নূরনবী ﷺ

আটত্রিশতম অধ্যায়ঃ
 বনু কোরায়যার শাস্তিঃ
প্রসঙ্গঃ ইহুদী গোত্র বনু কোরায়যার কর্তৃক চুক্তিভঙ্গ ও এদের শাস্তি প্রদান
=========
খন্দকের    যুদ্ধে   বনু    কোরায়যা   নামক    ইহুদী    গোত্রটি হুযুর       [ﷺ]-এঁর      সাথে      সম্পাদিত      চুক্তি      ভঙ্গ       করে কোরাইশদের     সাথে  যোগ  দেয়।  কোরাইশরা  পলায়ন  করার  পর  বনু কোরায়যা  বিপদের   সম্মুখীন  হয়।  নবী করীম  [ﷺ]  খন্দক  থেকে  ফিরে  এসে  অস্ত্র-সস্ত্র  রেখে  মাত্র  গোসল  সেরেছেন-  এমন   সময়   হযরত   জিব্রাইল (عليه    السلام)   খেদমতে     হাযির   হয়ে   আরয   করলেন- “আপনি         অস্ত্র          রেখে        দিয়েছেন-        অথচ         আমরা  ফেরেশতারা      এখনও       অস্ত্র       ত্যাগ     করিনি।     আপনি এখনই   বনু   কোরায়যার   দিকে   ধাবিত   হোন।   আমিও  সেদিকে   যাচ্ছি   এবং   তাদের    মধ্যে   ভূমিকম্পের     সৃষ্টি করবো।” (বেদায়া-নেহায়া)

নবী করীম [ﷺ]  চতুর্দিকে  খবর পাঠিয়ে   দিলেন-  যেন  খন্দকের            যুদ্ধে           অংশগ্রহণকারী            সকলেই            বনু কোরায়যার    পল্লীতে    গিয়ে    আছরের    নামায    আদায়  করে। হযরত আলী (رضي الله عنه)-কে অগ্রগামী দলের নেতৃত্ব     দিয়ে    প্রেরণ    করলেন।    অতঃপর     তিনি      তিন হাজার        সাহাবী        ও        তেষট্টিটি        ঘোড়া        নিয়ে        বনু  কোরায়যার দূর্গ অবরোধ  করলেন।  এই   অবরোধ   ২৫ দিন পর্য্যন্ত অব্যাহত থাকে।     অবরোধের ফলে   তাদের চরম দুর্দশা  দেখা দেয়। আল্লাহ তায়ালা তাদের অন্তরে ভীতি    সঞ্চার   করে     দেন।    তারা   উপায়ান্তর   না    দেখে ভবিষৎ সম্পর্কে চিন্তিত হয়ে পড়ে। তাদের সর্দার কা’ব ইবনে আছাদ  তাদের  কাছে তিনটি বিকল্প প্রস্তাব পেশ করে।   যথা   (১)   “বনু   কোরায়যারা   নারী-পুরুষ   সবাই  মুসলমান    হয়ে  যাক।   কেননা,   এটা  দিবালোকের   মত সত্য যে, নবী করীম [ﷺ] একজন প্রেরিত রাসূল। তার গুণাবলীর    সাথে     তৌরাত   কিতাবে   বর্ণিত   গুণাবলীর হুবহু   মিল   রয়েছে।    সুতারাং   তাঁর    উপর    ঈমান    এনে নারী-পুরুষ    সকলের    প্রাণ,    ধন    সস্পদ    ও    শিশুদের  জীবন       রক্ষা    করা    কর্তব্য।(২)      তা     না     হলে    সকলে নিজেদের  শিশুও     নারীদেরকে  নিজ   হাতে  হত্যা  করে  সম্মিলিতভাবে  মুসলমানদের বিরুদ্ধে   ঝাঁপিয়ে পড়ুক। (৩)          তাদের       শনিবারের       পবিত্র        রাত্রে       একযোগে মুসলমানদের ওপর র্ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।

দূর্গবাসী     কেউ    তাদের    সর্দারের     উক্ত    প্রস্তাবে    সাড়া দিলনা।        অবশেষে         তারা        আনসার-সর্দার        হযরত  ছা’আদ     ইবনে     মা’আয     (رضي     الله     عنه)-এঁর     উপর  ফয়সালার  ভার ন্যাস্ত  করলো।   পূর্ব আত্মীয়তার   সূত্রে হয়তো   তিনি   কিছুটা   নমনীয়    হবেন-   এ   ছিল   তাদের  ধারণা।    নবী   করীম    [ﷺ]   সর্বেসর্বা   হয়েও   তাদের   এ  হঠকারী  প্রস্তাবে  রাযী    হলেন।    হযরত  ছা’আদ   (رضي  الله  عنه)   তৌরাত  কিতাবের বিধান  অনুযায়ী  নিম্মোক্ত ফয়সালা করলেনঃ (১) “বনু কোরায়যা গোত্রের সকল পুরুষকে        হত্যা        করা        হবে,        (২)        তাদের        সম্পদ  মুসলমানদের মধ্যে বন্টন করা হব, (৩) তাদের শিশু ও নারীদেরকে      বন্দী    করে    মুসলমানদের     দাস-দাসীতে  পরিণত করা  হবে।” এই  ফয়সালা ছিল তাদের কিতাব মোতাবেক  চুক্তি   ভঙ্গের শাস্তি। নবী  করীম [ﷺ] মন্তব্য করলেন- “হে ছা’আদ, তুমি এমন ফয়সালাই করেছো-  যা         আল্লাহ           তায়ালা         সপ্তাকাশের          উপরে         করে রেখেছেন।” (মাওয়াহিব)

[এই সংবাদটি ছিল ইলমে গায়েবের সংবদ। আকাশের উপর     আল্লাহর    ধার্যকৃত   ফয়সালা   নবী   করীম    [ﷺ] মদীনায় বসে জেনে নিয়েছেন। এ ধরণের ইলমে গায়েব জিব্রাইলের      মাধ্যমে     ছাড়াই     প্রদত্ত     হয়ে     থাকে।     এ   ধরণের        ইলমে          গায়েবকে        ‘দালালাত’          বলা        হয়  (তাফসীরে রুহুল বয়ান ৪র্থ পারা ১৭৯ আয়াত)।]

অতঃপর উক্ত ফয়সালার উপর  উভয় পক্ষের   দস্তখত হয়।      সে      মোতাবেক      বনু      কোরায়যার      শিশুদেরকে  দাসদাসীতে    পরিণত    করা   হয়।   এবং   তাদের    সম্পদ কোরআনের     বিধান    মতে   মুসলমানদের   মধ্যে     বন্টন করা হয়।

[ইহুদীরা   যদি    নবী    করীম  [ﷺ]-এঁর  উপর  ফয়সালার দায়িত্ব ছেড়ে  দিত, তা হলে হয়তো তাদের জীবন রক্ষা  হতো।   যেমনটি   হয়েছিল   বনু   নযীর   ও   মক্কাবাসীদের  ক্ষেত্রে।  তৌরাত   কিতাব   অনুযায়ী    চুক্তি  ভঙ্গের  শাস্তি  হচ্ছে   হত্যা    করা।  তাই  বনু  কোরায়যা  হযরত  ছা’আদ (رضي الله عنه)-এঁর উক্ত রায় নতশীরে মেনে নিতে বাধ্য হলো।  মুসলিম   রাষ্ট্রে অপরাধমূলক শাস্তির ক্ষেত্রে সব প্রজাই সমান। কিন্তু      সামাজিক ও পারিবারিক ক্ষেত্রে  যার    যার   ধর্ম   অনুযায়ী    বিচার   করতে     হবে।   এটাকে পারিবারিক   আইন  বলা   হয়।     ইসলামী  রাষ্ট্রে   প্রত্যেক ধর্মের পৃথক পারিবারিক আইনের ব্যবস্থা স্বীকৃত।]

++++++++++
 উস্তাজুল উলামা আল্লামা আবদুল জলীল রহমাতুল্লাহি তা'আলা আলাইহি এর "  নূরনবী ﷺ" থেকে প্রকাশিত হচ্ছে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন