সপ্তম অধ্যায়ঃ সফরের উদ্দেশ্যে আওলিয়ায়ে কেরামের মাযার যিয়ারত প্রসঙ্গঃ
হাদিসের আলোকে যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর এর প্রমাণঃ
ক. আল্লামা তাবারী (رحمة الله) একটি হাদিসে পাক সনদসহ বর্ণনা করেন হযরত মুহাম্মদ ইবনে ইবরাহিম (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন-
أَنَّ النَّبِيَّ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - كَانَ يَأْتِي قُبُورَ الشُّهَدَاءِ بِأُحُدٍ عَلَى رَأْسِ كُلِّ حَوْلٍ فَيَقُولُ: السَّلَامُ عَلَيْكُمْ بِمَا صَبَرْتُمْ فَنِعْمَ عُقْبَى الدَّارِ
-‘‘হুযুর আলাইহিস সালাম প্রতি বছর উহুদ যুদ্ধের শহীদদের কবরে তাশরীফ নিয়ে যেতেন অতঃপর বলতেন....।’’
🔺(ইবনে কাসির, তাফসীরে ইবনে কাসির, ৪/৩৮৯পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন (মতনটি এ কিতাবের), আব্দুর রায্যাক, মুসান্নাফ, ৩/৫৭৩পৃ. আইনী, উমদাতুল ক্বারী, ৮/৭০পৃ., ইমাম তবারী, জামিউল বয়ান ফি তাফসিরীল কোরআন, ১৬/৪২৬পৃ. হাদিস নং. ২০৩৪৫, ইবনে আবিদীন শামী, ফাতোয়ায়ে শামী, ২/২৪২পৃ.)
খ. ইমাম ইবনে কুদামা (رحمة الله) 🔺(ওফাত. ৬২০ হি.) বর্ণনা করেন-
لَانَ النَّبِيَّ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - كَانَ يَأْتِي قُبَاءَ رَاكِبًا وَمَاشِيًا، وَكَانَ يَزُورُ الْقُبُورَ،
-‘‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কখনো পায়ে হাঁটে, আবার কখনো উটে চড়ে কুবা‘য় আসতেন এবং বিভিন্ন কবর যিয়ারত করতেন।’’
🔺(ইবনে কুদামা, আল-মুগনী, ২/১৯৫পৃ. মাকতুবাতুল কাহেরা, মিশর, প্রকাশ)
এ হাদিসের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনে আবিদীন শামী (رحمة الله) বলেছেন-
اُسْتُفِيدَ مِنْهُ نَدْبُ الزِّيَارَةِ وَإِنْ بَعُدَ مَحَلُّهَا.
-‘‘ এ হাদিস থেকে কবর দূরে অবস্থিত হলেও যিয়ারত করা যে মুস্তাহাব তা বোঝা যায়।’’
🔺(ইবনে আবিদীন শামী, ফাতোয়ায়ে শামী, ২/২৪২পৃ.)
গ. ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله)-এর তাফসিরে দুররুল মানসূরে উল্লেখিত আছে
رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عَلَيْهِ وَسلم يَأْتِي قُبُور الشُّهَدَاء على رَأس كل حول فَيَقُول 🔺(سَلام عَلَيْكُم بِمَا صَبَرْتُمْ فَنعم عُقبى الدَّار) وَأَبُو بكر وَعمر وَعُثْمَان
-‘‘হুযুর আলাইহিস সালাম থেকে প্রমাণিত আছে যে তিনি প্রতি বছর শহীদদের কবরে তশরীফ নিয়ে যেতেন এবং ওদেরকে সালাম দিতেন। হযরত আবু বকর, উমর, উসমান (رضي الله عنه)ও অনুরূপ করতেন।’’
🔺(ইমাম সুয়ূতি, তাফসীরে দুরুরুল মানসূর, ৪/৬৪১পৃ.)
এ হাদিসে মাজার বা কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর রাসূল (ﷺ)-এর সুন্নাত প্রমাণিত হল। তাই ইমাম ইবনে আবিদীন শামী (رحمة الله) বলেছেন-
وَفِيهِ يُسْتَحَبُّ أَنْ يَزُورَ شُهَدَاءَ جَبَلِ أُحُدٍ
-‘‘শুহাদায়ে জাবালের যিয়ারত করা মুস্তাহাব।’’
🔺(ইবনে আবিদীন শামী, ফাতোয়ায়ে শামী, ২/২৪২পৃ.)
ঘ. হযরত মা ফাতেমা (رضي الله عنه) প্রতি জুমা‘বার তাঁর চাচা হযরত আমির হামযা (رضي الله عنه)-এর মাযার যিয়ারত করতে যেতেন।
🔺(হাকিম নিশাপুরী, আল-মুস্তাদরাক, হাদিস : ১৩৪৫, বায়হাকি,আস্-সুনানিল কোবরা, ৪/৭৮পৃ.)
ঙ. ইমাম ইবনে আসাকির (رحمة الله) বিশুদ্ধ ‘হাসান’ সনদে হযরত আবু দারদা (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, হযরত বেলাল (رضي الله عنه) শামে অবস্থান কালে এক রাতে স্বপ্নে দেখলেন যে, রাসুল (ﷺ) তার উদ্দেশ্যে বলেন-
ما هذه الجفوة يا بلال أما ان لك أن تزورني يا بلال
বেলাল! তোমার এ নির্দয় আচরনের কারণ কী! আজও কী আমার জিয়ারতের সময় হয়নি? এরপর তিনি বিষন্ন মনে ও ভিতসন্ত্রস্ত্র অবস্থায় জেগে উঠলেন। তারপর তিনি বাহনে চড়ে মদিনার উদ্দেশ্যে সফরে রওয়ানা হলেন। রওযা শরীফে পৌঁছে তিনি রওযার পাশে কাঁদতে লাগলেন এবং তাঁর চেহাড়া রওযা শরীফের সাথে মললেন।’
🔺(আল্লামা ইবনে আসাকীর : তারীখে দামেস্ক : ৭/১৩৭পৃ., যাহাবী, তারীখুল ইসলাম : ৪/২৭৩পৃ, ইবনে হাজার আসকালানী : লিসানূল মিযান : ১/৪৫পৃ, ইমাম যাহাবী : সিয়ারু আ‘লামিন আন্-নুবালা : ৩/২১৮পৃ, দারুল হাদিস, কাহেরা, মিশর, মুফতি আমিমুল ইহসান : ফিকহুস সুনানি ওয়াল আছার : ১/৪১৪পৃ. হাদিস : ১১৭১, ইমাম তকি উদ্দিন সুবকী, শিফাউস সিকাম : ৩৯পৃ. ইবনে হাজর মক্কী, যাওয়াহিরুল মুনাজ্জাম : পৃ-২৭, শাওকানী, নায়লুল আওতার : ৫/১৮০পৃ. ইমাম জাযরী আশ্-শায়বানী: সাদ্দাল গাবাত ফি মা‘রিফাতুল সাহাবা : ১/৪১৫পৃ. দারূল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, ইমাম ইফরিকী, মুখতাসিরে তারিখে দামেস্ক : ৪/১১৮পৃ.)
উক্ত হাদিস সম্পর্কে মুফতি আমিমুল ইহসান (رحمة الله) বলেন,‘‘ইবনে আসাকির গ্রহণযোগ্য সনদে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন’’।
🔺(মুফতি আমিমুল ইহসান : ফিকহুস সুনানি ওয়াল আছার : ১/৪১৪পৃ. হাদিস : ১১৭১, যা বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন হতে প্রকাশিত)
ইমাম সুবকী (رحمة الله) এবং ইবনে হাজার মক্কী (رحمة الله) তাদের গ্রন্থে হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন।
চ. আরেকটি হাদিসে পাক দেখুন-
عَنْ نَافِعٍ , عَنِ ابْنِ عُمَرَ , قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ زَارَ قَبْرِي وَجَبَتْ لَهُ شَفَاعَتِي-
-“হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, যে আমার রওযা মোবারক যিয়ারত করবে তার জন্য আমার শাফায়াত অনিবার্য।”
🔺(ক. ইমাম বায়হাকী : শুয়াবুল ঈমান : ৬/৫১.পৃষ্ঠা, হাদিস,৩৮৬২, কাজী আয়াজ আল-মালেকী, আশ্-শিফা শরীফ : ২/৮৩ পৃষ্ঠা, দারেকুতনী, আস-সুনান, ৩/৩৩৪পৃ., হাদিস,২৬৬৫, মুয়াস্সাতুল রিসালা, বয়রুত, লেবানন, বায্যার, আল মুসনাদ, ২/২৪৮ পৃষ্ঠা, হাকিম তিরমিযী, নাওয়ারিদুল উসূল ফি আহাদিসুর রুসুল,২/৬৭পৃষ্ঠা, ইস্পাহানী, তারগীব ওয়াত তারহীব, ২/২৭পৃ. হাদিস,১০৮১,আদি, আল-কামিল, ৮/২৬৯ পৃষ্ঠা, ক্রমিক নং.১৮৩৪, ও ৪/১৯০-১৯১পৃষ্ঠা, সুয়ূতি, জামিউল আহাদিস, ২০/৩৪৮পৃষ্ঠা, হাদিস,২২৩০৪, সুয়ূতি, জামিউস-সগীর : ২/৬০৫ পৃষ্ঠা, হাদিস : ৮৭১৫, ইমাম হায়সামী : মাযমাউদ যাওয়াইদ : ৪/২ পৃষ্ঠা, হাদিসঃ ৫৮৪১, ও কাশফুল আশতার,২/৫৭পৃ.হাদিস :১১৯৮, কুস্তালানী, মাওয়াহেব লাদুন্নীয়া : ২/৫৭১.পৃষ্ঠা, ইমাম তকি উদ্দিন সুবকী : শিফাউস সিকাম ফি যিয়ারাতিল খায়রি আনাম : ১৫ পৃষ্ঠা, মুফতী আমিমুল ইহসান : ফিকহুস সুনানি ওয়াল আছার : ১/৪১৩ পৃ: হাদিস : ১১৭৯, ই.ফা.বা, হতে প্রকাশিত, মুত্তাকী হিন্দী : কানযুল উম্মাল : ১৫/৬৫১ পৃ. হাদিস : ৪২৫৮৩)
এ হাদিসে নবীজি তাঁর রওযা যিয়ারতের জন্য সফর করার উৎসাহ দিয়েছেন। আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (রহ) আরো বলেন,
رواه الدارقطني وغيره وصححه جماعة من ائمة الحديث
-‘ইমাম দারেকুতনীসহ অন্যান্য ইমামগণ উক্ত রেওয়ায়েতকে বর্ণনা করেছেন এবং এক জামাত ইমামগণ উক্ত হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন।’’
🔺(আল্লা মোল্লা আলী ক্বারী : শরহে শিফা : ২/১৫০ পৃ.)
অন্য হাদিসে দেখুন নবীজি (ﷺ) ইলমের জন্য সফর করতে বলেছেন-
عَنْ سَخْبَرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ،مَنْ طَلَبَ الْعِلْمَ كَانَ كَفَّارَةً لِمَا مَضَى
-‘‘হযরত সাখবারাহ (রা) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন : যদি কোনো ব্যক্তি ইলম শিক্ষা করে, তবে তা তার পূর্ববর্তী পাপের জন্য ক্ষতিপূরণ (পাপ মোচনকারী) হবে।’’
🔺(ক. ইমাম তিরমিযী : আস-সুনান : কিতাবুল ইলম : ৪/২৯ পৃ. হাদিস : ২৬৪৮, ইমাম দারেমী : আস সুনান : ১/১৪৯ পৃ. হাদিস : ৫৬১, মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ১০/১৩৯পৃ. হাদিস,২৮৬৯৯, ইমাম সূয়তী : জামেউস সগীর : ২/৬২১ হাদিস : ২০৮৭১, ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ুতী : জামিউল আহাদিস : ৭/৬১ পৃ. হাদিস : ২০৮৭১, খতিব তিবরিজী : মিশকাত : কিতাবুল ইলম : ১/ হাদিস : ২২১)।
++++++++
ফতোওয়ায়ে আহলে সুন্নাহ (আটটি বিষয়ের সমাধান)
গ্রন্থনা ও সংকলনেঃ
মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ বাহাদুর
প্রতিষ্ঠাতা, ইমাম আযম রিসার্চ সেন্টার, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ ০১৭২৩-৯৩৩৩৯৬
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন