হুযূর (ﷺ) সাথে জিব্রাঈল ও পাহাড়ীয় ফেরেস্তাদ্বয়ের কথোপকথন


হুযূর (ﷺ) সাথে জিব্রাঈল ও পাহাড়ীয় ফেরেস্তাদ্বয়ের কথোপকথন



ইবনে আবু হাতীম ইকরামার সুত্রে বর্ণনা করেন, হুযূর (ﷺ) এরশাদ করেন।-

جاء حبر ائيل فقال لى يا محمد: ان ربك يقرئك السلام وهذا ملك الجبال- قدارمله اليك- وامره ان لايفعل ميئا الابامرك- أن شئت هدمت عليهم الجبال وان شئت رميتهم بالحعباء- وان شئت خسفت بهم الارض قال يا ملك الجبال فانى الات بهم- لعله ان يخزح منهم زرية يقو لون لااله الاالله- فقال ملك ربك رؤف رحيم-


অর্থাৎ- হযরত জিব্রাঈল عليه السلام  আমার নিকট এসে বললেনঃ হে মোহাম্মদ (ﷺ) ! নিশ্চয়ই আপনার প্রতিপালক আপনার প্রতি সালাম জানিয়েছেন এবং আমার সঙ্গে ইনি হচ্ছেন পাহাড়ীয় ফেরেস্তা। মহান আল্লাহ পাক তাঁকে আপনার নিকট পাঠিয়েছেন, যাতে আপনার নির্দেশ ব্যতীত বিন্দু পরিমান কোন কাজ না করেন। এবারে পাহাড়ীয় ফেরেস্তা বললেনঃ হে রাসূল! আপনি চাইলে নিমিষেই আমি তাদের উপর পাহাড়কে বিধ্বস্ত করে দিবো, চাইলে কঙ্কর নিক্ষেপ করে ধ্বংশ করে দিবো, আবার চাইলে নিমিষেই ভূমি নীচদিকে ধাবিয়ে দিয়ে তাদেরকে অপমান করে ফেলবো। এতদশ্রবনে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন ওহে পাহাড়ীয় ফেরেস্তা! একাজ করোনা, যেহেতু এখনো আমি স্বশরীরে তাদের মধ্যে বিদ্যমান আছি। আশা করা যায় যে, তন্মধ্যে এমন কিছু বংশ বের হবে যারা لاله الاالله এর স্বাক্ষ্য গ্রহণ করবে।


এতক্ষণে ফিরিস্তা (পাহাড়ীয়া ফেরেস্তা) বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল ! সত্যিই আপনি এমনই এক নবী, যার সাথে সামঞ্জশ্য রেখে আপনার রব আপনাকে رؤف رحيم তথা (সীমাহীন দয়াদ্রশীল ও অতিশয় দয়ালু) হিসেবে নাম করণ করেছেন।


ইবনে মারদুবীয়্যা আবু সালেহ আল হানাফীর সুত্রে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরশাদ ফরমানঃ


ان الله رحيم ولا يضع رحمته الاعلى رحيم قلنا يارسول الله كلنا نرحم امر النا واولادنا قالليس بذالك ولكن كماقال الله تعالى- لقد جاءكم رسول من انفسكم عزيز عليه ما عنتم حريص عليكم با المؤمنين رؤف رحيم-


অর্থাৎ- আল্লাহ পাক অবশ্যই পরম দয়ালু। আর তাঁর এ পরম দয়া আরেক পরম দয়ালু ব্যততী অন্য কোথায় রাখেন না। এতদশ্রবনে আমরা (আব্দুল্লাহ) নিবেদন করি, হে আল্লাহর রাসূল ! আমরাতো সকলেই আমাদের সম্পদও সন্তান সন্ততীর প্রতি দয়াদ্রশীল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ বিষয়টি এরূপ নয় বরং মহান আল্লাহ পাক (আমার শানে) এরশাদ করেছেন- তোমাদের নিকট তোমাদের মধ্য হতেই অবশ্যই একজন রাসূল এসেছেন।


যিনি তোমাদের জন্য যা বিপন্ন করে, তা তাঁর জন্য অত্যন্ত কষ্টদায়ক। তিনি তোমাদের জন্য মঙ্গলকামী। মুমিনদের প্রতি সীমাহীন দয়াদ্রশীল এবং অতি দয়ালু। হাদীস শরীফের ভাষ্যে প্রতীয়মান হয় যে, রাহমাত শব্দটি বিশেষ ও সর্বসাধারনের জন্য প্রয়োজ নয়। যেমন ঃ এ ব্যাপারে বিশুদ্ধ হাদীসে এসেছে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর বাণীঃ


لا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ والِدِهِ وَوَلَدِهِ وَالنَّاسِ أَجْمَعينَ


তোমরা ততক্ষন যাবত পূর্ণ মুমিন বলে দাবী করতে পারবেনা যতক্ষন যাবত না আমি তার ব্যক্তিসত্তা, পিতা-মাতা সন্তান সন্ততি এমনকি সমগ্রহ মানব চেয়েও অপরিসীম প্রিয় না হই।


لَا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى يُحِبَّ لِأَخِيهِ مَا يُحِبُّ لِنَفْسِهِ


অর্থাৎ- ততক্ষণ যাবত তোমাদের কেউই পরিপূর্ণ মুমিন হতে পারবেনা, যতক্ষন না সে নিজের প্রতি যতটুকু ভাল বাসে, তা অন্যের প্রতি ও রাখে।

বিশুদ্ধ হাদীসে আরও বর্ণিত আছেঃ


الرَّاحِمُونَ يَرْحَمُهُمَ الرَّحْمَان ، ارْحَمُوا من في الأَرْضِ يَرْحَمْكُمْ


অর্থাৎ- অতিশয় দয়ালু ব্যক্তিবর্গকে দয়ালু আল্লাহ পাক ও দয়া করেন। অতএব, তোমরা যমীন বাসীকে দয়া করো, তবেই আকাশবাসীরা তোমাদেরকে দয়া করবে। আয়াতে বর্ণিত فان تولوا বাক্যের অর্থ হচ্ছেঃ


فان اعرضوا يعنى الكفار عن الايمان بك اوجميع الخلق عنك وعن متابعتك فقل حسبى الله اى كافى جميع امورى-


অর্থাৎ- কাফেরেরা যদি আপনার প্রতি ঈমান গ্রহণ থেকে বিরতও থাকে অথবা সমস্ত সৃষ্টজীব ও যদি আপনার প্রতি ঈমান গ্রহণ ও আপনার অনুস্মরণ ও অনুকরণ থেকে সমপূর্ণ বিরত থাকে, তবে আপনি একথা বলুন যে, এ ব্যাপারে কেবল আমার আল্লাহ পাকই যথেষ্ট। অর্থাৎ- আমার সর্ববিষয়ে কেবল তিনিই যথেষ্ট।


আয়াতে বর্ণিত لا اله الاهو বাক্যের অর্থ হচ্ছে لي رب مواه فلا اعبد الا اياه অর্থৎ- তিনি ব্যতীত দ্বিতীয় কোন রব নেই। সুতরাং আমি কেবল তিনি ব্যতীত দ্বিতীয় কারও ইবাদত করবোনা।


আয়াতে বর্ণিত عليه توكلت বাক্যের অর্থ হচ্ছে اى اعتمدت واليه استندت অর্থাৎ- আমি কেবল তাঁরই উপর আস্থা ও নির্ভর করি। আয়াতে বর্ণিত وهو رب العرش العظيم বাক্যের অর্থ হচ্ছে


با الجر انه صفة العرش وقرئ با الرفع انه صفة الرب اى الهيكل الحبيم المحيط بجميع المخلو قات-


অর্থাৎ- যের যোগে হলে তা মহান আরশের ছিফত হবে। কেউ কেউ পেশ যোগে ও পড়েছেন। তখন তা আল্লাহর ছিফত হবে। অর্থাৎ- তিনি মহান আল্লাহ পাক সমগ্র মাখলুকাত বেষ্টনকারী বিশাল অবকাঠামো পূর্ণ আরশপতি। যেমন ঃ এ ব্যাপারে বর্ণিত আছে।


ان الارضين السبع فى جنب السماء الدنيا كهلقة فى فلاة


অর্থাৎ- প্রথমাকাশের পাশের্ব সপ্তজমীনের দুরত্ব এমন, যেমনঃ বিশাল মরুপ­ান্তরে একটি ক্ষুদ্র অংশ।

وكذ الك كل سماء باالنسبة الى اخر اى অর্থাৎ- অনূরূপভাবে সপ্তমাকাশের মধ্যকার একটির তুলনায় অন্যটির দুরত্ব ও বিশালত্ব।


ثُمَّ جَمِيْعُ الارضين اسلبع السموات الالى يجنب العَرْشِ كحلفة فى فلاة .


অর্থাৎ- আর সপ্তমাকাশ ও সপ্তজমীনের বিশালত্ব ও দুরত্ব আরশের পাশের্ব এমন, যেমন: বিশাল মরুপ্রান্তরে ক্ষুদ্র এক আংটি। কিন্তু মু’মিনের ক্বলবের বিশালত্ব সম্পর্কে হাদীসে কুদসীতে এসেছে, তার বর্ণনা নিুরূপ। আল্লাহর বাণী -


لا يسعتى ارضى ولا سمائ ولكن يسعنى قلب عبدى المؤمن


অর্থাৎ- আমার নিকট সপ্তমাকাশ ও সপ্তজমীনের প্রসস্থত ও বিশালত্বের তুলনায় আমার মু’মিন বান্দাহর ক্বলবের প্রসস্থতা ও বিশালত্ব বহুগুনে বেশী।

সকাল- সন্ধায় আমল


ইমাম আবু দাউদ হযরত আবু দারদা (رضي الله عنه) হতে মাওকুফ সুত্রে, ইবনে সুন্নী উক্ত সাহাবী থেকে মারফু সুত্রে বর্ণনা করেন, হযরত আবু দারদা (رضي الله عنه) বলেন। যে ব্যক্তি প্রতি সকাল-সন্ধায় নিন্মোক্ত আয়াত সাত বার পাঠ করবে, মহান আল্লাহ পাকই বান্দাহর ইহকাল পরকালের সমস্ত বিষয় পুরনের জন্য যথেষ্ট হবেন।


আয়াতটি হচ্ছে-

لَقَدْ جَاءكُمْ رَسُولٌ مِّنْ أَنفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُم بِالْمُؤْمِنِينَ رَؤُوفٌ رَّحِيمٌ . فَإِن تَوَلَّوْاْ فَقُلْ حَسْبِيَ اللّهُ لا إِلَـهَ إِلاَّ هُوَ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ .
_______________
আল মাওরিদুর রাভী ফি মাওলিদিন নাবাবী (ﷺ)
মূলঃ ইমাম নূরুদ্দীন মুল্লা আলী কারী আল হারুবী (رحمة الله)
 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন