সমস্ত নবীগণ তাদের নিজ নিজ সমাধীতে জীবিত এবং সেখানে তাঁরা সালাতে রত: হাদিস নং-১১-২০



প্রসিদ্ধ একটি হাদিস

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ؓ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ قَالَ: مَا مِنْ أَحَدٍ يُسَلِّمُ عَلَيَّ إِلَّا رَدَّ اللَّهُ عَلَيَّ رُوحِي حَتَّى أَرُدَّ عَلَيْهِ السَّلَامَ

-‘‘হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয় রাসূলে পাক (ﷺ) ইরশাদ করেন, যখন কোনো উম্মত আমার প্রতি সালাম প্রেরণ করে, আমার রূহ মোবারককে আল্লাহ্ তা‘য়ালা (যেহেতু অতীতে) আমার নিকট ফিরত দিয়েছেন যে, ফলে আমি তাদের প্রদানকৃত সালামের জওয়াব দেই।’’ ২৯৫

২৯৫.

ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল : আল মুসনাদ : ২/৫২৭ পৃ. হা/১০৮৬৭, ইমাম তাবরানী : মুজামুল আওসাত : ৩/২৬২ পৃ. : হা/৩০৯২ এবং ৯৩২৩, বায়হাকী, আস-সুনানুল কোবরা, ৫/২৪৫ পৃ. হা/১০০৫০ ও দাওয়াতুল কাবীর, ১/২৬১ পৃ. হা/১৭৮, ইমাম বায়হাকী : শুয়াবুল ঈমান : ৬/৫২ পৃ. হা/৫১৮১ এবং ৪১৬১, আল্লামা মানাবী : ফয়জুল কাদীর : ৫/৪৬৭ পৃ., ইমাম মুনযির : আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব : ২/৩৬২ পৃ : হা/২৫৭৩, ইমাম ইবনে হাজার হায়সামী : মাযমাউয যাওয়াইদ : ১০/১৬২ পৃ., ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী : আল হাজীলীল্ ফাত্ওয়া : ১/২০০ পৃ. এবং হুসনুল মাকাসিদ ফি আমালিল মওলুদ : ৭-৮ পৃ., ইমাম সাখাভী : কওলূল বদী : ১৪২ পৃ. এবং মাকাসিদুল হাসানা: ৪২৭ পৃ. হাদিস- ৯৮২, আল্লামা আজলূনী: কাশফুল খাফা: ২/১৭৩ পৃ. হা/২২৪৫, জালালুদ্দীন সুয়ূতি: আদদুররুল মানছুর: ১/২৩৭ পৃ., ইমাম আবূ দাউদ, আস্-সুনান, ২/২১৮পৃ. হা/২০৪১, ইমাম রাহবিয়্যাহ, আস্-সুনান, ১/৪৫৩ পৃ. হা/৫২৬.



উক্ত হাদিসে দরূদ শরীফে সালাম ফিরিশতারা রাসূল (ﷺ) এর নিকট পৌঁছে দেন উল্লেখ নেই,  বরং রাসূল (ﷺ) পৌঁছানো ছাড়া নিজেই শুনেন এবং তার জবাব দেন। তাই প্রমাণিত হয় তিনি হায়াতুন্নবী বলেই আমাদের সালাম শুনতে পান।


❏ ইমাম সাখাভী (رحمة الله) ও আল্লামা আজলূনী (رحمة الله) বলেন, 

أحمد وأبو داود عن أبي هريرة به مرفوعا، وهو صحيح

-‘‘উক্ত হাদিসটি ইমাম আহমদ  ও ইমাম আবু দাউদ (رحمة الله) হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে মারফূ (নবীজীর বাণী হিসেবে) সূত্রে বর্ণনা করেছেন, উক্ত হাদিসটির সনদ সহীহ বা বিশুদ্ধ।’’ ২৯৬

২৯৬.

ক. ইমাম সাখাভী, মাকাসিদুল হাসানা: ৪২৭ পৃ. হা/৯৮২

খ. আল্লামা আজলূনী, কাশফুল খাফা: ২/১৭৩, হা/২২৪৫

গ. ইমাম জুরকানী, শারহুল মাওয়াহেব, ১২/২০২ পৃ.



হাদিস নং-১২


ইমাম দারাকুতনী  এবং সুয়ূতি (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-

عَن ابْن عمر ؓ قَالَ كُنَّا مَعَ رَسُول الله ﷺ فَرفع رَأسه إِلَى السَّمَاء فَقَالَ وَعَلَيْكُم السَّلَام وَرَحْمَة الله فَقَالَ النَّاس يَا رَسُول الله مَا هَذَا قَالَ مر بِي جَعْفَر بن أبي طَالب فِي مَلأ من الْمَلَائِكَة فَسلم عَليّ

-‘‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, (একদা) আমরা হুযূর পুরনুর (ﷺ) এর খেদমতে উপস্থিত ছিলাম। হঠাৎ হুযূর (ﷺ) তার মাথা মোবারক তুলে ফরমালেন, ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহ্মাতুল্লাহ। অতপর উপস্থিত লোকেরা (সাহাবীরা) বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ)! আপনি কার সালামের জবাব দিলেন। তিনি বললেন, হযরত জাফর ইবনে আবু তালিব (رضي الله عنه) ফিরেশতাদের একটি দলসহ আমার নিকট দিয়ে গমন করেছিলেন, তিনি আমাকে সালাম প্রদান করেছেন। আমি তার উত্তর দিলাম।’’ ২৯৭

২৯৭.

ক.ইমাম জালালুদ্দীন সূয়তী : খাসায়েসুল কোবরা : ১/৪৬০-৪৬১ পৃ. হা/১৪৩৫-১৪৩৬

খ. ইমাম দারাকুতনী, গারায়েবু মালেক, ১/৫৫ পৃ.

গ. ইমাম বুরহানুদ্দীন হালাবী, সিরাতে হালাবিয়্যাহ, ৩/১০০ পৃ.

ঘ. ইমাম ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ১১/১০৯ পৃ.

ঙ. ইমাম জুরকানী, শারহুল মাওয়াহেব, ৩/৩৫২ পৃ.


পর্যালোচনা:


উক্ত হাদিস দ্বারা প্রমাণিত  হলো,  সাহাবী যা শুনেন নি রাসূল (ﷺ) তা শুনতেন এবং আরো প্রমাণিত হল ওফাতের পরও সাহাবীরা যেখানে ইচ্ছা সেখানে যেতে পারেন। তাহলে রাসূল (ﷺ) এর অবস্থা কিরূপ হবে!


হাদিস নং-১৩


ইমাম বায়হাকী (رحمة الله)সহ আরও অনেক ইমাম হযরত আনাস ইবনে মালেক (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন-

إِنَّ الْأَنْبِيَاءَ لَا يُتْرَكُونَ فِي قُبُورِهِمْ بَعْدَ أَرْبَعِينَ لَيْلَةً وَلَكِنَّهُمْ يُصَلُّونَ بَيْنَ يَدَيِ اللَّهِ حَتَّى يُنْفَخَ فِي الصُّورِ

-‘‘নবীগণকে ৪০ রাতের পরে তাঁদের কবরের মধ্যে রাখা হয় না; কিন্তু তারা মহান আল্লাহর সামনে সালাতে রত থাকেন; শিংগায় ফুঁক দেয়া পর্যন্ত।’’ ২৯৮

২৯৮. ইমাম দায়লামী, আল-ফিরদাউস, ১/২২২ পৃ. হা/৮৫২, ইমাম কাস্তাল্লানী, ইরশাদুস সারী, ২/৪৩৩ পৃ., ইমাম সুয়ূতি, আল-হাভীলিল ফাতওয়া, ২/১৭৯ পৃ., জুরকানী, শারহুল মাওয়াহেব, ১/২০ পৃ., ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ১২/৩৫৮ পৃ., ইমাম মুকরীযি, ইমতাউল আসমা, ১০/৩৩০ পৃ.


ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর তার ‘হাদীসের নামে জালিয়াতি’ গ্রন্থের ৩৬৭ পৃষ্ঠায় এ হাদিসটিকে জাল প্রমাণের অনেক অপচেষ্টা করেন। তিনি দাবী করেন এ সনদে ‘আহমদ ইবনু আলী আল-হাসনবী’ মিথ্যাবাদী রাবী রয়েছেন অথচ কোনো মুহাদ্দিস এমনটি বলেননি।


✧ তবে আল্লামা জুরকানী (رحمة الله) এ হাদিস বিষয়ে লিখেন-

وَأَخْرَجَ أَيْضًا مِنْ رِوَايَةِ مُحَمَّدِ بْنِ أَبِي لَيْلَى عَنْ ثَابِتٍ عَنْ أَنَسٍ رَفَعَهُ:.....وَمُحَمَّدٌ سَيِّئُ الْحِفْظِ.

-‘‘মুহাম্মদ ইবনে আবি লাইলা (رحمة الله) হযরত সাবিত বুনানী (رحمة الله) হতে তিনি হযরত আনাস ইবনে মালিক (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, তিনি এটি মারফু হিসেবে বর্ণনা করেন, ..........সনদে মুহাম্মদ ইবনে আবি লাইলা হেফযে বা স্মরণশক্তিতে ক্রুটি রয়েছে।’’(জুরকানী, শরহে মুয়াত্তায়ে মালেক, ৪/৪৪৭ পৃ.)


✧ ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) এ হাদিসটি উল্লেখ করেন এবং লিখেন-

وَأَخْرَجَهُ الْبَيْهَقِيُّ أَيْضًا مِنْ رِوَايَةِ مُحَمَّدِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِي لَيْلَى أَحَدِ فُقَهَاءِ الْكُوفَةِ عَنْ ثَابِتٍ بِلَفْظٍ آخَرَ ...... وَمُحَمَّدٌ سَيِّئُ الْحِفْظِ

-‘‘মুহাম্মদ ইবনে আবি লাইলা (رحمة الله) যিনি কুফা নগরীর একজন বিজ্ঞ ফকীহ ছিলেন, তিনি হযরত সাবিত বুনানী (رحمة الله) হতে তিনি হযরত আনাস ইবনে মালিক (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, তিনি এটি মারফু হিসেবে বর্ণনা করেন, ..........সনদে মুহাম্মদ ইবনে আবি লাইলা হেফ্যে বা স্মরণশক্তিতে ক্রুটি রয়েছে।’’ (ইবনে হাজার আসকালানী, ফতহুল বারী, ৬/৪৮৭ পৃ.)


✧ আল্লামা জুরকানী (رحمة الله) তার আরেকটি গ্রন্থে লিখেছেন-

قال الحافظ في سنده: محمد بن عبد الرحمن بن أبي ليلى سيئ الحفظ

-‘‘হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) সনদ সম্পর্কে বলেন, মুহাম্মদ বিন আব্দুর রহমান রয়েছেন তাঁর হেফ্যে ক্রটি রয়েছে।’’ (শারহুল মাওয়াহেব, ৭/৩৭০ পৃ.)


✧ রাবী ‘ইবনে আবি লাইলা’ অনেক বড় আলিম ছিলেন, তবে শেষ বয়সে কেউ কেউ বলেছেন স্মৃতিশক্তিতে লোপ পেয়েছিল। ইমাম যাহাবী (رحمة الله) তাঁর জীবনীতে লিখেন-

ابنُ أَبِي لَيْلَى، العَلاَّمَةُ، الإِمَامُ، مُفْتِي الكُوْفَةِ، وَقَاضِيهَا

-‘‘ইবনে আবি লাইলা: তিনি ছিলেন আল্লামা, যুগের ইমাম, কুফার মুফতি এবং কাযি।’’ (ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৬/৩১০ পৃ. ক্রমিক.১৩৩)


✧ তিনি আরও লিখেন-

حَدَّثَ عَنْهُ: شُعْبَةُ، وَسُفْيَانُ بنُ عُيَيْنَةَ، وَزَائِدَةُ، وَالثَّوْرِيُّ

-‘‘তাঁর থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন ইমাম শু‘বা, সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা, যায়েদা এবং ইমাম সুফিয়ান সাওড়ী (রহ.) প্রমুখ।’’(ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৬/৩১০ পৃ. ক্রমিক.১৩৩)


✧ সকল মুহাদ্দিসদের নিকট প্রসিদ্ধ যে ইমাম শু‘বা (رحمة الله) দুর্বল রাবী থেকে হাদিস বর্ণনা করতেন না। যাহাবী (رحمة الله) আরও লিখেন- كَانَ أَفْقَهَ أَهْلِ الدُّنْيَا.

-‘‘তিনি দুনিয়ার তাঁর যামানার সবচেয়ে বড় ফকীহ ছিলেন।’’(ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৬/৩১১ পৃ. ক্রমিক.১৩৩) 


❏ তিনি আরও লিখেন-

قَالَ العِجْلِيُّ: كَانَ فَقِيْهاً، صَاحِبَ سُنَّةٍ، صَدُوقاً، جَائِزَ الحَدِيْثِ، وَكَانَ قَارِئاً لِلْقُرْآنِ، عَالِماً بِهِ....قَالَ أَبُو زُرْعَةَ: هُوَ صَالِحٌ، لَيْسَ بِأَقوَى مَا يَكُوْنُ. وَقَالَ أَبُو حَاتِمٍ: مَحَلُّهُ الصِّدْقُ، وَكَانَ سَيِّئَ الحِفظِ، شُغلَ بِالقَضَاءِ، فَسَاءَ حِفْظُه

-‘‘ইমাম ইজলী (رحمة الله) বলেন, তিনি ছিলেন একজন মুজতাহিদ ফকীহ, সুন্নাতের অনুসারী, সত্যবাদী, তাঁর হাদিস গ্রহণ করা বৈধ, তিনি কুরআনের ক্বারী ছিলেন এবং এ বিষয়ে জ্ঞানী (মুফাসসির) ছিলেন, .....ইমাম আবূ যারওয়া (رحمة الله) বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় সৎ ব্যক্তি, ইমাম আবু হাতেম (رحمة الله) বলেন, তিনি সত্যবাদীদের একজন, তবে হেফ্যে সামান্য ক্রটিছিল, কেননা তিনি কাযির পদে বেশি ব্যস্ত থাকতেন তাই হেফ্যে সামান্য ক্রুটি দেখা দেয়।’’(ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৬/৩১২ পৃ. ক্রমিক.১৩৩)


সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! আমি এ গ্রন্থের শুরুতে আলোচনা করেছি যে, রাবীর হেফ্যে সামান্য ক্রটি থাকলে তার হাদিসের মান ‘হাসান লিজাতিহী’ পর্যায়ে হয়ে যায়। সে নীতিমালা অনুসারে এ হাদিসের মান কমপক্ষে ‘হাসান’।


✧ আল্লামা মানাভী (رحمة الله) লিখেন-

له شواهد ترقيه إلى درجة الحسن

-‘‘এ হাদিসটির শাওয়াহেদ বা সাক্ষ্য রয়েছে, সেহেতু হাদিসটির মান ‘হাসান’।’’ (মানাভী, ফয়যুল ক্বাদীর, ৫/৫০১ পৃ. হা/৮১১৫)


❏ এ হাদিসটি উল্লেখ করে ইমাম কাস্তালানী (رحمة الله) লিখেন-

وله شواهد فى صحيح مسلم منها: قوله- صلى الله عليه وسلم-: مررت بموسى وهو قائم يصلى فى قبره

-‘‘এ হাদিসটির শাওয়াহেদ পাওয়া যায় সহীহ মুসলিমের এক হাদিসে, সেখানে রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, আমি মূসা (عليه السلام)-এর কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম দেখতে পেলাম তিনি দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছেন।’’ (আল-মাওয়াহিবুল্লাদুনিয়্যাহ, ৩/৬০০ পৃ.)


❏ আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) এ হাদিসের ব্যাখ্যায় লিখেছেন-

فَإِنْ صَحَّ فَالْمُرَادُ أَنَّهُمْ لَا يُتْرَكُونَ يُصَلُّونَ إِلَّا هَذَا الْمِقْدَارَ ثُمَّ يَكُونُونَ مُصَلِّينَ بَيْنَ يَدَيِ اللَّهِ تَعَالَى

-‘‘নিশ্চয় বিশুদ্ধ কথা হলো এ হাদিস দ্বারা উদ্দেশ্য এ নির্ধারিত দিন ছাড়া তাঁরা (কবরে) সালাত বন্ধ করেন না, নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হওয়ার পর তাঁরা মহান রবের দরবারে সালাত আদায় করেন।’’ (জামেউল ওসায়েল, ১/৫৩ পৃ.)


❏ ইমাম ইবনুল হজ্জ  ‘আল-মাদখাল’ গ্রন্থে ও ইমাম শিহাবুদ্দীন কাস্তালানী (رحمة الله) তার ‘মাওয়াহেবুল্লাদুন্নিয়া’ গ্রন্থে “বাবুল জিয়ারাতুল কুবুর শরীফ” শীর্ষক অধ্যায়ে বলেছেন-

وَقَدْ قَالَ عُلَمَاؤُنَا رَحْمَةُ إذْ لَا فَرْقَ بَيْنَ مَوْتِهِ وَحَيَاتِهِ أَعْنِي فِي مُشَاهَدَتِهِ لِأُمَّتِهِ وَمَعْرِفَتِهِ بِأَحْوَالِهِمْ وَنِيَّاتِهِمْ وَعَزَائِمِهِمْ وَخَوَاطِرِهِمْ، وَذَلِكَ عِنْدَهُ جَلِيٌّ لَا خَفَاءَ فِيهِ.

-‘‘আমাদের সুবিখ্যাত উলামায়ে কিরাম বলেন যে,  হুযূর (ﷺ) এর জীবন ও ওফাতের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। তিনি নিজ উম্মতকে দেখেন, তাদের অবস্থা,  নিয়ত, ইচ্ছা ও মনের কথা ইত্যাদি জানেন। এগুলো তার কাছে সম্পূর্ণ রূপে সুস্পষ্ট, বরং এই কথার মধ্যে কোন রূপ অস্পষ্টতা ও দুর্বোধ্যতার অবকাশ নেই।’’ ২৯৯

২৯৯.

ক. আল্লামা ইমাম কাস্তাল্লানী : মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া : দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ : ৪/৫৮০ পৃ.

খ. আল্লামা ইবনুল হাজ্ব : আল মাদখাল, ১/২৫২ পৃ.

গ. আল্লামা ইমাম জুরকানী : শরহুল মাওয়াহেব : ৪/৩১২ পৃ:

ঘ. আল্লামা মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন নঈমী : জা‘আল হক, ১/২৪২ পৃ:


উক্ত বিষয়ে শত শত হাদিস রয়েছে কিতাব দীর্ঘ হওয়ার আশংকায় সব হাদিস উল্লেখ করা সমীচীন মনে করি নি।


❏ এ প্রসঙ্গে আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতি (رحمة الله) বলেন,

وَالْأَنْبِيَاءُ أَوْلَى بِذَلِكَ، فَهُمْ أَجَلُّ وَأَعْظَمُ، وَمَا نَبِيٌّ إِلَّا وَقَدْ جَمَعَ مَعَ النُّبُوَّةِ وَصْفَ الشَّهَادَةِ، فَيَدْخُلُونَ فِي عُمُومِ لَفْظِ الْآيَةِ.

-‘‘আম্বিয়ায়ে কেরাম জীবিত থাকার ব্যাপারে শহীদগণ অপেক্ষা উত্তম,  উন্নত ও শ্রেষ্ঠতম। নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ তা‘য়ালা প্রত্যেক নবীর মধ্যে নবুওয়াত ও শাহাদাত উভয় গুণকে একত্রিত করেছেন। সুতরাং আম্বিয়ায়ে কেরামও আয়াতের ব্যাপকতায় অন্তর্ভূক্ত।’’৩০০ 

৩০০.

ক. আল্লামা আব্দুর রহমান জালালুদ্দীন সূয়তী, আল-হাভীলিল ফাতাওয়া, ২/১৮০ পৃ.

খ. আল্লামা আব্দুর রহমান জালালুদ্দীন সূয়তী : শরহুস সুদুর : ২৫৬ পৃ.


❏ আল্লামা জালালুদ্দীন সূয়ূতি (رحمة الله) সর্বশেষ হায়াতুন্নবী (ﷺ)-এর হাদিসের মানের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে উল্লেখ করেন-

حَيَاةُ النَّبِيِّ ﷺ فِي قَبْرِهِ هُوَ وَسَائِرِ الْأَنْبِيَاءِ مَعْلُومَةٌ عِنْدَنَا عِلْمًا قَطْعِيًّا لِمَا قَامَ عِنْدَنَا مِنَ الْأَدِلَّةِ فِي ذَلِكَ وَتَوَاتَرَتْ الْأَخْبَارُ، وَقَدْ أَلَّفَ الْبَيْهَقِيُّ جُزْءًا فِي حَيَاةِ الْأَنْبِيَاءِ فِي قُبُورِهِمْ، فَمِنَ الْأَخْبَارِ الدَّالَّةِ عَلَى ذَلِكَ

-“হায়াতুন্নবী (ﷺ) তথা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) স্বীয় রওযা মোবারকে জীবিত এবং সমস্ত নবীগণই জীবিত যা অকাট্য জ্ঞান দ্বারা পরিজ্ঞাত। কেননা, এ ব্যাপারে আমাদের নিকট দলীল প্রমাণ অকাট্য এবং এ প্রসঙ্গে অনেক মুতাওয়াতির হাদিস বর্ণিত হয়েছে।” ৩০১ (আনবিয়াউল আযকিয়া)

৩০১. আল্লামা আব্দুর রহমান জালালুদ্দীন সূয়তী : আল হাভীলিল ফাতাওয়া : ২/১৭৮ পৃ.



সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! উপরের আলোচনা থেকে প্রমাণিত হল যে, আমাদের নবীসহ সকল নবীগণ তাদের আপন আপন মাজারে জীবিত, তাতে কোনো সন্দেহ নেই, যে এটা অস্বীকার করবে সে কাফির তাতেও কোনো সন্দেহ নেই, কেননা এ বাতিল আক্বিদা ধারণ মানে মুতাওয়াতির হাদিসের বিরোধীতা করা।



━━━━━━━━━━━━━━━━
🌍 তথ্যসূত্রঃ [শহিদুল্লাহ বাহাদুর গ্রন্থসমগ্র এপ্স]
ডাউনলোড লিংকঃ bit.ly/Sohidullah
অথবা, এপ্সটি পেতে প্লে স্টোরে সার্চ করুন।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন