চল্লিশ হাদিস দ্বারা মদীনা শরীফের ফযিলত

লেখকের কথা

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম


সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্য যিনি মদীনা তায়্যেবাকে তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মদ (ﷺ)’র হিজরতের জন্য নির্বাচিত করে ভূ-মণ্ডলে শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী করেছেন। দুরূদ-সালাম প্রেরণ করছি মানবতার অগ্রদূত, সমগ্র সৃষ্টির উৎস হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)’র চরণে যার সংস্পর্শে মদীনা শরীফের কবর মোবারকের মাটি আরশ আ’জমের চেয়ে উত্তম হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করেছে।

স্মরণ করছি সমস্ত মুহাদ্দিসীনে কিরামগণকে বিশেষত যারা চল্লিশটি হাদিস মুখস্ত ও প্রচার করার ফযিলত সম্বলিত নবী করিম (ﷺ)’র হাদিসের উপর আমল করতে গিয়ে চল্লিশ হাদিসের উপর কিতাব রচনা করেছেন। এ বিষয়ে যারা কিতাব লিখেছেন তারা হলেন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মুবারক (رحمة الله), মুহাম্মদ ইবনে আসলাম তূসী (رحمة الله), হাসান ইবনে সূফিয়ান নাসায়ী (رحمة الله), আবু বকর আজূররী (رحمة الله), আবু বকর মুহাম্মদ ইবনে ইব্রাহীম ইস্পাহানী (رحمة الله), দারে কুতনী (رحمة الله), হাকেম আবু নুয়াইম ইস্পাহানী (رحمة الله), আবু আবদুর রহমান সূলামী (رحمة الله), আবু সাঈদ মালীনি (رحمة الله), আবু ওসমান সাবূনী (رحمة الله), মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ আনসারী (رحمة الله), আবু বকর বায়হাকী (رحمة الله), ইমাম নববী (رحمة الله) সহ অসংখ্য মুতাকাদ্দীমীন ও মুতাআখখিরীনগণ। বিশেষ করে ইমাম নববী (رحمة الله)’র ‘আল আরবাইন’ নামক গ্রন্থখানি ওলামায়ে কিরামগণের মধ্যে প্রসিদ্ধতা লাভ করেছে। মুজাদ্দিদ আল্লামা ইবনে দকীকুল ঈদ (رحمة الله)ও এ গ্রন্থের শরাহ লিখিছেন। অথচ বয়সে তিনি ইমাম নববী (رحمة الله) থেকে ছয় বছরের বড় ছিলেন।

রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কর্তৃক বর্ণিত চল্লিশ হাদিসের ফযিলত লাভ ও সলফে সালেহীনগণের অনুসরণার্থে অদম চল্লিশ হাদিসের উপর একটি পুস্তিকা রচনা করার প্রয়াস পেয়েছি। আর বিষয় নির্বাচিত করেছি ‘মদীনা শরীফের ফযিলত’।

চল্লিশ হাদিস মুখস্থ করণ ও বর্ণনা করার ফযিলতের হাদীসখানা প্রখ্যাত মুহাদ্দিসগণ তাদের লিখিত কিতাবে বর্ণনা করেছেন। উক্ত হাদীসখানা নবী করিম (ﷺ)’র বড় বড় সাহাবীগণ থেকে বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। যেমন- হযরত আলী ইবনে আবি তালেব (رضي الله عنه), হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মসউদ (رضي الله عنه)হযরত মুয়ায ইবনে জাবাল (رضي الله عنه), হযরত আবুদ দারদা (رضي الله عنه), হযরত আবু সাঈদ খুদুরী (رضي الله عنه), হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (رضي الله عنه), হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه), হযরত আনাস ইবনে মালিক (رضي الله عنه), হযরত আবু হোরায়রা (رضي الله عنه) প্রমুখ প্রখ্যাত সাহাবীগণ বর্ণনা করেছেন। হাদীসখানা নিম্নরূপ:

مَنْ حَفِظَ عَلَى أُمَّتِيْ أَرْبَعِيْنَ حَدِيْثًا مِنْ أَمرِ دِيْنِهَا بَعَثَ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فِي زُمْرِةِ الْفُقْهَاءِ وَالْعُلَمَاءِ" وَفِيْ رِوَايِةٍ: "بَعْثَ اللهُ فَقِيْهًا عَالِمًا".وَفِيْ رِوَايَةِ أَبِيْ الدَّرْدَاءِ: "وَكُنْتُ لَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ شَافِعًا وَشَهِيْدًا" وَفِيْ رِوَايَةِ اِبْنِ مَسْعُوْدِ ”قِيْلَ لَهُ اُدْخُلْ مِنْ أَيِّ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ شِئْتَ" وَفِيْ رِوَايَةِ اِبْنِ عُمَرَ "كُتِبَ فِيْ زُمْرَةِ الْعُلَمَاءُ وَحُشِرَ فِيْ زُمْرَةِ الْشُهَدَاءِ"

হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি আমার উম্মতের জন্য তার দ্বীন সম্পর্কীয় চল্লিশটি হাদিস মুখস্থ করবে আল্লাহ তায়ালা কিয়ামত দিবসে তাকে ফুকাহা এবং উলামাদের দলভুক্ত করবেন।

➥[১] ইমাম বায়হাকী, শোয়াবুল ঈমান, খন্ড:২, পৃষ্ঠা: ২৭০

অন্য বর্ণনায় আছে, আল্লাহ তায়ালা তাকে ফকীহ এবং আলেমগণের অন্তর্ভূক্ত করবেন। 

➥[২] আল্লামা যাহাবী (رحمة الله) মীযানুল ই’তিদাল, খন্ড: ৫, পৃষ্ঠা: ২৪৫-২৪৬


হযরত আবু দারদা (رضي الله عنه)’র অপর বর্ণনায় আছে- রাসূলুল্লাহু (ﷺ) বলেছেন, কিয়ামত দিবসে আমি তার জন্য সুপারিশকারী এবং সাক্ষী হব।

➥[৩] ইমাম বায়হাকী তার সুনান গ্রন্থে, খন্ড: ২, পৃষ্ঠা: ২৭০


হযরত ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه)’র বর্ণনায় আছে- তাকে বলা হবে তোমার ইচ্ছামত জান্নাতের যে কোন দরজা দিয়ে প্রবেশ কর। 

➥[৪] আবু নুয়াইম, হুলিয়া, খন্ড:৭, পৃ. ১৮৯


হযরত ইবনে ওমর (رضي الله عنه)’র বর্ণনা মতে, তাকে উলামাদের দলভুক্ত করা হবে এবং শোহাদাদের সাথে তার হাশর হবে।

➥[৫] ইবনে জওযী (رحمة الله)’র আল ইলালুল মুতানাহিয়্যাহ, ১ পৃষ্ঠা. ১২৪


وَعَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ قَالَ: سُئِلَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَا حَدُّ الْعِلْمِ الَّذِي إِذَا بَلَغَهُ الرَّجُلُ كَانَ فَقِيهًا؟ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ حَفِظَ عَلَى أُمَّتِي أَرْبَعِينَ حَدِيثًا فِي أَمْرِ دِينِهَا بَعَثَهُ اللهُ فَقِيهًا وَكُنْتُ لَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ شَافِعًا وَشَهِيْدًا- 

হযরত আবুদ দারদা (رضي الله عنه)বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে জিজ্ঞাসা করা হল ইলমের কোন সীমানায় পৌঁছলে ফকীহ হতে পারে? উত্তরে তিনি বললেন, যে ব্যক্তি আমার উম্মতের জন্য তার দ্বীনের ব্যাপারে চল্লিশটি হাদিস মুখস্থ করেছে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে ফকীহরূপে কবর থেকে উঠাবেন। কিয়ামতের দিন আমি তার জন্য সুপারিশকারী ও সাক্ষী হব।

➥[৬] মিশকাত পৃ. ৩৬, ইমাম নববী (رحمة الله) বলেছেন, এখানে حفظ দ্বারা চলি­শটি হাদিস বর্ণনা করা উদ্দেশ্য। টীকা নং ১২, মিশকাত পৃ. ৩৬


তাছাড়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর হাদিস অন্যের নিকট পৌঁছে দেয়ার ফযিলতের উপরও একাদিক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। যেমন-

وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: نَضَّرَ اللهُ عَبْدًا سَمِعَ مَقَالَتِي فَحَفِظَهَا وَوَعَاهَا وَأَدَّاهَا فَرُبَّ حَامِلِ فِقْهٍ غَيْرِ فَقِيهٍ وَرُبَّ حَامِلِ فِقْهٍ إِلَى مَنْ هُوَ أَفْقَهُ مِنْهُ- হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه)থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)এরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালা সে ব্যক্তির মুখ উজ্জ্বল করুন, যে আমার কথা শুনেছে তারপর তাকে যথাযথভাবে স্মরণ রেখেছে ও সংরক্ষণ করেছে, আবার তা যথাযথভাবে অন্যের কাছে পৌঁছে দিয়েছে। কেননা, জ্ঞানের অনেক বাহক নিজে জ্ঞানী নন এবং অনেকে এমন রয়েছে, যারা নিজের তুলনায় উচ্চতর জ্ঞানীর কাছে জ্ঞান বহন করে নিয়ে যায়।

➥[৭] ইমাম শাফেঈ, বায়হাকী, মাদখাল গ্রন্থে, হযরত যায়েদ ইবনে সাবিত রা. থেকে তিরমিযী, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, দারেমী, সূত্র: মিশকাত, পৃ: ৩৫


وَعَن ابْن مَسْعُودٍ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: نَضَّرَ اللهُ امْرَأً سَمِعَ مِنَّا شَيْئًا فَبَلَّغَهُ كَمَا سَمِعَهُ فَرُبَّ مُبَلَّغٍ أَوْعَى لَهُ مِنْ سَامِعٍ

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه)বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আল্লাহ তায়ালা সেই ব্যক্তির মুখ উজ্জ্বল করুন, যে আমার কোন  কথা শুনেছে এবং যেভাবে শুনেছে সেভাবেই তা অপরকে পৌঁছে দিয়েছে। কেননা অনেক সময় যাকে পৌঁছানো হয় সে ব্যক্তি শ্রোতা অপেক্ষা অধিক রক্ষাকারী হয়।

➥[৮] তিরমিযী ও ইবনে মাজাহ, কিন্তু দারেমী এটা হযরত আবু দারদা রা. থেকে বর্ণনা করেছেন। সূত্র: মিশকাত পৃ. ৩৫


নবী করিম (ﷺ) বলেছেন-

لِيُبَلِّغِ الشَّاهِدُ الغَائِبَ، فَإِنَّ الشَّاهِدَ عَسَى أَنْ يُبَلِّغَ مَنْ هُوَ أَوْعَى لَهُ مِنْهُ

এখানে উপস্থিত ব্যক্তি (আমার এ বাণী) যেন অনুপস্থিত ব্যক্তির কাছে পৌঁছে দেয়। কারণ উপস্থিত ব্যক্তি হয়ত এমন ব্যক্তির কাছে পৌঁছাবে, যে এ বাণীকে তার থেকে বেশী সংরক্ষণ করতে পারবে।

➥[৯] বুখারী, পৃ. ১৬, হাদিস নং ৬৭






হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ ওসমান গণি বইসমগ্র
এপ্স টি তে রয়েছে
চল্লিশ হাদিস দ্বারা মদীনা শরীফের ফযিলত,
শরহে মুসনাদে ইমাম আ‘যম আবু হানিফা(رحمة الله) ও
বিষয় ভিত্তিক মুজিযাতুর রাসূল (ﷺ)
👉https://play.google.com/store/apps/details?id=sunniencyclopedia.blogspot.com.usmangoniall
🌬যাজাকাল্লাহু খাইরান

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন