ইসলামের ৭৩ দলদুলো কি কি?


❏ প্রশ্ন-৯ঃ-ইসলামের ৭৩ দলদুলো কি কি?বর্ণনা করো।

✍ উত্তর:-

هو المستعان ইসলাম ধর্মে মোট ৭৩ দল রয়েছে। তম্মধ্যে একটি দল- আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত। বাকী ৭২ দল মূলতঃ ছয় দলে বিভক্ত:-


১. রাফেজী,


২. খারেজী,


৩. জবরিয়াহ,


৪. কদরিয়াহ,


৫. জাহমিয়াহ্


এবং


৬. মার্জিয়াহ্।



অতঃপর এদের প্রত্যেক দল ১২ দলে বিভক্ত হয়েছে।


রাফেজিয়া ফেরকার ১২ দল নিম্নরূপ:


১.উলুবিয়্যাহ: যারা হযরত আলীকে নবী বলে।


২.আজরিয়্যাহ: যারা হযরত আলীকে নবুয়তের শরীক মনে করে।


৩.শিয়া: তাদের মতে, যারা হযরত আলীকে সকল সাহাবার চেয়ে উত্তম মনে না করে, তারা কাফির।


৪.ইসহাকিয়্যাহ: যারা বলে নবুয়ত এখনো শেষ হয়নি।


৫.যাইদিয়্যাহ: যারা বলে, নামাযের ইমামতির জন্য হযরত আলীর বংশধর ছাড়া অন্য কেউ যোগ্য নহে।


৬.আব্বাসিয়াহ: যারা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব ছাড়া অন্য কাউকে ইমাম মনে করে না।


৭.ইমামিয়্যাহ: যারা ইহজগতকে অদৃশ্য ইমাম থেকে শূন্য মনে করে না এবং তারা নামায কেবল হাশেমী বংশের পেছনেই পড়ে।


৮.নাদেসিয়্যাহ: যারা বলে, যে ব্যক্তি নিজেকে অন্যের চেয়ে উত্তম মনে করে সে কাফির।


৯.মুতনাসেহিয়্যাহ: যারা বলে, প্রাণ যখন দেহ থেকে বের হয়ে যায়, তখন অন্যের দেহে চলে যাওয়া জায়েয।


১০.লানিয়্যাহ: যারা হযরত তালহা (رضى الله تعالي عنه), হযরত যুবাইর (رضى الله تعالي عنه) এবং হযরত আয়েশা (رضى الله تعالي عنه) সহ সবাইকে অভিশাপ দেয়।


১১.রাজেইয়্যাহ: যারা বলে, হযরত আলী পুনরায় পৃথিবীতে আসবেন।


১২.মুরতাযিয়্যাহ: যারা বলে, মুসলিম বাদশাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা জায়েয।



খারেজিয়্যাহ ফেরকার ১২ দল নিম্নরূপ:


১.আযরক্বিয়্যাহ: যারা বলে, স্বপ্নযোগে কোন ব্যক্তি নেকী বা ভাল কিছু দেখতে পারবে না, ওহী বা ঐশিবাণী বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে।


২.রিয়াযিয়্যাহ: যারা বলে, ভাল কথা, ভাল কাজ, সৎ নিয়্যত এবং সুন্নাতকেই ঈমান বলে।


৩.সা‘লাবিয়্যাহ: যারা বলে, আমাদের কাজ-কর্ম আল্লাহ্ তা‘আলার কল্পনায় অর্জিত হয়েছে। তাঁর কুদরত কিংবা ইচ্ছা শক্তিতে নয়।


৪.খাযেমিয়্যাহ: যারা বলে, ফরযিয়ত বা ফরয হওয়ার বিষয়গুলো জানা যায়নি।


৫.খল্ফিয়্যাহ: যারা বলে, কাফিরদের মোকাবিলায় যে কেউ পলায়ন করা কুফরী।


৬.কুযিয়্যাহ: যারা বলে, অধিক ঘষা-মাজা ও মালিশ ছাড়া শরীর পবিত্র হয় না।


৭.    কন্যিয়্যাহ: যারা বলে, যাকাত দেয়া ফরয নয়।


৮.মু‘তাযিলাহ: যারা বলে- মন্দ কাজ আল্লাহ্ কর্তৃক নির্ধারিত নয়। ফাসিক ইমামের পিছনে নামায জায়েয নয়। ঈমান মানুষের অর্জিত বিষয়। কোরআন মাখলুক বা সৃষ্ট বস্তু। সদ্কা ও দু‘আ দ্বারা মৃত ব্যক্তির নিকট কোন উপকার পৌঁছে না। মি‘রাজ বাইতুল মুকাদ্দাসের ঊর্ধ্বে প্রমাণিত নয়। কিয়ামত দিবসে হিসাব-নিকাশ, আমলনামা, মিযান, পাপ-পূণ্য ইত্যাদি কিছুই নেই। ফিরিশতারা মু’মিনদের চেয়ে উত্তম। কিয়ামত দিবসে আল্লাহর দিদার ও দর্শন লাভ হবে না। আউলিয়া-ই কিরামের কারামত বা অলৌকিকত্ব বলতে কিছুই নেই। জান্নাতবাসীদের জন্য ঘুম ও মৃত্যু আছে। হত্যাকৃত ব্যক্তি নির্ধারিত সময়ে মারা যায় না। কিয়ামতের আলামত সমূহ যেমন- দাজ্জাল ইত্যাদি বলতে কিছুই নেই।


৯.মাইমুনিয়্যাহ: যারা বলে, অদৃশ্যের ওপর ঈমান আনা বাতিল ও মিথ্যা।


১০.    মুহকামিয়্যাহ: যারা বলে, সৃষ্টির মাঝে আল্লাহ্ তা‘আলার কোন কর্তৃত্ব নেই।


১১.সিরাজিয়্যাহ: যারা বলে, পূর্ববর্তী লোকদের অবস্থা আমাদের জন্য দলিল নয়, বরং তাদের অস্বীকার করা ওয়াজিব।


১২.আখ্তাসিয়্যাহ: যারা বলে, বান্দা স্বীয় কর্ম ও আমলের কোন বিনিময় পাবে না। উপরে বর্ণিত বার প্রকার খারেজী অনুসারীদের প্রকারসমূহ।



জবরিয়্যাহ ফেরকার ১২ দল নিম্নরূপ:


১.মুদ্ত্বারিবাহ: যারা বলে, ভাল-মন্দ সব আল্লাহর পক্ষ থেকে। এতে বান্দার কোন ইখতিয়ার নেই।


২.আফ‘আলিয়্যাহ: যারা বলে, বান্দা কাজ তো করে কিন্তু এতে তার কোন শক্তি ও ইখতিয়ার নেই।


৩.শা‘ঈয়্যাহ: যারা বলে, বান্দার জন্য কর্ম ও শক্তি আছে। কিন্তু এ শক্তি ও সামর্থ আল্লাহ'র পক্ষ থেকে নয়।


৪.তারেকিয়্যাহ: যারা বলে, ঈমানের পর আর অন্য কিছু ফরয নয়।


৫.বাহ্ছিয়্যাহ: যারা বলে, প্রত্যেক ব্যক্তি নিজের অংশ খেয়ে থাকে। সুতরাং কাউকে কিছু দেয়ার প্রয়োজন নেই।


৬.মুতমান্নিয়্যাহ: যারা বলে, আত্মা প্রশান্তি লাভ করে এমন সব বিষয় ভাল ও পূণ্য।


৭.কুসতারনিয়্যাহ: যারা বলে, পূণ্য ও শাস্তি আমলের  হতে পারে না।


৮.হাবীবিয়্যাহ: যারা বলে, বন্ধু আপন বন্ধুকে কখনো শাস্তি দিবে না।


৯.খাউফিয়্যাহ: যারা বলে, বন্ধু কখনো ভয় প্রদর্শন করে না।


১০.ফিক্রিয়্যাহ: যারা বলে, আল্লাহ'র মা‘রিফতে ধ্যানমগ্ন থাকা ইবাদতের চেয়ে উত্তম।


১১.হাস্বিয়্যাহ: যারা বলে, ইহজগতে কোন ধরনের ভাগ্য বন্টন নেই।


১২.হুজ্জতিয়্যাহ: যারা বলে, আল্লাহ'র নির্ধারণে যখন কাজ সম্পাদন হয়ে থাকে, তখন বান্দার ওপর কোন কৈফিয়ত তলব নেই, যার ফলে সে পাকড়াও হবে।



ক্বদরিয়া ফেরকার ১২ দল নিম্নরূপ:


১.আহ্দিয়্যাহ: যারা বলে, ফরয তো আমরা মানি কিন্তু সুন্নাতকে অস্বীকার করি।


২.ছনবিয়্যাহ: যারা বলে, পূণ্য আল্লাহ'র পক্ষ হতে এবং পাপাচার শয়তানের পক্ষ থেকে হয়।


৩.কীসানাহ: যারা বলে, আমাদের কর্মসমূহ মাখলুক বা সৃষ্ট।


৪.শয়তানিয়্যাহ: যারা বলে, শয়তানের কোন অস্তিত্ব নেই।


৫.শরীকিয়্যাহ: যারা বলে, ঈমান মাখলুক নয়। তা কখনো হয় আবার কখনো হয় না।


৬.ওহমিয়্যাহ: যারা বলে, আমাদের কর্মের কোন বিনিময় পাওয়া যাবে না।


৭.রুয়াইদিয়্যাহ: যারা বলে, পৃথিবী নশ্বর বা ধ্বংসশীল নয়।


৮.নাকিসিয়্যাহ: যারা বলে, ইমামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা জায়েয।


৯.মুতবর্রিয়্যাহ: যারা বলে, গুনাহগারের তাওবা কখনো কবুল হবে না।


১০.কাসিতিয়্যাহ: যারা বলে, ইলম, ধন-সম্পদ, জ্ঞান-বিজ্ঞান এবং রিয়াযত বা সাধনা করা ফরয।


১১.নিত্বামিয়্যাহ: যারা বলে, আল্লাহ্ তা‘আলাকে বস্তু বলা জায়েয।


১২.মুতওয়াক্কিয়্যাহ: যারা বলে, আমরা জানি না যে মন্দ নির্ধারিত বিষয় কি-না।



জাহমিয়্যাহ ফেরকার ১২ দল নিম্নরূপ:


১.মু‘আত্তলিয়্যাহ: যারা বলে, আল্লাহ্ তা‘আলার গুণাবলি মাখলুক বা সৃষ্ট।


২.মুতরা‘ঈয়্যাহ: যারা বলে, ইলম, শক্তি ও ইচ্ছা মাখলুক কিন্তু সৃষ্টি মাখলুক নয়।


৩.মুতরাক্বিবিয়্যাহ: যারা বলে, আল্লাহ্ তা‘আলা নির্দিষ্ট স্থানে সমাসীন।


৪.ওয়ারিদিয়্যাহ: যারা বলে, যারা দোযখে যাবে, তারা আর সেখান থেকে বের হতে পারবে না। আর মু’মিন দোযখে যাবে না।


৫.হরক্বিয়্যাহ: যারা বলে, দোযখীরা এমনভাবে জ্বলবে যে, তাদের কোন চিহ্নও সেখানে অবশিষ্ট থাকবে না।


৬.মাখলুক্বিয়্যাহ: যারা বলে, কোরআন, তাওরাত, ইনজিল ও যাবুর আসমানি কিতাবসমূহ মাখলুক।


৭.ইবরিয়্যাহ: যারা বলে, মুহাম্মদ   একজন বিচক্ষণ জ্ঞানী ও দার্শনিক ছিলেন কিন্তু রাসূল ছিলেন না।


৮.ফানিয়্যাহ: যারা বলে, জান্নাত ও দোযখ উভয়টি ধক্ষংস হয়ে যাবে।


৯.যানদক্বিয়্যাহ: যারা বলে, মি‘রাজ রূহানীভাবে সংঘটিত হয়েছিল, শারীরিক ভাবে নয়। আল্লাহ্ তা‘আলাকে দুনিয়াতে দেখা সম্ভব। ইহজগত অবিনশ্বর। কিয়ামত বলতে কিছুই নেই।


১০.লফ্যিয়্যাহ: যারা বলে, কোরআন পাঠকের কথা, আল্লাহ'র কালাম নয়।


১১.ক্ববরিয়্যাহ: যারা বলে, কবরে কোন শাস্তি হবে না। তারা কবরের আযাবকে অস্বীকার করে।


১২.ওয়াক্বিফিয়্যাহ: যারা বলে, কোরআন মাখলুক হওয়ার ব্যাপারে আমরা নিরব।



মারজিয়্যাহ ফেরকার ১২ দল নিম্নরূপ:


১.তারেকিয়্যাহ: যারা বলে, ঈমানের পর আর অন্য কোন বস্তু ফরয নয়।


২.শানিয়্যাহ: যারা বলে, যে ব্যক্তি لا اله الّا الله বলল, সে যা ইচ্ছা তা করতে পারবে তার কোন শাস্তি হবে না।


৩.রাজিয়্যাহ: যারা বলে, বান্দা আল্লাহ'র আনুগত্যের দ্বারা মাকবুল বা গ্রহণযোগ্য এবং অবাধ্যতার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হবে না।


৪.শাকিয়্যাহ: যারা বলে, রূহ বা আত্মাই ঈমান এবং তারা নিজের ঈমান নিয়ে সন্দেহ পোষণ করে।


৫.নাহমিয়্যাহ: যারা বলে, জ্ঞানের নাম ঈমান। যে ব্যক্তি আদিষ্ট ও নিষিদ্ধ সকল বিষয়াদি সম্পর্কে অজ্ঞ সে কাফির।


৬.আমলিয়্যাহ: যারা বলে, আমলের নাম ঈমান।


৭.মান্কুসিয়্যাহ: যারা বলে, ঈমান কখনো কম হয় আবার কখনো বেশি হয়।


৮.মুস্তাছনিয়্যাহ: যারা বলে, আমরা ইন্শাআল্লাহ্ মু’মিন।


৯.আশ্রাবাহ: যারা বলে, কিয়াস বাতিল ও অগ্রহণযোগ্য এবং দলিল হওয়ার গ্রহণযোগ্যতা রাখে না।


১০.বদঈয়্যাহ: যারা বলে, বাদশাহর আনুগত্য পোষণ করা ওয়াজিব, যদিও সে গুনাহর নির্দেশ দেয়।


১১.মুশাব্বিহিয়্যাহ: যারা বলে, আল্লাহ তা‘আলা হযরত আদম (عليه السلام)কে স্বীয় আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন।


১২.হস্বিয়্যাহ: যারা বলে, ওয়াজিব, সুন্নাত এবং মুস্তাহাব সবারই হুকুম এক।

5. আল্-ফরকুল ইসলামিয়াহ্।

_________________

কিতাবঃ ফতোয়ায়ে আজিজি (২য় খন্ড)

রচনায়ঃ মুহাম্মদ আজিজুল হক আল্-কাদেরী

সূত্রঃ 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন