ্বের কাজ থেকে বের হতেন তখন তারা একত্রিত হতেন ও তাদের বাপ দাদার কীর্তিগাথা পেশ করতেন। ফলে আল্লাহ তা'লা তাদেরকে সে স্থানে আল্লাহর জিকির করার আদেশ দেন।" (তাফছিরে তাবারী, ৩ য় খন্ড, ৫৩৭ পৃ:)
হাফিজুল হাদিস ইমাম আব্দুর রহমান জালালুদ্দিন ছিয়তী(رحمة الله) বলেন,
گذرگم آبام گما كم تذكرونهم عند فراغ حجم بالمفاخرة
-"যেমনটি তােমাদের বাপ- দাদাদের স্বরণ করতে ' অর্থাৎ যেমনি তােমরা তােমাদের পূর্ব পুরুষদের কীর্তিগাথার মাধ্যমে স্বরণ করতে হজ্বের কাজ সম্পাদনের পর।" (তাফছিরে জালালাইন, ৪২ পৃ:)
এই বক্তব্য গুলাে ইমাম কুরতবী(رحمة الله) উল্লেখ করে বলেন,
هذا قول جمهور المفسرين .
-"ইহা অধিকাংশ মুফাচ্ছিরগণের বক্তব্য। (তাফছিরে কুরতবী, ২ য় খন্ড, ৪৩১ পৃ:)
উল্লেখিত দালাইল গুলাে দ্বারা বুঝা যায়, আরবেরা পূর্ব যুগে মেলায় অংশগ্রহণ করত ও পিতৃ- পুরুষের নামে উচ্চ আওয়াজে কীর্তি গাঁথা গাইতেন বা গান গাইতেন। মহান আল্লাহ পাক ঐ ঘটনাকে উদ্দেশ্য করে মুমীনদেরকে বললেন তােমরা ঐরুপ কীর্তিগাথা না গেয়ে আল্লাহর জিকির কর বরং তাদের চেয়ে অধিক পরিমানে জিকির কর। সুতরাং কীর্তি গাথার মত আওয়াজ করে কিংবা অধিক পরিমানে ও উচ্চ আওয়াজে জিকির করা স্বয়ং আল্লাহ পাকের নির্দেশ।
______________________
শরীয়তের দৃষ্টিতে ক্বালবী জিকির ও ছামার বৈধ্যতা
রচনা ও সংকলনেঃ মুফতি মাওলানা আলাউদ্দিন জেহাদী
🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন