ঝাঁড় ফুঁক - তাবিজ দেয়া,ধারন করা যাবে কিনা? ইসলামী সমাধান।



প্রশ্নঃ কোরআন মজিদ হেদায়াতের জন্য এসেছে। কোরআনী আমল করে কি রােগমুক্তি লাভ করা যায়?

উত্তরঃ কোরআন মজিদ হেদায়াত, রহমত, সমস্ত সমস্যার সমাধান এবং শিফা হিসাবেও অবতীর্ন হয়েছে। রােগ সমস্যার সমাধান কোরআনে না থাকলে তা পরিপূর্ণ বিধান হয় কি করে? আল্লাহ্ তায়ালা রােগমুক্তির জন্য যা কিছু পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন, তার মধ্যে কোরআন মজিদের চেয়ে বড় শিফা বা রােগমুক্তির আর কিছু অবতীর্ন করেননি।এই কোরআন- রােগের জন্য শিফা এবং অন্ধ কলবের জন্য শান ও রেত।

আল্লাহ্ তায়ালা এরশাদ করেন: অর্থ : আমি কোরআন মজিদের কিছু অংশ জাহেরী ও বাতেনী এবং দেহের ও অন্তরের রােগব্যাধির জন্য শিফা স্বরূপ এবং মু'মিনদের জন্য রহমত স্বরূপ নাযিল করেছি"। (সুরা বনী ইসরাঈল)।


নবী করিম ﷺ এরশাদ করেছেনঃ অর্থ : "যে ব্যক্তি কোরআনের দ্বারা রােগমুক্ত হতে পারেনি- তার জন্য যেন আল্লাহ কোন শিফা মঞ্জুর না করেন।

কোরআন মজিদে সর্বরােগের শিফা আছে। কিন্তু ব্যবহার বিধি পালন বা আমল না করার কারনে কোন কোন ক্ষেত্রে ফল পাওয়া যাচ্ছেনা। এই ক্রটি মানুষের। ব্যবস্থা পত্রের নয়। যেমন, বন্দুক আছে-গুলিও আছে। কিন্তু ট্রিগার টিপতে না জানলে কাজ হয় না। - অনুবাদক।


প্রশ্নঃ রােগের জন্য কোরআন, হাদীস- ইত্যাদি দ্বারা ঝাঁড় ফুক করা এবং তাবিজ দেয়া জায়েয কিনা? কোন কোন বইতে দেখা যায়- জায়েয নেই। তাদের জবাব কি?

উত্তর : দ্বীনের শীর্ষস্থানীয় ইমাম ও উলামাগন বলেছেন যে- তিনটি শর্ত সাপেক্ষে ঝাড় ফুক ও তাবিজ দোয়া করা জায়েয। শর্ত তিনটি হচ্ছে।

১। ঝাঁড় - ফুকের দোয়া আল্লাহর কালাম ও রাছুলের হাদীস এবং আল্লাহর নাম ও সিফাতের দ্বারা হতে হবে।

২। আরবী ভাষা হওয়া বাঞ্ছণীয়। তবে অন্যান্য ভাষায়ও হতে পারে- যদি অর্থ বােধগম্য হয় এবং শিরক ও কুফর মিশ্রিত কোন বাক্য না হয়।

৩। ঝাড়, ফুক বা তাবিজ দোয়ার নিজস্ব কোন পৃথক ক্ষমতা নেই-বরং আল্লাহ তায়ালার হুকুমে বা ইচ্ছায় এবং ঝঁড়, ফুক ও তাবিজ দোয়ার উদিলায় রােগ মুক্ত হয়। শিফা দানকারী আল্লাহ। ঝাঁড়, ফুক ও তাবিজ দোয়া উছিলা মাত্র- এই আকিদা পােষন করতে হবে।


প্রশ্নঃ ঝাড় ফুক জায়েয হওয়ার দলীল কি?

উত্তর : মুসলিম শরীফে বর্নিত হযরত আউফ ইবনে মালেক রদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর রেওয়ায়াতকৃত হাদীসঃ হযরত আউফ ইবনে মালেক (রাঃ) হতে বর্নিত -তিনি বলেনঃ আমরা জাহেলিয়াত যুগে (দেবদেবীর নামে) ঝাড় ফুঁক করতাম। মুসলমান হওয়ার পর আমরা হুজুর ﷺ কে আরজ করলাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ ﷺ। আপনি এ ব্যাপারে কি মনে করেন? হুজুর ﷺ এরশাদ করলেন : "তােমাদের ঝাঁড় ফুকের দোয়া আমার কাছে পেশ করাে। যদি তাতে শিরকের বিষয় না থাকে, তাহলে ঝাড় ফুঁকে কোনই দোষ নেই"। এতে বুঝা গেল, ঝাঁড় ফুক করা নির্দোষ ও বৈধ। (মুসলিম শরীফ)।


প্রশ্নঃ কোন ধরনের ঝাঁড় ফুক নিষিদ্ধ?

উত্তরঃ আরবী ব্যতিত অথবা সুবােধ্য ভাষা ব্যতিত অন্য কোন দুর্বোধ্য ভাষায় ঝাঁড় ফুক করা বা মন্ত্র দ্বারা ফুক দেয়া হারাম ও নিষিদ্ধ। কেননা, ঐ গুলােতে শিরকী বা কুফরী কালামও থাকতে পারে অথবা যাদুমন্ত্রও হতে পারে- যা হারাম। হাঁ, যদি শুদ্ধ অর্থ বােধক কালাম হয়, যেমন- আল্লাহর যিকির অথবা আল্লাহর নাম ও সিফাত যােগে কোন কিছু পাঠ করা হয় বা লিখা হয়, তাহলে অবশ্যই জায়েয হবে। বরং মােস্তাহাব কাজও বটে এবং বরকত পূর্ণও। সুরা ফাতেহা, নাছ, ফালাক, ইখলাছ- ইত্যাদি পাঠ করে ঝঁড় ফুঁক করলে সর্বরােগ আরােগ্য হয়। (আল হাদীস)।


প্রশ্ন : তাবিজ লিখা ও ধারন করা জায়েয কিনা?

উত্তর : যে সব কালামে বা বাক্যে কোন যাদু মন্ত্র নেই এবং যার ভাষাও অবােধ্য নয়- এমন সব কালাম দ্বারা এবং কোরআন ও হাদীস দ্বারা তাবিজ লিখা ও তা ধারন করা জায়েয। মানুষ এবং অন্যান্য প্রানীর দেহেও ঐ তাবিজ ধারন করা সহীহ্ মাযহাব মতে এবং মােহাক্কিক ওলামায়ে কেরামের মতে জায়েয। ইবনে কাইয়েম নিজ গ্রন্থ "যাদুল মাআদ"-এ ইবনে হিববান হাদীস গ্রন্থ সুত্রে বর্ননা করেছেন যে- ইবনে হিব্বান ইমাম জাফর ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আলী (রাঃ) কে প্রশ্ন করলেন- তাবিজ ধারন করা জায়নেয কিনা?

ইমাম জাফর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বললেনঃ "যদি আল্লাহর কালাম হয় অথবা নবীজীর হাদীস শরীফ হয়- তাহলে ধারন করাে এবং ঐ তাবীজের মাধ্যমে শেফা প্রার্থনা করাে"। ইহাও উল্লেখ আছে যে, ইমাম আহম্মদ ইবনে হাম্বল (রাঃ) কে তাবিজ ধারন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন- বালা মুসিবত নাজিল হওয়ার পর তাবিজ ধারন করা মাকরূহ তাে নয়ই- বরং কোন দোষও নেই। 

ইমাম আহম্মদ ইবনে হাম্বল (রাঃ)-এর ছেলে আবদুল্লাহ্ (রহঃ) বলেন- আমি আমার আব্বাকে হৃদকম্প রােগী ও জ্বরে আক্রান্ত রােগীর জন্য তাবিজ লিখতে দেখেছি। ওহাবী নেতা ইবনে তাইমিয়াও তার ফতােয়া গ্রন্থে উল্লেখ করেছে যে, অনেক বর্ননা কারীই হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ননা করেছেন যে, তিনি (ইবনে আব্বাস) কোরআনের আয়াত, জিকির আজকারের কলেমা ও বাক্য দ্বারা তাবিজ লিখতেন এবং রােগীকে উক্ত তাবিজের ধৌত পানি পান করানাের জন্য বলতেন। 

এতেই বুঝা যায় যে- তাবিজের মধ্যে রহমত ও বরকত আছে। ইমাম আহমদ (রহঃ)-এর তাবিজ লিখাই প্রমান করে যে- তাবিজ ধারন করা জায়েয।

উল্লেখ্য যে, সৌদি আরবের ওহাবী বাদশাহরা হাম্বলী মযহাব ও ইবনে তাইমিয়ার অনুসারী বলে দাবী করে। অথচ তারা তাদের ইমামের কথা মানেনা। বর্তমানে তারা বিভিন্ন পুস্তক বাজারে ছেড়েছে। ঐ গুলিতে শবে বরাত, শবে কদর, দোয়া তাবিজ ও ঝাড় ফুক, কবর যিয়ারত- ইত্যাদিকে হারাম বলা হয়েছে।

 তারা নিজ নেতাদের অনুসরন করলে আকিদারএই সংকট দেখা দিতনা এবং ঐ সব বই পড়ে মানুষও গােমরাহ্ হতােনা। -অনুবাদক)

প্রশ্নঃ হাদীস শরীফে তাবিজ ধারন করাকে শিরক বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমনঃ "যে তাবিজ লটকালাে- সে শিরক করলাে"। (আল হাদীস)। অথচ আপনি বললেন- জায়েয। তাহলে হাদীসের আসল ব্যাখ্যা কি?

উত্তরঃ হাদীসে শিরক বলা হয়েছে ঐ তাবিজকে- যা জাহিলিয়াত যুগে চামড়ার গলাবন্দ বা নল নইছা ইত্যাদি হিসাবে লটকানাে হতাে। তারা বিশ্বাস করতাে যে- ঐ গুলােই বালা দুর করে। তারা যা করতাে- তা ছিল শিরকের ধারনা প্রসূত। যেমন- তারা বিশ্বাস করতাে যে, আল্লাহ ছাড়া ঐ গলাবন্দই অসুখ ভাল করে এবং উপকার করে। ঐ গুলাতে আল্লাহর নামও কালাম কিছুই থাকতােনা। 

কাজেই ঐগুলাে হারাম ও শিরক। কোরআন হাদীস সম্মত তাবিজ বৈধ এবং সুন্নাতে সাহাবা।(প্রশ্নোত্তরে আকায়েদ ও মাসায়েল,পৃ:- ৭৮,৭৮,৮০,৮১)।



Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন