(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
ষষ্ঠ অধ্যায়
---------
উক্ত ফতোয়া উল্লেখ করে মাওলানা আবদুল আউয়াল জৌনপুরী সাহেব নিজের মন্তব্য ও ফতোয়া এভাবে পেশ করেছেনঃ-
اقول وبالله التوفيق- انه لما كان صلي الله عليه وسلم نورا كما قال الله تعالى فى القرآن المجيد قَدۡ جَآءَكُمۡ مِّنَ اللّٰهِ نُوۡرٌ وَّكِتٰبٌ مُّبِيۡنٌۙ٠ وكما روى عن ذكوان أنه لم يكن له صلى الله عليه وسلم ظل لا فى قمر رواه الحاكم الترمذى وكما قال ابن سبع كان صلى الله عليه وسلم نورا فكان إذا مشى فى الشمس أو القمر لا يظهر له ظل قال غيره ويشهد له قوله عليه السلآم فى دعائه واجعلني نورا كذا فى المواهب والذى يدل على أنه كان نورا فى يكن أمه أيضا الاخ ... فأى استبعاد خروجه صلى الله عليه وسلم من غير مخرج معتاد للناس وإذا أراد الله لخلق يخلق ويبدع كيف ما يشاء إبداعا حقيقا من غير مثال سبق الأخ
অর্থঃ- আল্লাহর নিকট তৌফিক চেয়ে আমি (আব্দুল আউয়াল জৌনপুরী) বলছি- নবী করীম [ﷺ] আপাদমস্তক দেহধারী নূর। যেমন, কোরআন মাজীদে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- ”তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ হতে একজন সম্মানিত নূর ও একটি স্পষ্ট কিতাব এসেছে।” পবিত্র হাসীসেও রাসূল [ﷺ]-কে নূর বলে প্রমাণ করা হয়েছে। যেমন- হযরত যাকওয়ান (رضي الله عنه) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে এসেছে যে- চন্দ্র-সূর্যের আলোতে নবী করীম [ﷺ]-এঁর ছায়া পড়তো না। কেননা, নূরের ছায়া হয় না। উক্ত হাদীস হাকিম তিরমিজী নিজ কিতাবে সংকলন করেছেন। হযরত ইবনে ছায়াব বর্ণনা করেন-”নবী করীম [ﷺ] ছিলেন আপাদমস্তক নূর। কেননা, যখন তিনি দিবাকরের আলোতে কিংবা চন্দ্রিমা নিশিতে চলাফেরা করতেন, তখন তাঁর ছায়া দেখা যেত না।”
নূরের প্রমাণবহ আরেকখানা হাদীস অন্য সাহাবী থেকে বর্ণিত হয়েছে। নবী করীম [ﷺ] উক্ত হাদীসে এরশাদ করেছেন, ”হে আল্লাহ! আমাকে নূর হিসেবে গণ্য কর।” (মাওয়াহেবে লাদুনিয়া)
নবী করীম [ﷺ] যে মায়ের গর্ভেও নূর হিসেবেই বিরাজমান ছিলেন, এ মর্মে আবু যাকারিয়া ইবনে ইয়াহইয়া কর্তৃক বর্ণিত হাদীসও এটার সত্যতা প্রমাণ করে। সুতরাং নবী করীম [ﷺ] অন্যান্য মানব সন্তানের জন্মের চিরাচরিত নিয়মের ব্যতিক্রমধর্মী স্থান দিয়ে পৃথিবীতে আগমন করেছেন, এটা কোন অসম্ভব ব্যাপারই নয়। আল্লাহ যখন কিছু সৃষ্টির ইচ্ছা করেন, তখন পুর্ববর্তী চিরাচরিত যে কোন নিয়ম ও রীতি ভঙ্গ করে নূতন পন্থায় সম্পূর্ণ নতুন নিয়মে সৃষ্টি করতে পারেন।
তোমরা কি জান না, কিভাবে আদম-হাওয়াকে চিরাচরিত নিয়মের ব্যতিক্রমধর্মী নিয়মে পয়দা করেছেন? হযরত ঈসা (عليه السلام)-কেও চিরাচরিত নিয়মের বিপরীত ব্যবস্থায় শুধু মায়ের গর্ভে বীর্য ছাড়া পয়দা করেছেন। সুতরাং নবী করীম [ﷺ]-কে ভিন্ন নিয়মে ভূমিষ্ঠ করানো অসম্ভব হবে কেন? --আব্দুল আউয়াল জৌনপুরী।
পাঠকবৃন্দ! জৌনপুরের মাওলানা আব্দুল আউয়াল সাহেব নবী করীম [ﷺ]-কে আপাদমস্তক নূর বলেছেন এবং মায়ের নাভির বামপার্শ্ব দিয়ে ভূমিষ্ঠ হওয়ার প্রমাণ দিয়েছেন। অথচ মাওলানা ফজলুল করীম তার 'নূরে মুহাম্মদী' বইয়ে নবীকে মাটি বলে উল্লেখ করেছে। ঢাকার দারুস সালামের আব্দুল কাহহার তার 'অসিয়ত ও নছিহত' বইয়ে বলেছে, ”রাসূলে পাক [ﷺ] পিতার নাপাকী মায়ের নাপাকীর সাথে মিশে গর্ভে গিয়ে পুনরায় মায়ের নাপাক জায়গার ভিতর দিয়েই পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছেন।” (নাউজুবিল্লাহ!)
তাদের এই অশালীন ও অসভ্য উক্তি কুফরী পর্যায়ভুক্ত। (তাহকীরুল আম্বিয়ায়ে কুফরুন, ফয়যুল বারী শরহে বুখারী)
আমরা এখানে জৌনপুরের মাওলানা আব্দুল আউয়াল জৌনপুরী ও দারুস সালামের আব্দুল কাহহার গংদের মধ্যে তুলনা করলে দেখতে পাবো, একজনের কথা সুপ্রমাণিত ও নূরে ভরপুর এবং অন্যজনের কথা দুর্গন্ধময় ও কুফরীতে ভরপুর এবং প্রমাণবিহীন। মাওলানা আব্দুল আউয়াল জৌনপুরী সাহেব ছিলেন বিজ্ঞ আলেম এবং কাহহার হচ্ছে নিরেট জাহেল ও মুর্খ।
আওর মুহাম্মদীয়া তরীকার সিলসিলার মধ্যে ফুরফুরার চেয়ে অনেক উপরে জৌনপুর। একথা কোন সমালোচকও স্বীকার করতে বাধ্য। মজার ব্যাপার হলো, মাওলানা আব্দুল আউয়াল জৌনপুরী সাহেব যে পীরের সিলসিলাভূক্ত অর্থাৎ ছৈয়দ আহমদ বেরেলভীর তরীকায়ে মুহাম্মদীয়া, সে তরীকারই একজন অধঃস্তন স্বঘোষিত পীর আব্দুল কাহহার কিভাবে কোন প্রমাণ ছাড়াই নাপাক স্থান দিয়ে ভূমিষ্ঠ হওয়ার এমন কুৎসিত বিবরণ দিতে পারলো? তার মা সম্পর্কে যদি কেউ এমন অশ্লীল উক্তি করে, তাহলে তার মনে কি কষ্ট আসবে না? নিশ্চয়ই আসবে। তাহলে নবী করীম [ﷺ]-এঁর পিতামাতা সম্পর্কে আব্দুল কাহহার যে মিথ্যা উক্তি করেছে, তাতে কি নবীজী'র হৃদয়ে আঘাত লাগে নি? নিশ্চয়ই লেগেছে। কেননা, তিনি হায়াতুন্নবী। তিনি উম্মতের ভালমন্দ কর্ম ও চিন্তাধারা সম্পর্কে সম্যক অবগত আছেন। হাদীসে পাকে এসেছে-
انما اعمالكم تعرضون على -
অর্থঃ ”তোমাদের ভালমন্দ সব আমলই আমার নজরে আনা হয়।”
সুতরাং নবী করীম [ﷺ]-এঁর ব্যতিক্রমধর্মী বেলাদাত শরীফ সম্পর্কে কোন ঈমানদারের মনে আর সন্দেহ থাকতে পারে না।
কিতাবে প্রমাণ পাওয়া গেলে মানতে অসুবিধা কোথায়? আসলে এক ধরণের জ্ঞানপাপীরা সবসময়ই নবী করীম [ﷺ]-কে সাধারণ মানুষের সাথে তুলনা করতে আনন্দবোধ করে! যেমন- আনন্দবোধ করতো মক্কার কাফিরগণ। তারা বলতো- ”মুহাম্মদ [ﷺ] তো আমাদের মতই একজন মানুষ।” এ ধরণের উক্তি কাফেররাই করে, কোন মু’মিন করতে পারে না। নবীজী বিনয়মূলক বলতে পারেন, ”আমি তোমাদের ন্যায় একজন মানুষ।” কিন্তু উম্মত একথা বলতে পারবে না যে, ”তিনি আমাদের মতই একজন মানুষ”।
সারকথা হলো, সাধারণ সন্তানগণের ভূমিষ্ঠ হওয়ার ধরণ এক রকমের। অন্যান্য নবীগণ (আলাইহিমুস সালাম)'র ভূমিষ্ঠ হওয়ার ধরণ আরেক রকমের এবং আমাদের নবী করীম [ﷺ]-এঁর ভূমিষ্ঠ হওয়ার ধরণ অন্যান্য নবীগণ থেকেও ভিন্ন।
সাধারণ ডাক্তারগণ বর্তমানকালে নরমাল ও সিজারিয়ান- এই দুই পদ্ধতিতেই সন্তান ভূমিষ্ঠ করাতে সক্ষম। সৃষ্টিকর্তার কুদরত কি এতই অক্ষম হয়ে গেলো? (নাউজুবিল্লাহ!) নবীগণের জন্ম-মৃত্যু ও জীবনপদ্ধতি সাধারণ মানুষের চেয়ে উন্নত ধরণের হওয়াই যুক্তিযুক্ত। সবকিছুই যদি সাধারণ মানুষের ন্যায় হতো, তবে তাঁদেরকে মহামানব বলা হতো না।
আল্লামা শরফুদ্দীন বুছিরী, যিনি নবীজী'র শানে কছিদায়ে বুরদা লিখে দুরারোগ্য প্যারালাইসিস থেকে আশ্চর্যজনকভাবে মুক্তিলাভ করেছিলেন। তিনি তাঁর কাসিদায় বলেছেনঃ-
محمد بشر لا كالبشر-ياقوت حجز لا كالحجر-
”মুহাম্মদ ([ﷺ]) মানবজাতি হয়েও কোন মানুষের মতোই নন। যেমন ইয়াকুত পাথর হয়েও অন্য কোন পাথরের মতো নয় (কাসিদায়ে বুরদা শরীফ)।
নবীজির হাকীকত পরিচয় দিয়ে জনৈক উর্দু কবি বলেছেনঃ-
تو خدا نہین جو خدا کہون
تو بتا تجھے کیا کہون
نھ فلک پہ تیرا جواب ہے
نھ زمین پہ تیری مثال ہی
بلغ العلے
অর্থাৎঃ- ”হে প্রিয় রাসূল! আপনি তো খোদা নন যে - খোদা বলবো। আপনিই বলে দিন - আপনাকে কি নামে আখ্যায়িত করবো? কেননা, উর্দ্ধজগতেও আপনার মতো কেউ নেই এবং জমীনেও আপনার মতো কেউ নেই।” অর্থাৎ আপনার উদাহরণ আপনিই। ”নূরের ফেরেশতা যে সীমায় গেলে জ্বলে পুড়ে যায়, সেখানে আপনি নিরাপদে বিচরণ করেছেন।”
বুঝা গেলো - তিনি মাটির দেহধারী ছিলেন না, বরং তিনি ছিলেন নূরানী মহামানব।
উস্তাজুল উলামা আল্লামা আবদুল জলীল রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর 'শিয়া পরিচিতি' থেকে প্রকাশিত হচ্ছে।
ষষ্ঠ অধ্যায়
---------
উক্ত ফতোয়া উল্লেখ করে মাওলানা আবদুল আউয়াল জৌনপুরী সাহেব নিজের মন্তব্য ও ফতোয়া এভাবে পেশ করেছেনঃ-
اقول وبالله التوفيق- انه لما كان صلي الله عليه وسلم نورا كما قال الله تعالى فى القرآن المجيد قَدۡ جَآءَكُمۡ مِّنَ اللّٰهِ نُوۡرٌ وَّكِتٰبٌ مُّبِيۡنٌۙ٠ وكما روى عن ذكوان أنه لم يكن له صلى الله عليه وسلم ظل لا فى قمر رواه الحاكم الترمذى وكما قال ابن سبع كان صلى الله عليه وسلم نورا فكان إذا مشى فى الشمس أو القمر لا يظهر له ظل قال غيره ويشهد له قوله عليه السلآم فى دعائه واجعلني نورا كذا فى المواهب والذى يدل على أنه كان نورا فى يكن أمه أيضا الاخ ... فأى استبعاد خروجه صلى الله عليه وسلم من غير مخرج معتاد للناس وإذا أراد الله لخلق يخلق ويبدع كيف ما يشاء إبداعا حقيقا من غير مثال سبق الأخ
অর্থঃ- আল্লাহর নিকট তৌফিক চেয়ে আমি (আব্দুল আউয়াল জৌনপুরী) বলছি- নবী করীম [ﷺ] আপাদমস্তক দেহধারী নূর। যেমন, কোরআন মাজীদে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- ”তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ হতে একজন সম্মানিত নূর ও একটি স্পষ্ট কিতাব এসেছে।” পবিত্র হাসীসেও রাসূল [ﷺ]-কে নূর বলে প্রমাণ করা হয়েছে। যেমন- হযরত যাকওয়ান (رضي الله عنه) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে এসেছে যে- চন্দ্র-সূর্যের আলোতে নবী করীম [ﷺ]-এঁর ছায়া পড়তো না। কেননা, নূরের ছায়া হয় না। উক্ত হাদীস হাকিম তিরমিজী নিজ কিতাবে সংকলন করেছেন। হযরত ইবনে ছায়াব বর্ণনা করেন-”নবী করীম [ﷺ] ছিলেন আপাদমস্তক নূর। কেননা, যখন তিনি দিবাকরের আলোতে কিংবা চন্দ্রিমা নিশিতে চলাফেরা করতেন, তখন তাঁর ছায়া দেখা যেত না।”
নূরের প্রমাণবহ আরেকখানা হাদীস অন্য সাহাবী থেকে বর্ণিত হয়েছে। নবী করীম [ﷺ] উক্ত হাদীসে এরশাদ করেছেন, ”হে আল্লাহ! আমাকে নূর হিসেবে গণ্য কর।” (মাওয়াহেবে লাদুনিয়া)
নবী করীম [ﷺ] যে মায়ের গর্ভেও নূর হিসেবেই বিরাজমান ছিলেন, এ মর্মে আবু যাকারিয়া ইবনে ইয়াহইয়া কর্তৃক বর্ণিত হাদীসও এটার সত্যতা প্রমাণ করে। সুতরাং নবী করীম [ﷺ] অন্যান্য মানব সন্তানের জন্মের চিরাচরিত নিয়মের ব্যতিক্রমধর্মী স্থান দিয়ে পৃথিবীতে আগমন করেছেন, এটা কোন অসম্ভব ব্যাপারই নয়। আল্লাহ যখন কিছু সৃষ্টির ইচ্ছা করেন, তখন পুর্ববর্তী চিরাচরিত যে কোন নিয়ম ও রীতি ভঙ্গ করে নূতন পন্থায় সম্পূর্ণ নতুন নিয়মে সৃষ্টি করতে পারেন।
তোমরা কি জান না, কিভাবে আদম-হাওয়াকে চিরাচরিত নিয়মের ব্যতিক্রমধর্মী নিয়মে পয়দা করেছেন? হযরত ঈসা (عليه السلام)-কেও চিরাচরিত নিয়মের বিপরীত ব্যবস্থায় শুধু মায়ের গর্ভে বীর্য ছাড়া পয়দা করেছেন। সুতরাং নবী করীম [ﷺ]-কে ভিন্ন নিয়মে ভূমিষ্ঠ করানো অসম্ভব হবে কেন? --আব্দুল আউয়াল জৌনপুরী।
পাঠকবৃন্দ! জৌনপুরের মাওলানা আব্দুল আউয়াল সাহেব নবী করীম [ﷺ]-কে আপাদমস্তক নূর বলেছেন এবং মায়ের নাভির বামপার্শ্ব দিয়ে ভূমিষ্ঠ হওয়ার প্রমাণ দিয়েছেন। অথচ মাওলানা ফজলুল করীম তার 'নূরে মুহাম্মদী' বইয়ে নবীকে মাটি বলে উল্লেখ করেছে। ঢাকার দারুস সালামের আব্দুল কাহহার তার 'অসিয়ত ও নছিহত' বইয়ে বলেছে, ”রাসূলে পাক [ﷺ] পিতার নাপাকী মায়ের নাপাকীর সাথে মিশে গর্ভে গিয়ে পুনরায় মায়ের নাপাক জায়গার ভিতর দিয়েই পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছেন।” (নাউজুবিল্লাহ!)
তাদের এই অশালীন ও অসভ্য উক্তি কুফরী পর্যায়ভুক্ত। (তাহকীরুল আম্বিয়ায়ে কুফরুন, ফয়যুল বারী শরহে বুখারী)
আমরা এখানে জৌনপুরের মাওলানা আব্দুল আউয়াল জৌনপুরী ও দারুস সালামের আব্দুল কাহহার গংদের মধ্যে তুলনা করলে দেখতে পাবো, একজনের কথা সুপ্রমাণিত ও নূরে ভরপুর এবং অন্যজনের কথা দুর্গন্ধময় ও কুফরীতে ভরপুর এবং প্রমাণবিহীন। মাওলানা আব্দুল আউয়াল জৌনপুরী সাহেব ছিলেন বিজ্ঞ আলেম এবং কাহহার হচ্ছে নিরেট জাহেল ও মুর্খ।
আওর মুহাম্মদীয়া তরীকার সিলসিলার মধ্যে ফুরফুরার চেয়ে অনেক উপরে জৌনপুর। একথা কোন সমালোচকও স্বীকার করতে বাধ্য। মজার ব্যাপার হলো, মাওলানা আব্দুল আউয়াল জৌনপুরী সাহেব যে পীরের সিলসিলাভূক্ত অর্থাৎ ছৈয়দ আহমদ বেরেলভীর তরীকায়ে মুহাম্মদীয়া, সে তরীকারই একজন অধঃস্তন স্বঘোষিত পীর আব্দুল কাহহার কিভাবে কোন প্রমাণ ছাড়াই নাপাক স্থান দিয়ে ভূমিষ্ঠ হওয়ার এমন কুৎসিত বিবরণ দিতে পারলো? তার মা সম্পর্কে যদি কেউ এমন অশ্লীল উক্তি করে, তাহলে তার মনে কি কষ্ট আসবে না? নিশ্চয়ই আসবে। তাহলে নবী করীম [ﷺ]-এঁর পিতামাতা সম্পর্কে আব্দুল কাহহার যে মিথ্যা উক্তি করেছে, তাতে কি নবীজী'র হৃদয়ে আঘাত লাগে নি? নিশ্চয়ই লেগেছে। কেননা, তিনি হায়াতুন্নবী। তিনি উম্মতের ভালমন্দ কর্ম ও চিন্তাধারা সম্পর্কে সম্যক অবগত আছেন। হাদীসে পাকে এসেছে-
انما اعمالكم تعرضون على -
অর্থঃ ”তোমাদের ভালমন্দ সব আমলই আমার নজরে আনা হয়।”
সুতরাং নবী করীম [ﷺ]-এঁর ব্যতিক্রমধর্মী বেলাদাত শরীফ সম্পর্কে কোন ঈমানদারের মনে আর সন্দেহ থাকতে পারে না।
কিতাবে প্রমাণ পাওয়া গেলে মানতে অসুবিধা কোথায়? আসলে এক ধরণের জ্ঞানপাপীরা সবসময়ই নবী করীম [ﷺ]-কে সাধারণ মানুষের সাথে তুলনা করতে আনন্দবোধ করে! যেমন- আনন্দবোধ করতো মক্কার কাফিরগণ। তারা বলতো- ”মুহাম্মদ [ﷺ] তো আমাদের মতই একজন মানুষ।” এ ধরণের উক্তি কাফেররাই করে, কোন মু’মিন করতে পারে না। নবীজী বিনয়মূলক বলতে পারেন, ”আমি তোমাদের ন্যায় একজন মানুষ।” কিন্তু উম্মত একথা বলতে পারবে না যে, ”তিনি আমাদের মতই একজন মানুষ”।
সারকথা হলো, সাধারণ সন্তানগণের ভূমিষ্ঠ হওয়ার ধরণ এক রকমের। অন্যান্য নবীগণ (আলাইহিমুস সালাম)'র ভূমিষ্ঠ হওয়ার ধরণ আরেক রকমের এবং আমাদের নবী করীম [ﷺ]-এঁর ভূমিষ্ঠ হওয়ার ধরণ অন্যান্য নবীগণ থেকেও ভিন্ন।
সাধারণ ডাক্তারগণ বর্তমানকালে নরমাল ও সিজারিয়ান- এই দুই পদ্ধতিতেই সন্তান ভূমিষ্ঠ করাতে সক্ষম। সৃষ্টিকর্তার কুদরত কি এতই অক্ষম হয়ে গেলো? (নাউজুবিল্লাহ!) নবীগণের জন্ম-মৃত্যু ও জীবনপদ্ধতি সাধারণ মানুষের চেয়ে উন্নত ধরণের হওয়াই যুক্তিযুক্ত। সবকিছুই যদি সাধারণ মানুষের ন্যায় হতো, তবে তাঁদেরকে মহামানব বলা হতো না।
আল্লামা শরফুদ্দীন বুছিরী, যিনি নবীজী'র শানে কছিদায়ে বুরদা লিখে দুরারোগ্য প্যারালাইসিস থেকে আশ্চর্যজনকভাবে মুক্তিলাভ করেছিলেন। তিনি তাঁর কাসিদায় বলেছেনঃ-
محمد بشر لا كالبشر-ياقوت حجز لا كالحجر-
”মুহাম্মদ ([ﷺ]) মানবজাতি হয়েও কোন মানুষের মতোই নন। যেমন ইয়াকুত পাথর হয়েও অন্য কোন পাথরের মতো নয় (কাসিদায়ে বুরদা শরীফ)।
নবীজির হাকীকত পরিচয় দিয়ে জনৈক উর্দু কবি বলেছেনঃ-
تو خدا نہین جو خدا کہون
تو بتا تجھے کیا کہون
نھ فلک پہ تیرا جواب ہے
نھ زمین پہ تیری مثال ہی
بلغ العلے
অর্থাৎঃ- ”হে প্রিয় রাসূল! আপনি তো খোদা নন যে - খোদা বলবো। আপনিই বলে দিন - আপনাকে কি নামে আখ্যায়িত করবো? কেননা, উর্দ্ধজগতেও আপনার মতো কেউ নেই এবং জমীনেও আপনার মতো কেউ নেই।” অর্থাৎ আপনার উদাহরণ আপনিই। ”নূরের ফেরেশতা যে সীমায় গেলে জ্বলে পুড়ে যায়, সেখানে আপনি নিরাপদে বিচরণ করেছেন।”
বুঝা গেলো - তিনি মাটির দেহধারী ছিলেন না, বরং তিনি ছিলেন নূরানী মহামানব।
উস্তাজুল উলামা আল্লামা আবদুল জলীল রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর 'শিয়া পরিচিতি' থেকে প্রকাশিত হচ্ছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন