যে কারণে আলবানীর তাহকীক অনুসরণ করা হবে না:



ক. ইমাম-মনীষীদের সমালোচনা: এ আলবানী নামক লোকটির সমালোচনা থেকে পৃথিবীর বিজ্ঞবিজ্ঞ ইমামগণও বাঁচতে পারে নি। সে তার ‘সিলসিলাতুল আহাদিসুদ্ দ্বঈফাহ’ গ্রন্থের বিভিন্ন স্থানে ইমাম তিরমিযীর ব্যাপারে লিখেছেন, ইমাম তিরমিযী তাঁর সুনানে কত জাল হাদিসকে যে হাসান, সহীহ বলে ফেলেছেন তার কোন হিসাব নেই। ৮৫

➥৮৫. আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদিসুদ্-দ্বঈফাহ ওয়াল মাওদ্বুআহ, ১/৮৫ পৃ. হা/২৪


আলবানী নামক এ লোকটির দৃষ্টিতে একটি হাদিস সহীহ নয়, অথচ অন্যান্য মুহাদ্দিস তাকে সহীহ বলায় তিনি হাদিসের বিখ্যাত তিন জন হাফেযুল হাদিসের তথা


❏ ইমাম হাকিম নিশাপুরী, ইমাম যাহাবী, ইমাম মুনযিরী (رحمة الله) সমালোচনায় লিখেন-

وقال الحاكم: صحيح الإسناد ! ووافقه الذهبي! وأقره المنذري في  الترغيب (৩/১৬৬)! وكل ذلك من إهمال التحقيق، والاستسلام للتقليد، وإلا فكيف يمكن للمحقق أن يصحح مثل هذا الإسناد

-‘‘ইমাম হাকিম (رحمة الله) বলেছেন,  হাদিসটির সনদ সহীহ। ইমাম যাহাবী (رحمة الله) তাঁর সাথে একত্মাতা পোষণ করেছেন। ইমাম মুনযিরী (رحمة الله) ‘তারগীব ও তারহীব’ নামক কিতাবে তার স্বীকৃতি দিয়েছেন। আর এটি হয়েছে, তত্ত্ব-বিশ্লেষণের প্রতি উদাসীনতা, তাক্বলীদের প্রতি আত্মসমর্পণ (অন্ধানুকরণ),  নতুবা একজন  বিশ্লেষণধর্মী আলেম কিভাবে একে সহীহ বলতে পারেন!।’’ (আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদিসুদ্-দ্বঈফাহ ওয়াল মাওদ্বুআহ, ৩/৪৭৯ পৃ. হা/১২৫৯)


সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! আলবানীর যদি একটুও লজ্জাবোধ থাকতো এমন মহান তিনজন ইমামের সমালোচনা করতে পারতেন না। অথচ এ সমস্ত আলেমদের সে ছাত্র হওয়ারও যোগ্য নন। ইমাম যাহাবী (رحمة الله)-এর লিখিত আসমাউর রিজালের গ্রন্থ পড়ে সকল মুহাদ্দিসদের হাদিসের সনদ বিশ্লেষণ করতে হয় সেই মহান ইমাম যাহাবী (رحمة الله)-এর সমালোচনা!


❏ তার এ গ্রন্থের আরেক স্থানে হাফেযুল হাদিস ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি (رحمة الله)‘র সমালোচনা করতে গিয়ে লিখেন-

فيا عجبا للسيوطى كيف لم يخجل من تسويد كتابه الجامع الصغير بهذا الحديث.....

-‘‘কী আশ্চর্য! জালালুদ্দীন সুয়ূতি (رحمة الله) তাঁর জামেউস সগীরে কিভাবে এ হাদিস উল্লেখ করতে একটু লজ্জাবোধ করলেন না! (আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদিসুদ্-দ্বঈফা,  ৩/৪৭৯পৃ. হা/১৩১৪) নাউযুবিল্লাহ!


❏ তিনি তার এ পুস্তকে ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله)‘র গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে বলেন-

وجعجع حوله السيوطى

-‘‘ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি (رحمة الله) হাকডাক (কোলাহলপূর্ন, হট্ট গোলপূর্ন) ছেড়ে থাকেন।’’ (আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদিসুদ্-দ্বঈফা, ৪/১৮৯পৃ. হা/১৬৯৫)


দেখুন ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله)‘র মত একজন হাফেযুল হাদিস, মুজাদ্দিদের তাহক্বীক তাঁর কাছে নাকি হট্টগোল করার মত! একজন হাদিসের খাদেম কি এ বেয়াদবি সহ্য করতে পারেন!


❏ সে তাঁর সম্পর্কে আরেক স্থানে লিখেন-

وقعقع حوله السيوطي في اللآلي؛ فلم يصنع شيئاً كغالب عادته! وقد أقره في الجامع الكبير. وتساهل بعضهم فحسنه!

-‘‘ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি (رحمة الله) এর লা-আলিল মাসনূআ এর হাওয়ালা কোলাহলপূর্ণ, .......তিনি এ (তার দৃষ্টিতে যঈফ) হাদিসকে হাসান বলার ক্ষেত্রে ঢিলেমীর পরিচয় দিয়েছেন।’’ (আলবানী,  সিলসিলাতুল আহাদিসিদ দ্বঈফাহ,  ১১/৬২৪ পৃ. হা/৫৩৭৩)


❏ সে ইমাম তাজুদ্দীন সুবকী (رحمة الله) যিনি ইমাম তকি উদ্দিন সুবকী (رحمة الله)‘র ছেলে এবং বিজ্ঞ হাদিস বিশারদ, হাফেযে হাদিস আলেম ছিলেন; তাঁর সমালোচনা করতে গিয়ে লিখেন-

 لكنه دافع عنه بوازع من التعصب المذهبى لا فائدة كبرى من نقل كلامه وبيان مافيه من التعصب

-‘‘মাযহাব অনুসরণের গোঁড়ামী তাকে প্ররোচিত করেছে। তাঁর কথা উল্লেখ করে এবং তাঁর গোঁড়ামির কথা আলোচনা করার মধ্যে তেমন  উলে­যোগ্য কোনো উপকারিতা নেই।’’ (আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদিসুদ্-দ্বঈফাহ, ২/২৮৫ পৃ.)


সে আরও অসংখ্য হক্কানী ইমামের সমালোচনা করেছে; তার অসংখ্য কুফুরী আক্বীদা  এবং তার ভূয়া তাহক্বীকের জবাবে আমি ইনশা আল্লাহ! শীঘ্রই বিস্তারিতভাবে বই প্রকাশ করবো।


❏ আলবানী পৃথিবী বিখ্যাত দুই হাদিসের মহান ইমাম সম্পর্কে লিখেন-

فلا يفيد بعد الاطلاع على هذا أن ابن خزيمة أخرجه، لا سيما وهو معروف عند أهل المعرفة بهذا الفن أنه متساهل في التصحيح،على نحو تساهل تلميذه ابن حبان، الذي عرف عنه الإكثار من توثيق المجهولين

-‘‘ইমাম ইবনে খুজায়মা (رحمة الله) এটিকে সহীহ বলে সংকলন করার মধ্যে কোনো ফায়েদা নেই, হাদিস শাস্ত্র সম্পর্কে পূর্ণজ্ঞাত লোকজন জানেন যে, ইমাম ইবনে খুজায়মা (رحمة الله) হাদিসকে সহীহ বলার ক্ষেত্রে বেশি শিথিলতাকারী, এমনিভাবে হাদিস সহীহ বলার ক্ষেত্রে শিথিলতাকারী হলেন তাঁর ছাত্র ইমাম ইবনে হিব্বান। তাকে অধিকাংশ মুহাদ্দিস মাজহুল রাবীকে সিকাহ বলার ব্যক্তি হিসেবেই চিনেন।’’ (আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদিসিদ দ্বঈফাহ, ৩/৪০২ পৃ. হা/১২৪৭-এর আলোচনা)


❏ বিখ্যাত হাদিসের ইমাম, ইমাম হাকেম নিশাপুরী (ওফাত. ৪০৫ হি.)-এর নিকট একজন রাবী গ্রহণযোগ্য পর্যায়ের বলে তিনি তার একটি হাদিসকে সহীহ বলেছেন, এজন্য আলবানী তাঁর সমালোচনায় লিখেন-

ولذلك فقد أخطأ الحاكم خطأ فاحشا حين قال:

" هذا حديث صحيح الإسناد ! واغتر به الفقيه الهيتمي، فصححه في كتابه أسنى المطالب في صلة الأقارب  (ق ৪১/১)

-‘‘এটি হাকেমের মারাত্মক ভুল যে, তিনি কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য করেছেনঃ এ হাদিসের সনদ সহীহ। আর ফকীহ হাইতামী তার কথার কারণে ধোঁকায় পড়ে তার ‘আসনাল মাতালিব ফি সিলাতিল আকারিব’ গ্রন্থে (ক্বাফ, ১/৪১ পৃষ্ঠায়) সহীহ বলেছেন।’’ (আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদিসিদ দ্বঈফাহ, ৩/৪৫৮ পৃ. হা/১২৯৪)


❏ বিখ্যাত হাদিস বিশারদ আল্লামা শায়খ আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ (رحمة الله) সম্পর্কে আলবানী লিখেন-

اشل الله يدك وقطع لسانك يدعو على العلامة الشيخ عبد غدة ويقول عنه:انه غدة كغدة البعير ثم يقول مستهزئا ضاحكا:اتعرفون غدة

-‘‘আল্লাহ্ তোমার হাত অবশ করে দিক এবং তোমার জিহবাকে কর্তন করুক। (কাশফুন নিকাব, পৃষ্ঠা-৫২)


এ রকম শতশত পূর্বের ও সমসাময়িক মুহাদ্দিসের সে ব্যাপারে কঠিন মন্তব্য করেছে।

━━━━━━━━━━━━━━━━
🌍 তথ্যসূত্রঃ [শহিদুল্লাহ বাহাদুর গ্রন্থসমগ্র এপ্স]
ডাউনলোড লিংকঃ bit.ly/Sohidullah
অথবা, এপ্সটি পেতে প্লে স্টোরে সার্চ করুন।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন