পয়গম্বর মূসা (عليه السلام)-এর মওলিদ

পয়গম্বর মূসা (عليه السلام)-এর মওলিদ

পয়গম্বর মূসা (عليه السلام) হচ্ছেন সেই মহান পয়গম্বর, যাঁকে খোদা দাবিদার নিষ্ঠুর ও স্বৈরাচারী শাসক ফেরাউনের মোকাবেলা করার জন্যে প্রেরণ করা হয়েছিল। সর্বশক্তিমান আল্লাহতা’লা তাঁকে পাঠিয়ে বনূ ইসরাঈল জাতিকে ফেরাউনের অত্যাচার-নিপীড়ন ও বিশ্বাসঘাতকতা হতে রক্ষা করেছিলেন; এরই ফলশ্রুতিতে ফেরাউন পানিতে ডুবে মরে এবং (খোদার) উপদেশের এক (স্মারক) চিহ্নে সে পরিণত হয়; আর মানবতার জন্যেও এক শিক্ষা হয়ে থাকে। ফেরাউনের গণকবর্গ তাকে জানায় যে সহসা এক শিশুর জন্ম হতে যাচ্ছে যিনি তার সিংহাসন উল্টে ফেলবেন। ফলে ফেরাউন এর প্রতিক্রিয়াস্বরূপ তার অত্যাচারের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। সে পুত্র-শিশুদের হত্যা করতে বলে, আর মেয়ে-শিশুদের জীবিত ছেড়ে দেয়। এমনি এক পরিস্থিতিতে পয়গম্বর মূসা (عليه السلام)-এর বেলাদত হয়, যেমনটি আল্লাহতা’লা কর্তৃক উল্লেখিত হয়েছে কুরআন মজীদের বিভিন্ন আয়াতে করীমায়।

সূরা আল-ক্বাসাস আরম্ভ হয় এই ঘটনার বর্ণনা দ্বারা, যেটা ৫০টি আয়াতের সমষ্টি। প্রথম পাঁচটি আয়াত পয়গম্বর মূসা (عليه السلام)-সম্পর্কিত বর্ণনাসম্বলিত। নিচে প্রথম ১৪টি আয়াত উদ্ধৃত হলো, যেগুলো তাঁর বেলাদত হতে যৌবনকাল পর্যন্ত বিবরণ দেয়, যা দ্বারা এই বাস্তবতা ফুটে ওঠেছে যে আম্বিয়া (عليه السلام)-বৃন্দের মওলিদকে স্মরণ করা আল্লাহতা’লারই সুন্নাহ। এরশাদ হয়েছে:

ত্বোয়া- সী—-ম্ মী—-ম। এ আয়াতগুলো সুস্পষ্ট কিতাবের। আমি আপনার প্রতি পাঠ করি মূসা ও ফেরাউনের সত্য সংবাদ ওই সমস্ত লোকের জন্যে, যারা ঈমান রাখে। নিশ্চয় ফেরাউন পৃথিবীতে কর্তৃত্ব লাভ করেছিল এবং তার লোকজনকে তার অনুসারী করেছে; তাদের মধ্যে একটা দলকে দুর্বল দেখতো, তাদের পুত্র-সন্তানদেরকে হত্যা করতো এবং তাদের নারীদেরকে জীবিত রাখতো। নিশ্চয় সে বিপর্যয় সৃষ্টিকারী ছিল। আর আমি চাচ্ছিলাম ওই দুর্বলদের প্রতি অনুগ্রহ করতে এবং তাদেরকে নেতৃত্ব দান করতে, আর তাদেরকে তাদের দেশ ও ধনসম্পদের অধিকারী করতে; আর তাদেরকে ভূ-পৃষ্ঠে ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত করতে এবং ফেরাউন, হামান ও তাদের সৈন্যবাহিনীকে তাই দেখিয়ে দিতে, যার আশঙ্কা তাদের মনে এদের দিক থেকে রয়েছে। এবং আমি মূসার মাকে গোপন-প্রেরণা দিয়েছি যে, ‘তাকে দুধ পান করাও। অতঃপর যখন তার সম্পর্কে তোমার আশঙ্কা হয়, তবে তাকে দরিয়ায় নিক্ষেপ করো আর না ভয় করো এবং না দুঃখ। নিশ্চয় আমি তাকে তোমার কাছে ফিরিয়ে আনবো এবং তাকে রাসূল করবো।’ অতঃপর তাকে উঠিয়ে নিলো ফেরাউনের পরিবারের লোকজন, যেন সে তাদের শত্রু ও তাদের দুঃখের কারণ হয়। নিশ্চয় ফেরাউন ও হামান এবং তাদের সৈন্যদল অপরাধী ছিল। এবং ফেরাউনের স্ত্রী বললো, ‘এ শিশু আমার ও তোমার নয়নের শান্তি, তাকে হত্যা করো না; হয়তো এটা আমাদের উপকারে আসবে, অথবা আমরা তাকে পুত্র হিসেবে গ্রহণ করে নেবো।’ এবং তারা বুঝতে পারেনি। এবং সকালে মূসার মায়ের হৃদয় ধৈর্যহীন হয়ে পড়লো। অবশ্য সে তার অবস্থা প্রকাশ করে দেয়ার উপক্রম হয়েছিল যদি আমি তার অন্তরকে দৃঢ় করে না দিতাম, যাতে সে আমার প্রতিশ্রুতির প্রতি আস্থাশীল থাকে। এবং তার মা তার বোনকে বললো, ‘তার পেছনে পেছনে চলে যা।’ অতঃপর সে তাকে দূর থেকে দেখছিল এবং ওদের জানা ছিল না। এবং আমি আগে থেকেই সমস্ত ধাত্রীকে তার জন্যে হারাম করে দিয়েছিলাম। সুতরাং সে বললো, ‘আমি তোমাদেরকে কি এমন পরিবারের সন্ধান দেবো, যারা তোমাদের এ শিশুকে লালন-পালন করবে এবং তারা তার মঙ্গলকামী?’ অতঃপর আমি তাকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিলাম, যাতে মায়ের চোখ জুড়ায় এবং দুঃখ না করে আর জেনে নেয় যে, আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য; কিন্তু অধিকাংশ লোক জানে না। আর সে যখন আপন যৌবনে উপনীত হলো এবং পূর্ণ শক্তিপ্রাপ্ত হলো, তখন আমি তাকে হুকুম ও জ্ঞানদান করলাম, আর আমি অনুরূপ পুরস্কার প্রদান করি সৎকর্মপরায়ণদেরকে।[আল-কুরআন, ২৮:১-১৪]

এই ১৪টি আয়াতে আল্লাহতা’লা নিম্নবর্ণিত বিষয়গুলোর উল্লেখ করেছেন: পয়গম্বর মূসা (عليه السلام)-এর বেলাদতের পূর্ববর্তী ঘটনাবলী, তাঁর বেলাদতের মুহূর্ত, আল্লাহরই আদেশে তাঁকে একটি ঝুড়িতে/পাত্রে রাখা, ফেরাউনের পরিবারে তাঁকে নিয়ে যাওয়া এবং অবশেষে তাঁকে তাঁর মায়ের জিম্মায় রেখে দুধপান করে পূর্ণ যৌবনে উপনীত করা। এটাই হচ্ছে পয়গম্বর মূসা (عليه السلام)-এর মওলিদ।

__________________

মওলিদুন্নবী (ﷺ)-এর উদযাপন ও অনুমতি (১ম খণ্ড)

মূল: শায়খুল ইসলাম ড: মুহাম্মদ তাহিরুল কাদেরী

অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন