নূরনবী ﷺ

বত্রিশতম অধ্যায়ঃ
 এক নযরে মদীনার জিন্দেগীঃ
*********
প্রসঙ্গঃ  হিজরতের  পর  এক  বৎসর  পর্যন্ত  নবী  করীম  [ﷺ]   প্রবাস  জীবনের  প্রাথমিক   কাজ  সমাধা  করেন।  মোহাজির     সমস্যা,     মদীনার     উপকন্ঠে     বসবাসকারী  তিনটি ইয়াহুদী গোত্র – বনু কাইনুকা, বনু কোরায়যা ও বনু       নযির       এবং        মদীনার        আদিবাসী       আউছ       ও খাজরাজ গোত্রদ্বয়ের সমন্বয়ে শান্তি ও প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর,    মসজিদে    নববী    তৈরী,    বিবিগণের    বাসস্থান  নির্মাণ    ইত্যাদি    প্রাথমিক    গুরুত্বপূর্ণ    কাজ    এ    সময়ে  সমাধা করা হয়।
===========
নবীগণের    জীবন   কখনও   কুসুমাস্তীর্ণ   ছিল     না।    নবী করীম   [ﷺ]-এঁর   ক্ষেত্রেও    এর    ব্যতিক্রম   হয়নি।    নবী করীম [ﷺ] এরশাদ করেনঃ  اأشد  الناس  بلاء الأنبياء ثم الاولياء ثم المؤمنون (اَلْبِدَايَةُ)
অর্থ্যাৎ-     “সবচেয়ে    কঠিন    পরীক্ষা    হলো     নবীগণের,  তারপর              অলি-আল্লাহগণের              তারপর             সাধারণ মু’মিনগণের।”(বেদায়া)

কয়েকমাস (১৬/১৭  মাস) যেতে না যেতেই ইয়াহুদীরা   মদীনা   চুক্তি   ভঙ্গ   করে   গোপনে   মক্কার   কোরাইশদের  সাথে      আঁতাত       গড়ে      তোলে।      অপরদিকে       মদীনার আদিবাসী    আউছ     ও    খাজরাজ     গোত্রের     মধ্য    হতে একদল        মোনাফেকের       সৃষ্টি       হয়।        এরা         প্রকাশ্যে  মুসলমান           হলেও         ভিতরে           ভিতরে          ইয়াহুদী         ও কোরাইশদের    সাথে    যোগ    দেয়।    এদের    সর্দার    ছিল  আবদুল্লাহ      ইবনে     ওবাই।    সে    নবী     করীম     [ﷺ]-এঁর পিছনে      দাঁড়িয়ে      নামায     পড়তো।     কিন্তু     মসজিদের  বাইরে গেলেই তার মোনাফেকী শুরু হতো। সে মদীনার সম্ভাব্য     নেতা     হতে     যাচ্ছিল।     নবী     করীম     [ﷺ]-এঁর  আগমনের   ফলে তার সে   আশা  চূর্ণ  হয়ে গিয়েছিলো।  এই    মোনাফেকরাই    ইসলামের    ক্ষতি    করেছে    বেশী।  এদের  আহবানেই  মক্কার কোরাইশরা   বার বার মদীনা  আক্রমণ করতে সাহস পেয়েছিল।     হিজরতের দ্বিতীয়  বর্ষে বদেরর যুদ্ধ,  তৃতীয়  হিজরীতে   ওহুদের  যুদ্ধ  এবং পঞ্চম          হিজরীতে          খন্দকের          যুদ্ধে          মুনাফিকদের যোগসাজশেই         মক্কার         কোরাইশরা        আক্রমণাত্মক  ভূমিকা   পালন   করে।    তারপর    থেকেই   কোরাইশদের  দর্প চূর্ণ হয়ে যায়।

৫ম   হিজরী   পর্যন্ত   নবী    করীম    [ﷺ]    আত্মরক্ষামূলক জিহাদ   পরিচালনা    করতেন।   ৬ষ্ঠ    হিজরী   সন    থেকে ইতিহাসের গতি ফিরে যায়।  নবী করীম [ﷺ] খন্দকের যুদ্ধের     পর     থেকেই     আক্রমণাত্মক     যুদ্ধ     পরিচালনা  করতে সক্ষম হন। খায়বার, মুতা, মক্কা বিজয়, হুনাইন, তায়েফ     ও       তাবুক     প্রভৃতি     যুদ্ধে     নবী      করীম     [ﷺ] মদীনার   বাইরে   গিয়ে    যুদ্ধ   পরিচালনা    করেন।    এসব যুদ্ধে     কাফেরগণ       পর্যূদস্ত     হয়ে     যায়।     গোটা     আরব উপদ্বীপে      (জাযিরাতুল      আরব)       ইসলামের         বিজয় নিশান       উড্ডীন      হয়।     নবী     করীম     [ﷺ]      ইসলামকে বিজয়ী      শক্তি     হিসাবে      প্রতিষ্ঠিত       করেন।     আল্লাহর প্রতিশ্রুতি   অক্ষরে    অক্ষরে   বাস্তবে  পরিণত  হয়।  মক্কী জিন্দেগীতে    ইসলামের    বিধি-বিধান    পূর্ণ    বাস্তবায়িত  করা সম্ভব ছিল না। কেননা, সেখানে মুশরিক শাসন ও প্রতিকূল পরিবেশ বিরাজমান ছিল।

ইসলামের      মূল     পাঁচটি     ভিত্তির     মধ্যে     ১টি      বুনিয়াদ অর্থ্যাৎ    কলেমা   “لَا    اِلِهَ   اِلَّا    اللهُ   مُحَمَّدُ   رَّسُوْلَ   اللهَ    ﷺ” মক্কাতে জারি করতে পেরেছিলেন। বাকী ৪টি রোকন - নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত মদীনাতে এসে বাস্তবায়িত করেন।  ইসলামের  অন্যান্য হুকুম  আহকাম এবং  বিধি  বিধান মদীনাতেই   নাযিল  হয়।  সুতরাং মদীনার জীবন কন্টকাকীর্ণ    হলেও    ইসলামের    পূর্ণাঙ্গ    জীবন    বিধান  প্রতিষ্ঠিত         করার        সুযোগ         এ        সময়েই         হয়েছিল। সাফল্যের  আনন্দ  ও  ইসলামের   পূর্ণ  বিধান  প্রতিষ্ঠিত  করার      সুযোগ      মদীনাতেই     হয়েছিল।      এদিক      দিয়ে  বিবেচনা করলে   নবী করীম [ﷺ]-এঁর  হিযরতের সুদূর  প্রসারী  সাফল্য    লক্ষ্য   করা  যায়।   পূর্বেই    উল্লেখ   করা হয়েছে     -     হিজরত     প্রকাশ্যভাবে     দেশ     ত্যাগ     হলেও  প্রকৃতপক্ষে ছিল বিশ্ববিজয়ের সোপান এবং সাফল্যের দ্বারোদঘাটন।  এবার  ক্রমান্বয়ে ঘটনাবলী  বর্ণনা করার চেষ্টা করবে।

+++++++++++
 উস্তাজুল উলামা আল্লামা আবদুল জলীল রহমাতুল্লাহি তা'আলা আলাইহি এর "  নূরনবী ﷺ" থেকে প্রকাশিত হচ্ছে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন