সমস্ত নবীগণ তাদের নিজ নিজ সমাধীতে জীবিত এবং সেখানে তাঁরা সালাতে রত: হাদিস নং- ১-১০


সাম্প্রতিক কালে আহলে হাদিস নামক এক বাতিল মতবাদ প্রবল বেগে গজিয়ে উঠেছে। তাদের বাতিল আক্বিদার অন্যতম হলো রাসূল কে হায়াতুন্নবী না মানা। তারা অনেক সহীহ হাদিসটিও গোপন করে বলে থাকে,  সমস্ত প্রাণীই মরণশীল আর তারা হাশরের ময়দান ছাড়া আর কোন সময়ই জীবিত হবে না। নাউযুবিল্লাহ! অনুরূপ টেলিভিশনের আলোচনায়ও কিছু নামধারী আলেমগণও এমনটি বলে থাকেন। তাই এ বিষয়ে কতিপয় হাদিসে পাক উল্লেখ করার জন্য আমাকে অনেকে অনুরোধ করেন। তাই এখানে কিছু হাদিসে পাক এবং সনদ পর্যালোচনা তুলে ধরছি। সুযোগ হলে বিস্তারিত গ্রন্থও লিখবো ইনশাআল্লাহ।


হাদিস নং-১


ইমাম বায্যার এবং আবূ ই‘য়ালা (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ - ﷺ -: الْأَنْبِيَاءُ أَحْيَاءٌ فِي قُبُورِهِمْ يُصَلُّونَ- 

-‘‘হযরত আনাস বিন মালিক (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত।  তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, নিশ্চয় আম্বিয়ায়ে কিরাম (আলাইহিমুস সালাম) তাঁদের নিজ নিজ কবরে জীবিত এবং তারা সেখানে নামায আদায় করেন।’’ ২৮১

২৮১.

ইমাম আবু ই‘য়ালা : আল মুসনাদ : ৬/১৪৭ পৃ: হা/৩৪২৫, ইমাম বায়হাকী : হায়াতুল আম্বিয়া : ৬৯-৭০পৃ., ইমাম হায়সামী : মাযমাউদ যাওয়াইদ : ৮/২১১ পৃ. হা/১৩৮১২, ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানী : তবকাতে ইস্পাহানী : ২/৪৪ পৃ:, ইমাম ইবনে আদী, আল-কামিল : ২/৭৩৯ পৃ:, ইমাম জালালুদ্দীন সূয়ুতী: আল-জামেউস সগীর : ১/২৩০ পৃ: হা/৩০৮৯, ইমাম জালালুদ্দীন সূয়ুতী: শরহুস সুদূর: পৃ. ২৩৭, আহলে হাদিস নাসিরুদ্দীন আলবানী: সিলসিলাতুস সহীহা: হাদিস নং- ৬২২, আহলে হাদিস নাসিরুদ্দীন আলবানী : সাহীহুল জামে : হা/২৭৯০, দায়লামী, আল-ফিরদাউস, ১/১১৯ পৃ. হা/৪০৩


সনদ পর্যালোচনা:


ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি (رحمة الله) বলেন, হাদিসটি ‘হাসান’। আর আহলে হাদিসের অন্যতম ইমাম নাসিরুদ্দীন আলবানী তার দুটি গ্রন্থে হাদিসটি সহীহ বলে মত প্রকাশ করেছেন। (আলবানী: সিলসিলাতুল আহাদিসুল সহীহা: হা/৬২২, এবং সাহীহুল জামে : হা/২৭৯০)


অপরদিকে আল্লামা ইবনে হাজার হাইসামী (رحمة الله) উক্ত হাদিসটির সনদ সর্ম্পকে বলেন,

رَوَاهُ أَبُو يَعْلَى وَالْبَزَّارُ، وَرِجَالُ أَبِي يَعْلَى ثِقَاتٌ

-‘‘উক্ত হাদিসটি ইমাম আবু ই‘য়ালা ও ইমাম বায্যার (رحمة الله) বর্ণনা করেছেন, আর ইমাম আবু ই‘য়ালার বর্ণনার সকল রাবী সিকাহ বা বিশ্বস্ত।’’ (ইমাম হায়সামী : মাযমাউদ যাওয়াইদ : ৮/২১১পৃ. হা/১৩৮১২)


হাদিস নং-২


এ প্রসঙ্গে সহীহ মুসলিম শরীফে আনাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। যেখানে বর্ণিত আছে মি‘রাজে মূসা (عليه السلام)এর কবরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় রাসূল (ﷺ) দেখেন-

مَرَرْتُ عَلَى مُوسَى وَهُوَ يُصَلِّي فِي قَبْرِهِ

-‘‘তিনি মুসা (عليه السلام) তাঁর কবরের মাঝে দাঁড়িয়ে সালাত পড়ছেন।’’  ২৮২

এ হাদিস থেকে সুস্পষ্ট প্রমাণিত হল হযরত মূসা (আ.) তাঁর মাজারে জিবীত বলেই রাসূল (ﷺ) দেখেছেন।


হাদিস নং-৩


হযরত আনাস বিন মালিক (رضي الله عنه) এর সূত্রে কিছু শব্দ বৃদ্ধি করে আরো হাদিস আছে এভাবে-

 مَرَرْتُ - عَلَى مُوسَى لَيْلَةَ أُسْرِيَ بِي عِنْدَ الْكَثِيبِ الْأَحْمَرِ، وَهُوَ قَائِمٌ يُصَلِّي فِي قَبْرِهِ

-‘‘রাসূল (ﷺ) বলেন, আমি মি‘রাজের রাতে মূসা (عليه السلام)-এর কবরের পাশ দিয়ে যেতে গিয়ে দেখি তিনি রক্তিম লাল বালুর স্তুপের নিকট কবরে দাঁড়িয়ে নামায পড়ছেন।’’ ২৮৩


হাদিস নং-৪


অনুরূপ হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত।  আরও সহীহ হাদিস রয়েছে,  তাতে পরিষ্কার হয়ে যাবে বিষয়টি-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولَ اللهِ ﷺ :وَقَدْ رَأَيْتُنِي فِي جَمَاعَةٍ مِنَ الْأَنْبِيَاءِ، فَإِذَا مُوسَى قَائِمٌ يُصَلِّي، فَإِذَا رَجُلٌ ضَرْبٌ، جَعْدٌ كَأَنَّهُ مِنْ رِجَالِ شَنُوءَةَ، وَإِذَا عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَائِمٌ يُصَلِّي، أَقْرَبُ النَّاسِ بِهِ شَبَهًا عُرْوَةُ بْنُ مَسْعُودٍ الثَّقَفِيُّ، وَإِذَا إِبْرَاهِيمُ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَائِمٌ يُصَلِّي، أَشْبَهُ النَّاسِ بِهِ صَاحِبُكُمْ - يَعْنِي نَفْسَهُ - فَحَانَتِ الصَّلَاةُ فَأَمَمْتُهُمْ-

-‘‘রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন,  মি‘রাজের রাত্রে আম্বিয়া (আলাইহিমুস সালাম) এর এক বিরাট জামাতকে দেখেছি,  মুসা (عليه السلام) কে তার কবরে সালাত পড়তে দেখেছি। তাকে দেখতে মধ্য আকৃতির চুল কোকরানো সানওয়া দেশের লোকের মত। আমি ঈসা (عليه السلام) কে দণ্ডামান অবস্থায় নামায পড়তে দেখেছি,  তিনি দেখতে ওরওয়া ইবনে মাসউদ সাকাফীর মত ........... তার পরে নামাযের সময় আসলো আমি সকল নবী (আলাইহিমুস সালাম)-এর ইমামতি করলাম।’’ ২৮৪


হাদিস নং-৫


হযরত আবু দারদা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুযূর (ﷺ) ইরশাদ করেন-

لَيْسَ مِنْ عَبْدٍ يُصَلِّي عَليّ إِلَّا بَلَغَنِيْ صَوْتُه حَيْثُ كَانَ قُلْنَا وَبَعْدَ وَفَاتِكَ قَالَ وَبَعْدَ وَفَاتِي إِنَّ اَللهَ حَرَّمَ عَلَى الْأَرْضِ أَنْ تَأْكُلَ أَجْسَادَ الْأَنْبِيَاءِ

-‘‘এমন ব্যক্তি নেই, যে আমার প্রতি দরূদ পাঠ করে যার আওয়াজ আমার কাছে পৌঁছে না (অর্থাৎ আমি তার আওয়াজ সরাসরি শুনি) সে যেখানে থাকুন না কেনো। সাহাবীগণ আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার ওফাতের পরও শুনবেন? তিনি বললেন, আমার ওফাতের পরও। কেননা আল্লাহ তা‘আলা নবীদের দেহ ভক্ষণ করা যমীনের জন্য হারাম করে দিয়েছেন।’’  ২৮৫


পর্যালোচনা


এ হাদিস থেকে বুঝা গেল, রাসূল (ﷺ) হায়াতুন্নবী হওয়ার কারণে সরাসরি তাঁর রওজা মুবারক হতে আমাদের সবার দরূদের আওয়াজ শুনেন, আর এটাই ছিল সাহাবায়ে কিরামের আক্বিদা।


হাদিস নং-৬


হযরত আবু দারদা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুযূর (ﷺ) একজনের প্রশ্নের জবাবে ইরশাদ করেন-

إِنَّ اللَّهَ حَرَّمَ عَلَى الْأَرْضِ أَنْ تَأْكُلَ أَجْسَادَ الْأَنْبِيَاءِ، فَنَبِيُّ اللَّهِ حَيٌّ يُرْزَقُ

-‘‘নিশ্চয় মহান রব তা‘আলা নবীদের শরীরকে যমীনের জন্য খাওয়া হারাম করে দিয়েছেন। ফলে নবীরা তাদের মাজারে জীবিত এবং সেখানে তাদের রিযিক দেয়া হয়।’’২৮৬

২৮২. ইমাম মুসলিম : আস-সহীহ : ৪/১৮৪৫ : হা/২৩৭৫, ইমাম নাসায়ী : সুনান : ৩/১৫১ : হা/১৬৩৭, ইমাম আহমদ : মুসনাদ : ৩/১২০ পৃ:, ইমাম বগভী : শরহে সুন্নাহ : ১৩/৩৫১ : হা/৩৭৬০, ইমাম ইবনে হিব্বান : আস-সহীহ : ১/২৪১ : হা/৪৯, ইমাম আবি শায়বাহ : আল মুসান্নাফ : ১৪/৩০৮ : হা/১৮৩২৪, ইমাম নাসায়ী : সুনানে কোবরা : ১/৪১৯ : হা/১৩২৯, ইমাম আবু ই’য়ালা : আল-মুসনাদ : ৭/১২৭ : হা/৪০৮৫, ইমাম মানাবী : ফয়যুল কাদীর : ৫/৫১৯ পৃ: হা/৩০৮৯, আল্লামা মুকরিযি : ইমতাঈল আসমা’আ : ১০/৩০৪ পৃ:


২৮৩. ইমাম মুসলিম : কিতাবুল ফাযায়েল : ৪/১৮৪৫ পৃ. : হা/২৩৭৫, ইমাম আহমদ : আল মুসনাদ : ৩/১৪৮ পৃ:, ইমাম বায়হাকী : দালায়েলুল নবুয়ত : ২/৩৮৭ পৃ:, ইমাম মানাবী : ফয়যুল কাদীর : ৫/৫১৯ পৃ:, ইমাম সুবকী : সিফাস সিকাম: ১৩৭ পৃ. ইমাম মুকরিযি : ইমতাঈ আসমা : ৮/২৫০ পৃ:, ইমাম মুকরিযি : ইমতাঈল আসমা : ১০/৩০৪ পৃ:, ইমাম সুয়ূতি : হাবীলিল-ফাতওয়া : ২/২৬৪ পৃ:, ইমাম সাখাভী : ক্বওলুল বদী : ১৬৮ পৃ, ইমাম আব্দুর রায্যাক : আল-মুসান্নাফ : ৩/৫৭৭ পৃ. হা/৬৭২৭


২৮৪. ইমাম মুসলিম : সহীহ : ফাদ্বায়েলে মূসা (আঃ) : ১/১৫৭ : হা/১৭৩, খতিব তিবরিজী : মিশকাতুল মাসাবীহ : ৩/২৮৭ : হা/৫৮৬৬, ইমাম বায়হাকী : দালায়েলুল নবুয়ত : ২/৩৮৭ পৃ:, ইমাম তকি উদ্দিন সুবকী :শিফাউস-সিকাম : ১৩৫-১৩৮পৃ. ইমাম সূয়ূতী : আল-হাভীলিল ফাতওয়া : ২/২৬৫পৃ:, ইমাম সাখাভী : কওলুল বদী : ১৬৮পৃ., ইমাম মুকরিজী : ইমতাঈল - আসমা: ৮/২৪৯ পৃ:



২৮৫. আল্লামা ইবনুল কাইয়্যুম জাওযিয়্যাহ, জালাউল আফহাম, ১৮১ পৃ. হা/১৪৪, দারু ইবনে জাওযী, বয়রুত, লেবানন।

২৮৬. ইমাম ইবনে মাযাহ, আস-সুনান, ১/৫২৪ পৃ. হা/১৬৩৭, খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ১/৪৩১ পৃ. হা/১৩৬৬, আহলে হাদিস আলবানীও একে সহীহ বলেছেন।


পর্যালোচনা


এ হাদিস থেকে সুস্পষ্ট বুঝা গেল যে, শুধু আমাদের নবীই নন বরং সমস্ত নবীরাই তাদের মাজারে জীবিত এবং সেখানে তাদের রিজিক দেয়া হয়। আর এ বিষয়ে সকলে একমত যে দেহ এবং রুহ একসাথে না হলে রিজিক গ্রহণ করার কথা আসে। তাই দেহ ও রূহ এসাথে ছাড়া রিযকের কথা যারা বলেন তাদের কথা হাস্যকরের ন্যায়।


হাদিস নং-৭


হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন-

حَيَاتِي خَيْرٌ لَكَمْ تُحْدِثُونَ وَيُحَدَثُ لَكَمْ، وَوَفَاتِي خَيْرٌ لَكَمْ تُعْرَضُ عَلَيَّ أَعْمَالُكُمْ، فَمَا رَأَيْتُ مِنْ خَيْرٍ حَمَدَتُ اللَّهَ عَلَيْهِ، وَمَا رَأَيْتُ مِنْ شَرٍّ اسْتَغْفَرْتُ اللَّهَ لَكَمْ-   

-‘‘আমার হায়াত তোমাদের জন্য উত্তম বা রহমত। কেননা আমি তোমাদের সাথে কথা বলি তোমরাও আমার সাথে কথা বলতে পারছ। এমনকি আমার ওফাতও তোমাদের জন্য উত্তম বা নেয়ামত। কেননা তোমাদের আমল আমার নিকট পেশ করা হবে এবং আমি তা দেখবো। যদি তোমাদের কোন ভালো আমল দেখি তাহলে আমি আল্লাহর নিকট প্রশংসা করবো, আর তোমাদের মন্দ কাজ দেখলে আল্লাহর কাছে তোমাদের জন্য (তোমাদের পক্ষ হতে) ক্ষমা প্রার্থনা করবো।’’ ২৮৭

২৮৭.

বায্যার, আল-মুসনাদঃ ৫/৩০৮পৃ. হাদিসঃ ১৯২৫, সুয়ূতি, জামিউস সগীরঃ ১/২৮২পৃ. হাদিসঃ ৩৭৭০-৭১, ইবনে কাছির, বেদায়া ওয়ান নিহায়া, ৪/২৫৭পৃ. মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ১১/৪০৭পৃ. হা/৩১৯০৩, ইমাম ইবনে জাওযী, আল-ওফা বি আহওয়ালি মোস্তফা, ২/৮০৯-৮১০পৃ. আল্লামা ইবনে কাছির, সিরাতে নববিয়্যাহ, ৪/৪৫পৃ. উক্ত হাদিস প্রসঙ্গে ইমাম হাইসামী (رحمة الله) বলেন-

رَوَاهُ الْبَزَّارُ، وَرِجَالُهُ رِجَالُ الصَّحِيحِ.

-‘‘উক্ত হাদিসের সমস্ত বর্ণনাকারী সিকাহ বা বিশ্বস্ত।’’ (ইমাম হাইছামী, মাযমাউয-যাওয়াইদ, ৯/২৪পৃ. হা/১৪২৫০)


পর্যালোচনা


এ হাদিস থেকে প্রমাণ হল রাসূল (ﷺ) তাঁর আপন রওজা শরীফে জীবিত এবং সেখান থেকে তিনি আমাদের ভাল মন্দ সব কর্ম অবলোকন করেন।


হাদিস নং-৮


ইমাম আহমদ ও ইমাম হাকিম নিশাপুরী (رحمة الله) সংকলন করেন-

حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ أُسَامَةَ، قَالَ: أَخْبَرَنَا هِشَامٌ، عَنْ أَبِيهِ عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: كُنْتُ أَدْخُلُ بَيْتِي الَّذِي فِيهِ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ، وَإِنِّي وَاضِعٌ ثَوْبِي وَأَقُولُ: إِنَّمَا هُوَ زَوْجِي وَأَبِي، فَلَمَّا دُفِنَ عُمَرُ مَعَهُمْ فَوَاللَّهِ مَا دَخَلْتُ إِلَّا وَأَنَا مَشْدُودَةٌ عَلَيَّ ثِيَابِي حَيَاءً مِنْ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ

-“হযরত আয়িশা (رضي الله عنه) বলেন, ইতোপূর্বে আমি রাসূল (ﷺ) এর ঘরে (রওজায়) প্রবেশ করতাম সাধারণ কাপড় পরিধান করে এবং বলতাম, ইনি আমার স্বামী ও ইনি আমার পিতা। আর যখন হযরত উমর (رضي الله عنه) কে সেখানে দাফন করা হল, আল্লাহর কসম! আমি আমার কাপড় অত্যন্ত সতর্কতার সাথে পরিধান করে সেখানে প্রবেশ করতাম, যেমনটি হযরত উমর (رضي الله عنه) জীবিতকালে করতাম।” ২৮৮

২৮৮. মুসনাদে আহমদ, হা/২৫৬৬০; ইমাম হাকিম, আল-মুস্তাদরাক, হা/৪৪০২; ইমাম আবু বকর খিলাল, আস-সুন্নাহ, হা/৩৬৪; মিশকাত, হা/১৭৭১; ইমাম হায়সামী: মাযমাউয যাওয়াইদ, হা/১২৭০৪; জামেউল ফাওয়াইদ, হা/৭৮৬


✧  এই হাদিস সম্পর্কে ইমাম হাকিম নিশাপুরী (رحمة الله) বলেন-

هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحٌ عَلَى شَرْطِ الشَّيْخَيْنِ

-‘‘এই হাদিস বুখারী ও মুসলিম (رحمة الله) এর শর্ত অনুযায়ী সহীহ্।’’ (আল-মুস্তাদরাক, হা/৪৪০২)


✧ ইমাম নুরুদ্দীন হায়সামী (رحمة الله) বলেন:

 رَوَاهُ أَحْمَدُ، وَرِجَالُهُ رِجَالُ الصَّحِيحِ

-“ইমাম আহমদ (رحمة الله) ইহা বর্ণনা করেছেন, সকল রাবীগণ বিশুদ্ধ।” (ইমাম হায়সামী: মাযমাউয যাওয়াইদ, হা/১২৭০৪)


পর্যালোচনা


এই হাদিস দ্বারা দুটি বিষয় প্রমাণিত হয়।


প্রথমত. উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা (رضي الله عنه) স্বয়ং রাসূল (ﷺ), হযরত আবু বকর সিদ্দিক (رضي الله عنه) এবং হযরত উমর (رضي الله عنه)‘র মাজারের কাছে যেতেন এবং যিয়ারত করতেন। তাই মহিলাদের যিয়ারত প্রমাণিত। দ্বিতীয়ত. যখন হযরত উমর (رضي الله عنه) কে আবু বকর (رضي الله عنه)‘র সাথে দাফন করা হলো তখন থেকে মা আয়িশা (رضي الله عنه) যিয়ারত করার সময় পর্দার দিকে খিয়াল বা সতর্কতা অবলম্বন করতেন; তিনি এটি এজন্যই করতেন তাঁর আক্বিদা ছিল যে তাঁরা সকলেই দুনিয়ার জীবনের ন্যায় তাকে দেখতেছেন এবং তাঁর আওয়াজ শুনতেছেন।


❏ আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) লিখেন-

قَالَ الطِّيبِيُّ: فِيهِ أَنَّ احْتِرَامَ الْمَيِّتِ كَاحْتِرَامِهِ حَيًّا

-‘‘ইমাম তিব্বী (رحمة الله) বলেন, (এ হাদিস থেকে বুঝা গেল) ওফাত হওয়ার পরে তেমনই তা‘যিম করতে হবে যেমনটি জীবিত অবস্থায় (জাহিরী হায়াতে) করা হতে।’’ (মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, ৪/১২৬০ পৃ. হা/১৭৭১)


হাদিস নং-৯


হযরত সালমা (رضي الله عنه) বলেন-

دَخَلْتُ عَلَى أُمِّ سَلَمَةَ، وَهِيَ تَبْكِي فَقُلْتُ: مَا يُبْكِيكِ؟ قَالَتْ: رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الْمَنَامِ يَبْكِي وَعَلَى رَأْسِهِ وَلِحْيَتِهِ التُّرَابُ، فَقُلْتُ: مَا لَكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: شَهِدْتُ قَتْلَ الْحُسَيْنِ آنِفًا

-‘‘আমি উম্মাহাতুল মু‘মিনীন মা উম্মে সালামা (رضي الله عنه)‘র হুজরা শরীফে প্রবেশ করলাম এবং দেখলাম যে তিনি কাঁদছেন। আমি বললাম, আপনি কাঁদছেন কেন? তিনি বললেন, একটু আগে আমি রাসূল (ﷺ) কে স্বপ্নে দেখলাম যে তাঁর মাথা মুবারকে এবং দাঁড়ি মুবারকে ধুলা বালি লেগে আছে। অতঃপর আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার এ অবস্থা কেন? তিনি বললেন, এই মাত্র আমি হুসাইনের শাহাদাতের স্থানে উপস্থিত ছিলাম।’’ ২৮৯

২৮৯. ইমাম হাকেম নিশাপুরী, আল-মুস্তাদরাক, ৪/২০ পৃ. হা/৬৭৭৪, পরিচ্ছেদ:

ذِكْرُ أُمِّ الْمُؤْمِنِينَ أُمِّ سَلَمَةَ بِنْتِ أَبِي أُمَيَّةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا ,

তিনি একে সহীহ বলেছেন-

 سكت عنه الذهبي في التلخيص

 -‘‘ইমাম যাহাবী (رحمة الله) তার তালখীছ গ্রন্থে এ সনদের বিষয়ে নীরব ছিলেন।’’ ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান, ৬/১২০ পৃ. হা/৩৭৭১, পরিচ্ছেদ,

: بَابُ مَنَاقِبِ أَبِي مُحَمَّدٍ الْحَسَنِ بْنِ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ وَالْحُسَيْنِ بْنِ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا ,

 ইমাম তাবরানী, মু‘জামুল কাবীর, ২৩/৩৭৩ পৃ. হা/৮৮২, খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ৩/১৭৭৩ পৃ. হা/৬১৬৬, মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, ৯/৩৯৮০ পৃ. হা/৬১৬৬, তিনি বলেন-

قَوِّي -‘

‘এ হাদিসটি শক্তিশালী।’’ এবং ৯/৩৯৮৬ পৃ. হা/৬১৮০, ইমাম ইবনে আছির, জামেউল উসূল, ৯/৩৫ পৃ. হা/৬৫৬৭



পর্যালোচনা


এ হাদিস থেকে বুঝা গেল যে, কারবালায় কি ঘটছে তা আল্লাহর নবী (ﷺ) তাঁর আপন রওজা মোবারক থেকেই দেখতে পেয়েছেন, এজন্যই তিনি সেখানে উপস্থিত হয়েছেন। এ হাদিসের (شَهِدْتُ) এর ব্যাখ্যায় আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) লিখেছেন- أَيْ: حَضَرْتُ -‘‘অর্থাৎ আমি উপস্থিত ছিলাম।’’  ২৯০

২৯০. মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, ৯/৩৯৮০ পৃ. হা/৬১৬৬


এ হাদিস থেকে বুঝা গেল পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে রাসূল (ﷺ)‘র উপস্থিত হওয়া তাঁর ইখতিয়ারাধীন। তাই হায়াতুন্নবী না হলে তা কিভাবে সম্ভব!


হাদিস নং-১০


সুবিখ্যাত হাদিস গ্রন্থ ‘মিশকাত’ শরীফের ‘ইছবাতু আযাবিল কবর’ শীর্ষক অধ্যায়ে হযরত আনাস বিন মালেক (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, কবরে যখন মৃত ব্যক্তিকে শায়িত করা হবে তখন-

فَيَقُولَانِ مَا كُنْتَ تَقُولُ فِي هَذَا الرَّجُلِ لِمُحَمَّدٍ ﷺ

-‘‘মুনকার-নকীর ফিরিশতাদ্বয় কবরে শায়িত মৃত ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করবেন, ওনার (মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ ) সম্পর্কে দুনিয়ায় তুমি কি ধারণা পোষণ করতে?  ২৯১

২৯১. খতিব তিবরিযীঃ মেশকাতঃ ১/৪৫ পৃ. হাদিসঃ ১২৬, মুসলিমঃ আস-সহীহঃ ৪/২২০০ হাদিসঃ ১৮৭০, বুখারীঃ আস-সহীহঃ ৩/২০৫, হাদিসঃ ১৩৩৮, মুসলিমঃ আস-সহীহঃ ১/৪৪২ পৃ. হাদিসঃ ৭০, নাসায়ীঃ সুনানে কোবরাঃ ৪/৯৭ পৃ. হাদিসঃ ২০৫১, আবু দাউদঃ আস্-সুনানঃ ৫/১১৪ পৃ. হাদিসঃ ৪৭৫২



পর্যালোচনা


❏ এ হাদিস প্রসঙ্গে ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি (رحمة الله) লিখেন-

قَالَ النَّوَوِيّ قيل يكْشف للْمَيت حَتَّى يرى النَّبِي صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهِي بشرى عَظِيمَة لِلْمُؤمنِ ان صَحَّ

-‘‘মুসলিম শরিফের ব্যাখ্যাকার ইমাম নববী (رحمة الله) বলেন, মৃত ব্যক্তির দৃষ্টি থেকে আবরণ উঠিয়ে নেয়া হয়, যার ফলে সে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সরাসরি দেখতে পায়। এটা তার জন্য বড়ই শুভ সংবাদ। যদি সে সঠিক পথে থাকে।’’  ২৯২

২৯২. ইমাম সুয়ূতি, শরহে সুনানে ইবনে মাযাহ, ১/৩১৬ পৃ. হাশীয়ায়ে মেশকাতঃ ২৪ পৃ. নূর মুহাম্মদ কুতুবখানা, করাচী, পাকিস্তান।


তাই রাসূল (ﷺ) সর্ব অবস্থায়ই হাযির-নাযির আছেন। আমরা আমাদের পাপ রাশির কারণে দেখি না।


❏ ইমাম কাস্তালানী (رحمة الله) এ হাদিসের ব্যাখ্যায় লিখেন-

فَقِيْلَ يُكْشَفُ لِلْمَيِّتِ حَتَّى يَرْىَ النَّبِىَّ عَلَيْهِ السَّلاَمُ وَهِىَ بَشْرَى عَظِيْمَةُ لِلْمُؤْمِنِ اِنْ صَحَّ.

-‘‘এও বলা হয়েছে যে, তখন মৃত ব্যক্তির দৃষ্টির আবরণ অপসারণ করা হয়, যার দরুণ সে নবী আলাইহিস সালামকে দেখতে পায়। এটি মুসলমানদের জন্য বড় সুখের বিষয়, যদি সে সঠিক পথে থাকে।’’  ২৯৩

২৯৩.ইমাম কাস্তাল্লানীঃ ইরশাদুস্-সারীঃ ২/৪৬৪ পৃ.


✧ আহলে হাদিসদের ইমাম আযিমাবাদী এবং মোবারকপুরীও অনুরূপ তাদের হাদিসের ব্যাখ্যা গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।  ২৯৪

২৯৪. আযিমাবাদী, আওনুল মা‘বুদ, ১৩/৬২ পৃ. মোবারকপুরী, তুহফাতুল আহওয়াজী, ৪/১৫৫ পৃ.


তাই প্রমাণিত হল যে রাসূল (ﷺ) হায়াতুন্নবী হওয়ার কারণে তিনি প্রত্যেক কবরে উপস্থিত হতে পারবেন, এটাই সঠিক আক্বিদা।

━━━━━━━━━━━━━━━━
🌍 তথ্যসূত্রঃ [শহিদুল্লাহ বাহাদুর গ্রন্থসমগ্র এপ্স]
ডাউনলোড লিংকঃ bit.ly/Sohidullah
অথবা, এপ্সটি পেতে প্লে স্টোরে সার্চ করুন।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন