পয়গম্বর ইয়াহইয়া (عليه السلام)-এর মওলিদ
সর্বশক্তিমান আল্লাহ পাক পয়গম্বর ইয়াহইয়া (عليه السلام)-এর মওলিদ সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন। পয়গম্বর যাকারিয়্যা (عليه السلام) যখন মরিয়ম (عليه السلام)-এর যত্ন নিচ্ছিলেন, তখন তিনি মরিয়ম (عليه السلام)-এর বসতভিটায় ওই (বরকতময়) স্থানকে অসীলা করে আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলেন। এ সম্পর্কে মহান প্রভু এরশাদ ফরমান:
“এখানে প্রার্থনা করলেন যাকারিয়্যা আপন রব্বের কাছে। আরয করলেন, ‘হে আমার প্রভু! আমাকে আপনার কাছ থেকে প্রদান করুন পবিত্র সন্তান। নিশ্চয় আপনি-ই প্রার্থনা শ্রবণকারী।’ তখন ফেরেশতাবৃন্দ তাকে সাড়া দিলো এবং তিনি আপন নামাযের স্থানে দণ্ডায়মান অবস্থায় নামায পড়ছিলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ আপনাকে সুসংবাদ দিচ্ছেন ইয়াহইয়ার, যে আল্লাহর পক্ষের একটা কলেমার সত্যায়ন করবেন এবং সরদার ও সব সময়ের জন্যে নারীদের থেকে বিরত থাকবেন এবং নবী, আমার খাস বান্দাদের মধ্য থেকে (হবেন)।’ বললেন, হে আমার রব্ব! আমার সন্তান কোত্থেকে হবে? আমি তো বার্ধক্যে উপনীত এবং আমার স্ত্রী-ও বন্ধ্যা।’ এরশাদ করলেন, ‘আল্লাহ এভাবেই করেন, যা চান।’ আরয করলেন, ‘হে আমার রব্ব! আমার জন্যে কোনো নিদর্শন করে দিন!’ এরশাদ করলেন, ‘তোমার নিদর্শন এ-ই যে তিন দিন পর্যন্ত তুমি লোকজনের সাথে কথাবার্তা বলবে না, কিন্তু ইঙ্গিতে-ইশারায় এবং অাপন রব্বকে খুব স্মরণ করো; আর বিকেলে ও প্রভাতে তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করো।’ [আল-ক্বুরআন, ৩:৩৮-৪১]
এটা স্পষ্ট হওয়া দরকার যে পয়গম্বর ইয়াহইয়া (عليه السلام)-এর তখনো বেলাদত তথা ধরণীতলে আবির্ভাব ঘটেনি। শুধু পয়গম্বর যাকারিয়্যা (عليه السلام)-এর দোয়া কবূল হয়েছিলমাত্র। এমন কি তাঁর বেলাদতের আগেই আল্লাহতা’লা তাঁর কিছু বৈশিষ্ট্যের কথা এখানে উল্লেখ করেছেন। অধিকন্তু, সূরা মরিয়মে পয়গম্বর ইয়াহইয়া (عليه السلام)-এর বেলাদতের কথা পুরোপুরি উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে প্রথম আয়াতটি তাঁর মওলিদের বর্ণনা দ্বারা সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। এরশাদ হয়েছে:
“কা—-ফ হা-ইয়া- ‘আঈ—-ন সোয়া—-দ (কেবল আল্লাহ পাক ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম-ই এর প্রকৃত অর্থ জানেন)। এটা হচ্ছে বিবরণ আপনার রব্বের ওই অনুগ্রহের, যা তিনি আপন বান্দা যাকারিয়্যার প্রতি করেছেন।” [আল-ক্বুরআন, ১৯:১-২]
এসব আয়াতে জানা যায় যে কোনো পয়গম্বরের (عليه السلام) বেলাদত/মওলিদকে স্মরণ করাটা কুরআন মজীদে আল্লাহতা’লার করুণা হিসেবে ব্যক্ত হয়েছে। পয়গম্বর ইয়াহইয়া (عليه السلام)-এর মওলিদের স্মরণ যদি আল্লাহর রহমত তথা করুণারই স্মরণ হয়, তাহলে প্রিয়নবী (ﷺ)-এর মওলিদের স্মরণ-ও কেন আল্লাহর রহমতের স্মরণ হতে পারবে না? সমগ্র বিশ্বজগতের জন্যে খোদার রহমত হিসেবে যিনি প্রেরিত হয়েছেন, তাঁর থেকে সেরা আর কী রহমত হতে পারে? অতএব, যৌক্তিকভাবে বলতে গেলে মহানবী (ﷺ)-এর মওলিদের স্মরণ প্রকৃতপ্রস্তাবে আল্লাহতা’লারই রহমতের স্মরণ বটে।
আল-কুরআন পয়গম্বর ইয়াহইয়া (عليه السلام)-এর মওলিদকে খোদার রহমত বলে উল্লেখ করেছে নিম্নবর্ণিত কারণে; এরশাদ হয়েছে:
“যখন তিনি (যাকারিয়্যা) আপন রব্বকে নীরবে আহ্বান করেছেন। আরয করলেন, ‘হে আমার প্রভু! আমার অস্থি দুর্বল হয়ে গেছে আর মাথা থেকে বার্ধক্যের শিখা প্রকাশ পেয়েছে (মানে সাদা হয়েছে), এবং হে আমার রব্ব! আপনাকে আহ্বান করে আমি কখনো ব্যর্থ হইনি। এবং আমার মনে আমার পরে আপন স্বজনদের সম্পর্কে আশঙ্কা রয়েছে; আর আমার স্ত্রী বন্ধ্যা; সুতরাং আমাকে আপনার কাছ থেকে এমন কাউকে দান করুন, যে আমার কাজ সম্পাদন করবে। সে আমার উত্তরাধিকারী হবে এবং ইয়া’কুবের বংশধরদের উত্তরাধিকারী হবে; এবং হে আমার রব্ব! তাকে পছন্দ করুন।’ হে যাকারিয়্যা! আমি তোমাকে সুসংবাদ শুনাচ্ছি এক পুত্রের, যার নাম ইয়াহইয়া; এর পূর্বে আমি এ নামে কাউকেও নামকরণ করিনি। আরয করলেন, ‘হে আমার রব্ব! আমার পুত্র কোত্থেকে হবে? আমার স্ত্রী তো বন্ধ্যা এবং আমি বার্ধক্যের কারণে শুকিয়ে যাবার উপক্রম।’ (আল্লাহ) বললেন, ‘এরকম-ই হবে।’ তোমার রব্ব বলেছেন, ‘তা আমার জন্যে সহজসাধ্য এবং আমি এর আগে তোমাকে ওই সময়ে সৃষ্টি করেছি যখন তুমি কিছুই ছিলে না।’ আরয করলেন, ‘হে আমার রব্ব! আমাকে কোনো নিদর্শন দিন।’ (আল্লাহ) বললেন, ‘তোমার নিদর্শন এই যে, তুমি তিন রাত-দিন মানুষের সাথে বাক্যালাপ করবে না একেবারে সুস্থ থাকা সত্ত্বেও।’ অতঃপর মসজিদ থেকে আপন সম্প্রদায়ের কাছে বের হয়ে এলেন, তারপর তাদেরকে ইঙ্গিতে বললেন, ‘সকাল-সন্ধ্যায় (আল্লাহর) পবিত্রতা ঘোষণা করতে থাকো।’ ‘হে ইয়াহইয়া! কিতাবটা দৃঢ়তার সাথে ধারণ করো।’ এবং আমি তাকে শৈশবেই নবূয়ত প্রদান করেছি। এবং আমার কাছ থেকে দয়া ও পবিত্রতা; আর (তিনি) পরিপূর্ণ খোদভীরু (বান্দা) ছিলেন। এবং আপন মাতা-পিতার সাথে সদ্ব্যবহারকারী ছিলেন, উদ্ধত ও অবাধ্য ছিলেন না। এবং শান্তি তারই প্রতি যেদিন জন্মগ্রহণ করেছেন, যেদিন বেসালপ্রাপ্ত হবেন এবং যেদিন হায়াতে পুনরুত্থিত হবেন।” [আল-ক্বুরআন, ১৯:৩-১৫; মুফতী আহমদ এয়ার খাঁন (رحمة الله) প্রণীত ‘তাফসীরে নূরুল এরফান’]
সূরার এই প্রাথমিক আয়াতগুলো সম্পূর্ণভাবে পয়গম্বর ইয়াহইয়া (عليه السلام)-এর মওলিদের স্মরণেই নির্দিষ্ট হয়েছে, যেখানে তাঁর বেলাদতের কথা উল্লেখিত হয়েছে এবং তাঁরই জন্যে পয়গম্বর যাকারিয়্যা (عليه السلام)-এর কৃত দোয়ার ব্যাপারেও উল্লেখ করা হয়েছে। সর্বশক্তিমান আল্লাহতা’লা পয়গম্বর ইয়াহইয়া (عليه السلام)-এর বেলাদতের সুসংবাদ প্রদান করেছেন; আর যখন পয়গম্বর যাকারিয়্যা (عليه السلام) তাঁর বিস্ময়ের কথা ব্যক্ত করেন, তখন আল্লাহ পাক নিজ কুদরত তথা সর্বশক্তিমান হওয়ার ক্ষমতা সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন। সংক্ষেপে, আল্লাহতা’লা ও পয়গম্বর যাকারিয়্যা (عليه السلام)-এর মাঝে যে বাক্যালাপ হয়েছিল, তার সম্পূর্ণ বিবরণ কুরআন মজীদে বিবৃত হয়েছে। অতঃপর পয়গম্বর ইয়াহইয়া (عليه السلام)-এর আধ্যাত্মিক মাকাম (স্তর)-এর কিছু দিক এবং তাঁরই জীবনের কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁর আশীর্বাদপূর্ণ বেলাদত ও জীবনের ঘটনাবলী উল্লেখের পরে এই বর্ণনার পরিসমাপ্তি ঘটেছে তাঁর বেলাদত, বেসালপ্রাপ্তি ও শেষ বিচার দিবসে পুনরুত্থানের প্রতি শান্তি বর্ষণের মাধ্যমে। আল-কুরআনে এসব ঘটনা স্মরণ করার উদ্দেশ্য হলো, আমাদের মস্তিষ্কে পয়গম্বর ইয়াহইয়া (عليه السلام)-এর মওলিদের তাৎপর্য সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা। এটাই হচ্ছে কুরআনে বর্ণিত পয়গম্বর ইয়াহইয়া (عليه السلام)-এর মওলিদ।
__________________
মওলিদুন্নবী (ﷺ)-এর উদযাপন ও অনুমতি (১ম খণ্ড)
মূল: শায়খুল ইসলাম ড: মুহাম্মদ তাহিরুল কাদেরী
অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন
🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন