আম্বিয়া (عليه السلام)-বৃন্দের স্মরণ: এক ঐশী-প্রথার চর্চা

 আম্বিয়া (عليه السلام)-বৃন্দের স্মরণ: এক ঐশী-প্রথার চর্চা  

কতিপয় ’আধুনিকতাবাদী’ এ মর্মে ধারণা লালন করেন যে মহানবী (ﷺ)-এর আশীর্বাদপূর্ণ বেলাদত এখন অতীত একটি ঘটনা, তাই এর উদযাপনের কী প্রয়োজনীয়তা রয়েছে? তাদের দৃষ্টিতে হুযূর পাক (ﷺ)-এর জীবন ও সুন্দর আচার-আচরণকেই স্মরণ করা উচিত। বস্তুতঃ এধরনের মানসিকতা আল-কুরআনের দৃষ্টিভঙ্গি বা দর্শনের সম্পূর্ণ খেলাফ। তাই এই বিভ্রান্তি যাতে দূর হয়ে যায়, সেজন্যে এ বিষয়টির সমাধান জরুরি।

আল-কুরআন ও হাদীস শরীফের (সূক্ষ্ম) বিশ্লেষণ আমাদেরকে জ্ঞাত করে যে আল্লাহতা’লার প্রিয় ও মনোনীত বান্দাদেরকে স্মরণ করা কেবল এবাদত-ই নয়, বরং এটা স্বয়ং আল্লাহতা’লারই সুন্নাহ তথা অনুশীলিত রীতি। কুরআন মজীদে মহান প্রভু তাঁর বিশেষ ও পছন্দকৃত বান্দাদের কথা উল্লেখ করেন এবং বহুবার মহানবী (ﷺ) তা তেলাওয়াত করেন। অতএব, এই দলিলের ভিত্তিতে মহানবী (ﷺ)-এর আশীর্বাদপূর্ণ বেলাদত-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ঘটনার বিস্তারিত স্মৃতিচারণ আল্লাহ পাক ও তাঁর রাসূল (ﷺ)-এর অনুশীলিত রীতির আওতায় পড়ে।

আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের বিবরণ উল্লেখ করা এতোই বড় নেয়ামতের উৎস যে, এর বাস্তবতা আমাদের সবার চোখের সামনে প্রকাশ্যে উপস্থিত। কুরআন মজীদের বিভিন্ন স্থানে পয়গম্বরবৃন্দ (عليه السلام) ও তাঁদের উম্মতের কাহিনী বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে, কিন্তু কিছু কিছু জায়গায় পয়গম্বরবৃন্দ (عليه السلام) ও সৎকর্মশীলদের (মানে আউলিয়া কেরামের) স্মরণকে আলোচনার মূল প্রতিপাদ্য করার দৃষ্টান্ত-ও পবিত্রগ্রন্থে বিরল নয়।

১. আল্লাহতা’লা সূরা আল-আনআমে পয়গম্বরমণ্ডলী (عليه السلام)-এর কথা উল্লেখ করতে গিয়ে এরশাদ ফরমান: “আর ইসমাঈল, ইয়াসা’, ইয়ূনুস এবং লূতকেও; আর আমি প্রত্যেককে তাঁরই যুগের সবার ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি। এবং তাদের পিতৃপুরুষ, বংশধর এবং ভ্রাতৃবৃন্দের মধ্য থেকে কতেককেও; এবং আমি তাদেরকে মনোনীত করেছি ও সোজা পথ দেখিয়েছি।” [আল-ক্বুরআন, ৬:৮৬-৮৭, তাফসীরে নূরুল এরফান]

২. কুরআন মজীদের ১৪তম অধ্যায়টির (সূরার) শিরোনাম আল্লাহতা’লার ঘনিষ্ঠ বন্ধু পয়গম্বর ইবরাহীম (عليه السلام)-নামে করা হয়েছে। এই সূরায় তাঁর দুই ছেলে সর্ব-পয়গম্বর ইসমাঈল (عليه السلام) ও ইসহাক্ব (عليه السلام)-কে উল্লেখ করা হয়েছে এভাবে: “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই, যিনি আমাকে আমার বার্ধক্যে ইসমাঈল ও ইসহাক্বকে দান করেছেন। নিশ্চয় আমার রব্ব প্রার্থনা শ্রবণকারী।” [আল-ক্বুরআন, ১৪:৩৯, প্রাগুক্ত নূরুল এরফান]

৩. সূরা মরিয়ম আল্লাহর আশীর্বাদধন্য বান্দাদের বিবরণ দ্বারা পরিপূর্ণ; এতে পয়গম্বর (عليه السلام)-বৃন্দের স্মরণে কোনো ছেদ-ই পড়েনি। এই সূরা আল্লাহতা’লা আরম্ভ করেন পয়গম্বর যাকারিয়্যা (عليه السلام)-এর দোয়া দ্বারা: “এটা হচ্ছে বিবরণ তোমার রব্বের ওই অনুগ্রহের, যা তিনি আপন বান্দা যাকারিয়্যার প্রতি করেছেন, যখন সে আপন রব্বকে নীরবে আহ্বান করেছিল।” [আল-ক্বুরআন, ১৯:২-৩]

৪. আল্লাহতা’লা এরশাদ ফরমান: “এবং আমার কাছ থেকে দয়া ও পবিত্রতা; এবং (সে) পরিপূর্ণ খোদা-ভীতিসম্পন্ন ছিল।” [আল-ক্বুরআন, ১৯:১৩]

৫. আল্লাহতা’লা ঘোষণা করেন: “এবং কিতাবে মরিয়মকে স্মরণ করুন! যখন আপন পরিবারবর্গ থেকে পূর্বদিকে পৃথক একস্থানে চলে গিয়েছিল।” [আল-ক্বুরআন, ১৯:১৬]

৬. আল্লাহতা’লা এরশাদ ফরমান: “এবং কিতাবে ইব্রাহীমকে স্মরণ করুন! নিশ্চয় সে ছিল অতীব সত্যবাদী, অদৃশ্যের সংবাদদাতা (নবী)।” [আল-কুরআন, ১৯:৪১]

৭. আল্লাহতা’লা বলেন: “এবং কিতাবের মধ্যে মূসা’কে স্মরণ করুন! নিশ্চয় সে মনোনীত ছিল এবং রাসূল ছিল, অদৃশ্যের সংবাদসমূহ বর্ণনাকারী।” [আল-কুরআন, ১৯:৫১]

৮. আল্লাহতা’লা এরশাদ ফরমান: “এবং কিতাবের মধ্যে ইসমাঈলকে স্মরণ করুন! নিশ্চয় সে প্রতিশ্রুতি পালনে সত্যাশ্রয়ী ছিল এবং রাসূল ছিল, অদৃশ্যের সংবাদসমূহ বহনকারী; এবং আপন পরিবারবর্গকে নামায ও যাকাতের নির্দেশ দিতো; আর আপন রব্বের কাছে পছন্দনীয় ছিল।”[আল-কুরআন, ১৯:৫৪-৫৫]

৯. আল্লাহতা’লা ঘোষণা করেন: “এবং কিতাবের মধ্যে ইদরীসকে স্মরণ করুন! নিঃসন্দেহে সে অত্যন্ত সত্যনিষ্ঠ ছিল, অদেৃশ্যের সংবাদসমূহ বর্ণনাকারী। এবং আমি তাকে উচ্চ স্থানের ওপর উঠিয়ে নিয়েছি।” [আল-কুরআন, ১৯:৫৬-৫৭]

১০. অনুরূপভাবে, সূরা আম্বিয়া-ও পয়গম্বর (عليه السلام)-মণ্ডলীর বিবরণ দ্বারা পরিপূর্ণ। পঞ্চাশ ও তৎপরবর্তী আয়াতগুলোতে হ্রাস না পাওয়া বিবরণ রয়েছে, যার শুরু হয়েছে নিম্নের কথা দ্বারা: “এবং এটা (ক্বুরআন) হচ্ছে কল্যাণময় উপদেশ, যা আমি অবতীর্ণ করেছি। তবুও কি তোমরা সেটার অস্বীকারকারী হও?” [আল-ক্বুরঅান, ২১:৫০]

১১. ‘সবচেয়ে বরকতময় যিকর (স্মরণ)’ শিরোনামে নিম্নের আয়াতটি পয়গম্বর (عليه السلام)-বৃন্দের পিতা হয়রত ইবরাহীম (عليه السلام)-এর কথা উল্লেখ করেছে এভাবে: “আর নিশ্চয় আমি ইব্রাহীমকে পূর্ব থেকেই তার সৎপথ দান করেছি এবং আমি তার সম্বন্ধে পরিজ্ঞাত ছিলাম।” [আল-ক্বুরআন, ২১:৫১, প্রাগুক্ত নূরুল এরফান]

১২. বিস্তারিত একটি বিবরণের পরে সর্ব-পয়গম্বর লূত (عليه السلام), ইসহাক্ব (عليه السلام) ও এয়া’ক্বূব (عليه السلام)-এর কথাও স্মরণ করা হয়েছে এতে। এর শেষ হয়েছে এই বলে: “এবং আমি তাদের সবাইকে আমার বিশেষ নৈকট্যের উপযোগী করেছি।” [আল-ক্বুরআন, ২১:৭২]

১৩. অতঃপর ওই সূরার ৭৩ নং আয়াতে উক্ত পয়গম্বর (عليه السلام)-বৃন্দের মক্বাম তথা মর্যাদার আরো বিবরণ দেয়া হয়েছে: “এবং আমি তাদেরকে ‘ইমাম’ করেছি, যারা আমার নির্দেশে আহ্বান করে আর আমি তাদের প্রতি ওহী প্রেরণ করেছি – সৎকর্ম পালন করতে, নামায প্রতিষ্ঠিত রাখতে এবং যাকাত প্রদান করতে; আর তারা আমার ইবাদত করতো।” [আল-ক্বুরআন, ২১:৭৩]

১৪. উক্ত সূরার ৭৬-৮৪ আয়াতগুলো সর্ব-পয়গম্বর নূহ (عليه السلام), দা’উদ (عليه السلام), সুলাইমান (عليه السلام) ও আইয়ূব (عليه السلام)-এর কথাও উল্লেখ করেছে। এই স্মরণের পরিসমাপ্তি হয় পয়গম্বর আইয়ূব (عليه السلام)-এর উল্লেখ দ্বারা: “অতঃপর আমি তার (অর্থাৎ, আইয়ূব আলাইহিস্ সালামের) প্রার্থনা শুনেছি। তখন তার যে দুঃখ-কষ্ট ছিল, আমি তা দূরীভূত করেছি, এবং আমি তাকে তার পরিজনবর্গ ও তাদের সাথে তদসংখ্যক আরো দান করলাম; এটা আমার নিকট থেকে এক (বিশেষ) দয়া এবং ইবাদতকারীদের জন্যে (এতে নিহিত রয়েছে) উপদেশ (এই মর্মে যে আল্লাহ ধৈর্য ও কৃতজ্ঞতাকে পুরস্কৃত করে থাকেন)।” [আল-কুরআন, ২১:৮৪]

১৫. এর পরবর্তী আয়াতে করীমাতেই সর্ব-পয়গম্বর ইসমাঈল (عليه السلام), ইদরীস্ (عليه السلام) ও যূল-কিফল (عليه السلام)-এর কথা উল্লেখিত হয়েছে: “এবং ইসমাঈল, ইদরীস্ ও যূল-কিফলকে (স্মরণ করুন)। তারা সবাই ধৈর্যশীল ছিল। এবং তাদেরকে আমি আপন অনুগ্রহের অন্তর্ভুক্ত করেছি। নিশ্চয় তারা আমার বিশেষ নৈকট্যের উপযোগীদের অন্তর্ভুক্ত।” [আল-কুরআন, ২১:৮৫-৮৬]

১৬. অতঃপর উক্ত সূরার ৮৭-৯০ আয়াতগুলোতে সর্ব-পয়গম্বর ইউনুস (যূননুন খেতাবে পরিচিত), যাকারিয়্যা ও ইয়াহইয়ার (সবার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক) উল্লেখ করা হয়েছে; এই যিকরের পরিসমাপ্তি ঘটেছে তাঁদের আধ্যাত্মিক অবস্থার বর্ণনা দিয়ে: “নিশ্চয় তারা সৎকর্মসমূহে ত্বরা করতো এবং আমাকে ডাকতো আশা ও ভীতির সাথে, আর আমার দরবারে বিনীতভাবে প্রার্থনা করতো।”[আল-ক্বুরআন, ২১:৯০]

১৭. আল্লাহতা’লা এরপর তাঁরই আশীর্বাদধন্য ও প্রিয় এসব বান্দার কথা স্মরণ করার উদ্দেশ্যটুকু ব্যাখ্যা করে এরশাদ ফরমান: “নিশ্চয় এ কুরআন যথেষ্ট এবাদতকারীদের জন্যে।” [আল-কুরআন, ২১:১০৬]

১৮. এই পুরো সূরাটি-ই আল্লাহর সম্মানিত বান্দাদের নিরবচ্ছিন্ন এক যিকর তথা স্মরণ, কিন্তু এর চূড়ান্ত পরিণতি ঘটেছে যখন শাহেনশাহ-এ-মাহবুবীন (প্রিয়বান্দাদের মহারাজ) ও বিশ্বজগতের জন্যে আল্লাহতা’লার পরম করুণা (রহমত) মহানবী (ﷺ)-এর কথা উল্লেখিত হয়েছে। আল্লাহতা’লার নেয়ামতপ্রাপ্ত বান্দাদের এই স্মরণের সমাপ্তি হয়েছে নিম্নের এই ভাষ্য দ্বারা: “আর আমি আপনাকে (হে রাসূল) সমগ্র জগতের জন্যে রহমতরূপেই প্রেরণ করেছি।” [আল-ক্বুরআন, ২১:১০৭]

১৯. এরপর আর কোনো পয়গম্বর (عليه السلام)-এর ব্যাপারে উল্লেখ করা নেই, কেননা মহব্বতের এই স্মৃতিচারণ তার চূড়ান্ত পরিণতি পেয়েছে। মহানবী (ﷺ)-এর যিকর-তাযকেরা’র পরে অধ্যায়টির পরিসমাপ্তি ঘটেছে মহান আল্লাহতা’লার যিকর (স্মরণ) দিয়ে; এরশাদ হয়েছে: “নবী আরয করলেন, ‘হে আমার রব্ব! ন্যায় মীমাংসা করে দিন এবং আমাদের রব্ব রহমানেরই সাহায্য আবশ্যক ওইসব কথার ওপর, যা তোমরা বলছো।” [আল-ক্বুরআন, ২১:১১২, তাফসীরে নূরুল এরফান]

২০. সূরা সা’আদ-এ আল্লাহতা’লা এরশাদ ফরমান: “এবং স্মরণ করুন ইসমাঈল, ইয়াসা ও যূল-কিফল’কে এবং (তারা) সবাই সজ্জন।” [আল-ক্বুরআন, ৩৮:৪৮]

এই পাঁচটি অধ্যায় হতে মাত্র কয়েকটি আয়াত-ই (এখানে) নির্বাচন করা হয়েছে; নতুবা আল্লাহতা’লা তাঁরই প্রিয় বান্দাদের কথা উল্লেখ করেছেন এমন উদ্ধৃতি কুরআন মজীদে ভরপুর। এসব উদ্ধৃত অংশে প্রিয় বান্দাদের আধ্যাত্মিক সাধনা ও প্রচেষ্টাকে স্মরণ করা হয়েছে; এই নেয়ামত-প্রাপ্ত (মানে আশীর্বাদধন্য) বান্দাদের উচ্চারিত দোয়া/প্রার্থনা-বাক্য ও সেগুলোর বর্ণনাপ্রসঙ্গ এবং ধরন সবই বর্ণিত হয়েছে। উপরন্তু, তাঁরা যে ঐশী অনুগ্রহ ও দান পেয়েছেন তার পাশাপাশি তাঁদের দৃঢ়তা ও শ্রেষ্ঠত্বের কথাও উল্লেখিত হয়েছে। সংক্ষেপে, তাঁদের জীবনের কোনো দিক-ই বাদ দেয়া হয়নি, আর প্রত্যেককে বারংবার স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে যে এসব যিকর-তাযকিরা শুধু তাঁদের জন্যেই সুনির্দিষ্ট, যাঁরা আল্লাহর এবাদত-বন্দেগী ও আনুগত্যে অটল, অবিচল।

কেউ আল্লাহতা’লার রেযামন্দি (সন্তুষ্টি) ও নৈকট্যলাভের মাধ্যম হিসেবে এবাদত-বন্দেগী ও আনুগত্যকে গ্রহণ করতে চাইলে এই যিকর-তাযকিরা’কে তার উচ্চাকাঙ্ক্ষার উৎস হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। এই কারণেই মহান সাহাবাবৃন্দের (رضي الله عنه) সময়কাল হতে অদ্যাবধি, প্রতিটি যুগেই, সৃষ্টিকুল শিরোমণি প্রিয়নবী (ﷺ)-এর পবিত্র জীবনবৃত্তান্তের যিকর-তাযকিরা ঈমানদারদের বৈশিষ্ট্য হয়েছে। ইমামমণ্ডলী, মুহাদ্দেসীন ও আল্লাহতা’লার সকল পুণ্যবান বন্ধু (আউলিয়া) নিজ নিজ প্রকৃতি অনুসারে মহানবী (ﷺ)-এর যিকর-তাযকেরায় সমাবেশের আয়োজন করেছেন; আর প্রতিটি যুগেই এই ঐশী প্রথা সম্পর্কে শত শত গ্রন্থ লেখা কিংবা সংকলন করা হয়েছে।

ক্বুরআন মজীদের একটি বৈশিষ্ট্য হলো, পয়গম্বর (عليه السلام)-বৃন্দের বেলাদত তথা ধরাধামে শুভাগমনের বর্ণনাগুলো স্বয়ং আল্লাহতা’লাই করেছেন। এক্ষেত্রে মওলিদের স্মরণ বা স্মৃতিচারণ প্রকৃতপক্ষে আল্লাহতা’লারই সুন্নাহ (রীতি)।

__________________

মওলিদুন্নবী (ﷺ)-এর উদযাপন ও অনুমতি (১ম খণ্ড)

মূল: শায়খুল ইসলাম ড: মুহাম্মদ তাহিরুল কাদেরী

অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন