নূরনবী ﷺ


(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
সপ্তম অধ্যায়
------------

বনী     ঈসরাইলের     উপর     আল্লাহর     রহমত     নাযিলের  স্মরণে  যদি প্রতি বৎসর ঐ দিনে ঈদ পালন করা যায়, তাহলে        আল্লাহর        শ্রেষ্ঠতম       নেয়ামত       রাহমাতুল্লিল ‘আলামীন   [ﷺ]-এঁর    আগমন   দিবস   উপলক্ষ্যে    প্রতি  বৎসর    ঈদে    মীলাদুন্নবী    [ﷺ]    পালন    করা    যাবে    না  কেন?   হুযুর   করীম   [ﷺ]-কে     এক    সাহাবী    জিজ্ঞাসা  করেছিলেন,    ”ইয়া   রাসূলাল্লাহ    [ﷺ]!    প্রতি     সোমবার আপনার      রোযা      রাখার       কারণ       কী?”       হুযুর      [ﷺ] বললেনঃ  ”এই দিনে  আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং  এই দিনেই (সোমবার, ২৭ রমযান) আমার উপর কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে।” [সহীহ মুসলিম ২৬১৩-২৬১৬ বাঃ ইঃ ফাঃ, ২৬০৩-২৬০৬ ইংরেজী মুসলিম শরীফ]

উক্ত প্রমাণাদিই ঈদে মীলাদুন্নবী [ﷺ] পালনের স্বপক্ষে জোরালো দলীল।

উল্লেখ্য,   মু’মিনের  ঈদ  মাত্র  দু’টি   নয়,   ঈদ    মোট  ৯টি। যথাঃ- (১) ঈদে রামাদ্বান, (২) ঈদে কোরবান, (৩) ঈদে আরাফা,  (৪)  ঈদে    জুমআ,  (৫)   ঈদে  শবে  বারাআত, (৬) ঈদে শবে ক্বাদর, (৭) ঈদে আশুরা, (৮) ঈদে নুযুলে মায়েদা        এবং       (৯)       ঈদে          মীলাদুন্নবী।       সবগুলোই  কোরআনে, হাদীসে ও বিভিন্ন গ্রন্থে উল্লেখ আছে।

ইন্তেকাল দিবস পালন হয় না কেন?
আরেকটি    বিষয়    প্রশ্ন  সাপেক্ষ!  তা  হচ্ছে,  নবী  করীম [ﷺ]-এঁর     শুধু      জন্মতারিখ       পালন     করা      হয়     কেন, ইন্তেকাল        তো       একই       তারিখে      এবং       একই      দিনে হয়েছিল? সুতরাং একসাথে জন্ম ও মৃত্যু দিবস পালন করাইতো     যুক্তিযুক্ত।       যেমন      অন্যান্য     মহামানব     ও   ওলী-গাউসদের বেলায় মৃত্যু  দিবসে ওরস পালন  করা হয়ে থাকে।

প্রথম    উত্তর    হলো,   আল্লাহ   পাক   কোরআন   মাজীদে নির্দেশ করেছেন নিয়ামত  পেয়ে খুশী  ও আনন্দ করার জন্য।   নিয়ামত   পাওয়া   জন্ম   উপলক্ষ্যেই   হয়।   যেমন  কোরআনে     আছেঃ-     قُلْ     بِفَضْلِ     اللّهِ     وَبِرَحْمَتِهِ     فَبِذَلِكَ  فَلْيَفْرَحُواْ هُوَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُونَ

অর্থঃ   ”হে   নবী!    আপনি   এ    কথা   ঘোষনা   করে    দিন, মুসলমানগণ খোদার ফযল ও রহমত পাওয়ার কারণে যেন  নির্মল  খুশি  ও  আনন্দোৎসব    করে।    এটা  তাদের যাবতীয় সঞ্চিত সম্পদ থেকে উত্তম।”
(সূরা ইউনুস, আয়াত নং ৫৮)

তাফসীরে     রুহুল    মায়ানী       উক্ত    আয়াতে    'ফযল'    ও  'রহমত'    অর্থে    হযরত   মুহাম্মদ   [ﷺ]-এঁর   নাম    উল্লেখ করেছেন। এটা  হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)'র ব্যাখ্যা। রাসূল [ﷺ]-এঁর একহাজার চারশত নামের    মধ্যে    'ফযল',   'রহমত',    বরকত',   'নেয়ামত'   ও 'নূর'      প্রভৃতি      অন্যতম      গুণবাচক        নাম,      যা       গ্রন্থের শুরুতেই   উল্লেখ  করা   হয়েছে।   সুতরাং  নেয়ামতপ্রাপ্তি উপলক্ষ্যে   শুকরিয়া   আদায়ের   জন্য   বিভিন্ন   অনুষ্ঠান  করাই     কোরআনের    নির্দেশ।    সূরা   ইউনুসের   ৫৮     নং আয়াতে      নবীজী'র     জন্মোৎসব     পালন    করার     স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে। সুতরাং ঈদে মীলাদুন্নবী [ﷺ] ও জশনে জুলুস কোরআনের আলোকেই প্রমাণিত।
দেখুন  তাফসীরে রুহুল মায়ানী সূরা   ইউনুসের ৫৮  নং  আয়াতের ব্যাখ্যা।)

মোদ্দাকথা,    আল্লাহ   পাক    হুযুর   [ﷺ]-এঁর      আবির্ভাব উপলক্ষ্যে আনন্দোৎসব করার নির্দেশ করেছেন। কিন্তু ইন্তেকাল   উপলক্ষ্যে   শোক   পালন    করতে   বলেন    নি। তাই আমরা আল্লাহর নির্দেশ মানি।

দ্বিতীয়    উত্তর-    নবী     করীম      [ﷺ]    নিজে    সোমবারের রোযা  রাখার  কারণ  হিসেবে  তাঁর  পবিত্র  বেলাদাত  ও  প্রথম    ওহী    নাযিলের    কথা     উল্লেখ    করেছেন।      কিন্তু দুনিয়া    থেকে     বিদায়      গ্রহণ    বা     ইন্তেকাল    উপলক্ষ্যে শোক    পালন    করার     কথা     উল্লেখ    করেন      নি।    যদি   করতেন,  তাহলে   আমরা  তা  পালন   করতাম।  সুতরাং একই দিনে ও একই তারিখে নবী করীম [ﷺ]-এঁর জন্ম এবং ইন্তেকাল হলেও মৃত্যুদিবস পালন করা যাবে  না। এটাই কোরআন-হাদীসের শিক্ষা।

তৃতীয়        উত্তর-        নবী        করীম        [ﷺ]        তো        স্বশরীরে  হায়াতুন্নবী।     হায়াতুন্নবীর    আবার    মৃত্যুদিবস     হয়    কী  করে? মৃত ব্যক্তির জানাজা হয়, নবীজীর কি জানাজা হয়েছিলো? তিনি নিজে জানাজা না করে দরূদ পড়তে আদেশ   দিয়ে   গেলেন    কেন? কেউ কি জীবিত পিতার মৃত্যুদিবস       পালন       করে?        আসলে       ওরা      কোনটাই পালনের      পক্ষে       নয়।       শুধু        ঈদে       মীলাদুন্নবী      [ﷺ] পালনকারীদেরকে      ঘায়েল       করার        লক্ষ্যেই      এইসব শয়তানী      কূটতর্কের       অবতারণা      করে     থাকে।     ওরা শয়তানের     প্রতিনিধি।     আমরা      কোরআন     নাযিলের  আনন্দোৎসব       করি        শবে       ক্বদরে         এবং       নবীজী'র আগমনের   আনন্দোৎসব    পালন  করি   ১২   ই   রবিউল আউয়ালে।     ওরা   কোনটাই    পালনের   পক্ষপাতী   নয়।  আমরা সূরা ইউনুসের ৫৮ নং আয়াতের  নির্দেশ পালন করি।


উস্তাজুল উলামা আল্লামা আবদুল জলীল রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর 'শিয়া পরিচিতি' থেকে প্রকাশিত হচ্ছে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন