‘এসব হাদীস নয়’ নামক গ্রন্থের ১৫৯-১৬১ পৃষ্ঠা পর্যন্ত লিখক মাওলানা মুতীউর রহামন দাবী করেছেন যে, মি‘রাজে আল্লাহর আরশে জুতা মুবারক নিয়ে যাওয়া তো দূরের কথা রাসূল (ﷺ) আল্লাহকে দেখেছেন এবং জিবরাঈল (عليه السلام) এর সঙ্গ ত্যাগ হয়েছে তারও নাকি প্রমাণ পাওয়া যায় না। ড. আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর তার ‘হাদীসের নামে জালিয়াতি’ গ্রন্থের ৩৫১-৩৫৪ পৃষ্ঠা পর্যন্ত অনুরূপ বক্তব্য দিয়েছেন।
উক্ত দু‘লিখক তাদের মনগড়া এ মতের পক্ষে একক শায়খ রযী উদ্দিন আল কাযভীনী এর মতামতকে পুঁজি করেছেন। তা তারা নকল করেছেন দুটি কিতাব থেকে, ইমাম জুরকানী (رحمة الله)-এর শারহুল মাওয়াহিব এবং ইমাম ইবনে সালেহ শামী (رحمة الله)-এর ‘সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ’ নামক কিতাবদ্বয় থেকে, অথচ এটা একক কাযভীনীর অভিমত।
রাসূল (ﷺ) জুতা মোবারক নিয়ে আরশে গমন অসম্ভ কিছু নয়, তবে তা নিয়ে আহলে সুন্নাতের ইমামদের মতভেদ রয়েছে। মা’আরিজুন নবুয়ত সিরাত গ্রন্থে উল্লেখ আছে, রাসূল (ﷺ) এর পা মুবারকে জুতা ছিল। কিন্তু আ‘লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খাঁন ফাযেলে বেরলভী (رحمة الله) তাঁর আহকামে শরীয়তের দ্বিতীয় খণ্ডের ৮ নং মাসআলায় একজন প্রশ্ন করলেন রাসূল (ﷺ) জুতা মোবারক নিয়ে আরশে গমন সত্য কীনা? তিনি বলেছেন, এ ঘটনা বিশুদ্ধ নয়।
❏ তবে আল্লামা শিহাবুদ্দীন খিফ্ফাজী (ওফাত. ১০৬৯ হি.) তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘নাসীমুর রিয়াদ্ব শরহে শিফা’ কিতাবে লিখেন-
وفى السبعيات للهمدانى قال: ثبت فى الحديث أنه صلى الله تعالى عليه وسلم قال: هممت ليلة المعراج أن أخلع نعلى فسمعت النداء من قبل الله تعالى: يا محمد لا نخلع نعليك لتشرف السماء بهما
-‘‘আল্লামা হামদানী (ওফাত. ৯৬৬ হি.) এর সাবাঈয়্যাত নামক গ্রন্থে রয়েছে, তিনি বলেছেন, রাসূল (ﷺ) থেকে এটা দৃঢ়ভাবে প্রমাণিত যে, রাসূল (ﷺ) মি‘রাজের রজনীতে তাঁর জুতা মোবারক খুলতে চাইলেন, তখন আমি এক আহবানকারীর আওয়াজ শুনলাম মহান আল্লাহ তা‘য়ালা পক্ষ থেকে, তিনি বললেন, হে মুহাম্মদ ! আপনি জুতা মোবারক খুলবেন না, আপনি আমার আরশ কুরসীকে আপনার জুতা মোবারকের নিচের রেখে ধন্য করে যান।’’ (আল্লামা শিহাবুদ্দীন খিফ্ফাজী, নাসীমুর রিয়াদ্ব শরহে শিফা, ৩/৮৫ পৃ., দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।)
এ বিষয়ে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের আলেমগণের ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, মি‘রাজে আরশে আল্লাহর সাথে রাসূল (ﷺ) তাঁর প্রতিপালককে চর্ম চোখে দেখেছিলেন। বর্তমানে আহলে হাদিসগণ মি‘রাজে রাসূল (ﷺ) মহান রবকে দেখেছেন তা মানতে নারাজ, তাই এ বিষয়ে কিছু দলীল উপস্থাপন করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি।
❏ ইমাম তাবরানীনহ আরও অনেকে সংকলন করেন-
عن ابن عباس رصى الله تعالى عنهما كَانَ يَقُولُ: إِنَّ مُحَمَّدًا ﷺ، رَأَى رَبَّهُ مَرَّتَيْنِ: مُرَّةً بِبَصَرِهِ، وَمَرَّةً بِفُؤَادِهِ
-“হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) দুইবার আল্লাহ্ তা‘য়ালাকে দেখেছেন। একবার চর্মচোখে, একবার অন্তর চোখে।’’ ১০৬
১০৬.
ক. ইমাম তাবরানী : মুজামুল কাবীর : ১২/১৭ পৃ. হা/১২৫৬৪
খ. ইমাম তাবরানী : মুজামুল আওসাত : ২/৩৫৬ পৃ. হা/৫৭৫৭
গ. ইমাম কাস্তাল্লানী : মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া : ৩/৩৯৭ পৃ.
ঘ. আল্লামা বদরুদ্দীন আইনি, উমদাতুল ক্বারী, ১৯/১৯৯ পৃ.
ঙ.ইমাম সূয়তি, খাসায়েসুল কোবরা, ১/২৬৭ পৃ. দারুল ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।
চ. মাওলানা আশরাফ আলী থানবী : নশরুত্তীব : ৫৫ পৃ.
❏ ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) উল্লেখ করেন-
وقد روى الامام احمد بسند صحيح عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ : رَأَيْتُ رَبِّي تَبَارَكَ وَتَعَالَى -
-“ইমাম আহমাদ তাঁর ‘মুসনাদ’ গ্রন্থে সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, আমি আল্লাহ্ তাবারকা ওয়া তা‘য়ালাকে দেখেছি।’’ ১০৭
১০৭.
ক. আল্লামা শায়খ ইউসূফ নাবহানী : জাওয়াহিরুল বিহার : পৃ. ৩/৩২২ পৃ.
খ. আল্লামা ইমাম সুয়ূতি : জামেউস সগীর : ২/৪ পৃ. হা/৪৩৭৭
গ. আলবানী : সহীহুল জামে : হাদিস নং : ৩৪৬৬
ঘ. ইমাম আহমাদ, আল-মুসনাদ: ১/২৯০ পৃ. হাদিস:২৬৩৪ ও ৪/৩৫১ পৃ. হাদিস:২৫৮০
● ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি (رحمة الله) উক্ত হাদিসটি সহীহ বলেছেন, শুধু তাই নয় আহলে হাদিসের গুরু নাসিরুদ্দীন আলবানী তার ‘সহিহুল জামে’ গ্রন্থে হাদিসটিকে ‘সহীহ’ বলেছেন।
❏ ইমাম কাযি আয়্যায (رحمة الله) সংকলন করেন-
وَقَالَ ابْنُ عَبَّاس هُوَ مُقَدَّمٌ وَمُؤخَّرٌ تَدَلَّى الرَّفْرَفُ لِمُحَمَّدٍ ﷺ ليْلَةَ الْمِعْرَاجِ فَجَلَسَ عَلَيْهِ ثُمَّ رُفِعَ فَدَنَا مِنْ رَبّه قَالَ فَارَقَنِي جِبْرِيلُ وَانْقَطَعَتْ عَنَّي الْأَصْوَاتُ وَسَمِعْتُ كَلَامَ رَبّي عَزَّ وَجَلَّ
-‘‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) এখানে পুর্বাপর বর্ণনা করেছেন। অর্থাৎ মি‘রাজ রাতে হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) নিকট রফরফ আসলো। তিনি তাঁর উপর ওঠে বসলেন তারপর তাকে উপরে উঠানো হলো। এমনকি তিনি আপন প্রভুর নিকটবর্তী হলেন। হুযূর (ﷺ) বললেন, তারপর জিবরাঈল (عليه السلام) আমার নিকট থেকে বিদায় হয়ে গেলেন। সকল আওয়াজ বন্ধ হয়ে গেল। তখন আমি আমার প্রভুর কালাম বা কথা শুনলাম।’’ ১০৮
১০৮.
ক. ইমাম কাজী আয়াজ : শিফা শরীফ : ১/১১৭ পৃ.
খ. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : শরহে শিফা : ১/৪৪০ পৃ.
গ. আল্লামা শিহাবুদ্দীন খাফ্ফাজী : নাসীমুর রিয়াদ্ব : ১/৩৮০ পৃ.
এ হাদিস থেকে প্রমাণিত হল যে, মি‘রাজে রাসূল (ﷺ)-এর হযরত জিবরাঈল (আ.)-এর সঙ্গ ত্যাগ হয়েছিল।
❏ মিশকাত শরীফে মাসাজিদ সংক্রান্ত অধ্যায়ে হযরত আবদুর রহমান ইবনে আয়েশ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত আছে, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ ফরমান,
رَأَيْتُ رَبِّيَ عَزَّ وَجَلَّ فِي أَحْسَنِ صُورَةٍ
-“আমি আমার মহান প্রতিপালককে সুন্দরতম আকৃতিতে (উত্তম অবস্থায়) দেখেছি।’’ ১০৯
১০৯.
ক. খতীব খতিব তিবরিযী : মিশকাতুল মাসাবিহ : ১/২২৫ পৃ : হা/৭২৫
খ. দারেমী : আস-সুনান :২/১৭০ পৃ. হাদিস: ২১৪৯
গ. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : শরহে শিফা : ১/৪২৮ পৃ.
ঙ. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : মিরকাতুল মাফাতীহ : ২/১৪০ পৃ. হা/৬৭১
❏ ইমাম কাযি আয়্যায (رحمة الله) সংকলন করেন-
وذَكَرَ النَّقَّاشُ عَنِ ابْنِ عَبَّاس ؓ فِي قِصَّةِ الْإِسْرَاءِ عَنْهُ ﷺ فِي قَوْلِهِ دَنَا فَتَدَلَّى قَالَ فَارَقَنِي جِبْرِيلُ فَانْقَطَعَتِ الْأَصْواتُ عَنّي فَسَمِعْتُ كَلَامَ رَبّي وَهُوَ يَقُولُ: لِيَهْدَأْ رَوْعُكَ يَا مُحَمَّدُ ادْنُ ادْنُ.وَفِي حَدِيث أَنَسٍ فِي الْإِسْرَاءِ نَحْوٌ مِنْهُ -
-‘‘হযরত নাক্কাশ (رضي الله عنه) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)হতে বর্ণনা করেন তিনি বলেন রাসূল (ﷺ) মি‘রাজ সম্পর্কিত বর্ণনায় আল্লাহর বাণী دنا فتدلى সম্পর্কে আমাকে বলেন, যখন হযরত জিবরাঈল (عليه السلام) আমাকে একাকী রেখে চলে গেলেন। যখন সব ধরনের শব্দ বা ধ্বনি বন্ধ হয়ে গেল। তখন আমি প্রভুর বাণী শুনতে পাই যে, তিনি আমাকে বলছেন, তোমার ভয় ভীতি দূর হবার কথা। হে মুহাম্মদ (ﷺ)! আসুন আমার নিকটে আসুন। অনুরূপ শব্দে হযরত আনাস (رضي الله عنه) এর সূত্রেও বর্ণনা রয়েছে।’’ ১১০
১১০.
ক. ইমাম কাজী আয়াজ : শিফা শরীফ : ১/১১৭ পৃ.
খ. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : শরহে শিফা, ১/৪৩৮ পৃ.
গ. আল্লামা শিহাবুদ্দিন খিফ্ফাজী : নাসিমুর রিয়াদ্ব : ২/২৮০ পৃ.
এ হাদিস থেকে প্রমাণিত হল যে, মি‘রাজে রাসূল (ﷺ)-এর হযরত জিবরাঈল (আ.)-এর সঙ্গ ত্যাগ হয়েছিল।
❏ ইমাম ইবনে খুজায়মা (رحمة الله) সংকলন করেন-
حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ عَبْدِ الْعَزِيزِ الْمُقَوِّمُ، قَالَ: ثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ عُثْمَانَ أَبُو بَكْرٍ الْبَكْرَاوِيُّ، رَحِمَهُ اللَّهُ، قَالَ: أَخْبَرَنَا شُعْبَةُ، عَنْ قَتَادَةُ، عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ مُحَمَّدًا، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدْ رَأَى رَبَّهُ
-‘‘হযরত আনাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নিশ্চয়ই রাসূল (ﷺ) স্বীয় মহীয়ান গরীয়ান প্রতিপালককে দেখেছেন।’’ ১১১
১১১.
ক. ইবনে খাযাইমা : কিতাবুত তাওহীদ, ২/৮৮৯ পৃ.
খ. আল্লামা ইমাম জুরকানী : শরহে মাওয়াহেব : ৬/১১৮ পৃ.
❏ ইমাম কাযি আয়্যায (رحمة الله) সংকলন করেন-
وعَنْ أَنَسٍ فِي الصَّحِيحِ (عَرَجَ بي جِبْرِيلُ إِلَى سِدْرَةِ الْمُنْتَهَى وَدَنَا الْجَبّارُ رَبُّ الْعِزَّةِ فَتَدَلَّى حَتَّى كَانَ مِنْهُ قَابَ قَوْسَيْنِ أَوْ أَدْنَى فَأَوْحَى إليْهِ بِمَا شَاءَ وَأَوْحَى إليْهِ خَمْسِينَ صَلَاةً -
-‘‘হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে সহীহ সূত্রে বর্ণনা এসেছে হযরত জিবরাঈল (عليه السلام) আমাকে সিদরাতুল মুনতাহায় নিয়ে যান। আমি আল্লাহ্ রাব্বুল ইজ্জতের নিকটবর্তী হলাম। অতঃপর তিনিও অতি নিকটবর্তী হলেন। এমনকি দুই ধনুকের মাথা তার চেয়েও অধিক নিকটবর্তী হলেন। অতঃপর তিনি যা চাইলেন আমার উপর ওহী করলেন ঐ সময় পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামায আমার উপর ওহী করলেন।’’ ১১২
১১২.
ক. ইমাম কাজী আয়াজ : শিফা শরীফ : ১/১১৮ পৃ.
খ. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : শরহে শিফা : ১/৪৪১ পৃ.
গ. আল্লামা শিহাবুদ্দিন খিফ্ফাজী : নাসিমুর রিয়াদ্ব : ১/৩৮২ পৃ.
❏ ইমাম কাযি আয়্যায (رحمة الله) সংকলন করেন-
وَرَوَى شَرِيكٌ عَنْ أَبِي ذَرّ رَضِيَ اللَّه عَنْهُ فِي تَفْسِيرِ الآيَةِ قَالَ رَأَى النَّبِيّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وسلم رَبَّهُ
-‘হযরত তাবেয়ী শারিক (رحمة الله) হযরত আবূ যার গিফারী (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, অত্র আয়াত (হৃদয় যা দেখেছে তা মিথ্যা নয়) প্রসঙ্গে যে, তিনি বলেন, হুযূর (ﷺ) আল্লাহ্ তা‘য়ালার দর্শন লাভ করেছেন।’’ ১১৩
১১৩.
ক. ইমাম কাজী আয়াজ : শিফা শরীফ : ১/১১৬ পৃ.
খ. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : শরহে শিফা : ১/৪২৬ পৃ.
❏ ইমাম কাযি আয়্যায (رحمة الله) সংকলন করেন-
وَرَوَى مالك ابن يُخَامِرَ عَنْ مُعَاذٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ رَأَيْتُ رَبِّي وَذَكَرَ كَلِمَةً فَقَالَ يَا مُحَمَّدُ فِيمَ يَخْتَصِمُ الملأ الأعلى الحديث
-‘‘হযরত মালেক বিন য়ুখামের (رضي الله عنه) হযরত মুয়াজ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেছেন, হুযূর (ﷺ) বলেছেন, আমি আমার প্রভুকে দেখেছি। তারপর কতিপয় বিষয়ের বর্ণনা করে বললেন আল্লাহ্ তা‘য়ালা আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে মুহাম্মদ (ﷺ)! মা’লায়ে আ’লার ফিরেশতারা কী নিয়ে ঝগড়ায় লিপ্ত আছে?।’’১১৪
১১৪. ইমাম কাজী আয়াজ : শিফা শরীফ : ১/১১৭ পৃ., আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : শরহে শিফা : ১/৪২৬ পৃ., খতিব তিবরিযী : : মিশকাতুল মাসাবীহ : ৭২ পৃ.
❏ ইমাম আব্দুর রায্যাক (رحمة الله) সংকলন করেন-
عَبْدُ الرَّزَّاقِ قَالَ: أرنا ابْنُ التَّيْمِيِّ , عَنِ الْمُبَارَكِ بْنِ فَضَالَةَ , قَالَ:كَانَ الْحَسَنُ يَحْلِفُ بِاللَّهِ ثَلَاثَةً لَقَدْ رَأَى مُحَمَّدٌ رَبَّهُ
-‘‘মুবারক ইবনে ফাদ্বালাহ (رحمة الله) তিনি বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত হাসান বসরী (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, তিনি তিনবার কসম করে বলেছেন, নিশ্চয়ই রাসূল (ﷺ) আল্লাহ্ তা‘য়ালাকে দেখেছেন।’’ ১১৫
১১৫. ইমাম আব্দুর রায্যাক, আত-তাফসির, ৩/২৫১ পৃ. হা/৩০৩৩, ইমাম কাজী আয়াজ : শিফা শরীফ : ১/১১৫ পৃ., আল্লামা মোল্লা আলী কারী, শরহে শিফা : ১/৪২৮ পৃ.
দেখুন হযরত হাসান বসরী (رضي الله عنه) কত উচু সম্পূর্ণ আল্লাহর ওলী ও তাবেয়ী তিনি কসম করে বলেছেন, তাহলে কী তিনি মিথ্যা কসম করেছেন! নাউযুবিল্লাহ, আল্লাহ আমাদেরকে এ ধোঁকাবাজদের থেকে হেফাযত করুন।
❏ মিশকাত শরীফে হযরত মুয়ায বিন জাবাল (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ ফরমান-
رَأَيْتُ رَبِّيَ عَزَّ وَجَلَّ فِي أَحْسَنِ صُورَةٍ
-“আমি আমার রব তা‘য়ালাকে উত্তম আকৃতিতে দেখেছি।’’ ১১৬
১১৬. ইমাম তিরমিযী, আস্-সুনান: ৫/৩৪৩ পৃ. হা/৪২৩৫, খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ১/৭১ পৃ. হাদিস:৭৪৮
❏ ইমাম তিরমিযী (رحمة الله) হাদিসটি সংকলন করে বলেন,
قَالَ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ وَسَأَلْتُ مُحَمَّد ابْن إِسْمَاعِيل عَن هَذَا الحَدِيث فَقَالَ: هَذَا حَدِيث صَحِيح
-“এ হাদিসটি হাসান, সহীহ। আমি ইমাম বুখারী (رحمة الله) কে এ হাদিসের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, এ হাদিসটি সহীহ।’’ ১১৭
১১৭. ইমাম তিরমিযী, আস্-সুনান: ৫/৩৪৩ পৃ. হাদিস:৪২৩৫
❏ ইমাম দায়লামী (رحمة الله) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন,
رَأَيْت رَبِّي عزوجل لَيْسَ كمثله شَيْء
-“আমি আমার রব আল্লাহ্ তা‘য়ালাকে দেখেছি, তবে তাঁর সাথে কোন সাদৃশ্য/তুলনা নেই।’’ ১১৮
১১৮. দায়লামী, আল-ফিরদাউস, ২/২৫৪ পৃ. হাদিস:৩১৮৩
❏ ইমাম শায়বানী (رحمة الله) সংকলন করেন-
عَنِ الشَّعْبِيِّ، عَنْ عِكْرِمَةَ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: رَأَى مُحَمَّدٌ رَبَّهُ
-“তাবেয়ী ইমাম শা‘বী (رحمة الله), হযরত ইকরামা (رحمة الله) থেকে তিনি হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, হযরত মুহাম্মাদ (ﷺ) তাঁর রব তা‘য়ালাকে দেখেছেন। ১১৯
১১৯.ইমাম শায়বানী, আস্-সুন্নাহ, ১/১৮৯ পৃ. হা/৪৩৫, মাকতুবাতুল ইসলামী, বয়রুত, লেবানন।
● ইমাম আসেম (ওফাত ২৮৭ হি.) হাদিসটি বর্ণনা করে বলেছেন, হাদিসটি ইমাম বুখারীর শর্তের উপর মওকুফ সূত্রে সহীহ।
❏ ইমাম আবি আছেম (رحمة الله) আরেকটি সূত্র বর্ণনা করেছেন এভাবে,
عَنِ الْحَكَمِ بْنِ أَبَانَ، عَنْ عِكْرِمَةَ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: رَأَى مُحَمَّدٌ رَبَّهُ
-“হাকাম বিন আবান (رحمة الله) তিনি ইকরামা (رضي الله عنه) থেকে তিনি হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) তাঁর রবকে দেখেছেন।’’ ১২০
১২০. ইমাম আবি আছেম, আস্-সুন্নাহ, ১/১৯০ পৃ. হাদিস:৪৩৭
❏ ইমাম তিরমিযি (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-
-عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: رَأَى مُحَمَّدٌ رَبَّهُ،
-“ইমাম ইকরামা (رحمة الله) তিনি ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন হযরত মুহাম্মাদ (ﷺ) তাঁর রব তা‘য়ালাকে দেখেছেন।’’ ১২১
● ইমাম তিরমিযী (رحمة الله) তার গ্রন্থে হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন।
১২১. তিরমিযী, আস্-সুনান, কিতাবুত-তাফাসির, সূরা নাযম, ৫/৩৯৫ পৃ. হাদিস:৩২৭৯, শায়বানী, আস্-সুন্নাহ, ১/১৮৮ পৃ. হা/৪৩৩, ইবনে কাসীর, জামিউল মাসানীদ, ৩১/৮৭৮২ পৃ. হা/২১৪৬, দারুল ফিকর, বায়হাকী, কিতাবুল আসমা ও ছিফাত, ২/১৯০ পৃ-১৯১ পৃ. মুজাহিদ, তাফসীর, ২/৬২৮ পৃ. মাকতাবায়ে মানসূরাত আল ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।
❏ ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-
وَأخرج الطَّبَرَانِيّ فِي الاوسط بِسَنَد صَحِيح عَن ابْن عَبَّاس انه كَانَ يَقُول ان مُحَمَّدًا صلى الله عَلَيْهِ وَسلم رأى ربه مرَّتَيْنِ مرّة ببصره وَمرَّة بفؤاده-
-‘‘ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) তাবরানীর মু‘জামুল আওসাতের সূত্রে সহীহ সনদে ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, নিশ্চয়ই হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) তাঁর রবকে দুইবার দেখেছেন। একবার চর্ম চোখে, আরেকবার অন্তর চোখে।’’ ১২২
১২২. ইমাম সূয়তি, খাসায়েসুল কোবরা, ১/২৮৬ পৃ. হা/৯১২, হায়সামী, মাযমাউদ যাওয়াইদ, ১/৭৮ পৃ.
❏ ইমাম আহমদ (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত।
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ؓ، أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ قَالَ: أَتَانِي رَبِّي عَزَّ وَجَلَّ اللَّيْلَةَ فِي أَحْسَنِ صُورَةٍ
-“তিনি বলেন, নিশ্চয় রাসূল (ﷺ) বলেছেন, মহান রব এক রাতে উত্তম আকৃতিতে আমার নিকট আগমন করেছিলেন।’’ ১২৩
১২৩.ইমাম আহমাদ, আল-মুসনাদ, ১/৩৬৮ পৃ. হা/৩৪৮৪, ৪/৬৬ পৃ. হাদিস:২২১৬২, ৫/২৪৩ পৃ. হা/২৩২৫৮, তাবরানী, মু‘জামুল কাবীর, ৮/২৯০ পৃ. হা/৮১১৭
❏ ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) মুসনাদে বায্যারের সুত্রে বর্ণনা করেন-
حَدَّثنا شعبة، عَن قَتادة، عَن أَنَس ؓ؛ أَن مُحَمَّدًا ﷺ رَأَى رَبَّهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى-
-‘‘তাবেয়ী হযরত কাতাদা (رحمة الله) খাদেমুর রাসূল (ﷺ) হযরত আনাস বিন মালিক (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, নিশ্চয়ই রাসূল (ﷺ) তাঁর রব তাবারাকা ওয়া তা‘য়ালা কে দিখেছেন।’’ ’’১২৪
১২৪. ইমাম সুয়ূতি, খাসায়েসুল কোবরা, ১/২৫৯ পৃ. মুসনাদে বায্যার, ১৩/৪২৬ পৃ. হাদিস:৭১৬৫
❏ ইমাম বায্যার (رحمة الله) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে এ বিষয়ে আরেকটি হাদিস সংকলন করেন এই সনদে,
حَدَّثنا سُفيان، عَن ابْنِ جُرَيج، عَن عَطَاءٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، رَضِي اللَّهُ عَنْهُمَا، أَنَّ مُحَمَّدًا صَلَّى الله عَلَيه وَسَلَّم رَأَى رَبَّهُ
-“তিনি বলেন, নিশ্চয় হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) তাঁর রবকে দেখেছেন।’’ ১২৫
১২৫. মুসনাদে বায্যার, ১১/৩৬১ পৃ. হা/৫১৮৫
● এ বিষয়ে অনুরূপ শব্দে হযরত আবু উমামা (رضي الله عنه) হতে এবং হযরত জাবের বিন সামুরা (رضي الله عنه) হতেও আরেকটি বর্ণনা রয়েছে। ১২৬
১২৬.তাবরানি, মু‘জামুল কাবীর, ২০/১০৯ পৃ. হাদিস:২১৬, রূহানি, আল-মুসনাদ, ২/২৯৯ পৃ. হা/২৬০৮, ইমাম আবূ ই‘য়ালা, আল-মুসনাদ, ৪/৪৭৫ পৃ. হা/২৬০৮, শায়বানী, আহাদিসুল মাসানী, ৫/৪৯ পৃ. হা/২৫৮৫, হুমায়দী, আল-মুসনাদ: ১/২২৮ পৃ. হা/৬৮২, আবি আসেম, আস্-সুন্নাহ, ১/২০৩ পৃ. হা/৪৬৫, হাকেম তিরমিযী, নাওয়াদিরুল উসূল, ৩/১২০পৃ.
❏ তাই আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) এ সকল হাদিসের ব্যাখ্যায় লিখেছিলেন,
كَمَا أَنَّ النَّبِيَّ - عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ - رَآهُ فِي الدُّنْيَا لِانْقِلَابِهِ نُورًا
-“নবীজি (ﷺ) এই জগতেই আল্লাহ্ তা‘য়ালাকে দেখেছেন, কেননা তিনি নিজেই নূরে পরিনত হয়েছিলেন।’’ ১২৭
১২৭. মোল্লা আলী ক্বারী, মিরকাতুল মাফাতিহ, ঈমান বিল ক্বদর, ১/২৬৬ পৃ. হা/৯১
❏ ইমাম কাযি আয়্যায (رحمة الله) সংকলন করেন-
وَحَكَاهُ أَبُو عُمَرَ الطَّلَمَنْكِيُّ عَنْ عِكْرِمَةَ ● وَحَكَى بَعْضُ الْمُتَكَلِّمِينَ هَذَا الْمَذْهَبَ عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ
-“আবু উমারা আত্-তালামানকি (رحمة الله), হযরত ইকরামা (رحمة الله) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন আর একদল কালাম শাস্ত্রবিদ ও বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) এর অভিমত হলো রাসূল (ﷺ) আল্লাহ্ তা‘য়ালাকে দেখেছেন।’’ ১২৮
১২৮.
ক. ইমাম কাজী আয়াজ : শিফা শরীফ : ১/১১৯ পৃ.
খ. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : শরহে শিফা : ১/৪৬৮ পৃ.
❏ ইমাম কাযি আয়্যায (رحمة الله) সংকলন করেন-
وَحَكَى ابْنُ إِسْحَاقَ أَنَّ مَرْوَانَ سَألَ أَبَا هُرَيْرَةَ هَلْ رَأَى مُحَمَّدٌ رَبَّهُ فَقَالَ نَعَمْ-
-“ইমাম ইবনে ইসহাক (رحمة الله) বর্ণনা করেন, মারওয়ান সে হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) কে জিজ্ঞাসা করলেন, রাসূল (ﷺ) কী আল্লাহ্ তা‘য়ালাকে দেখেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ।’’ ১২৯
১২৯.
ক. আল্লামা ইমাম কাজী আয়াজ : শিফা শরীফ : ১/১১৯ পৃ.
খ. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : শরহে শিফা : ১/৪২৮ পৃ.
❏ আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) সংকলন করেন-
رواه الحاكم والنسائي والطبراني أن ابن عباس قال تقوية لقوله إنه رأى ربه بعينه-
-‘‘ইমাম হাকিম (رحمة الله) তার মুস্তাদরাকে, ইমাম তাবরানী, ইমাম নাসায়ী তাদের স্ব-স্ব গ্রন্থে শক্তিশালী সনদে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) আল্লাহ্ তা‘য়ালাকে স্বীয় চর্ম চোখে দেখেছেন।’’ ১৩০
১৩০.
ক. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : শরহে শিফা : ১/৪২৪ পৃ.
খ. আল্লামা শায়খ ইউসুফ নাবহানী : জাওয়াহিরুল বিহার : ৩/৩২২ পৃ.
❏ ইমাম কাযি আয়্যায (رحمة الله) সংকলন করেন-
ذَكَرَ ابْنُ إِسْحَاقَ أَنَّ ابْنَ عُمَرَ أَرْسَلَ إِلَى ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا يَسْأَلُهُ هَلْ رَأَى مُحَمَّدٌ رَبَّهُ فَقَالَ نَعَمْ وَالْأشْهَرُ عَنْهُ أَنَّهُ رَأَى رَبَّهُ بِعَيْنِهِ رُوِيَ ذَلِكَ عَنْهُ مِنْ طُرُقٍ وَقَالَ إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى اخْتَصَّ مُوسَى بِالْكَلامِ وَإبْرَاهِيمَ بِالْخُلَّةِ وَمُحَمَّدًا بِالرُّؤْيَةِ-
-“হযরত ইবনে ইসহাক (رضي الله عنه) উল্লেখ করেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) একবার কোন একজনকে হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) এ নিকট জানতে চেয়ে প্রেরণ করেছিলেন যে, হুযূর (ﷺ) কি আল্লাহ্ তা‘য়ালাকে দেখেছিলেন কিনা বিষয়ে। ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেছিলেন, হ্যাঁ। তার চেয়ে অতি প্রসিদ্ধ কথা হলো যে, হুযূর (ﷺ) তার চর্ম চক্ষে প্রভুর দর্শন লাভ করেছেন। এ কথা বিভিন্ন ভাবে বর্ণিত হয়েছে। আরও বলেন, আল্লাহ্ তা‘য়ালা হযরত মূসা (عليه السلام) কে তাঁর সাথে কথা বলার মর্যাদা দান করেছেন। আর হযরত ইবরাহীম (عليه السلام) কে খলীল বানিয়েছেন। আর হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) কে আল্লাহ্ তা‘য়ালার দর্শন লাভের মর্যাদা দান করেছেন।’’ ১৩১
১৩১.
ক. ইমাম কাজী আয়াজ : শিফা শরীফ : ১/১১৯ পৃ.
খ. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : শরহে শিফা, ১/৪২৪ পৃ.
❏ ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) সংকলন করেন-
إِواخرجه الْبَيْهَقِيّ فِي كتاب الرُّؤْيَة بِلَفْظ ان الله اصْطفى إِبْرَاهِيم بالخلة وَاصْطفى مُوسَى بالْكلَام وَاصْطفى مُحَمَّدًا بِالرُّؤْيَةِ
-“ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) ‘কিতাবুল রুয়া’তে বর্ণনা করেন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন, আল্লাহ্ তা‘য়ালা ইবরাহীম (عليه السلام) কে বন্ধুত্ব, মূসা (عليه السلام) কে আলাপ এবং মুহাম্মদ (ﷺ) কে তাঁর দীদার দ্বারা একক মর্যাদা দান করেছেন।’’ ১৩২
১৩২.
ক. ইমাম কাজী আয়াজ : শিফা শরীফ, ২/২৭০ পৃ.
খ. ইমাম জালালুদ্দীন সূয়তী : খাসায়েসুল কোবরা, ১/১৬১ পৃ.
গ. আল্লামা ইমাম জুরকানী : শরহে মাওয়াহেব, ৫/১১৭ পৃ.
ঘ. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : শরহে শিফা, ১/৪৭০ পৃ.
এ বিষয়ে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আক্বিদা:
এবার আমরা এ বিষয়ে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকায়েদবিদগণ কি বলেছেন। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকায়েদের ইমামের অভিমতঃ
❏ ইমাম কাযি আয্যায (رحمة الله) তুলে ধরেন এভাবে-
وَقَالَ أَبُو الْحَسَنِ عَلِيُّ بْنُ إِسْمَاعِيل الْأَشْعَرِي رَضِيَ اللَّه عَنْهُ وَجَمَاعَةٌ مِنْ أَصْحَابِهِ أنَّهُ رَأَى اللَّه تعالى ببصره وعيسى رَأسِهِ وَقَالَ كُلّ آيةٍ أُوتِيهَا نَبِيّ مِنَ الْأَنْبِيَاءِ عَلَيْهِمُ السَّلَامُ فَقَدْ أُوتِي مِثْلَهَا نَبِيُّنا صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَخُصَّ مِنْ بَيْنِهِمْ بِتَفْضِيلِ الرُّؤْيَةِ-
-“আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আকায়েদের ইমাম আবুল হাসান আলী আশ‘আরী (رحمة الله) ও তাঁর এক জামাত সঙ্গীসাথী বলেন, হুযূর (ﷺ) আল্লাহ্ তা‘য়ালাকে চর্ম চোখে অবলোকন করেছেন। তাঁরা আরও বলেন, অন্যান্য আম্বিয়ায়ে কেরামকে যত মু‘জিজা দেওয়া হয়েছে অনুরূপ মু‘যিজা হুযূর (ﷺ) কে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু হুযূর (ﷺ) কে খাস মু‘যিজা দিদারে এলাহী দিয়ে সকলের অগ্রবর্তী করেছেন।’’ ১৩৩
১৩৩.
ক. আল্লামা কাজী আয়াজ : শিফা শরীফ : ১/১১৮ পৃ.
খ. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : শরহে শিফা : ১/৪২৯ পৃ.
যারা এখন এর বিপরীত অভিমত পেশ করেন, নিঃসন্দেহে তারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের বহির্ভূত।
❏ ইমাম কাযি আয়্যায (رحمة الله) বলেন-
قَالَ الْقَاضِي أَبُو الْفَضْلِ وَفَّقَهُ اللَّهُ: والحق الذي لا امتراءالحق الذى لا امتراء فيه ان فِيهِ أَنَّ رُؤْيَتَهُ تَعَالَى فِي الدُّنْيَا جَائِزَةٌ عَقْلًا. وَلَيْسَ فِي الْعَقْلِ مَا يُحِيلُهَا-
-“ইমাম কাযী আবুল ফজল আয়াজ (رحمة الله) তিনি বলেন, সত্য কথা হলো আকলের দিক থেকে এ বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করার কোন অবকাশ নেই যে, দুনিয়াতে তিনি আল্লাহর দীদার লাভ করেছেন। আর আকলের দিক থেকে বিরূপ কোন প্রমাণও নেই যে, এরূপ হওয়া অসম্ভব।’’ ১৩৪
১৩৪.
ক. আল্লামা কাজী আয়াজ : শিফা শরীফ : ১/১১৮ পৃ.
খ. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : শরহে শিফা : ১/৪২৯ পৃ.
❏ আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) লিখেন-
وقال الغزالي في الإحياء والصحيح أن رسول الله صلى الله تعالى عليه وسلم رأى الله تعالى ليلة المعراج-
-“ইমাম গায্যালী (رحمة الله) ‘ইহইয়াউল উলূমে’ বলেন, বিশুদ্ধ অভিমত হলো, মি‘রাজের রজনীতে রাসূল (ﷺ) আল্লাহ্ তা‘য়ালাকে দেখেছেন।’’ ১৩৫
১৩৫. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : শরহে শিফা : ১/৪২৩ পৃ.
❏ আল্লামা জুরকানী (رحمة الله) লিখেন-
قال النووى عند اكثر العلماء انه صلى الله عليه وسلم رأى ربه بعينى رأسه ليلة المعراج الاسراء-
-“ইমাম নববী (رحمة الله) বলেন, অধিকাংশ ওলামার নিকট এই মতই প্রাধান্য পেয়েছে যে, নবী করীম (ﷺ) মি‘রাজের রজনীতে স্বীয় প্রতিপালককে তাঁর কপালের চোখ দ্বারা দেখছেন।’’ ১৩৬
১৩৬.
ক. আল্লামা ইমাম জুরকানী : শরহে মাওয়াহেব : ৬/১১৬ পৃ.
খ. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : শরহে শিফা : ১/৪২৫ পৃ.
গ. আল্লামা ইমাম নববী : শরহে মুসলিম : ১ম খণ্ড
ঘ. আল্লামা শায়খ ইউসুফ নাবহানী, জাওয়াহিরুল বিহার : ৩/৩২২ পৃ.
একটি আপত্তি ও নিষ্পত্তি:
তথাকথিত আহলে হাদিসগণ দাবী করে যে, তাবেয়ী মাসরুক (رحمة الله) হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) কে-
هَل رَأَى مُحَمَّدٌ رَبَّهُ؟
-‘‘মুহাম্মদ (ﷺ) কি তাঁর রবকে দেখেছেন?’ এর উত্তরে মা আয়েশা (رضي الله عنه) অস্বীকার করেছিলেন।’’ ১৩৭
১৩৭. খতিব তিবরিযি, মিশকাত, হা/৫৬৬১, পরিচ্ছেদ: بَاب رؤيةالله تَعَالَى
আর তাই আহলে হাদিসগণ বলে থাকেন রাসূল (ﷺ) আল্লাহ তা‘য়ালা কে দেখেননি।
পর্যালোচনা:
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের ইমামগণ বলেছেন, হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) এর নিজস্ব মতামত। আর রাসূল (ﷺ) এর মারফূ সহীহ হাদিসের মুকাবেলায় নিজস্ব সাহাবীর কিয়াস মতামত গ্রহণযোগ্য নয়।
❏ হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) হাদিসের ব্যাখ্যায় বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস ইমাম কাযি আয়াজ (رحمة الله) শিফা শরীফে উল্লেখ করেন,
وَكَانَتْ عَائِشَةُ فِي الْهِجْرَةِ بِنْتَ نَحْوِ ثَمَانِيَةِ أَعْوَامٍ وَقَدْ قِيلَ كَانَ الْإِسْرَاءُ لِخَمْسٍ قَبْلَ الْهِجْرَةِ وَقِيلَ قَبْلَ الْهِجْرَةِ بِعَامٍ وَالْأَشْبَهُ أَنَّهُ لِخَمْسٍ وَالْحُجَّةُ لِذَلِكَ تَطُولُ لَيْسَتْ مِنْ غَرَضِنَا فَإِذَا لَمْ تُشَاهِدْ ذَلِكَ عَائِشَةُ دَلَّ أَنَّهَا حَدَّثَتْ بِذَلِكَ عَنْ غَيْرِهَا فَلَمْ يُرَجَّحْ خَبَرُهَا عَلَى خَبَرِ غَيْرِهَا وَغَيْرُهَا يَقُولُ خِلافَهُ مِمَّا وقع نضأ فِي حَدِيثِ أُمِّ هَانِئٍ وَغَيْرِهِ -
-“হিজরতের সময় হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) এর বয়স ছিল আট বছর। কোনো কোনো ঐতিহাসিক বলেন, হিজরতের পাঁচ বছর পূর্বে মি‘রাজ হয়েছে। আবার কেউ কেউ বলেন, একবছর পূর্বে হয়েছিল। কিন্তু নির্ভরযোগ্য বর্ণনা হলো এটা হিজরতের পাঁচ বছর পূর্বে (মি‘রাজ) সংঘঠিত হয়েছিল। আর এর বিষয়টি অতি দীর্ঘ। তাঁর উল্লেখ করা আমার উদ্দেশ্য নয়। সুতরাং এ কথা প্রমাণিত হয়েছে যে, হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) নিজে মি‘রাজের ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন না। বরং তিনি অন্য কারো নিকট থেকে শুনে বর্ণনা করেছেন, সুতরাং তাঁর বর্ণনাকে যিনি মি‘রাজের বর্ণনা নিজে হুযূর (ﷺ) এর কাছ থেকে শুনেছেন তার বর্ণনার উপর প্রাধান্য দেওয়া যাবে না, যেমন হযরত উম্মে হানী (رضي الله عنه)ও অন্যান্যদের বর্ণনা। যা তাঁর {হযরত আয়েশা (رضي الله عنه)} বর্ণনার বিপরীত।’’ ১৩৮
১৩৮.
ক. ইমাম কাজী আয়াজ : শিফা শরীফ : ১/১৩৫ : পৃ:
খ. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : শরহে শিফা : ১/৪২৮ ,
গ. আল্লামা শিহাবুদ্দিন খিফ্ফাজী : নাসীমুর রিয়াদ্ব - ১/২৪০ পৃ
❏ এ বিষয়ে সমাধান তুলে ধরেন বিখ্যাত হাদিসের ব্যাখ্যাকারী ইমাম নববী (رحمة الله) এভাবে-
فَالْحَاصِلُ أَنَّ الرَّاجِحَ عِنْدَ أَكْثَرِ الْعُلَمَاءِ إن رسول الله صلى الله عليه وسلم رَأَى رَبَّهُ بِعَيْنَيْ رَأْسِهِ لَيْلَةَ الْإِسْرَاءِ لِحَدِيثِ بن عَبَّاسٍ وَغَيْرِهِ مِمَّا تَقَدَّمَ وَإِثْبَاتُ هَذَا لَا يَأْخُذُونَهُ إِلَّا بِالسَّمَاعِ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
-‘‘পরিশেষে বলা যায়, অধিকাংশ উলামার নিকট এই মতই প্রাধান্য পেয়েছে যে, নাবী কারীম (ﷺ) মি‘রাজের রজনীতে স্বীয় প্রতিপালককে তাঁর কপালের চোখ দ্বারা দেখছেন। যেমনটি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (رضي الله عنه)সহ অন্যান্যের বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে। এই বিষয়ে যারা (সাহাবীরা) রাসূল (ﷺ) হতে মি‘রাজের সময় (মি‘রাজের ঘটনা) শ্রবণ করেছেন কেবল তাদের অভিমত ছাড়া বাকি অভিমত (যেমন মা আয়েশার অভিমত; কেননা তিনি তখন খুব ছোট ছিলেন) গ্রহণ করা হবে না।’’১৩৯
১৩৯. ইমাম নববী : শরহে মুসলিম : ৩/৫ পৃ. দারু ইহ্ইয়াউত তুরাসুল আরাবী, বয়রুত, লেবানন, ইমাম জুরকানী : শরহে মাওয়াহেব : ৬/১১৬ পৃ. মোল্লা আলী ক্বারী : শরহে শিফা : ১/৪২৫ পৃ., শায়খ ইউসুফ নাবহানী, যাওয়াহিরুল বিহার : ৩/৩২২ পৃ.
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! মি‘রাজের বিষয়ে দুই প্রকারের হাদিসের ব্যাখায় ইমাম নববী (رحمة الله) যা বলেছেন তাই চূড়ান্ত কথা।
━━━━━━━━━━━━━━━━
🌍 তথ্যসূত্রঃ [শহিদুল্লাহ বাহাদুর গ্রন্থসমগ্র এপ্স]
ডাউনলোড লিংকঃ bit.ly/Sohidullah
অথবা, এপ্সটি পেতে প্লে স্টোরে সার্চ করুন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন